সাধু বেনেডিক্ট মঠের ওয়েব-সাইট - মহেশ্বরপাশা - খুলনা - বাংলাদেশ
[অনলাইন পঞ্জিকা]
তপস্যাকাল

গেথসেমানি বাগানে প্রার্থনারত প্রভু যিশু
   
অনুষ্ঠানসমূহ: ভস্ম বুধবার | ১ম রবিবার | ২য় রবিবার | ৩য় রবিবার | ৪র্থ রবিবার | ৫ম রবিবার | তালপত্র রবিবার | পুণ্য বৃহস্পতিবার | পুণ্য শুক্রবার | পুণ্য শনিবার

ভস্ম বুধবার
ভস্ম বিগত বছরের আশীর্বাদ করা জলপাই (বা খেজুর বা তাল) গাছের পাতাগুলো পুড়িয়ে তৈরি।
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আশীর্বাদ কর: আমরা যেন এ উপবাসের মধ্য দিয়ে
এমন প্রকৃত মনপরিবর্তনের যাত্রা শুরু করতে পারি,
যেন আত্মসংযম হাতিয়ার ক’রে
অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের এ সংগ্রামে সফল হয়ে উঠি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী যোয়েলের পুস্তক থেকে পাঠ (২:১২-১৮)

প্রভু একথা বলছেন: ‘তোমরা সমস্ত হৃদয় দিয়ে,
এবং উপবাস, কান্না ও বিলাপ—তেমন সাধনা করেই
আমার কাছে ফিরে এসো।’
তোমাদের পোশাক নয়, হৃদয়ই ছিঁড়ে ফেল,
তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর কাছে ফিরে এসো,
তিনি যে দয়াবান, স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর, কৃপায় ধনবান;
অমঙ্গল সাধন করে তিনি দুঃখ পান।
কে জানে, হয় তো তিনি এবারও দুঃখ পেয়ে
পিছনে রেখে যাবেন একটা আশীর্বাদ,
অর্থাৎ আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর উদ্দেশে
একটা শস্য-নৈবেদ্য ও পানীয়-নৈবেদ্য।
সিয়োনে তুরি বাজাও, উপবাস পালনে নিজেদের পবিত্র কর,
মহাসভা আহ্বান কর।
গোটা জনগণকে সমবেত কর, জনসমাবেশ আহ্বান কর,
বৃদ্ধদের একত্রে ডাক, বালক ও দুধের শিশু সকলকেই জড় কর,
বর বাসর থেকে, কনেও মিলন-কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসুক।
বারান্দার ও বেদির মাঝখানে দাঁড়িয়ে
প্রভুর পরিচারক যাজকেরা কাঁদতে কাঁদতে বলুক,
‘হে প্রভু, তোমার জনগণকে রেহাই দাও।
তোমার উত্তরাধিকার বিজাতীয়দের টিটকারি ও উপহাসের পাত্র হবে,
তেমন লজ্জায় তাকে ফেলে দিয়ো না।’
জাতিসকলের মধ্যে কেনই বা বলা হবে: ‘কোথায় ওদের পরমেশ্বর?’
তখন প্রভু নিজের দেশের বিষয়ে উত্তপ্ত প্রেমের জ্বালায় জ্বলে উঠে
তাঁর আপন জনগণের প্রতি দয়ায় বিগলিত হলেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৫১
ধুয়ো:
দয়া কর, প্রভু;
আমরা করেছি পাপ।

আমাকে দয়া কর গো পরমেশ্বর, তোমার কৃপা অনুসারে,
তোমার অপার স্নেহে মুছে দাও আমার অপরাধ।
আমার অন্যায় থেকে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর,
আমার পাপ থেকে শোধন কর আমায়।   [ধুয়ো]

আমার অপরাধ আমি তো জানি;
আমার সামনেই অনুক্ষণ আমার পাপ;
তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে করেছি পাপ।
তোমার চোখে যা কুৎসিত, তাই করেছি আমি।   [ধুয়ো]

আমার মধ্যে এক শুদ্ধ হৃদয় সৃষ্টি কর গো পরমেশ্বর,
আমার মধ্যে এক সুস্থির আত্মা নবীন করে তোল।
তোমার শ্রীমুখ থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ো না কো দূরে,
আমা থেকে তোমার পবিত্র আত্মাকে করো না হরণ।   [ধুয়ো]

আমাকে ফিরিয়ে দাও তোমার ত্রাণের পুলক,
আমার মধ্যে এক উদার আত্মা ধরে রাখ।
হে প্রভু, খুলে দাও আমার ওষ্ঠাধর,
আর আমার মুখ প্রচার করবে তোমার প্রশংসাবাদ।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
করিন্থীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের দ্বিতীয় পত্র থেকে পাঠ (৫:২০–৬:২)

প্রিয়জনেরা, আমরা খ্রিষ্টের পক্ষে বাণীদূত—ঠিক যেন স্বয়ং ঈশ্বরই আমাদের মধ্য দিয়ে আহ্বান জানাচ্ছেন। খ্রিষ্টের খাতিরে আমরা মিনতি করছি: ঈশ্বরের সঙ্গে নিজেদের পুনর্মিলিত হতে দাও। যিনি পাপ জানেননি, তাঁকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপ করে তুলেছেন, যেন আমরা তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের ধর্মময়তা হয়ে উঠি।
আর যেহেতু আমরা তাঁর সহকর্মী, সেজন্য আমরা তোমাদের অনুরোধ করছি: তোমরা যে ঈশ্বরের অনুগ্রহ গ্রহণ করেছ, তোমাদের সেই গ্রহণটা যেন বৃথাই না হয়ে যায়। কারণ তিনি একথা বলছেন, তোমাকে সাড়া দিয়েছি প্রসন্নতার সময়ে; তোমার সহায়তা করেছি পরিত্রাণের দিনে।
আর এখন তো সেই প্রসন্নতার সময়, এখন তো সেই পরিত্রাণের দিন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।
আজ হৃদয় কঠিন করো না,
শোন বরং প্রভুর কণ্ঠস্বর।
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৬:১-৬,১৬-১৮)

একদিন যিশু তাঁর আপন শিষ্যদের বললেন, ‘সাবধান, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লোকদের সামনে তোমাদের ধর্মকর্ম করো না, করলে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছে তোমাদের কোন মজুরি থাকবে না।
তাই তুমি যখন ভিক্ষা দাও, তখন তোমার সামনে তুরি বাজাবে না, যেমনটি ভণ্ডরা লোকদের কাছে গৌরব পাবার জন্য সমাজগৃহে ও রাস্তা-ঘাটে করে থাকে; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা নিজেদের মজুরি পেয়েই গেছে। কিন্তু তুমি যখন ভিক্ষা দাও, তখন তোমার ডান হাত যে কী করছে, তোমার বাঁ হাত যেন তা জানতে না পারে, যাতে তোমার ভিক্ষাদান গোপন থাকে; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন।
আর তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন ভণ্ডদের মত হয়ো না; কারণ তারা সমাজগৃহে ও চৌরাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে পছন্দ করে, যেন লোকে তাদের দেখতে পায়; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা নিজেদের মজুরি পেয়েই গেছে। কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর, তখন তোমার নিজের কক্ষে প্রবেশ কর, আর দরজা বন্ধ করে তোমার পিতা, যিনি সেই গোপন স্থানে বিদ্যমান, তাঁর কাছে প্রার্থনা কর; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন।
আর তোমরা যখন উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মত বিষণ্ণ ভাব দেখিয়ো না; কেননা তারা যে উপবাস করছে, তা লোকদের দেখাবার জন্যই নিজেদের মুখ মলিন করে; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা নিজেদের মজুরি পেয়েই গেছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তেল মাখ ও মুখ ধুয়ো, যেন কেউই তোমার উপবাস না দেখতে পায়, কিন্তু তোমার পিতা, যিনি সেই গোপন স্থানে বিদ্যমান, কেবল তিনিই যেন তা দেখতে পান; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
পোপ মহাপ্রাণ সাধু লিওর উপদেশ

মণ্ডলীর গোটা দেহকে সমস্ত কলঙ্ক থেকে পরিশুদ্ধ হতে হবে
প্রিয়জনেরা, যে সকল দিন খ্রিষ্টীয় ভক্তি সম্মানের সঙ্গে বহুরূপে উদ্‌যাপন করে, সেগুলির মধ্যে এমন কোন দিন নেই যা পাস্কাপর্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠ—পাস্কাপর্ব থেকেই তো ঈশ্বরমণ্ডলীর অন্যান্য পর্বগুলি পুণ্য মর্যাদা লাভ করে। খ্রিষ্টের জন্মোৎসবও পাস্কা রহস্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কেননা ঈশ্বরের পুত্রের জন্মগ্রহণের একমাত্র কারণ ছিল তিনি যেন একদিন ক্রুশে বিদ্ধ হতে পারেন। বস্তুতপক্ষে কুমারীর গর্ভে মরণশীল মাংস ধারণ করা হল, সেই মরণশীল মাংসে যন্ত্রণাভোগ-ব্যবস্থা সিদ্ধি লাভ করল,—ঈশ্বরের দয়ার পরম সঙ্কল্প অনুসারে এমনটি ঘটল যাতে সেই যন্ত্রণাভোগ আমাদের জন্য হয়ে উঠতে পারত মুক্তির বলিদান, পাপের ক্ষমা ও অনন্ত জীবনের উদ্দেশে পুনরুত্থানের সূত্রপাত। তাছাড়া আমরা যদি চিন্তা করি যে প্রভুর ক্রুশ দ্বারাই সমগ্র জগৎ মুক্তি পেল, তাহলে বুঝতে পারব, পাস্কাপর্ব উদ্‌যাপন করার জন্য চল্লিশ দিনের উপবাস দ্বারা নিজেদের প্রস্তুত করা সত্যিই বাঞ্ছনীয়, যাতে করে আমরা যোগ্যরূপে দিব্য রহস্যগুলিতে যোগ দিতে পারি। আর কেবল আর্চবিশপ, বা সাধারণ যাজক ও পরিসেবক নয়, বরং মণ্ডলীর গোটা দেহ ও সকল ভক্তজনকেও সমস্ত কলঙ্ক থেকে পরিশুদ্ধ হতে হবে, যেন ঈশ্বরের সেই মন্দির, যার স্বয়ং স্থাপনকর্তাই হলেন তার ভিত, সমস্ত প্রস্তরগুলিতে সুন্দর ও সব দিক দিয়ে উজ্জ্বল হতে পারে। কেননা যখন রাজাদের প্রাসাদ ও শাসকদের আবাস যুক্তিসঙ্গত ভাবেই যত ধরনের অলঙ্কারে অলঙ্কৃত হয় যাতে তাদের বাসস্থান ততই শ্রেষ্ঠতম হয় যত মহত্তম তাদের গুণ, তখন স্বয়ং ঈশ্বরের গৃহ কত যত্ন ও সম্মানের সঙ্গেই না নির্মাণ ও অলঙ্কৃত করা উচিত!
এই যে গৃহ তাঁর নিজের স্রষ্টা ছাড়া শুরু ও শেষ করা যায় না, তা কিন্তু নির্মাণকারীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করে, যাতে তার পরিশ্রম দ্বারাও তার বৃদ্ধি হতে পারে; কেননা এ মন্দির নির্মাণকাজের জন্য জীবন্ত ও বুদ্ধিসম্পন্ন মালামাল ব্যবহৃত হয়, যে মালামাল আত্মার অনুগ্রহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, একমন হয়ে একদেহে সুসংবদ্ধ হয়ে ওঠে। তেমন মণ্ডলীকে ঈশ্বর ভালবাসেন ও অনুসন্ধান করেন; সুতরাং মণ্ডলীও: তাকে যে ভালবাসে না, মণ্ডলী যেন তাকে ভালবাসে, ও যে তার অনুসন্ধান করে না, মণ্ডলী যেন তার অনুসন্ধান করে, যেমনটি ধন্য প্রেরিতদূত যোহন বলেন, আমরা ভালবাসি কারণ ঈশ্বরই প্রথম আমাদের ভালবেসেছেন (১ যোহন ৪:১১,১৯)। সুতরাং যেহেতু ভক্তরা সকলে মিলে ও এক একজন ক’রে হল ঈশ্বরের এক-ই ও একমাত্র মন্দির, সেজন্য মন্দিরটা যেমন সমষ্টিগত ভাবে নিখুঁত তেমনি ব্যক্তি-বিশেষের বেলায়ও নিখুঁত হওয়া চাই; কেননা যদিও সকল অঙ্গের সৌন্দর্য একই নয়, ও তেমন বৈচিত্রময় অংশগুলির মধ্যে সদ্‌গুণাবলির সামঞ্জস্যও থাকার কথা নয়, তথাপি ভ্রাতৃপ্রেমের সুসংবদ্ধতা সৌন্দর্যের একতা সাধন করে। এভাবে সমস্ত অঙ্গগুলি পুণ্য প্রেমে একত্রিত হয়, আর অনুগ্রহের মঙ্গলদানগুলির সমান পাত্র না হয়েও, তবু সকলে পরস্পরের মঙ্গলের জন্য আনন্দ ভোগ করে; এমনকি তারা যা ভালবাসে সেই সবকিছু থেকে কেউই বঞ্চিত নয়, কেননা যে কেউ পরের কল্যাণে আনন্দিত, সে নিজের বৃদ্ধি সাধন করে।

