সাধু বেনেডিক্ট মঠের ওয়েব-সাইট - মহেশ্বরপাশা - খুলনা - বাংলাদেশ
[অনলাইন পঞ্জিকা]
চল্লিশাকাল

গেথসেমানি বাগানে প্রার্থনারত প্রভু যিশু
   
অনুষ্ঠানসমূহ: ভস্ম বুধবার | ১ম রবিবার | ২য় রবিবার | ৩য় রবিবার | ৪র্থ রবিবার | ৫ম রবিবার | তালপত্র রবিবার | পুণ্য বৃহস্পতিবার | পুণ্য শুক্রবার | পুণ্য শনিবার

ভস্ম বুধবার
ভস্ম বিগত বছরের আশীর্বাদ করা জলপাই (বা খেজুর বা তাল) গাছের পাতাগুলো পুড়িয়ে তৈরি।
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আশীর্বাদ কর: আমরা যেন এ উপবাসের মধ্য দিয়ে
এমন প্রকৃত মনপরিবর্তনের যাত্রা শুরু করতে পারি,
যেন আত্মসংযম হাতিয়ার ক’রে
অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের এ সংগ্রামে সফল হয়ে উঠি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশু খ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী যোয়েলের পুস্তক থেকে পাঠ (২:১২-১৮)

প্রভু একথা বলছেন: ‘তোমরা সমস্ত হৃদয় দিয়ে,
এবং উপবাস, কান্না ও বিলাপ—তেমন সাধনা করেই
আমার কাছে ফিরে এসো।’
তোমাদের পোশাক নয়, হৃদয়ই ছিঁড়ে ফেল,
তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর কাছে ফিরে এসো,
তিনি যে দয়াবান, স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর, কৃপায় ধনবান;
অমঙ্গল সাধন করে তিনি দুঃখ পান।
কে জানে, হয় তো তিনি এবারও দুঃখ পেয়ে
পিছনে রেখে যাবেন একটা আশীর্বাদ,
অর্থাৎ আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর উদ্দেশে
একটা শস্য-নৈবেদ্য ও পানীয়-নৈবেদ্য।
সিয়োনে তুরি বাজাও, উপবাস পালনে নিজেদের পবিত্র কর,
মহাসভা আহ্বান কর।
গোটা জনগণকে সমবেত কর, জনসমাবেশ আহ্বান কর,
বৃদ্ধদের একত্রে ডাক, বালক ও দুধের শিশু সকলকেই জড় কর,
বর বাসর থেকে, কনেও মিলন-কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসুক।
বারান্দার ও বেদির মাঝখানে দাঁড়িয়ে
প্রভুর পরিচারক যাজকেরা কাঁদতে কাঁদতে বলুক,
‘হে প্রভু, তোমার জনগণকে রেহাই দাও।
তোমার উত্তরাধিকার বিজাতীয়দের টিটকারি ও উপহাসের পাত্র হবে,
তেমন লজ্জায় তাকে ফেলে দিয়ো না।’
জাতিসকলের মধ্যে কেনই বা বলা হবে: ‘কোথায় ওদের পরমেশ্বর?’
তখন প্রভু নিজের দেশের বিষয়ে উত্তপ্ত প্রেমের জ্বালায় জ্বলে উঠে
তাঁর আপন জনগণের প্রতি দয়ায় বিগলিত হলেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৫১
ধুয়ো:
দয়া কর, প্রভু;
আমরা করেছি পাপ।

আমাকে দয়া কর গো পরমেশ্বর, তোমার কৃপা অনুসারে,
তোমার অপার স্নেহে মুছে দাও আমার অপরাধ।
আমার অন্যায় থেকে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর,
আমার পাপ থেকে শোধন কর আমায়।   [ধুয়ো]

আমার অপরাধ আমি তো জানি;
আমার সামনেই অনুক্ষণ আমার পাপ;
তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে করেছি পাপ।
তোমার চোখে যা কুৎসিত, তাই করেছি আমি।   [ধুয়ো]