১০। ভস্ম আশীর্বাদ ও বিতরণ
অনুষ্ঠাতা দাঁড়িয়ে করজোড়ে বলেন:
প্রিয়জনেরা, এসো, বিনীত অন্তরে পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি:
তপস্যার চিহ্নস্বরূপ যে ভস্ম-টিকা আমরা কপালে ধারণ করতে যাচ্ছি,
সেই ভস্ম তিনি যেন আশীর্বাদমণ্ডিত করেন।

কিছুক্ষণ নীরব প্রার্থনা করার পর তিনি প্রসারিত বাহুতে বলে চলেন:
হে ঈশ্বর, বিনম্রতা দেখে তুমি তো বিগলিত হও,
ও প্রায়শ্চিত্ত দেখে প্রশমিত হও।
কৃপা করে আমাদের মিনতি কান পেতে শোন:
যারা কপালে ভস্ম ধারণ করতে যাচ্ছে,
প্রসন্ন হয়ে তাদের উপর তোমার আশীর্বাদের অনুগ্রহ বর্ষণ কর,
তারা যেন তপস্যাকালীন যাত্রায় অগ্রসর হতে হতে
শোধিত অন্তরে তোমার পুত্রের পাস্কা-রহস্য উদ্‌যাপন করতে যোগ্য হয়ে ওঠে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

এরপর ভক্তগণ এগিয়ে এলে অনুষ্ঠাতা এই বলে তাদের এক একজনের কপালে ভস্ম দান করেন:
মনপরিবর্তন কর, সুসমাচারে বিশ্বাস কর।

১১। সার্বজনীন প্রার্থনা
তপস্যাকাল শুরু করতে গিয়ে, আসুন, আমরা এই অনুগ্রহকালের জন্য পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর চরণে এই ভিক্ষা রাখি, তিনি যেন পবিত্র আত্মায় আমাদের পরিপূর্ণ করেন, আমাদের হৃদয় পরিশুদ্ধ করেন, ভ্রাতৃপ্রেমে আমাদের বলবান করে তোলেন:
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-তোমার বাণীই আমাদের জীবন; তাই আমাদের জীবন যেন তোমার প্রতিটি বাণীতেই পরিপূর্ণ ও পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-যিশুর জীবনে তুমি প্রেমের পথ দেখিয়েছ। আমাদের দীক্ষিত কর, যেন জীবনের ছোট-বড় সকল ঘটনায়ই সেই পথ ধরে চলতে পারি।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-আত্মত্যাগের মনোভাব আমাদের অন্তরে সঞ্চার কর। যত অভাবগ্রস্ত ভাইবোনকে সাহায্য করতে আমাদের অনুপ্রাণিত কর।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-কৃপা কর, আমরা যেন আমাদের দেহে তোমার পুত্রের যন্ত্রণাভোগের সাক্ষ্য বহন করতে পারি, যেন আমাদের মধ্যে তাঁর অনন্ত জীবন প্রকাশ পায়।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-আমাদের পুণ্য পিতা বেনেডিক্ট বলেছিলেন, তপস্যাকালে সন্ন্যাসীরা সকল কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করবেন, এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থনা, ঐশপাঠ, হৃদয়বিদারণ ও আত্মসংযমে রত হয়ে সাধনা করবেন। আশীর্বাদ কর, আমরা যেন তাঁর নির্দেশ উত্তমরূপে পালন করতে পারি।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-আমাদের পুণ্য পিতা আরও বলেছিলেন, পবিত্র আত্মার আনন্দের সঙ্গে এক একজন সন্ন্যাসী স্বেচ্ছায়ই নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে খাদ্য, পানীয়, নিদ্রা, কথন, পরিহাসের অতিরিক্ত যা কিছু বাতিল করেই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে নিবেদন করবেন। এই সাধনায় তুমি আমাদের বল দাও।       সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।

১২। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


১ম রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর গানটি বর্জিত।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আশীর্বাদ কর:
আমাদের মনপরিবর্তনের সাক্রামেন্তীয় চিহ্নস্বরূপ এই তপস্যাকাল পালন ক’রে আমরা যেন খ্রিষ্টে নিহিত মহা ধন-ঐশ্বর্য
আরও গভীরতরভাবে উপলব্ধি করতে পারি
ও যোগ্যতর জীবনযাপনে সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
আদিপুস্তক থেকে পাঠ (২:৭-৯; ৩:১-৭)

প্রভু পরমেশ্বর মাটি থেকে ধুলো নিয়ে মানুষকে গড়লেন, এবং তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার মধ্যে প্রাণবায়ু সঞ্চার করলেন; আর মানুষ সজীব প্রাণী হয়ে উঠল।
প্রভু পরমেশ্বর প্রাচ্যদেশে—এদেনে—একটি বাগান করলেন, আর সেখানে তাঁর গড়া সেই মানুষকে রাখলেন। প্রভু পরমেশ্বর ভূমি থেকে এমন সব গাছ উৎপন্ন করলেন, যা দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু; বাগানটির মাঝখানে উৎপন্ন করলেন জীবনবৃক্ষ; মঙ্গল-অমঙ্গল জ্ঞানবৃক্ষও উৎপন্ন করলেন।
প্রভু পরমেশ্বর যে সমস্ত বন্যজন্তু নির্মাণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাপই ছিল সবচেয়ে ধূর্ত। সে সেই নারীকে বলল, ‘পরমেশ্বর নাকি তোমাদের বলেছেন, তোমরা এই বাগানের কোন গাছের ফল খাবে না।’ নারী সাপকে উত্তরে বলল, ‘আমরা বাগানের গাছগুলোর ফল খেতে পারি; কিন্তু বাগানের মাঝখানে যে গাছ রয়েছে, তার ফল সম্বন্ধে পরমেশ্বর বলেছেন, তোমরা তা খাবে না, স্পর্শও করবে না, করলে তোমরা মরবে।’ তখন সাপ নারীকে বলল, ‘তোমরা মোটেই মরবে না! এমনকি পরমেশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা তা খাবে, সেদিন তোমাদের চোখ খুলে যাবে আর তোমরা পরমেশ্বরের মত হয়ে মঙ্গল-অমঙ্গল জ্ঞান লাভ করবে।’
নারী দেখল, গাছটির ফল খেতে ভাল, চোখেও আকর্ষণীয়, এবং জ্ঞানদায়ী গাছ বিধায় আকাঙ্ক্ষণীয়; তাই সে তার কয়েকটা ফল পেড়ে নিজে খেল, ও তার সঙ্গে উপস্থিত তার স্বামীকেও দিল; সেও খেল। তখন তাদের দু’জনেরই চোখ খুলে গেল, তারা এও বুঝতে পারল যে, তারা উলঙ্গ; তাই ডুমুরগাছের কয়েকটা পাতা সেলাই করে কোমরের জন্য এক প্রকার আবরণ তৈরি করল।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৫১
ধুয়ো:
দয়া কর, প্রভু;
আমরা করেছি পাপ।

আমাকে দয়া কর গো পরমেশ্বর, তোমার কৃপা অনুসারে,
তোমার অপার স্নেহে মুছে দাও আমার অপরাধ।
আমার অন্যায় থেকে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর,
আমার পাপ থেকে শোধন কর আমায়।   [ধুয়ো]

আমার অপরাধ আমি তো জানি;
আমার সামনেই অনুক্ষণ আমার পাপ;
তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে করেছি পাপ।
তোমার চোখে যা কুৎসিত, তাই করেছি আমি।   [ধুয়ো]

আমার মধ্যে এক শুদ্ধ হৃদয় সৃষ্টি কর গো পরমেশ্বর,
আমার মধ্যে এক সুস্থির আত্মা নবীন করে তোল।
তোমার শ্রীমুখ থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ো না কো দূরে,
আমা থেকে তোমার পবিত্র আত্মাকে করো না হরণ।   [ধুয়ো]

আমাকে ফিরিয়ে দাও তোমার ত্রাণের পুলক,
আমার মধ্যে এক উদার আত্মা ধরে রাখ।
হে প্রভু, খুলে দাও আমার ওষ্ঠাধর,
আর আমার মুখ প্রচার করবে তোমার প্রশংসাবাদ।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৫:১৭-১৯)

প্রিয়জনেরা, যেমন একজনের মধ্য দিয়ে পাপ, ও পাপের মধ্য দিয়ে মৃত্যু জগতে প্রবেশ করল, তেমনি মৃত্যু সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যেহেতু সকলেই পাপ করেছে।
সেই একজনের অপরাধের ফলে যখন সেই একজন দ্বারা মৃত্যু রাজত্ব করল, তখন সেই আর একজন দ্বারা—যিশুখ্রিষ্টই দ্বারা—যারা অনুগ্রহের ও ধর্মময়তা-দানের প্রাচুর্য পায়, তারা যে জীবনে রাজত্ব করবে, তা আরও কতই না নিশ্চিত।
এক কথায়, যেমন একজনের অপরাধ সকল মানুষের উপরে দণ্ডাজ্ঞা বর্ষণ করেছিল, তেমনি একজনের ধর্মময়তা-কর্ম সকল মানুষের উপর জীবনদায়ী ধর্মময়তা বর্ষণ করেছে। কেননা যেমন সেই একজনের অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে বহুজনকে পাপী বলে প্রতিপন্ন করা হল, তেমনি সেই আর একজনের বাধ্যতার মধ্য দিয়ে বহুজনকে ধর্মময় বলে প্রতিপন্ন করা হবে।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।
মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচবে না,
ঈশ্বরের মুখ থেকে যে প্রতিটি উক্তি নির্গত হয়, তাতেই বাঁচবে।
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৪:১-১১)

সেসময়ে যিশু দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হবার জন্য আত্মা দ্বারা প্রান্তরে চালিত হলেন; চল্লিশদিন চল্লিশরাত অনাহারে থাকার পর তিনি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লেন। মানুষকে যে পরীক্ষা করে, সে তখন তাঁকে এসে বলল, ‘তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল, যেন এই পাথরগুলো রুটি হয়ে যায়।’ কিন্তু তিনি উত্তরে বললেন, ‘লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ থেকে যে প্রতিটি উক্তি নির্গত হয়, তাতেই বাঁচবে।’
তখন দিয়াবল তাঁকে পবিত্র নগরীতে নিয়ে গেল, ও মন্দিরের চূড়ার উপরে দাঁড় করিয়ে তাঁকে বলল, ‘তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে নিচে ঝাঁপ দিয়ে পড়, কেননা লেখা আছে, তোমার জন্যই আপন দূতদের তিনি আজ্ঞা দিলেন; আর তাঁরা তোমায় দু’হাতে তুলে বহন করবেন, পাথরে তোমার পায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে।’ যিশু তাকে বললেন, ‘আরও লেখা আছে: তোমার ঈশ্বর প্রভুকে তুমি পরীক্ষা করো না।’
আবার দিয়াবল তাঁকে অধিক উচ্চ এক পর্বতে নিয়ে গেল, ও জগতের সকল রাজ্য ও তাদের গৌরব দেখিয়ে তাঁকে বলল, ‘তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হয়ে আমার সামনে প্রণিপাত কর, তবে এই সমস্ত কিছু আমি তোমাকে দেব।’ তখন যিশু তাকে বললেন, ‘দূর হও, শয়তান; কেননা লেখা আছে, তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করবে, কেবল তাঁকেই উপাসনা করবে।’
তখন দিয়াবল তাঁকে ছেড়ে চলে গেল, আর হঠাৎ দূতেরা কাছে এসে তাঁর সেবা করতে লাগলেন।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
নাজিয়াঞ্জুসের বিশপ সাধু গ্রেগরির উপদেশ