আমার মধ্যে এক শুদ্ধ হৃদয় সৃষ্টি কর গো পরমেশ্বর,
আমার মধ্যে এক সুস্থির আত্মা নবীন করে তোল।
তোমার শ্রীমুখ থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ো না কো দূরে,
আমা থেকে তোমার পবিত্র আত্মাকে করো না হরণ।   [ধুয়ো]

আমাকে ফিরিয়ে দাও তোমার ত্রাণের পুলক,
আমার মধ্যে এক উদার আত্মা ধরে রাখ।
হে প্রভু, খুলে দাও আমার ওষ্ঠাধর,
আর আমার মুখ প্রচার করবে তোমার প্রশংসাবাদ।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
করিন্থীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের দ্বিতীয় পত্র থেকে পাঠ (৫:২০–৬:২)

প্রিয়জনেরা, আমরা খ্রিষ্টের পক্ষে বাণীদূত—ঠিক যেন স্বয়ং ঈশ্বরই আমাদের মধ্য দিয়ে আহ্বান জানাচ্ছেন। খ্রিষ্টের খাতিরে আমরা মিনতি করছি: ঈশ্বরের সঙ্গে নিজেদের পুনর্মিলিত হতে দাও। যিনি পাপ জানেননি, তাঁকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপ করে তুলেছেন, যেন আমরা তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের ধর্মময়তা হয়ে উঠি।
আর যেহেতু আমরা তাঁর সহকর্মী, সেজন্য আমরা তোমাদের অনুরোধ করছি: তোমরা যে ঈশ্বরের অনুগ্রহ গ্রহণ করেছ, তোমাদের সেই গ্রহণটা যেন বৃথাই না হয়ে যায়। কারণ তিনি একথা বলছেন, তোমাকে সাড়া দিয়েছি প্রসন্নতার সময়ে; তোমার সহায়তা করেছি পরিত্রাণের দিনে।
আর এখন তো সেই প্রসন্নতার সময়, এখন তো সেই পরিত্রাণের দিন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।
আজ হৃদয় কঠিন করো না,
শোন বরং প্রভুর কণ্ঠস্বর।
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৬:১-৬,১৬-১৮)

একদিন যিশু তাঁর আপন শিষ্যদের বললেন, ‘সাবধান, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লোকদের সামনে তোমাদের ধর্মকর্ম করো না, করলে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছে তোমাদের কোন মজুরি থাকবে না।
তাই তুমি যখন ভিক্ষা দাও, তখন তোমার সামনে তুরি বাজাবে না, যেমনটি ভণ্ডরা লোকদের কাছে গৌরব পাবার জন্য সমাজগৃহে ও রাস্তা-ঘাটে করে থাকে; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা নিজেদের মজুরি পেয়েই গেছে। কিন্তু তুমি যখন ভিক্ষা দাও, তখন তোমার ডান হাত যে কী করছে, তোমার বাঁ হাত যেন তা জানতে না পারে, যাতে তোমার ভিক্ষাদান গোপন থাকে; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন।
আর তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন ভণ্ডদের মত হয়ো না; কারণ তারা সমাজগৃহে ও চৌরাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে পছন্দ করে, যেন লোকে তাদের দেখতে পায়; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা নিজেদের মজুরি পেয়েই গেছে। কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর, তখন তোমার নিজের কক্ষে প্রবেশ কর, আর দরজা বন্ধ করে তোমার পিতা, যিনি সেই গোপন স্থানে বিদ্যমান, তাঁর কাছে প্রার্থনা কর; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন।
আর তোমরা যখন উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মত বিষণ্ণ ভাব দেখিয়ো না; কেননা তারা যে উপবাস করছে, তা লোকদের দেখাবার জন্যই নিজেদের মুখ মলিন করে; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা নিজেদের মজুরি পেয়েই গেছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তেল মাখ ও মুখ ধুয়ো, যেন কেউই তোমার উপবাস না দেখতে পায়, কিন্তু তোমার পিতা, যিনি সেই গোপন স্থানে বিদ্যমান, কেবল তিনিই যেন তা দেখতে পান; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
পোপ মহাপ্রাণ সাধু লিওর উপদেশ

মণ্ডলীর গোটা দেহকে সমস্ত কলঙ্ক থেকে পরিশুদ্ধ হতে হবে
প্রিয়জনেরা, যে সকল দিন খ্রিষ্টীয় ভক্তি সম্মানের সঙ্গে বহুরূপে উদ্‌যাপন করে, সেগুলির মধ্যে এমন কোন দিন নেই যা পাস্কাপর্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠ—পাস্কাপর্ব থেকেই তো ঈশ্বরমণ্ডলীর অন্যান্য পর্বগুলি পুণ্য মর্যাদা লাভ করে। খ্রিষ্টের জন্মোৎসবও পাস্কা রহস্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কেননা ঈশ্বরের পুত্রের জন্মগ্রহণের একমাত্র কারণ ছিল তিনি যেন একদিন ক্রুশে বিদ্ধ হতে পারেন। বস্তুতপক্ষে কুমারীর গর্ভে মরণশীল মাংস ধারণ করা হল, সেই মরণশীল মাংসে যন্ত্রণাভোগ-ব্যবস্থা সিদ্ধি লাভ করল,—ঈশ্বরের দয়ার পরম সঙ্কল্প অনুসারে এমনটি ঘটল যাতে সেই যন্ত্রণাভোগ আমাদের জন্য হয়ে উঠতে পারত মুক্তির বলিদান, পাপের ক্ষমা ও অনন্ত জীবনের উদ্দেশে পুনরুত্থানের সূত্রপাত। তাছাড়া আমরা যদি চিন্তা করি যে প্রভুর ক্রুশ দ্বারাই সমগ্র জগৎ মুক্তি পেল, তাহলে বুঝতে পারব, পাস্কাপর্ব উদ্‌যাপন করার জন্য চল্লিশ দিনের উপবাস দ্বারা নিজেদের প্রস্তুত করা সত্যিই বাঞ্ছনীয়, যাতে করে আমরা যোগ্যরূপে দিব্য রহস্যগুলিতে যোগ দিতে পারি। আর কেবল আর্চবিশপ, বা সাধারণ যাজক ও পরিসেবক নয়, বরং মণ্ডলীর গোটা দেহ ও সকল ভক্তজনকেও সমস্ত কলঙ্ক থেকে পরিশুদ্ধ হতে হবে, যেন ঈশ্বরের সেই মন্দির, যার স্বয়ং স্থাপনকর্তাই হলেন তার ভিত, সমস্ত প্রস্তরগুলিতে সুন্দর ও সব দিক দিয়ে উজ্জ্বল হতে পারে। কেননা যখন রাজাদের প্রাসাদ ও শাসকদের আবাস যুক্তিসঙ্গত ভাবেই যত ধরনের অলঙ্কারে অলঙ্কৃত হয় যাতে তাদের বাসস্থান ততই শ্রেষ্ঠতম হয় যত মহত্তম তাদের গুণ, তখন স্বয়ং ঈশ্বরের গৃহ কত যত্ন ও সম্মানের সঙ্গেই না নির্মাণ ও অলঙ্কৃত করা উচিত!
এই যে গৃহ তাঁর নিজের স্রষ্টা ছাড়া শুরু ও শেষ করা যায় না, তা কিন্তু নির্মাণকারীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করে, যাতে তার পরিশ্রম দ্বারাও তার বৃদ্ধি হতে পারে; কেননা এ মন্দির নির্মাণকাজের জন্য জীবন্ত ও বুদ্ধিসম্পন্ন মালামাল ব্যবহৃত হয়, যে মালামাল আত্মার অনুগ্রহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, একমন হয়ে একদেহে সুসংবদ্ধ হয়ে ওঠে। তেমন মণ্ডলীকে ঈশ্বর ভালবাসেন ও অনুসন্ধান করেন; সুতরাং মণ্ডলীও: তাকে যে ভালবাসে না, মণ্ডলী যেন তাকে ভালবাসে, ও যে তার অনুসন্ধান করে না, মণ্ডলী যেন তার অনুসন্ধান করে, যেমনটি ধন্য প্রেরিতদূত যোহন বলেন, আমরা ভালবাসি কারণ ঈশ্বরই প্রথম আমাদের ভালবেসেছেন (১ যোহন ৪:১১,১৯)। সুতরাং যেহেতু ভক্তরা সকলে মিলে ও এক একজন ক’রে হল ঈশ্বরের এক-ই ও একমাত্র মন্দির, সেজন্য মন্দিরটা যেমন সমষ্টিগত ভাবে নিখুঁত তেমনি ব্যক্তি-বিশেষের বেলায়ও নিখুঁত হওয়া চাই; কেননা যদিও সকল অঙ্গের সৌন্দর্য একই নয়, ও তেমন বৈচিত্র্যময় অংশগুলির মধ্যে সদ্‌গুণাবলির সামঞ্জস্যও থাকার কথা নয়, তথাপি ভ্রাতৃপ্রেমের সুসংবদ্ধতা সৌন্দর্যের একতা সাধন করে। এভাবে সমস্ত অঙ্গগুলি পুণ্য প্রেমে একত্রিত হয়, আর অনুগ্রহের মঙ্গলদানগুলির সমান পাত্র না হয়েও, তবু সকলে পরস্পরের মঙ্গলের জন্য আনন্দ ভোগ করে; এমনকি তারা যা ভালবাসে সেই সবকিছু থেকে কেউই বঞ্চিত নয়, কেননা যে কেউ পরের কল্যাণে আনন্দিত, সে নিজের বৃদ্ধি সাধন করে।