বাপ্তিস্মের পরে আলোর নির্যাতক সেই প্রলুব্ধকারী তোমাকে আক্রমণ করে থাকবে, আর অবশ্যই সে তোমাকে আক্রমণ করবে,—কেননা মাংসে নিহিত আমার ঈশ্বরের বাণীকে, অর্থাৎ মানবতায় আবৃত স্বয়ং আলোকেও সে পরীক্ষা করেছে—তুমি তো জান কীভাবে তাকে পরাজিত করতে হয়: সংগ্রাম ভয় করো না! তার সামনে প্রতিবন্ধ হিসাবে জল দাঁড় করাও, সেই আত্মাকেই দাঁড় করাও যাঁর মধ্যে সেই দুর্জনের সমস্ত অগ্নিময় তীর ধ্বংসিত হবে।
সে যখন তোমার দীনতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়—খ্রিষ্টের বেলায়ও তা করতে দ্বিধা করেনি যখন তাঁর ক্ষুধা স্মরণ করিয়ে দিল যাতে তিনি পাথরগুলিকে রুটিতে পরিণত করেন—তখন প্রভুর উত্তর স্মরণ কর। সে যা জানে না, তা তাকে শেখাও; প্রতিবন্ধ হিসাবে তুমি সেই জীবন-বাণী দাঁড় করাও যে বাণী স্বর্গ থেকে নেমে আসা রুটি ও জগৎকে জীবন দান করে। সে যখন অসার গর্ব দ্বারা তোমাকে প্রবঞ্চনা করতে চায়—খ্রিষ্টের বেলায়ও তাই করল যখন তাঁকে মন্দিরের সর্বোচ্চ মিনারে নিয়ে গিয়ে বলল, ঝাঁপ দিয়ে পড় (মথি ৪:৬), যাতে তোমার ঈশ্বরত্ব প্রমাণিত হয়—তখন তুমি গর্ব দ্বারা নিজেকে প্রভাবান্বিত হতে দিয়ো না। এতে তোমাকে পরাজিত করলে সে এ পর্যায়ে থামবে না; কেননা সে তৃপ্তির অতীত, সে সবকিছুই কামনা করে; মঙ্গলময়তার ছদ্মবেশেও সে প্রতারণা করে, ও যা ভাল তা মন্দে নিমজ্জিত করে: এই তো তার সংগ্রামের কায়দা!
সেই দস্যু শাস্ত্র খুবই ভাল জানে। এখানে সেই ‘লেখা আছে’ কথাটি রুটির সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু সেখানে দূতদের সঙ্গেই তো সম্পর্কিত; বস্তুত লেখা আছে, তিনি তোমার জন্য আপন দূতদের আজ্ঞা দেবেন, তাঁরা যেন আপন হাতে তোমাকে তুলে বহন করেন (লুক ৪:১০, ১১)। হে প্রবঞ্চনার ওস্তাদ, পরবর্তীতে যা লেখা আছে তুমি কেন তার উল্লেখ কর না? তুমি তার উল্লেখ না করলেও আমি তা ভালভাবেই বুঝি, কেননা লেখা ছিল: হে চন্দ্রবোড়া ও কেউটে সাপ, আমি তোমার উপর পা দেব, আমি সাপ ও কাকড়া বিছে মাড়িয়ে যাব (সাম ৯১:১৩ দ্রঃ)—বলা বাহুল্য, পরমত্রিত্বের রক্ষা ও শক্তি গুণেই তা করব।
তোমার চোখের সামনে এক নিমেষেই যত রাজ্যকে তার আপন রাজ্য বলে দেখিয়ে তোমার কাছে পূজা দাবি ক’রে সে যদি কৃপণতা দিয়ে তোমাকে আক্রমণ করে, তাহলে তুমি তাকে বাজে পদার্থের মতই ঘৃণা কর। ক্রুশচিহ্ন দ্বারা সংরক্ষিত হয়ে তুমি তাকে বল: আমিও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি; তোমার মত আমি গর্বের জন্য স্বর্গীয় গৌরব থেকে বিচ্যুত হয়েছি, এমন নয়; আমি তো খ্রিষ্টেই পরিবৃত; বাপ্তিস্মে খ্রিষ্ট হয়ে উঠলেন আমার উত্তরাধিকার: তুমিই বরং আমাকে পূজা করবে! বিশ্বাস কর, তেমন কথায় পরাজিত ও লজ্জায় অভিভূত হয়ে সে সেই সকল আলোপ্রাপ্তজন থেকে দূরে সরে যাবে যেইভাবে আলোর আদিকারণ সেই খ্রিষ্ট থেকে দূরে সরে গেছিল।
যারা বাপ্তিস্মের শক্তি মেনে নেয়, বাপ্তিস্ম তাদের এ সমস্ত মঙ্গলদান মঞ্জুর করে। যারা প্রশংসনীয় ক্ষুধায় ভুগছে, বাপ্তিস্ম তাদের সামনে তৃপ্তিকর ভোজনপাট সাজায়।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৯১
ধুয়ো:
আপন পালক দিয়ে প্রভু তোমাকে ঢেকে রাখবেন,
তাঁর ডানার নিচে তুমি পাবে আশ্রয়।

তুমি যে বাস কর পরাৎপরের গোপন আশ্রয়ে,
তুমি যে সর্বশক্তিমানের ছায়ায় কর রাত্রিযাপন,
প্রভুকে বল: ‘আমার আশ্রয়, আমার গিরিদুর্গ,
আমার পরমেশ্বর, তোমাতেই ভরসা রাখি।’   [ধুয়ো]

ব্যাধের ফাঁদ ও সর্বনাশা মড়ক থেকে
তিনি তোমাকে উদ্ধার করবেন।
তাঁর পালক দিয়ে তিনি তোমাকে ঢেকে রাখবেন,
তাঁর ডানার নিচে তুমি পাবে আশ্রয়।   [ধুয়ো]

স্বয়ং প্রভুই তোমার আশ্রয়,
সেই পরাৎপরকে তুমি করেছ তোমার আবাস,
তাই তোমার উপর কোন অনিষ্ট এসে পড়বে না,
আসবে না কো তোমার তাঁবুপ্রান্তে কোন দুর্বিপাক।   [ধুয়ো]

কারণ তোমার জন্যই আপন দূতদের তিনি আজ্ঞা দিলেন,
তাঁরা যেন পদে পদে তোমায় রক্ষা করেন;
তাঁরা তোমায় দু’হাতে তুলে বহন করবেন,
পাথরে তোমার পায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে।   [ধুয়ো]

সে আমাকে ডাকবে আর আমি দেব সাড়া, সঙ্কটে আমি থাকব তার সঙ্গে,
তাকে নিস্তার করব, গৌরবান্বিত করব;
দীর্ঘায়ু দিয়ে তৃপ্তি দেব তাকে,
তাকে দেখাব আমার পরিত্রাণ।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু,
যে রুটিতে বিশ্বাস পুষ্টি লাভ করে, আশা বেড়ে ওঠে ও ভক্তি বলবান হয়,
সেই স্বর্গীয় রুটিতে পরিতৃপ্ত হয়ে
আমরা যেন তাঁরই জন্য ক্ষুধিত হই যিনি জীবনময় ও সত্যকার রুটি;
তোমার মুখ থেকে যে প্রতিটি উক্তি নির্গত হয়,
আমরা যেন তাতেই বাঁচি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২য় রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর গানটি বর্জিত।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, তুমি তোমার প্রিয়তম পুত্রের কথা শুনতে আমাদের আদেশ দিয়েছ।
প্রসন্ন হয়ে তুমি নিজেই তোমার বাণীদানে আমাদের অন্তর পরিপুষ্ট কর,
আমরা যেন শোধিত মনশ্চক্ষু দিয়ে
তোমার গৌরবের দর্শন পেয়ে আনন্দিত হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
আদিপুস্তক থেকে পাঠ (১২:১-৪ক)

একদিন প্রভু আব্রামকে বললেন,
‘তোমার দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও পিতৃগৃহ ছেড়ে চলে যাও,
সেই দেশের দিকেই যাও, যা আমি তোমাকে দেখাব।
আমি তোমাকে এক মহাজাতি করে তুলব,
তোমাকে আশীর্বাদ করব ও তোমার নাম মহৎ করব;
তুমি নিজেই হবে আশীর্বাদ স্বরূপ!
যারা তোমাকে আশীর্বাদ করে, আমি তাদের আশীর্বাদ করব;
যে কেউ তোমাকে অভিশাপ দেয়, আমি তাকে অভিশাপ দেব;
এবং পৃথিবীর সকল গোত্র
তোমাতে আশিসপ্রাপ্ত হবে।’
তখন আব্রাম প্রভুর সেই বাণী অনুসারে রওনা হলেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৩৩
ধুয়ো:
আমাদের উপর বিরাজ করুক তোমার কৃপা, প্রভু,
আমরা যে তোমার প্রত্যাশায় আছি।

ন্যায়সঙ্গতই তো প্রভুর বাণী,
বিশ্বস্ততায় সাধিত তাঁর প্রতিটি কাজ।
তিনি ধর্মময়তা ও ন্যায় ভালবাসেন;
পৃথিবী প্রভুর কৃপায় পরিপূর্ণ।   [ধুয়ো]

কিন্তু দেখ, প্রভুর চোখ নিবদ্ধ তাদেরই প্রতি,
যারা তাঁকে ভয় করে, যারা তাঁর কৃপার প্রত্যাশায় থাকে,
তিনি মৃত্যু থেকে তাদের প্রাণ উদ্ধার করবেন,
তাদের বাঁচিয়ে রাখবেন দুর্ভিক্ষের দিনে।   [ধুয়ো]

আমাদের প্রাণ প্রভুর প্রতীক্ষায় আছে,
তিনিই আমাদের সহায়, আমাদের ঢাল;
আমাদের উপর বিরাজ করুক তোমার কৃপা, প্রভু,
আমরা যে তোমার প্রত্যাশায় আছি।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
তিমথির কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের দ্বিতীয় পত্র থেকে পাঠ (১:৮খ-১০)

প্রিয়তম সন্তান, ঈশ্বরের পরাক্রমের উপরে নির্ভর ক’রে আমার সঙ্গে তুমিও সুসমাচারের জন্য দুঃখকষ্ট বরণ কর। তিনি আমাদের পরিত্রাণ করেছেন এবং পবিত্র আহ্বানে আহ্বানও করেছেন—আমাদের কোন সৎকর্ম দেখে নয়, বরং তাঁর সঙ্কল্প ও তাঁর সেই অনুগ্রহ অনুসারে, যে অনুগ্রহ অনাদিকাল থেকেই খ্রিষ্টযিশুতে আমাদের দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কেবল এখনই প্রকাশ পেয়েছে আমাদের পরিত্রাতা খ্রিষ্টযিশুর আবির্ভাবের ফলে: মৃত্যু বিনষ্ট ক’রে তিনি সুসমাচারের মাধ্যমে জীবন ও অমরত্ব উদ্ভাসিত করেছেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।
সেই উজ্জ্বল মেঘ থেকে এক কণ্ঠস্বর বলে উঠল:
‘ইনি আমার প্রিয়তম পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন; তাঁর কথা শোন।’
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৭:১-৯)

একদিন, পিতর, যাকোব ও তাঁর ভাই যোহনকে সঙ্গে করে যিশু নিজেদের মধ্যে একাকী হয়ে থাকবার জন্য একটা উঁচু পর্বতের উপরে তাঁদের নিয়ে গেলেন; এবং তাঁদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হলেন: তাঁর শ্রীমুখ সূর্যের মত দীপ্তিমান, ও তাঁর পোশাক আলোর মত নির্মল হয়ে উঠল। আর হঠাৎ মোশি ও এলিয় তাঁদের দেখা দিলেন, তাঁরা তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন।
তখন পিতর যিশুকে বললেন, ‘প্রভু, এখানে আমাদের থাকা উত্তম; আপনি ইচ্ছা করলে আমি এখানে তিনটে কুটির তৈরি করব, আপনার জন্য একটা, মোশির জন্য একটা ও এলিয়ের জন্য একটা।’ তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে দেখ, একটি উজ্জ্বল মেঘ নিজ ছায়ায় তাঁদের ঘিরে রাখল, আর হঠাৎ সেই মেঘ থেকে এক কণ্ঠস্বর বলে উঠল: ‘ইনি আমার প্রিয়তম পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন; তাঁর কথা শোন।’
একথা শুনে শিষ্যেরা উপুড় হয়ে পড়লেন ও ভীষণ ভয়ে অভিভূত হলেন। কিন্তু যিশু কাছে এসে তাঁদের এই বলে স্পর্শ করলেন, ‘ওঠ, ভয় করো না।’ তখন চোখ তুলে তাঁরা কেবল যিশুকেই ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলেন না।
পর্বত থেকে নামবার সময়ে যিশু তাঁদের এই আদেশ দিয়ে বললেন, ‘তোমরা এই দর্শনের কথা কাউকেই বলো না, যতদিন না মানবপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করেন।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
মহাপ্রাণ সাধু লিওর উপদেশ

প্রভু মনোনীত সাক্ষীদের সামনে আপন গৌরব প্রকাশ করেন, ও সকল মানুষের মত তাঁরও যে সাধারণ দেহ আছে, তা তিনি এমন বিভায় উজ্জ্বল করে তোলেন যে তাঁর মুখও সূর্যের জ্যোতির মত ও তাঁর পোশাক তুষারের মত শুভ্র হয়ে ওঠে।
এ রূপান্তরের বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল, শিষ্যদের হৃদয় থেকে যেন ক্রুশের বাধা সরিয়ে দেওয়া হয়, এবং তাঁর নিহিত ঐশমর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব যাঁদের কাছে প্রকাশিত হচ্ছিল, তাঁর স্বেচ্ছাকৃত যন্ত্রণাভোগের অবমাননাও যেন তাঁদের বিশ্বাস বিচলিত না করে। তবু কম মঙ্গলময় নয় এমন সঙ্কল্প অনুসারে পবিত্র মণ্ডলীর আশা স্থিতমূল করা হচ্ছিল, যেন খ্রিষ্টের গোটা দেহ সচেতন হতে পারত, সে কী ধরনের রূপান্তরের পাত্র হতে যাচ্ছিল, এবং অঙ্গগুলিও যেন নিজেদের জন্য সেই মর্যাদারই সাহচর্য প্রতিশ্রুত হতে পারত যা ইতিমধ্যে মাথায় উদ্ভাসিত হয়েছিল।
আপন মহিমময় পুনরাগমন সম্বন্ধে কথা বলতে গিয়ে স্বয়ং প্রভু এবিষয়ে বলেছিলেন, তখন ধার্মিকেরা তাদের পিতার রাজ্যে সূর্যের মত দীপ্তিমান হয়ে উঠবে (মথি ১৩:৪৩); প্রেরিতদূত পলও একই বিষয়ে বলেন, আমি মনে করি যে, আমাদের প্রতি যে গৌরব প্রকাশিত হবে, তার সঙ্গে এ বর্তমানকালের দুঃখকষ্ট তুলনার যোগ্য নয় (রো ৮:১৮); তিনি আরও বলেন, তোমাদের তো মৃত্যুই হয়েছে, আর তোমাদের জীবন তো এখন খ্রিষ্টের সঙ্গে ঈশ্বরেই নিহিত হয়ে আছে। কিন্তু খ্রিষ্ট যখন আবির্ভূত হবেন—তিনিই তো তোমাদের জীবন—তখন তোমরাও তাঁর সঙ্গে গৌরবে আবির্ভূত হবে (কল ৩:৩-৪)।
তবু শিষ্যদের সুস্থির করার জন্য ও পূর্ণ জ্ঞানে তাঁদের আনবার উদ্দেশ্যে সেই অলৌকিক কাজে অন্য একটা শিক্ষা উপস্থাপিত হল। কেননা বিধান ও নবীদের প্রতিনিধি মোশি ও এলিয় প্রভুর সঙ্গে কথা বলতে আবির্ভূত হলেন, যেন সেই পাঁচজনের উপস্থিতিতে শাস্ত্রের এ বাণী পূর্ণতা লাভ করতে পারে: দু’জন বা তিনজন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হোক (মথি ১৮:১৬)।
এ বাণীর চেয়ে আরও অবিচল বা আরও স্থিতমূল কী থাকতে পারে, যখন তেমন বাণীর প্রচারে প্রাক্তন ও নব সন্ধির তুরি একসুর ধ্বনিত করছে ও সুসমাচারের শিক্ষাবাণীর সঙ্গে প্রাচীন যত সাক্ষ্যদানের বাদ্যযন্ত্রও অংশ নিচ্ছে?
কেননা উভয় সন্ধির পৃষ্ঠা পরস্পরের বিষয়ে সাক্ষ্য বহন করে; আর রহস্যগুলির পূর্বচিহ্নগুলি যাঁকে আবৃতভাবে প্রতিশ্রুত করেছিল, বর্তমান গৌরবের বিভা তাঁকে প্রকাশমান ও বিদ্যমান দেখায়; আসলে ধন্য যোহনও বলেছিলেন, বিধান মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অনুগ্রহ ও সত্য যিশুখ্রিষ্টের মধ্য দিয়েই এসেছে (যোহন ১:১৭)। তাঁর মধ্যে নবীদের দৃষ্টান্তগুলোর প্রতিশ্রুতি ও বিধানের আদেশগুলোর মূল্যবোধ পূর্ণতা লাভ করল, অর্থাৎ কিনা তাঁর উপস্থিতির মাধ্যমে সমস্ত ভাববাণী সত্যাশ্রয়ী বলে প্রমাণিত হল, ও অনুগ্রহের মাধ্যমে আদেশগুলো পালনীয় হয়ে উঠল।
সুতরাং পবিত্রতম সুসমাচার প্রচারের ফলে সকলের বিশ্বাস সুস্থির হোক, আর কেউই যেন খ্রিষ্টের ক্রুশ নিয়ে লজ্জাবোধ না করে, সেই ক্রুশ দ্বারাই জগৎ মুক্তি লাভ করল।
তবে কেউই যেন ন্যায়ের জন্যও কষ্টভোগ করতে ভয় না করে, বা অঙ্গীকৃত পুরস্কার সম্বন্ধে সন্দেহ না করে, কেননা মানুষ পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই বিশ্রামে, ও মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জীবনে উত্তীর্ণ হয়; তিনি যখন আমাদের দশার সমস্ত অসুস্থতা বরণ করলেন, তখন আমরা যদি তাঁর সাক্ষ্যদানে ও ভালবাসায় তাঁর মধ্যে স্থিতমূল থাকি তবে তিনি যা জয় করলেন তা জয় করব, আর তিনি যা প্রতিশ্রুত হলেন তা গ্রহণ করব। অতএব আদেশগুলো পালনের জন্য ও প্রতিকূলতা সহনের জন্যও পিতার কণ্ঠস্বর সর্বদাই যেন আমাদের কানে ধ্বনিত হতে থাকে: ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন: তোমরা তাঁর কথা শোন (মথি ১৭:৫)।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১১৯
ধুয়ো:
ইনি আমার প্রিয়তম পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন;
তাঁর কথা শোন।

ুখী তারা, নিখুঁত যাদের পথ,
প্রভুর বিধানে যারা চলে।
সুখী তারা, যারা তাঁর নির্দেশমালা পালন করে,
সমস্ত হৃদয় দিয়ে যারা তাঁর অন্বেষণ করে।   [ধুয়ো]

তারা কোন অন্যায় করে না,
তারা তাঁর সমস্ত পথে চলে।
তুমি জারি করেছ তোমার আদেশমালা,
তারা যেন তা সযত্নেই মেনে চলে।   [ধুয়ো]

আহা! তোমার বিধিকলাপ মেনে চলায়
আমার পথসকল সুস্থির হোক।
তবে তোমার সকল আজ্ঞার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকলে
আমি লজ্জায় পড়ব না।   [ধুয়ো]

আমি যখন শিখব তোমার ন্যায়বিচার সকল,
তখন সরল অন্তরে তোমাকে জানাব ধন্যবাদ।
তোমার বিধিকলাপ মেনে চলব,
আমায় কখনও পরিত্যাগ করো না।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এ গৌরবময় রহস্যময় খাদ্য গ্রহণ ক’রে
আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাই: কেননা এ পৃথিবীতে থাকতেও
আমরা তোমার কৃপায় স্বর্গীয় বিষয়ের সহভাগী হয়েছি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৩য় রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর গানটি বর্জিত।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
সমস্ত দয়া ও মঙ্গলকর কর্মের সাধক হে পরমেশ্বর,
তুমি শিখিয়েছ, উপবাস, প্রার্থনা ও অর্থদানেই পাপের প্রতিকার।
আমাদের নিম্নাবস্থার কথা স্বীকার করে আমরা নম্রচিত্তে মিনতি জানাই:
আমাদের দিকে মুখ তুলে চাও,
পাপের বোঝা যখন আমাদের ভূলুণ্ঠিত করে,
তখন তোমার দয়াই যেন আমাদের উন্নতশির করে তোলে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
যাত্রাপুস্তক থেকে পাঠ (১৭:৩-৭)

একদিন জনগণ [মরুপ্রান্তরে] তেষ্টার জ্বালায় অস্থির হয়ে মোশির বিরুদ্ধে গজগজ করল; তারা বলল ‘তুমি কেন আমাদের মিশর দেশের বাইরে নিয়ে এলে? এখন আমরা, আমাদের সন্তানেরা, ও আমাদের পশুরা তেষ্টার জ্বালায় মরতে বসেছি।’ মোশি চিৎকার করে প্রভুকে ডাকলেন, ‘এই লোকদের নিয়ে আমি কী করব? আর একটু পরে এরা আমাকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলবে।’
তখন প্রভু মোশিকে বললেন, ‘তুমি লোকদের আগে আগে এগিয়ে যাও, ইস্রায়েলের কয়েকজন প্রবীণকেও সঙ্গে নাও; আর সেই যে লাঠি দিয়ে তুমি নদীতে আঘাত হেনেছিলে, তা হাতে করে এগিয়ে চল। দেখ, আমি হোরেবে সেই শৈলের উপরে তোমার সামনে দাঁড়াব; সেই শৈলে আঘাত হান, আর তা থেকে জল বেরিয়ে আসবে আর জনগণ তা খেতে পারবে।’
মোশি ইস্রায়েলের প্রবীণদের চোখের সামনে সেইমত করলেন। তিনি সেই জায়গার নাম মাস্সা ও মেরিবা রাখলেন, কারণ ইস্রায়েল সন্তানেরা ঝগড়া করেছিল ও প্রভুকে এই বলে পরীক্ষা করেছিল: ‘প্রভু কি আমাদের মধ্যে আছেন, না কি নেই?’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৯৫
ধুয়ো:
তোমরা যদি আজ তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে!
‘হৃদয় কঠিন করো না।’

এসো, প্রভুর উদ্দেশে সানন্দে চিৎকার করি,
আমাদের ত্রাণশৈলের উদ্দেশে তুলি জয়ধ্বনি।
চল, ধন্যবাদগীতি গেয়ে তাঁর সম্মুখে যাই,
বাদ্যের ঝঙ্কারে তাঁর উদ্দেশে তুলি জয়ধ্বনি।   [ধুয়ো]

এসো, প্রণত হই; এসো, প্রণিপাত করি,
আমাদের নির্মাণকর্তা প্রভুর সম্মুখে করি জানুপাত,
তিনি যে আমাদের পরমেশ্বর,
আর আমরা তাঁর চারণভূমির জনগণ, তাঁর হাতের মেষপাল।   [ধুয়ো]

তোমরা যদি আজ তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে, ‘হৃদয় কঠিন করো না,
যেমনটি ঘটল মেরিবায় ও সেইদিন মাস্সায় সেই মরুদেশে;
সেখানে তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমায় যাচাই করল,
আমার কাজ দেখেও আমায় পরীক্ষা করল।’   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৫:১-২,৫-৮)

প্রিয়জনেরা, বিশ্বাসগুণে ধর্মময় বলে সাব্যস্ত হয়ে উঠে, আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্ট দ্বারা আমরা এখন ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি ভোগ করি; তাঁর দ্বারা আমরা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এই অনুগ্রহেই প্রবেশাধিকার লাভ করেছি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, এবং ঈশ্বরের গৌরবলাভের প্রত্যাশায় গর্ববোধ করি।
আর এই প্রত্যাশা তো আশাভ্রষ্ট করে না, কেননা ঈশ্বরের ভালবাসা আমাদের হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়েছে সেই পবিত্র আত্মা দ্বারা যাঁকে আমাদের দেওয়া হয়েছে।
কেননা আমরা যখন শক্তিহীন ছিলাম, তখনই খ্রিষ্ট উপযুক্ত সময়ে ভক্তিহীনদের জন্য মরলেন। বস্তুত ধার্মিকের জন্য প্রায় কেউই মরতে সম্মত নয়, হয় তো এমন কেউ থাকতে পারে, যে সৎমানুষের জন্যই মরতে সাহস করে। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রমাণ করছেন, কেননা আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনই খ্রিষ্ট আমাদের জন্য মরলেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।
প্রভু, আপনি সত্যিই জগতের ত্রাণকর্তা;
তেমন জীবনময় জল আমাকে দিন, আমার যেন আর তেষ্টা না পায়।
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
যোহন-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৪:৫-৪২)