১০। ভস্ম আশীর্বাদ ও বিতরণ
অনুষ্ঠাতা দাঁড়িয়ে করজোড়ে বলেন:
প্রিয়জনেরা, এসো, বিনীত অন্তরে পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি:
তপস্যার চিহ্নস্বরূপ যে ভস্ম-টিকা আমরা কপালে ধারণ করতে যাচ্ছি,
সেই ভস্ম তিনি যেন আশীর্বাদমণ্ডিত করেন।

কিছুক্ষণ নীরব প্রার্থনা করার পর তিনি প্রসারিত বাহুতে বলে চলেন:
হে ঈশ্বর, বিনম্রতা দেখে তুমি তো বিগলিত হও,
ও প্রায়শ্চিত্ত দেখে প্রশমিত হও।
কৃপা করে আমাদের মিনতি কান পেতে শোন:
যারা কপালে ভস্ম ধারণ করতে যাচ্ছে,
প্রসন্ন হয়ে তাদের উপর তোমার আশীর্বাদের অনুগ্রহ বর্ষণ কর,
তারা যেন চল্লিশাকালীন যাত্রায় অগ্রসর হতে হতে
শোধিত অন্তরে তোমার পুত্রের পাস্কা-রহস্য উদ্‌যাপন করতে যোগ্য হয়ে ওঠে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

এরপর ভক্তগণ এগিয়ে এলে অনুষ্ঠাতা এই বলে তাদের এক একজনের কপালে ভস্ম দান করেন:
মনপরিবর্তন কর, সুসমাচারে বিশ্বাস কর।

১১। সার্বজনীন প্রার্থনা
চল্লিশাকাল শুরু করতে গিয়ে, আসুন, আমরা এই অনুগ্রহকালের জন্য পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর চরণে এই ভিক্ষা রাখি, তিনি যেন পবিত্র আত্মায় আমাদের পরিপূর্ণ করেন, আমাদের হৃদয় পরিশুদ্ধ করেন, ভ্রাতৃপ্রেমে আমাদের বলবান করে তোলেন:
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-তোমার বাণীই আমাদের জীবন; তাই আমাদের জীবন যেন তোমার প্রতিটি বাণীতেই পরিপূর্ণ ও পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-যিশুর জীবনে তুমি প্রেমের পথ দেখিয়েছ। আমাদের দীক্ষিত কর, যেন জীবনের ছোট-বড় সকল ঘটনায়ই সেই পথ ধরে চলতে পারি।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-আত্মত্যাগের মনোভাব আমাদের অন্তরে সঞ্চার কর। যত অভাবগ্রস্ত ভাইবোনকে সাহায্য করতে আমাদের অনুপ্রাণিত কর।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-কৃপা কর, আমরা যেন আমাদের দেহে তোমার পুত্রের যন্ত্রণাভোগের সাক্ষ্য বহন করতে পারি, যেন আমাদের মধ্যে তাঁর অনন্ত জীবন প্রকাশ পায়।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-আমাদের পুণ্য পিতা বেনেডিক্ট বলেছিলেন, চল্লিশাকালে সন্ন্যাসীরা সকল কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করবেন, এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থনা, ঐশপাঠ, হৃদয়বিদারণ ও আত্মসংযমে রত হয়ে সাধনা করবেন। আশীর্বাদ কর, আমরা যেন তাঁর নির্দেশ উত্তমরূপে পালন করতে পারি।
      সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।
-আমাদের পুণ্য পিতা আরও বলেছিলেন, পবিত্র আত্মার আনন্দের সঙ্গে এক একজন সন্ন্যাসী স্বেচ্ছায়ই নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে খাদ্য, পানীয়, নিদ্রা, কথন, পরিহাসের অতিরিক্ত যা কিছু বাতিল করেই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে নিবেদন করবেন। এই সাধনায় তুমি আমাদের বল দাও।       সকলে: হে প্রভু, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান কর।