যেতে যেতে যিশু সিখার নামে সামারিয়ার একটা শহরে এলেন; যাকোব তাঁর সন্তান যোসেফকে যে জমিটা দিয়েছিলেন, সেই শহর তারই কাছাকাছি। যাকোবের কুয়োটা সেইখানে ছিল, আর যিশু যাত্রার জন্য ক্লান্ত হওয়ায় সেই কুয়োর ধারে বসে পড়লেন। তখন প্রায় বেলা বারোটা। সামারীয় একজন স্ত্রীলোক জল তুলতে এল; যিশু তাকে বললেন, ‘আমাকে একটু জল খেতে দাও।’ তাঁর শিষ্যেরা তখন খাবার কিনতে শহরে গিয়েছিলেন। সামারীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, ‘ইহুদী হয়ে আপনি কেমন করে সামারীয় স্ত্রীলোক এই আমারই কাছে জল চাইতে পারেন?’ বাস্তবিকই সামারীয়দের সঙ্গে ইহুদীরা কোন মেলামেশাই করে না।
উত্তরে যিশু তাকে বললেন, ‘তুমি যদি জানতে ঈশ্বরের দান আর কেইবা তোমাকে বলছেন, আমাকে একটু জল খেতে দাও, তাহলে তুমিই তাঁর কাছে চাইতে, আর তিনি তোমাকে জীবনময় জল দিতেন!’ স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, ‘প্রভু, জল তোলার মত আপনার কিছু নেই, আর কুয়োটা গভীর; আপনি কোথা থেকে সেই জীবনময় জল পাবেন? যিনি এই কুয়োটা আমাদের দিয়ে গেছিলেন, এর জল নিজেও খেয়েছিলেন আর যাঁর সন্তানেরা ও পশুপালও খেয়েছিল, আপনি কি আমাদের পিতৃপুরুষ সেই যাকোবের চেয়েও মহান?’
যিশু তাঁকে উত্তর দিয়ে বললেন, ‘যে কেউ এই জল খায়, তার আবার তেষ্টা পাবে; কিন্তু আমি যে জল দেব, সেই জল যে খাবে, তার আর কখনও তেষ্টা পাবে না; আমি তাকে যে জল দেব, সেই জলই তার অন্তরে এমন এক জলের উৎস হয়ে উঠবে যা অনন্ত জীবনের উদ্দেশে প্রবাহী।’ স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, ‘প্রভু, তেমন জল আমাকে দিন, আমার যেন আর তেষ্টা না পায়, এখানে জল তুলতেও যেন আর আসতে না হয়।’ যিশু তাঁকে বললেন, ‘যাও, তোমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে এখানে ফিরে এসো।’
স্ত্রীলোকটি উত্তরে তাঁকে বলল, ‘আমার স্বামী নেই।’ যিশু তাঁকে বললেন, ‘ঠিকই বলেছ, আমার স্বামী নেই; কেননা তোমার পাঁচটা স্বামী হয়েছিল আর এখন যার সঙ্গে আছ, সে তোমার স্বামী নয়। হ্যাঁ, তুমি সত্যকথা বলেছ।’ স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, ‘প্রভু, দেখতে পাচ্ছি, আপনি একজন নবী। আমাদের পিতৃপুরুষেরা এই পর্বতে উপাসনা করতেন, আর আপনারা কিনা বলে থাকেন, উপাসনা করার স্থান যেরুশালেমেই আছে।’
যিশু তাঁকে বললেন, ‘নারী, আমাকে বিশ্বাস কর, সেই ক্ষণ আসছে, যখন তোমরা পিতার উপাসনা করবে এই পর্বতেও নয়, যেরুশালেমেও নয়। তোমরা যা জান না, তার উপাসনা করে থাক; আমরা যা জানি, তারই উপাসনা করি, কেননা পরিত্রাণ ইহুদীদের মধ্য থেকেই আসে। কিন্তু সেই ক্ষণ আসছে, এমনকি তা এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত উপাসকেরা আত্মা ও সত্যের শরণেই পিতার উপাসনা করবে, কারণ পিতা তেমন উপাসকই দাবি করেন। ঈশ্বর আত্মাস্বরূপ, এবং যারা তাঁর উপাসনা করে, আত্মা ও সত্যের শরণেই তাদের উপাসনা করতে হয়।’ স্ত্রীলোকটি বলল, ‘আমি জানি যে, খ্রিষ্ট বলে অভিহিত মশীহ আসছেন; তিনি যখন আসবেন, তখন সমস্তই আমাদের জানাবেন।’ যিশু তাকে বললেন, ‘আমি-ই আছি, এই আমি যে তোমার সঙ্গে কথা বলছি।’
ঠিক এসময়ে তাঁর শিষ্যেরা ফিরে এলেন। তাঁকে একজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলতে দেখে তাঁরা আশ্চর্য হলেন, তবু কেউ জিজ্ঞাসা করলেন না, ‘আপনি কী চাচ্ছেন?’ বা ‘ওর সঙ্গে কেন কথা বলছেন?’ স্ত্রীলোকটি কলসিটা ফেলে রেখে শহরের দিকে চলে গেল আর লোকদের বলল, ‘এসো, একজন মানুষকে দেখে যাও, জীবনে আমি যা কিছু করেছি, যিনি তা সবই আমাকে বলে দিয়েছেন। হয় তো কি উনিই সেই খ্রিষ্ট?’ তারা শহর থেকে বেরিয়ে তাঁর কাছে যাবার জন্য রওনা হল।
এদিকে শিষ্যেরা তাঁকে অনুরোধ করে বলছিলেন, ‘রাব্বি, কিছুটা খেয়ে নিন।’ কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, ‘আমার এমন খাদ্য আছে, যার কথা তোমরা জান না।’ তাই শিষ্যেরা এই বলে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, ‘হয় তো কেউ কি তাঁকে খাবার এনে দিয়েছে?’ যিশু তাঁদের বললেন, ‘যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করা ও তাঁর কাজ সম্পন্ন করাই আমার খাদ্য। তোমরা কি একথা বলে থাক না যে, আর চার মাস বাকি, তারপর ফসল হবে? দেখ, আমি তোমাদের একটা কথা বলি: চোখ তুলে মাঠের দিকে চেয়ে দেখ, ফসল কেমন সোনালী হয়ে কাটার অপেক্ষায় আছে; এর মধ্যে ফসলকাটিয়ে মজুরি পাচ্ছে, ও অনন্ত জীবনের উদ্দেশে ফসল সংগ্রহ করে যাচ্ছে, যেন ফসলকাটিয়ে ও বীজবুনিয়ে দু’জনে একসঙ্গেই আনন্দ পায়। কেননা এক্ষেত্রে প্রবাদটা যথার্থ হয়ে ওঠে, একজন বোনে, আর একজন কাটে।
আমি তোমাদের এমন ফসল কাটতে প্রেরণ করলাম, যার জন্য তোমরা শ্রম করনি; অন্যেরা শ্রম করেছে, আর তোমরা তাদের শ্রমের ফল ভোগ করতে এসেছ।’
সেই শহরের অনেক সামারীয় যিশুর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে উঠল স্ত্রীলোকটির এই সাক্ষ্যদানের জন্য, ‘জীবনে আমি যা কিছু করেছি, তিনি তা সবই আমাকে বলে দিয়েছেন।’ তাই সামারীয় লোকেরা তাঁর কাছে এসে তাঁকে তাদের সঙ্গে থাকতে অনুরোধ করল, আর তিনি সেখানে দু’ দিন থাকলেন। আরও অনেকে তাঁর বাণীগুণেই বিশ্বাসী হল; তারা স্ত্রীলোকটিকে বলছিল, ‘এখন তোমার সেই সমস্ত কথার জন্য আর বিশ্বাস করি না। আমরা নিজেরাই শুনেছি, আর আমরা জানি যে, তিনি সত্যিই জগতের ত্রাণকর্তা।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
যোহন-রচিত সুসমাচারে বিশপ সাধু আগস্তিনের ব্যাখ্যা

একজন স্ত্রীলোক এল (যোহন ৪:৭): এই স্ত্রীলোক মণ্ডলীর দৃষ্টান্ত, এমন মণ্ডলী যা তখনও ধর্মময়তাপ্রাপ্ত নয়, কিন্তু ধর্মময়তা পাবার পথে—এটি বক্তব্যের মূল সুর।
স্ত্রীলোক অচেতন হয়ে এসে যিশুকে পায়, আর তিনি তার সঙ্গে কথা বলতে লাগেন। এসো, ভেবে দেখি কোন বিষয়ে, ভেবে দেখি কেনই বা সামারীয় একজন স্ত্রীলোক জল তুলতে এল। সামারীয়েরা ইহুদী জাতির মানুষ ছিল না: তারা বিদেশী বা বিধর্মীই যেন। মণ্ডলীর দৃষ্টান্তস্বরূপ এ স্ত্রীলোক যে বিধর্মীদের মধ্য থেকেই আগত, একথা প্রকৃতপক্ষে যুক্তিসঙ্গত, কেননা মণ্ডলীরও এমন বিধর্মীদের মধ্য থেকে আসার কথা ছিল, যারা ইহুদীদের পক্ষে বিজাতি ও বিধর্মী।
সুতরাং এসো, সেই স্ত্রীলোকে আমাদের নিজেদের কথা শুনি, তার মধ্যে আমাদের নিজেদের পরিচয় জেনে নিই, আর তার মধ্য আমাদের নিজেদের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। আসলে সেই স্ত্রীলোক বাস্তবতা নয়, দৃষ্টান্তই ছিল, কেননা সে নিজেও আগে দৃষ্টান্ত-ভূমিকা ধারণ করল আর পরবর্তীতেই বাস্তবতাস্বরূপ হয়ে উঠল। বস্তুতপক্ষে সে তাঁর উপরেই বিশ্বাস রাখল, যিনি তার মধ্যে আমাদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাচ্ছিলেন। তাই সেই স্ত্রীলোক জল তুলতে এল। সে এমনিই জল তুলতে এসেছিল, যেইভাবে নর-নারী সাধারণত করে থাকে।
যিশু তাকে বললেন, ‘আমাকে একটু জল খেতে দাও।’ তাঁর শিষ্যেরা তখন খাবার কিনতে শহরে গিয়েছিলেন। সামারীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, ‘ইহুদী হয়ে আপনি কেমন করে সামারীয় স্ত্রীলোক এই আমারই কাছে জল চাইতে পারেন?’ বাস্তবিকই সামারীয়দের সঙ্গে ইহুদীরা কোন মেলামেশাই করে না (যোহন ৪:৭-৯)।
লক্ষ করে দেখ নিজেদের মধ্যে তারা কতই না বিদেশীর মত ছিল: ইহুদীরা তাদের পাত্র-সামগ্রীও ব্যবহার করত না। আর যেহেতু সেই স্ত্রীলোক জল তোলার জন্য পাত্র সঙ্গে করে আনছিল, সেজন্য বিস্মিত হল, ইহুদীরা যা সাধারণত করত না, কেমন করে ইহুদী একজন তার কাছে জল চায়। কিন্তু যিনি জল চাচ্ছিলেন, তিনি স্ত্রীলোকের বিশ্বাসের জন্যই তৃষ্ণার্ত ছিলেন।
এবার শোন কেইবা জল চাচ্ছেন: উত্তরে যিশু তাকে বললেন, ‘তুমি যদি জানতে ঈশ্বরের দান আর কেইবা তোমাকে বলছেন, আমাকে একটু জল খেতে দাও, তাহলে তুমিই তাঁর কাছে চাইতে, আর তিনি তোমাকে জীবনময় জল দিতেন!’ (যোহন ৪:১০)।
তিনি জল চাইলেন, আবার তৃষ্ণা মেটাবেন বলে প্রতিশ্রুত হলেন। গ্রহণ করতে উদ্যত ব্যক্তিই যেন তিনি অভাবী, আবার তৃপ্তি দিতে উদ্যত ব্যক্তিই যেন তিনি প্রাচুর্যময়। তুমি যদি জানতে ঈশ্বরের দান: পবিত্র আত্মাই ঈশ্বরের দান। যিশু কিন্তু স্ত্রীলোকের সঙ্গে এখনও আবৃত ভাবেই কথা বলছেন, আস্তে আস্তেই তার হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করছেন। হয় তো তিনি ইতিমধ্যে শিক্ষাও দিয়েছেন; কেননা অধিক মধুর ও মঙ্গলময় কীবা থাকতে পারে এ পরবর্তী কথার চেয়ে: তুমি যদি জানতে ঈশ্বরের দান আর কেইবা তোমাকে বলছেন, আমাকে একটু জল খেতে দাও, তাহলে তুমিই তাঁর কাছে চাইতে, আর তিনি তোমাকে জীবনময় জল দিতেন!
তাহলে তিনি আর কোন্‌ জল তাকে দিতে যাচ্ছেন সেই জল ছাড়া যে জলের বিষয়ে লেখা আছে, তোমাতেই জীবনের উৎস? (সাম ৩৬:১০)। কেননা যারা তোমার গৃহের প্রাচুর্যে পরিতৃপ্ত (সাম ৩৬:১০), তারা কেমন করে তৃষ্ণার্ত হতে পারে?
তিনি একধরনের প্রাচুর্য ও পবিত্র আত্মার তৃপ্তি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন, অথচ স্ত্রীলোকটি তখনও বুঝে উঠতে পারছিল না; আর যখন বুঝতে পারছিল না, তখন উত্তরে কী বলতে পারত? স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, ‘প্রভু, তেমন জল আমাকে দিন, আমার যেন আর তেষ্টা না পায়, এখানে জল তুলতেও যেন আর আসতে না হয়।’ (যোহন ৪:১৫)। অভাব তাকে পরিশ্রম করতে বাধ্য করত, আবার দুর্বলতা পরিশ্রম প্রত্যাখ্যান করত। আহা, সে যদি একথা শুনতে পেত: তোমরা, পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত যারা, সকলে আমার কাছে এসো, আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব (মথি ১১:২৮)। যিশু ঠিক একথাই তাকে বলছিলেন, সে যেন আর পরিশ্রম না করে; সে কিন্তু তখনও বুঝতে পারছিল না।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৮৪
ধুয়ো:
সুখী তারা, যারা বাস করে তোমার গৃহে,
তারা তোমার প্রশংসা নিত্যই করে থাকে।

তোমার আবাসগৃহগুলো কতই না মনোরম, হে সেনাবাহিনীর প্রভু;
প্রভুর প্রাঙ্গণের জন্য আমার প্রাণ ব্যাকুল, আহা মূর্ছাতুর;
জীবনময় ঈশ্বরের জন্য আনন্দচিৎকারে ফেটে পড়ে
আমার হৃদয়, আমার দেহ।   [ধুয়ো]

চড়ুই পাখিও খুঁজে পায় বাসা,
দোয়েলও পায় শাবকদের রেখে যাওয়ার নীড়—
সেই তো তোমার বেদি, হে সেনাবাহিনীর প্রভু,
হে আমার রাজা, হে আমার পরমেশ্বর।   [ধুয়ো]

সুখী তারা, যারা বাস করে তোমার গৃহে,
তারা তোমার প্রশংসা নিত্যই করে থাকে।
সুখী তারা, তোমাতেই যাদের শক্তি,
যাদের অন্তরে বিরাজিত তোমার যত পথ।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এ পৃথিবীতে স্বর্গীয় গৌরবের পণ সেই দিব্য রুটি গ্রহণ ক’রে
আমরা তোমাকে অনুনয় করি:
যা কিছু রহস্যের আড়ালে উদ্‌যাপন করছি,
তা যেন আমাদের অন্তরে পূর্ণ সার্থকতা অর্জন করে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৪র্থ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর গানটি বর্জিত।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, মানবসমাজের যে পুনর্মিলন তোমার ঐশবাণী সাধন করেছেন,
তা সত্যি তোমার এক অপূর্ব কীর্তি।
আশীর্বাদ কর:
গোটা খ্রিষ্টমণ্ডলী যেন উদ্দীপ্ত ভক্তি ও জ্বলন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে
আসন্ন পাস্কাপর্বের দিকে দ্রুতপদে এগিয়ে চলতে পারে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
শামুয়েলের প্রথম পুস্তক থেকে পাঠ (১৬:১খ,৬-৭,১০-১৩)