১২। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


১ম রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আশীর্বাদ কর:
আমাদের মনপরিবর্তনের সাক্রামেন্তীয় চিহ্নস্বরূপ এই চল্লিশাকাল পালন ক’রে আমরা যেন খ্রিষ্টে নিহিত মহা ধন-ঐশ্বর্য
আরও গভীরতরভাবে উপলব্ধি করতে পারি
ও যোগ্যতর জীবনযাপনে সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশু খ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
আদিপুস্তক থেকে পাঠ (৯:৮-১৫)

পরমেশ্বর নোয়াকে ও তাঁর পাশে তাঁর যে ছেলেরা ছিলেন, তাঁদের সকলকে বললেন, ‘আমার পক্ষ থেকে, দেখ, তোমাদের ও তোমাদের ভাবী বংশের সঙ্গে, তোমাদের সঙ্গে যত প্রাণী রয়েছে—যত পাখি, গবাদি পশু ও বন্যজন্তু তোমাদের সঙ্গে রয়েছে, পৃথিবীর যত প্রাণী জাহাজ থেকে বের হয়েছে—তাদের সকলের সঙ্গে আমি আমার সন্ধি স্থাপন করছি। তোমাদের সঙ্গে আমার সন্ধি আমি স্থিতমূল রাখব: জলপ্লাবন দ্বারা সমস্ত প্রাণীকে আর কখনও উচ্ছেদ করা হবে না, পৃথিবীর বিনাশের জন্য জলপ্লাবন আর কখনও দেখা দেবে না।’
পরমেশ্বর আরও বললেন, ‘এই হবে সেই সন্ধির চিহ্ন, যে সন্ধি আমি নিজের মধ্যে এবং তোমাদের ও তোমাদের সঙ্গী সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সকল ভাবীযুগের জন্য স্থাপন করছি: আমি মেঘের মধ্যে আমার নিজের ধনু স্থাপন করছি, সেটিই হবে আমার মধ্যে ও পৃথিবীর মধ্যে আমার সন্ধির চিহ্ন। যখন আমি পৃথিবীর ঊর্ধ্বে মেঘ জমিয়ে রাখব, ও মেঘের মধ্যে সেই ধনু দেখা দেবে, তখন আমার মধ্যে এবং তোমাদের ও মর্ত-প্রাণীকুলের মধ্যে আমার যে সন্ধি আছে, তা আমি স্মরণ করব, এবং জলরাশি সকল প্রাণীর বিনাশের জন্য আর কখনও জলপ্লাবনের কারণ হবে না।’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ২৫
ধুয়ো:
যারা তোমার নির্দেশমালা পালন করে, প্রভু,
তাদের জন্য তোমার সকল পথ কৃপা ও সত্যেরই পথ।

আমাকে চিনিয়ে দাও তোমার পথসকল, প্রভু,
আমাকে শিখিয়ে দাও তোমার পন্থাসকল।
তোমার সত্যে আমাকে চালনা কর, আমাকে শিক্ষা দাও,
তুমিই তো আমার ত্রাণেশ্বর।   [ধুয়ো]