একদিন প্রভু শামুয়েলকে বললেন, ‘তোমার শিংটায় তেল ভরে নিয়ে রওনা হও, আমি তোমাকে বেথলেহেমের যেসের কাছে প্রেরণ করছি, কারণ তার ছেলেদের মধ্যে আমি আমার জন্য এক রাজার সন্ধান পেয়েছি।’
তিনি এসে উপস্থিত হলে এলিয়াবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললেন, ‘কোন সন্দেহ নেই: প্রভুর তৈলাভিষিক্তজন তাঁর সামনে উপস্থিত!’ কিন্তু প্রভু শামুয়েলকে বললেন, ‘তুমি কারও চেহারা বা উচ্চতার দিকে তাকিয়ে থেকো না, কারণ আমি ওকে প্রত্যাখ্যান করেছি; মানুষ যা লক্ষ করে, আমি তা লক্ষ করি না; মানুষ তো বাইরের চেহারার দিকে তাকায়, প্রভু কিন্তু হৃদয়েরই দিকে তাকান।’
যেসে তাঁর সাতজন ছেলেকে শামুয়েলের সামনে দাঁড় করালেন; কিন্তু শামুয়েল যেসেকে বললেন, ‘প্রভু এদের বেছে নেননি।’ তখন শামুয়েল যেসেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এরাই কি তোমার সকল ছেলে?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘কেবল ছোটজন বাকি রয়েছে; সে বর্তমানে মেষ চরাচ্ছে।’ তখন শামুয়েল যেসেকে বললেন, ‘তাকে আনতে লোক পাঠাও, কারণ সে না আসা পর্যন্ত আমরা খেতে বসব না।’ যেসে লোক পাঠিয়ে তাকে আনালেন। ছেলেটির গায়ের রঙ গোলাপী, চোখ দু’টো উজ্জ্বল, চেহারা সুন্দর।
প্রভু বললেন, ‘ওঠ, একে তৈলাভিষিক্ত কর; ও তো সেই!’ শামুয়েল তেলের শিং নিয়ে তার ভাইদের মধ্যে তাকে অভিষিক্ত করলেন, আর সেদিন থেকে প্রভুর আত্মা দাউদের উপরে প্রবলভাবে নেমে পড়ল।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ২৩
ধুয়ো:
প্রভু আমার পালক;
অভাব নেই তো আমার।

প্রভু আমার পালক;
অভাব নেই তো আমার।
আমায় তিনি শুইয়ে রাখেন নবীন ঘাসের চারণমাঠে,
আমায় নিয়ে যান শান্ত জলের কূলে;   [ধুয়ো]

তিনি সঞ্জীবিত করেন আমার প্রাণ,
তাঁর নামের খাতিরে আমায় চালনা করেন ধর্মপথে।
মৃত্যু-ছায়ার উপত্যকাও যদি পেরিয়ে যাই,
আমি কোন অনিষ্টের ভয় করি না, তুমি যে আমার সঙ্গে আছ।   [ধুয়ো]

তোমার যষ্টি, তোমার পাচনি আমাকে সান্ত্বনা দেয়।
আমার সম্মুখে তুমি সাজাও ভোজনপাট আমার শত্রুদের সামনে;
আমার মাথা তুমি তৈলসিক্ত কর;
আমার পানপাত্র উচ্ছলিত।   [ধুয়ো]

মঙ্গল ও কৃপাই হবে আমার সহচর
আমার জীবনের সমস্ত দিন ধরে,
আমি প্রভুর গৃহে বাস করব
চিরদিনের মত!   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
এফেসীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৫:৮-১৪)

প্রিয়জনেরা, তোমরা একসময় অন্ধকার ছিলে, কিন্তু প্রভুতে তোমরা এখন আলো: আলোর সন্তানদের মত চল; বস্তুত আলোর ফল সব ধরনের মঙ্গলময়তা, ধর্মময়তা ও সত্যে প্রকাশ পায়।
প্রভুর কি কি প্রীতিজনক, তা-ই জানতে সচেষ্ট থাক। অন্ধকারের ফলশূন্য যত কর্মের সহভাগী হয়ো না, বরং সেগুলোর আসল পরিচয় প্রকাশ্যে তুলে ধর, কেননা ওরা গোপনে যা কিছু করে, তা উচ্চারণ করা পর্যন্তও লজ্জার বিষয়। কিন্তু যা কিছু প্রকাশ্যে তুলে ধরা হয়, তা আলো দ্বারা উদ্ভাসিত হয়, কারণ যা কিছু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, তা নিজে-ই আলো। এজন্য লেখা আছে:
ঘুমিয়ে রয়েছ যে তুমি, জেগে ওঠ,
মৃতদের মধ্য থেকে নিদ্রাভঙ্গ হও,
আর খ্রিষ্ট তোমাকে উদ্ভাসিত করবেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
হে ঈশ্বরের বাণী খ্রিষ্ট, তুমি গৌরবময়।
আমিই জগতের আলো—একথা বলছেন প্রভু;
যে আমার অনুসরণ করে, সে পাবে জীবনের আলো।
হে ঈশ্বরের বাণী খ্রিষ্ট, তুমি গৌরবময়।

৮। সুসমাচার
যোহন-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৯:১-৪১)

একদিন, পথে যেতে যেতে যিশু একজন লোককে দেখতে পেলেন যে জন্ম থেকে অন্ধ। তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘রাব্বি, কে পাপ করেছে, এই লোকটা, না তার পিতামাতা, যার ফলে এ অন্ধ হয়ে জন্মেছে?’ যিশু উত্তর দিলেন, ‘নিজেরও পাপের ফলে নয়, পিতামাতারও পাপের ফলে নয়, বরং এমনটি ঘটেছে যেন ঈশ্বরের কর্মকীর্তি তার মধ্যে প্রকাশ পায়। যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, দিনের আলো যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ আমাদের তাঁরই কাজ সাধন করতে হবে; রাত আসছে, তখন কেউ কাজ করতে পারবে না। যতদিন জগতে আছি, আমিই জগতের আলো।’
একথা বলার পর তিনি মাটিতে থুথু ফেললেন, আর সেই থুথু দিয়ে কাদা তৈরি করে লোকটির চোখে তা মাখিয়ে দিলেন এবং তাকে বললেন, ‘সিলোয়াম জলকুণ্ডে গিয়ে ধুয়ে ফেল’—সিলোয়াম কথাটার অর্থ ‘প্রেরিত’। সে তখন চলে গিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলল, আর অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়েই ফিরে এল।
প্রতিবেশীরা ও যারা আগে তাকে ভিক্ষুক অবস্থায় দেখেছিল, তারা বলতে লাগল, ‘এ কি সেই লোক নয়, যে বসে বসে ভিক্ষা করত?’ কেউ কেউ বলল, ‘সে-ই বটে।’ আবার কেউ কেউ বলল, ‘না, সে নয়, কিন্তু দেখতে তারই মত।’ তখন লোকটি নিজে বলল, ‘আমিই সে।’ তাই তারা তাকে বলল, ‘তবে কেমন করে তোমার চোখ খুলে গেল?’ সে উত্তর দিল, ‘যিশু নামে সেই মানুষ কাদা তৈরি করে আমার চোখে তা মাখিয়ে দিলেন এবং আমাকে বললেন, সিলোয়াম জলকুণ্ডে গিয়ে ধুয়ে ফেল; তাই আমি গেলাম, আর ধোয়ামাত্র চোখে দেখতে পেলাম।’ তারা তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘লোকটা কোথায়?’ সে বলল, ‘জানি না।’
যে লোকটি আগে অন্ধ ছিল, তাকে তারা ফরিশীদের কাছে নিয়ে গেল। যিশু যেদিন কাদা তৈরি করে তার চোখ খুলে দিয়েছিলেন, সেদিনটি সাব্বাৎ ছিল। তাই ফরিশীরা তাকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, সে কেমন করে চোখে দেখতে পেয়েছে। সে তাঁদের বলল, ‘তিনি আমার চোখের উপরে কাদা লাগিয়ে দিলেন, পরে ধুয়ে ফেললাম, আর এখন দেখতে পাচ্ছি।’
তখন কয়েকজন ফরিশী বললেন, ‘ওই লোকটা ঈশ্বর থেকে আসে না, কারণ সে সাব্বাৎ দিন মানে না।’ কিন্তু অন্য কেউ বললেন, ‘পাপী মানুষ কেমন করে তেমন চিহ্নকর্ম সাধন করতে পারে?’ তাই তাঁদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিল। তখন তাঁরা অন্ধটিকে আবার বললেন, ‘তার সম্বন্ধে তুমি কী বল? তোমার চোখ তো সে-ই খুলে দিয়েছে!’ সে বলল, ‘তিনি একজন নবী।’
সে যে অন্ধ ছিল আর এখন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে, তা ইহুদীরা বিশ্বাস করলেন না, যতক্ষণ না দৃষ্টিশক্তি-পাওয়া লোকটির পিতামাতাকে ডাকিয়ে এনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এ কি তোমাদের ছেলে, যার বিষয়ে তোমরা নাকি বলছ যে, অন্ধ হয়ে জন্মেছিল? তবে সে কেমন করে এখন চোখে দেখতে পাচ্ছে?’ তার পিতামাতা উত্তরে তাঁদের বলল, ‘এ যে আমাদের ছেলে আর অন্ধ হয়ে জন্মেছিল, আমরা তা জানি। কিন্তু কেমন করে যে এখন চোখে দেখতে পাচ্ছে, তা জানি না, আর কেইবা এর চোখ খুলে দিয়েছে, তাও জানি না। আপনারা একেই জিজ্ঞাসা করুন, এর তো বয়স হয়েছে। নিজের কথা নিজেই বলবে।’
ইহুদীদের ভয় করত বিধায়ই তার পিতামাতা তেমন উত্তর দিয়েছিল, কারণ এর মধ্যে ইহুদীরা এতে সম্মত হয়েছিলেন যে, যদি কেউ তাঁকে খ্রিষ্ট বলে স্বীকার করে, সে সমাজগৃহ থেকে বিচ্যুত হবে। এজন্যই তার পিতামাতা বলেছিল, ‘এর বয়স হয়েছে, একেই জিজ্ঞাসা করুন।’
সুতরাং ইহুদীরা, যে লোকটি আগে অন্ধ ছিল, তাকে দ্বিতীয়বার ডাকিয়ে এনে বললেন, ‘ঈশ্বরকে গৌরব আরোপ কর! আমরা জানি যে, ওই লোকটা একজন পাপী।’ সে উত্তর দিল, ‘তিনি একজন পাপী কিনা, জানি না; একটা কথা আমি জানি, অন্ধ ছিলাম, আর এখন চোখে দেখতে পাচ্ছি।’ তাঁরা তাকে বললেন, ‘সে তোমাকে কী করেছিল? কেমন করে তোমার চোখ খুলে দিয়েছিল?’ সে তাঁদের উত্তর দিল, ‘আগেও তো আপনাদের বলেছি, আর আপনারা শোনেননি। আবার শুনতে চাচ্ছেন কেন? আপনারাও কি তাঁর শিষ্য হতে চান?’ তাকে ভর্ৎসনা করে তাঁরা বললেন, ‘তুমিই ওর শিষ্য, আমরা মোশিরই শিষ্য। আমরা জানি যে, ঈশ্বর মোশির সঙ্গেই কথা বলেছিলেন, কিন্তু ও যে কোথা থেকে এসেছে, আমরা তা জানি না।’
লোকটি তাঁদের উত্তর দিল, ‘এই তো আশ্চর্যের ব্যাপার: তিনি যে কোথা থেকে আসেন, তা আপনারা জানেন না; অথচ তিনিই আমার চোখ খুলে দিলেন। আমরা জানি যে, ঈশ্বর পাপীদের কথা শোনেন না, কিন্তু কেউ যদি ঈশ্বরভক্ত হয় ও তাঁর ইচ্ছা পালন করে, তবে তিনি তার কথা শোনেন। জগতের আদি থেকে এমন কথা কখনও শোনা যায়নি যে, জন্মান্ধ মানুষের চোখ কেউ খুলে দিয়েছে। তিনি যদি ঈশ্বর থেকে আগত না হতেন, তাহলে কিছুই করতে পারতেন না।’ তাঁরা প্রতিবাদ করে তাকে বললেন, ‘তুমি একেবারে পাপের মধ্যেই জন্মেছ আর আমাদের শিক্ষা দেবে?’ আর তাকে বের করে দিলেন।
তাঁরা তাকে বের করে দিয়েছেন, কথাটা শুনে যিশু লোকটিকে খুঁজে পেয়ে তাকে বললেন, ‘মানবপুত্রের প্রতি তোমার কি বিশ্বাস আছে?’ উত্তরে সে বলল, ‘প্রভু, তিনি কে, আমি যেন তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারি।’ যিশু তাকে বললেন, ‘তুমি তো তাঁকে দেখেছ; যিনি তোমার সঙ্গে কথা বলছেন, তিনিই।’ সে বলল, ‘প্রভু, আমি বিশ্বাস করি!’ এবং তাঁর সামনে প্রণিপাত করল।
তখন যিশু বললেন, ‘আমি এই জগতে এসেছি এক বিচারের জন্য—যারা দেখতে পায় না, তারা যেন দেখতে পায়, এবং যারা দেখতে পায়, তারা যেন অন্ধ হয়ে যায়।’ যে কয়েকজন ফরিশী তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তাঁরা এই সমস্ত কথা শুনে তাঁকে বললেন, ‘আমরাও কি অন্ধ?’ যিশু তাঁদের বললেন, ‘যদি অন্ধ হতেন, তাহলে আপনাদের পাপ থাকত না, কিন্তু এখন যে আপনারা বলছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আপনাদের পাপ রয়ে গেছে।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আম্ব্রোজের পত্রাবলি