তোমার স্নেহ, তোমার কৃপা মনে রেখ, প্রভু,
অনাদিকাল থেকেই সেই স্নেহ, সেই কৃপা।
তোমার কৃপায় আমায় মনে রেখ
তোমার মঙ্গলময়তার খাতিরে, প্রভু।   [ধুয়ো]

প্রভু মঙ্গলময়, ন্যায়শীল,
তাই পাপীদের তিনি শেখান তাঁর আপন পথ।
ন্যায়মার্গে বিনম্রদের চালনা করেন,
বিনম্রদের শিখিয়ে দেন তাঁর আপন পথ।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
প্রেরিতদূত সাধু পিতরের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (৩:১৮-২২)

প্রিয়জনেরা, খ্রিষ্ট পাপের জন্য একবার, চিরকালের মত মরলেন—যিনি ধর্মময়, তিনি অধার্মিকদের জন্য মরলেন, যেন ঈশ্বরের কাছে তোমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন; মাংসে তিনি নিহত হয়েছিলেন, আত্মায় কিন্তু তাঁকে জীবিত করা হয়েছে। এবং আত্মায় তিনি কারারুদ্ধ সেই আত্মাদেরও কাছে গিয়ে বাণীপ্রচার করলেন; এককালে, সেই নোয়ার সময়ে, জাহাজ নির্মাণের সেই দিনগুলিতে যখন ঈশ্বর সহিষ্ণুতার সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন, তখন সেই সমস্ত আত্মা অবাধ্য হয়েছিল। সেই জাহাজে অল্প লোক—মোট আটজন লোক—জলের মধ্য দিয়ে ত্রাণ পেয়েছিল।
এখন, সেই প্রতীকের বাস্তবতা অর্থাৎ বাপ্তিস্ম আমাদের ত্রাণ করে; বাপ্তিস্ম তো দেহের মলিনতা মোচনের ব্যাপার নয়, বরং ঈশ্বরের কাছে সদ্বিবেকের অঙ্গীকার—সেই যিশু খ্রিষ্টের পুনরুত্থান গুণে, যিনি স্বর্গে গমন করে ও সমস্ত স্বর্গদূত, কর্তৃত্ব ও শক্তির বশ্যতা গ্রহণ করে ঈশ্বরের ডান পাশে রয়েছেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।
মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচবে না,
ঈশ্বরের মুখ থেকে যে প্রতিটি উক্তি নির্গত হয়, তাতেই বাঁচবে।
হে শাশ্বত গৌরবের রাজা খ্রিষ্ট, মহাপ্রশংসার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
মার্ক-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১:১২-১৫)

সেসময়ে, পবিত্র আত্মা যিশুকে প্রান্তরে টেনে নিলেন, এবং তিনি চল্লিশদিন সেই প্রান্তরে থেকে শয়তান দ্বারা পরীক্ষিত হলেন; তিনি বন্যজন্তুদের সঙ্গে ছিলেন, ও স্বর্গদূতেরা তাঁর সেবা করতেন।
যোহনকে ধরিয়ে দেওয়া হলে পর যিশু ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করতে করতে গালিলেয়ায় গেলেন; তিনি বলছিলেন, ‘কাল পূর্ণ হল, ও ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে: মনপরিবর্তন কর ও সুসমাচারে বিশ্বাস কর।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
তারা মঠের অধ্যক্ষ ধন্য ইস্‌হাকের উপদেশ

যিশু আত্মা দ্বারা প্রান্তরে চালিত হলেন (মথি ৪:১)। আমার প্রভু যিশু খ্রিষ্ট যা কিছু করেন, তা চালিত বা প্রেরিত বা আহূত বা আদিষ্ট হয়েই করেন; নিজে থেকে কিছুই করেন না। প্রেরিত হয়ে তিনি জগতে আসেন, চালিত হয়ে প্রান্তরে যান, আহূত হয়ে মৃত্যু থেকে ওঠেন, যেইভাবে লেখা আছে, ওঠ, আমার গৌরব; ওঠ, সেতার ও বীণা (সাম ৫৭:৯)।
তবু যন্ত্রণাভোগের দিকে তিনি নিজে থেকে স্বেচ্ছায়ই দ্রুতপদে এগিয়ে যান, যেইভাবে নবী বলেছিলেন: ইচ্ছা করলেন বিধায়ই তিনি বলীকৃত হলেন (ইশা ৫৩:৭ সত্তরী দ্রঃ)। এতেই তিনি মৃত্যু পর্যন্ত পিতার প্রতি নিজেকে বাধ্য করলেন। কেননা সদ্‌গুরু ও বাধ্যতার আদর্শ হওয়ায় সেই একমাত্র পথ যা সত্যের শরণে জীবনের কাছে চালিত করে, সেই যন্ত্রণাভোগ ছাড়া তিনি নিজে থেকে অন্য কিছুই করতে বা সহ্য করতে চাইলেন না। তিনি পবিত্র আত্মা দ্বারা প্রান্তরে চালিত হলেন, বা অন্য রচয়িতার বর্ণনা অনুসারে, আত্মা তাঁকে প্রান্তরে টেনে নিলেন (মার্ক ১:১২)।
যারা ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা চালিত, তারা ঈশ্বরের সন্তান (রো ৮:১৪)। তিনি কিন্তু যেহেতু সূক্ষ্মতর ও যোগ্যতর ভাবেই পুত্র, সেজন্য অন্যান্যদের চেয়ে ভিন্ন ও শ্রেয়তর ভাবেই প্রান্তরে প্রেরিত বা চালিত হলেন।
যিশু পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে যর্দন থেকে সরে গেলেন, এবং সেই আত্মার আবেশে প্রান্তরে চালিত হলেন (লুক ৪:১)। অন্যান্যদের কাছে পবিত্র আত্মাকে নির্ধারিত মাত্রায় দান করা হয়, আর সেই মাত্রা অনুসারেই তারা সবকিছুতে পরিচালিত; তিনিই আত্মার পরিপূর্ণতা লাভ করলেন, যাঁর মধ্যে ঈশ্বরত্বের পূর্ণতা বাস করতে প্রীত হল। এজন্য ইনিই অধিকতর প্রভাব ও পরিপূর্ণতার সঙ্গে পিতার আজ্ঞাগুলি পালন করতে চালিত হলেন। তিনি যর্দন থেকে সরে গেলেন, এবং প্রান্তরে চালিত হলেন। সুতরাং যিনি এজগতে নেমে এলেন, তিনি যর্দন থেকে আসেন; তারপর এখান থেকে আবার ফিরে এসে এজগৎ ছেড়ে পিতার কাছে যান। ফলে যে কেউ যর্দনের দিকে আরোহণ করতে ইচ্ছা করে, সে নিচু জায়গায় আসুক, বিনম্রতায়ই আসুক, কেননা বিনম্রতাই আরোহণের একমাত্র শর্ত। বস্তুতপক্ষে, যে কেউ নিজেকে নমিত করে, তাকে উন্নীত করা হবে (লুক ১৪:১১; ১৮:১৪)।
এখানেই সে সেই পবিত্র আত্মাকে খুঁজে পাবে যিনি বিনম্র ও কোমলপ্রাণের উপর অধিষ্ঠান করেন, যিনি তার উপরেই অধিষ্ঠান করেন যে ভয় করে সেই ঈশ্বরেরই বাণী, যিনি গর্বিতদের প্রতিরোধ করেন কিন্তু বিনম্রদেরই অনুগ্রহ দান করেন, তারা যেন জগৎকে তুচ্ছ করে ও সংসার থেকে পলায়ন করে, শয়তানকে পরাজিত করে ও সেই বিপুল জনতা থেকে দূরে যায় যাদের মধ্যে কটুবাক্য সদাচরণকে কলুষিত করে; তারা যেন সেই প্রান্তর ও সেই নির্জন স্থান খোঁজ করে যেখানে ঈশ্বরের যত্ন করতে পারে, চড়ুই পাখির মত তাঁকে ডাকতে পারে, ও কপোতের মত তাঁকে নিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতে পারে; সেখানেই তিনি উত্তর দিয়ে তাদের হৃদয়কে উদ্দেশ করে নবীর কথামত বলবেন, আমি তাকে প্রান্তরে চালিত করব ও তার হৃদয়ের কাছে কথা বলব (হো ২:১৬)।
এভাবে নম্র ও কোমলপ্রাণ আমাদের সেই প্রভু যিশু খ্রিষ্ট, এমন বিনম্রতা ও কোমলতার নাগাল পেয়ে যার ফলে তাঁর নিম্নপদস্থেরই হাতে দীক্ষিত হবার জন্য নিজেকে নমিত করলেন, সঙ্গে সঙ্গেই মনোনীত হতে যোগ্য হয়ে উঠলেন, যেইভাবে পিতার কণ্ঠ প্রমাণ দিয়ে বলল, ইনি আমার প্রিয় পুত্র, বিনম্র ও বাধ্য বলেই এঁতে আমি প্রসন্ন; এজন্যই আমি ন্যায়সঙ্গতভাবে তাঁকে উন্নীত করি ও সকলের চেয়ে তাঁকে ভালবাসি; সুতরাং তোমরা এখন থেকেই তাঁর কথা শোন। তখন সেই বিনম্র ও কোমলপ্রাণের উপর, আপন ও ঘনিষ্ঠতম মন্দিরেই যেন, সেই পবিত্র আত্মা নেমে এলেন যাঁর দ্বারা তিনি প্রান্তরে চালিত হয়েছিলেন।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৯১
ধুয়ো:
আপন পালক দিয়ে প্রভু তোমাকে ঢেকে রাখবেন,
তাঁর ডানার নিচে তুমি পাবে আশ্রয়।