ভাই, তুমি এইমাত্র সুসমাচারের এমন বাণী শুনেছ, যেখানে বর্ণনা করা আছে, প্রভু যিশু পথ চলতে চলতে জন্ম থেকে অন্ধ একটি লোককে দেখলেন। যখন প্রভু তাকে দেখে এগিয়ে যাননি, তখন প্রভু যাকে এড়াতে চাইলেন না, আমাদেরও তাকে এড়াতে হবে না, বিশেষভাবে এজন্য যে, লোকটা জন্মান্ধ—এ এমন ব্যাপার যা এমনিই উল্লিখিত হয়নি।
কেননা দৃষ্টিশক্তির এমন অন্ধতা রয়েছে যা রোগের তীব্রতার ফলে প্রায়ই চোখ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে, কিন্তু সময় যেতে যেতে আবার প্রায় ঠিক হয়ে যায়; আরও, এমন অন্ধতা রয়েছে যা বিশেষ শারীরিক অসুবিধার ফলেই ঘটে, এটাও সঠিক চিকিৎসা দ্বারা নিরাময় হয়। আমি এ সমস্ত কথা বলছি যাতে তুমি উপলব্ধি করতে পার যে জন্মান্ধ লোককে সারিয়ে তোলা দক্ষতার উপর নির্ভর করে না, বরং ঐশশক্তির উপরেই নির্ভর করে: কোন চিকিৎসা প্রয়োগ না করে প্রভু যিশু তাকে সুস্থ করে তুলেছেন; বস্তুতপক্ষে তিনি এমন মানুষকে সুস্থ করলেন কেউই যাদের নিরাময় করতে পারছিল না। প্রকৃতির দুর্বলতায় উপযুক্ত উপায় দেওয়া স্রষ্টারই ব্যাপার, কেননা তিনিই প্রকৃতির প্রণেতা। এজন্য তিনি বলে চলেন, যতদিন জগতে আছি, আমিই জগতের আলো (যোহন ৯:৫)। অর্থাৎ যারা অন্ধ, তারা যদি আলো এই আমাকেই খোঁজ করে, তারা সকলে দেখতে পাবে। তোমরাও এগিয়ে এসো, তোমরাও আলোকিত হবে যাতে দেখতে পাও।
যিনি আদেশ দেওয়ামাত্র মানুষ পুনরুজ্জীবিত হত, আদেশ দেওয়ামাত্র মানুষ সেরে উঠত, যিনি মৃত মানুষকে ‘বেরিয়ে এসো’ বললেই লাজার সমাধি থেকে বেরিয়ে এলেন (যোহন ১১:৪৩); পক্ষাঘাতগ্রস্তকে ‘ওঠ, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও’ বললেই (যোহন ৫:৮) লোকটা উঠে নিজে থেকেই মাদুরটা সেখানে তুলে নিয়ে গেল যেখানে আগে শক্ত অঙ্গগুলির জন্য লোকে তাকে নিয়ে যেত; এক কথায়, যিনি আদেশ দেওয়ামাত্রই সবকিছু সাধিত হত, জন্মান্ধের অলৌকিক কাজ দ্বারা তাঁর কী অভিপ্রায় ছিল? আবার বলছি, থুথু ফেলে কাদা তৈরি করে তা অন্ধের চোখে মাখিয়ে তিনি যখন তাকে বলেন, সিলোয়াম জলকুণ্ডে গিয়ে ধুয়ে ফেল—সিলোয়াম কথাটার অর্থ ‘প্রেরিত’; আর সে চলে গিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলল এবং অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়েই ফিরে এল (যোহন ৯:৭), তখন তাঁর কী অভিপ্রায়? এসব কিছুর উদ্দেশ্য কী? আমি যদি ভুল না করি, তবে বলব: উদ্দেশ্যটা মহান, কেননা যিশু যাকে স্পর্শ করেন, সে আগের চেয়ে ভাল দেখতে পায়।
তাঁর ঈশ্বরত্ব ও পবিত্রতা মেনে নাও! আলোস্বরূপ হয়ে তিনি স্পর্শ করেই সেই আলো সঞ্চার করলেন; বাপ্তিস্মের পূর্বাভাস দিয়ে যাজকরূপে তিনি আত্মিক অনুগ্রহের রহস্যের বাস্তব রূপ দিলেন। তিনি থুথু ফেললেন তুমি যেন বুঝতে পার যে খ্রিষ্টে সবকিছুই আলো, এও যেন বুঝতে পার যে, সেই সত্যিকারে দেখতে পায়, যে তারই দ্বারা পবিত্রিত হয় যা খ্রিষ্ট থেকে আগত; তাঁর বাণীই আমাদের পরিশুদ্ধ করে, যেভাবে তিনি নিজে বললেন, এখন তোমরাই পরিশুদ্ধ সেই বাণী গুণে যা আমি তোমাদের কাছে প্রকাশ করেছি (যোহন ১৫:৩)।
তিনি যে কাদা তৈরি করে তা অন্ধের চোখে মাখালেন, এর অর্থ হল যে, যিনি কাদা দিয়ে মানুষকে গড়েছিলেন, তিনি সেই একই কাদা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুললেন। আরও, আমাদের মাংসের কাদা বাপ্তিস্ম সাক্রামেন্তের মধ্য দিয়েই অনন্ত জীবনের আলো লাভ করে।
তুমিও সিলোয়ামের দিকে এগিয়ে যাও, অর্থাৎ এগিয়ে যাও তাঁরই দিকে যিনি পিতা দ্বারা প্রেরিত হলেন, যেমনটি তিনি বললেন, আমি যে শিক্ষা দিচ্ছি, তা আমার নয়; যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই (যোহন ৭:১৬)। খ্রিষ্টই তোমাকে ধৌত করুন, তুমি যেন দেখতে পাও। সময় এসেছে: বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে এসো; শীঘ্রই এসো, দৃষ্টি ফিরে পেয়ে তুমি যেন সেই অন্ধের মত বলতে পার: আগে আমি অন্ধ ছিলাম আর এখন দেখতে পাচ্ছি;—রাত এগিয়ে এল, দিন কাছে এসে গেছে (রো ১৩:১২)।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩৪
ধুয়ো:
প্রভু আমার চোখে প্রলেপ দিলেন:
আমি গেলাম, নিজেকে ধৌত করলাম,
আমি এখন চোখে দেখতে পাচ্ছি,
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি।

সর্বদাই আমি প্রভুকে বলব ধন্য,
নিয়তই আমার মুখে তাঁর প্রশংসাবাদ।
প্রভুতে গর্ব করে আমার প্রাণ,
শুনুক, আনন্দ করুক বিনম্র সকল।

আমার সঙ্গে প্রভুর মহিমাকীর্তন কর,
এসো, আমরা একসঙ্গে তাঁর নাম বন্দনা করি।
প্রভুর অন্বেষণ করেছি, তিনি আমাকে সাড়া দিলেন,
যত ভয়-শঙ্কা থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন।

তাঁর দিকে চেয়ে দেখ, তোমরা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে,
লজ্জায় ঢেকে যাবে না কো তোমাদের মুখ।
এই দীনহীন ডাকে, প্রভু শোনেন,
তার সকল সঙ্কট থেকে তাকে পরিত্রাণ করেন।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, যত মানুষ এজগতে আসে, তুমিই যখন তাদের আলোকিত কর,
তখন অনুনয় করি: তোমার অনুগ্রহের বিভায় আমাদের অন্তর আলোকিত কর,
আমরা যেন সর্বদা তা-ই ভাবি যা তোমার মাহাত্ম্যের গ্রহণযোগ্য,
আর অকপট অন্তরে যেন তোমাকে ভালবাসতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৫ম রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর গানটি বর্জিত।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু ঈশ্বর, আশীর্বাদ কর: জগতের প্রতি যে ভালবাসার খাতিরে
তোমার পুত্র মৃত্যুর হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন,
তোমার সহায়তায় আমরাও যেন একাগ্রতার সঙ্গে
সেই ভালবাসার পথে চলতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী এজেকিয়েলের পুস্তক থেকে পাঠ (৩৭:১২-১৪)

প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন: ‘হে আমার আপন জনগণ, আমি এখন তোমাদের সমাধিগুহা খুলে দিতে যাচ্ছি, তোমাদের কবর থেকে তোমাদের পুনরুত্থিত করব, ইস্রায়েল-দেশভূমির দিকে তোমাদের চালনা করব।
তোমরা তখনই জানবে যে আমিই প্রভু, আমি যখন, হে আমার আপন জনগণ, তোমাদের কবর খুলে দেব ও তোমাদের সমাধিগুহা থেকে তোমাদের পুনরুত্থিত করব।
আমি তোমাদের অন্তরে রাখব আমার আত্মা, আর তোমরা পুনরুজ্জীবিত হবে; তোমাদের নিজেদের দেশভূমিতে তোমাদের পুনর্বাসন করাব; তখন তোমরা জানবে যে, আমিই, প্রভু, আমি একথা বলেছি, আর তাই করব।’ প্রভুর উক্তি।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৩০
ধুয়ো:
প্রভুর কাছে রয়েছে কৃপা,
তাঁর কাছের মুক্তি মহান।

গভীর তলদেশ থেকে আমি চিৎকার করে তোমাকে ডাকছি, প্রভু,
শোন গো প্রভু আমার কণ্ঠস্বর।
আমার এ মিনতির কণ্ঠের প্রতি
তোমার কান মনোযোগী হোক।   [ধুয়ো]

প্রভু, তুমি যদি লক্ষ কর সমস্ত অপরাধ,
কেইবা পারবে দাঁড়াতে, ওগো প্রভু?
তোমার কাছে কিন্তু আছে ক্ষমা,
মানুষ যেন তোমাকে ভয় করতে পারে।   [ধুয়ো]

প্রভু, আমি আশা রাখি; আমার প্রাণ আশা রাখে;
আমি তাঁর বাণীর প্রত্যাশায় আছি।
প্রহরীরা যেমন উষার জন্য, প্রহরীরা যেমন উষার জন্য,
তাদের চেয়ে প্রভুর জন্য অধিক ব্যাকুল আমার প্রাণ।   [ধুয়ো]

ইস্রায়েল, প্রভুর প্রতীক্ষায় থাক,
কারণ প্রভুর কাছে রয়েছে কৃপা, তাঁর কাছের মুক্তি মহান।
তিনি নিজেই ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন
তার সমস্ত অপরাধ থেকে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:৮-১১)

প্রিয়জনেরা, মাংসের অধীনে থেকে মানুষ ঈশ্বরের প্রীতিভাজন হতে পারে না। তোমরা কিন্তু মাংসের অধীনে নয়, আত্মার অধীনেই রয়েছ, যেহেতু ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে নিজের আবাস করেছেন। কিন্তু খ্রিষ্টের আত্মা যার নেই, সে খ্রিষ্টের নয়। আর যদি খ্রিষ্ট তোমাদের অন্তরে থাকেন, তবে পাপের কারণে দেহ মৃতই বটে, কিন্তু ধর্মময়তা লাভের ফলে স্বয়ং আত্মাই জীবন।
আর যিনি যিশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, তাঁর আত্মা যদি তোমাদের অন্তরে নিবাসী হয়ে থাকেন, তাহলে যিনি খ্রিষ্টযিশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, তিনি তোমাদের অন্তরে নিবাসী তাঁর সেই আত্মা দ্বারা তোমাদের মরদেহকেও সঞ্জীবিত করে তুলবেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।
আমিই পুনরুত্থান ও জীবন—একথা বলছেন প্রভু;
যে কেউ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে কখনও মরবে না।
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
যোহন-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১১:১-৪৫)

একজন লোক অসুস্থ ছিলেন, তিনি বেথানিয়ার লাজার; মারীয়া ও তাঁর বোন মার্থা সেই গ্রামেই বাস করতেন। ইনি সেই মারীয়া, যিনি প্রভুকে সুগন্ধি তেল মাখিয়ে দিয়েছিলেন ও নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছে দিয়েছিলেন; এঁরই ভাই লাজার অসুস্থ ছিলেন। লাজারের বোনেরা যিশুকে বলে পাঠালেন, ‘প্রভু, আপনি যাকে ভালবাসেন, সে অসুস্থ।’
কিন্তু যিশু এই সংবাদ পেয়ে বললেন, ‘এই অসুস্থতা মৃত্যুর উদ্দেশে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের গৌরবার্থে, তা দ্বারা যেন ঈশ্বরপুত্র গৌরবান্বিত হন।’ যিশু মার্থাকে ও তাঁর বোনকে এবং লাজারকে ভালবাসতেন। তাই লাজার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনে তিনি যেখানে ছিলেন সেইখানে আরও দু’ দিন থেকে গেলেন। তারপর শিষ্যদের বললেন, ‘চল, আমরা যুদেয়ায় ফিরে যাই।’ শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, ‘রাব্বি, এই সেদিন মাত্র যে ইহুদীরা আপনাকে পাথর ছুড়ে মারতে চেয়েছিল, আর আপনি নাকি আবার সেখানে যাচ্ছেন?’ যিশু উত্তর দিলেন, ‘দিনে কি বারো ঘণ্টা নেই? দিন থাকতেই যদি কেউ চলাফেরা করে, তবে সে হোঁচট খায় না, কারণ সে এই জগতের আলো দেখতে পায়। কিন্তু রাতের বেলায় যদি কেউ চলাফেরা করে, তবেই সে হোঁচট খায়, কারণ আলো তার মধ্যে নেই।’
একথা বলার পর তিনি বলে চললেন, ‘আমাদের বন্ধু লাজার ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি কিন্তু তাকে জাগিয়ে তুলতে যাচ্ছি।’ শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, সে যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন সে সুস্থ হয়ে যাবে।’ যিশু লাজারের মৃত্যুরই কথা বলছিলেন, কিন্তু তাঁরা মনে করছিলেন যে, তিনি সাধারণ ঘুমের কথা বলছেন। তাই যিশু তাঁদের স্পষ্টই বললেন, ‘লাজার মারা গেছে, এবং সেখানে ছিলাম না বলে আমি তোমাদের জন্য খুশি, যেন তোমরা বিশ্বাস করতে পার। কিন্তু এখন চল, তার কাছে যাই।’ তখন থোমাস—যমজ বলে যিনি পরিচিত—অন্যান্য শিষ্যদের বললেন, ‘চল, আমরাও যাই, যেন তাঁর সঙ্গে মরতে পারি।’
যিশু এসে দেখলেন, চারদিন হল লাজারকে সমাধি দেওয়া হয়েছে। বেথানিয়া ছিল যেরুশালেমের কাছাকাছি—আনুমানিক তিন কিলোমিটার। ভাইয়ের জন্য মার্থা ও মারীয়াকে সান্ত্বনা দিতে ইহুদীদের অনেকে তাঁদের কাছে এসেছিল। যখন মার্থা শুনতে পেলেন, যিশু আসছেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চললেন; মারীয়া বাড়িতে বসে রইলেন। মার্থা যিশুকে বললেন, ‘প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন, তবে আমার ভাই মারা যেত না। তবু এখনও জানি যে, ঈশ্বরের কাছে আপনি যা কিছু যাচনা করবেন, ঈশ্বর তা আপনাকে মঞ্জুর করবেন।’ যিশু তাঁকে বললেন, ‘তোমার ভাই পুনরুত্থান করবে।’ মার্থা তাঁকে বললেন, ‘আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানের সময়ে সে পুনরুত্থান করবে।’ যিশু তাঁকে বললেন, ‘আমিই পুনরুত্থান ও জীবন: আমার প্রতি যে বিশ্বাস রাখে, সে মারা গেলেও জীবিত থাকবে। আর জীবিত যে কেউ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে কখনও মরবে না। তুমি কি তা বিশ্বাস কর?’ মার্থা তাঁকে বললেন, ‘হ্যাঁ, প্রভু, আমি বিশ্বাস করি যে, আপনিই সেই খ্রিষ্ট, সেই ঈশ্বরপুত্র, সেই ব্যক্তি জগতে যিনি আসছেন।’
একথা বলার পর তাঁর বোন মারীয়াকে ডাকতে গেলেন; তাঁকে নিচু গলায় বললেন, ‘গুরু উপস্থিত, তোমাকে ডাকছেন।’ কথাটা শোনামাত্র মারীয়া শীঘ্রই উঠে তাঁর কাছে গেলেন। যিশু তখনও গ্রামের মধ্যে আসেননি, কিন্তু মার্থা যেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তিনি সেইখানে রয়ে গেছিলেন। বাড়ির মধ্যে যে ইহুদীরা মারীয়ার সঙ্গে ছিল ও তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, তাঁকে হঠাৎ উঠে বাইরে যেতে দেখে তাঁর পিছু পিছু গেল; মনে করছিল, তিনি সমাধিস্থানে চোখের জল ফেলার জন্য সেখানে যাচ্ছেন।
যিশু যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, মারীয়া সেখানে এসে তাঁকে দেখতে পেয়ে তাঁর পায়ে পড়ে তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন, তবে আমার ভাই মারা যেত না।’ যিশু যখন দেখলেন, মারীয়া চোখের জল ফেলছেন, এবং তাঁর সঙ্গে যে ইহুদীরা এসেছিল তারাও চোখের জল ফেলছে, তখন আত্মায় উত্তেজিত হয়ে উঠলেন ও কম্পিত হলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাকে কোথায় রেখেছ?’ তারা বলল, ‘আসুন, প্রভু! দেখে যান।’ যিশু কেঁদে উঠলেন; আর ইহুদীরা বলতে লাগল, ‘দেখ, ইনি তাঁকে কতই না ভালবাসতেন!’ কিন্তু তাদের কয়েকজন বলল, ‘ইনি যখন সেই অন্ধের চোখ খুলে দিলেন, তখন কি এমন কিছু করতে পারতেন না, যেন এঁর মৃত্যু না হয়?’
যিশু পুনরায় আত্মায় উত্তেজিত হয়ে সমাধির কাছে এসে পৌঁছলেন। সমাধিটা ছিল একটা গুহা, আর তার মুখে একখানা পাথর দেওয়া ছিল। যিশু বললেন, ‘পাথরখানা সরাও।’
মৃত লোকটির বোন মার্থা তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, আজ তো চারদিন হল, এতক্ষণে দুর্গন্ধ হয়ে থাকবেই।’ যিশু তাঁকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি বিশ্বাস করলে তবে ঈশ্বরের গৌরব দেখতে পাবে?’ তাই তারা পাথরখানা সরিয়ে দিল। তখন যিশু ঊর্ধ্বের দিকে চোখ তুলে বললেন, ‘পিতা, আমার প্রার্থনা শুনেছ বলে আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি তো জানতাম, তুমি সর্বদাই আমার কথা শোন, কিন্তু এখানে যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদেরই জন্য কথাটা বললাম, তারা যেন বিশ্বাস করে যে, তুমিই আমাকে প্রেরণ করেছ।’ একথা বলার পর তিনি জোর গলায় চিৎকার করে বললেন, ‘লাজার, বেরিয়ে এসো!’ মৃত লোকটি বেরিয়ে এলেন—তাঁর হাত-পা তখনও কাপড়ের ফালি দিয়ে বাঁধা ও তাঁর মুখ একটা রুমালে জড়ানো। যিশু তাদের বললেন, ‘ওঁর বাঁধন খুলে দিয়ে ওঁকে যেতে দাও।’
যে ইহুদীরা মারীয়ার কাছে এসেছিল, এবং যিশু যা সাধন করেছিলেন তা দেখতে পেয়েছিল, তাদের অনেকেই তাঁর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে উঠল।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু পিতর খ্রিসোলগের উপদেশ

পাতাল থেকে ফিরে আসা সেই লাজার আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন, নিজের পুনরুত্থানের দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে আমাদের শেখাবার জন্য কীভাবে মৃত্যুকে জয় করা যায়। এ ঘটনা তন্ন তন্ন করে ব্যাখ্যা করার আগে, এসো, বাহ্যিক দিক থেকেই তাঁর পুনরুত্থান লক্ষ করি; স্বীকার করি, এটিই সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অলৌকিক কাজ, ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রকাশ, মহত্তম অপরূপ চিহ্নকর্মগুলির মধ্যে অন্যতম।
যখন প্রভু সমাজগৃহের প্রধান সেই যাইরুসের কন্যাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন, তখন পাতালের সীমা অতিক্রম না করেই কন্যাকে এমনি জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। নাইমের মাতার সেই একমাত্র সন্তানকেও পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন; সেসময় তিনি লাশ সমাধি দেওয়ার আগেই শবযান থামিয়েছিলেন, যাতে করে ক্ষয়প্রাপ্তির আরম্ভ না হয়: মৃত্যু যেন মৃত মানুষের উপর পুরা অধিকার দাবি না করতে পারে, সেজন্য তিনি, মৃত্যু মৃত মানুষকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করার আগেই, মৃত মানুষকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
পক্ষান্তরে তিনি লাজারের বেলায় যা সাধন করলেন সম্পূর্ণরূপে আলাদা, কেননা তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থান উপরোল্লিখিত দৃষ্টান্তের সঙ্গে কোন দিকেই সম্পর্কযুক্ত নয়। লাজারে মৃত্যু পূর্ণ শক্তিতে ক্রিয়াশীল হয়েছিল; আর তাঁর পুনরুত্থান যে কীভাবে ঘটেছে, তা প্রভুর পুনরুত্থানের প্রায় পূর্বঘটনাই যেন; তবু পার্থক্য রয়েছে আর তা এরূপ: খ্রিষ্ট তিন দিন পরে প্রভুরূপেই পুনরুত্থান করলেন, পক্ষান্তরে লাজারকে চারদিন পরে দাসরূপেই পুনরুজ্জীবিত করা হয়। একথার প্রমাণ স্বরূপ, এসো, সুসমাচারের বর্ণনার অন্য দিক বিশ্লেষণ করি।
তাঁর বোনেরা তাঁকে বলে পাঠালেন: প্রভু, দেখ, তোমার বন্ধু অসুস্থ (যোহন ১১:৩)। তা বলে তাঁরা প্রেম জাগিয়ে দেন, ভালবাসার কথা উল্লেখ করেন, আসক্তি আহ্বান করেন, প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে বন্ধুত্ব উদ্দীপ্ত করতে চেষ্টা করেন। সেই খ্রিষ্ট কিন্তু, যাঁর কাছে অসুস্থতা দূর করার চেয়ে মৃত্যুকে জয় করাই গুরুতর ব্যাপার, ও বন্ধুকে সুস্থ করে তোলায় নয়, বরং মৃত্যু থেকে জীবনে ফিরিয়ে আনায়ই যাঁর ভালবাসা প্রকাশিত, সেই খ্রিষ্ট রোগের কোন প্রতিকার না দিয়ে বরং সঙ্গে সঙ্গে পুনরুত্থানের গৌরব তাঁর জন্য প্রস্তুত করেন।
এমনকি, যখন শুনলেন, লাজার অসুস্থ, তখন তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে আরও দু’দিন থেকে গেলেন (যোহন ১১:৬)। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ, কেমন করে তিনি মৃত্যুকে কাজ করার সময় ও সমাধিকে ক্রিয়াশীল হবার সুযোগ দেন? মৃতদেহের দুর্গন্ধ ও পচনও রোধ না করে তিনি ক্ষয়শক্তির অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখেন; তিনি হতে দেন, পাতাল সেই দেহ জয় করুক, দখল করুক, নিজ আয়ত্তে রাখুক; এক কথায়, তিনি এমনটি ঘটান, যেন মানব আশা সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয় ও পার্থিব নিরাশা অবাধেই প্রকাশিত হয়, তিনি যা করতে উদ্যত হচ্ছেন, তা যেন মানবীয় নয়, ঐশ্বরিকই এক চিহ্নকর্ম হতে পারে।
তিনি সেই মৃত্যুর অপেক্ষায় যেখানে ছিলেন, সেখানে সেই পর্যন্ত বসে থাকেন, যে পর্যন্ত তিনি নিজেই লাজারের মৃত্যুর সংবাদ না দিতে পারেন ও সেইসঙ্গে ঘোষণা করতে পারেন, তিনি তাঁর কাছে যাবেন। তিনি বললেন, লাজার মারা গেছে, আর আমি আনন্দিত (যোহন ১১:১৪)। এ কি ভালবাসার প্রমাণ? খ্রিষ্ট কিন্তু তোমাদের জন্যই আনন্দিত ছিলেন; তোমাদের জন্যই কেন? কারণ লাজারের মৃত্যু ও পুনরুত্থান প্রভুরই মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সঠিক পূর্বচ্ছবি ছিল; এবং যা কিছু প্রভুর বেলায় ঘটতে যাচ্ছিল, তার পূর্বঘটনা লাজারেই প্রকাশ পাচ্ছিল। সুতরাং লাজারের মৃত্যু প্রয়োজনই ছিল, যাতে সমাহিত লাজারের সঙ্গে শিষ্যদের বিশ্বাসও পুনরুত্থান করে।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১২১
ধুয়ো:
জীবিত যে কেউ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে,
সে কখনও মরবে না—প্রভুর উক্তি।

আমি চোখ তুলি গিরিমালার দিকে,
আমার সাহায্য কোথা থেকে আসবে?
আমার সাহায্য সেই প্রভু থেকেই আসবে,
আকাশ ও পৃথিবীর নির্মাতা যিনি।   [ধুয়ো]

তিনি তোমার পা দেবেন না টলমল হতে,
ঘুমিয়ে পড়বেন না কো তোমার রক্ষক।
দেখ, ঘুমিয়ে পড়বেন না, হবেন না নিদ্রামগ্ন
ইস্রায়েলের রক্ষক।   [ধুয়ো]

প্রভুই তোমার রক্ষক, প্রভুই তোমার ছায়া,
তিনি তোমার ডান পাশে দাঁড়ান।
দিনমানের সূর্য কি রাত্রিবেলার চাঁদ,
কিছুই তোমায় আঘাত করবে না।   [ধুয়ো]

প্রভু যত অনিষ্ট থেকে তোমাকে রক্ষা করবেন,
রক্ষা করবেন তোমার প্রাণ।
প্রভু তোমার গমনাগমন রক্ষা করবেন
এখন থেকে চিরকাল ধরে।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, অনুনয় করি:
পুণ্যসংযোগের ফলে আমরা যখন খ্রিষ্টের দেহরক্তের অংশী হয়েছি,
তখন যেন সর্বদাই তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বলে পরিগণিত হতে পারি।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]