তুমি যে বাস কর পরাৎপরের গোপন আশ্রয়ে,
তুমি যে সর্বশক্তিমানের ছায়ায় কর রাত্রিযাপন,
প্রভুকে বল: ‘আমার আশ্রয়, আমার গিরিদুর্গ,
আমার পরমেশ্বর, তোমাতেই ভরসা রাখি।’   [ধুয়ো]

ব্যাধের ফাঁদ ও সর্বনাশা মড়ক থেকে
তিনি তোমাকে উদ্ধার করবেন।
তাঁর পালক দিয়ে তিনি তোমাকে ঢেকে রাখবেন,
তাঁর ডানার নিচে তুমি পাবে আশ্রয়।   [ধুয়ো]

স্বয়ং প্রভুই তোমার আশ্রয়,
সেই পরাৎপরকে তুমি করেছ তোমার আবাস,
তাই তোমার উপর কোন অনিষ্ট এসে পড়বে না,
আসবে না কো তোমার তাঁবুপ্রান্তে কোন দুর্বিপাক।   [ধুয়ো]

কারণ তোমার জন্যই আপন দূতদের তিনি আজ্ঞা দিলেন,
তাঁরা যেন পদে পদে তোমায় রক্ষা করেন;
তাঁরা তোমায় দু’হাতে তুলে বহন করবেন,
পাথরে তোমার পায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে।   [ধুয়ো]

সে আমাকে ডাকবে আর আমি দেব সাড়া, সঙ্কটে আমি থাকব তার সঙ্গে,
তাকে নিস্তার করব, গৌরবান্বিত করব;
দীর্ঘায়ু দিয়ে তৃপ্তি দেব তাকে,
তাকে দেখাব আমার পরিত্রাণ।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু,
যে রুটিতে বিশ্বাস পুষ্টি লাভ করে, আশা বেড়ে ওঠে ও ভক্তি বলবান হয়,
সেই স্বর্গীয় রুটিতে পরিতৃপ্ত হয়ে
আমরা যেন তাঁরই জন্য ক্ষুধিত হই যিনি জীবনময় ও সত্যকার রুটি;
তোমার মুখ থেকে যে প্রতিটি উক্তি নির্গত হয়,
আমরা যেন তাতেই বাঁচি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২য় রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, তুমি তোমার প্রিয় পুত্রের কথা শুনতে আমাদের আদেশ দিয়েছ।
প্রসন্ন হয়ে তুমি নিজেই তোমার বাণীদানে আমাদের অন্তর পরিপুষ্ট কর,
আমরা যেন শোধিত মনশ্চক্ষু দিয়ে
তোমার গৌরবের দর্শন পেয়ে আনন্দিত হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশু খ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
আদিপুস্তক থেকে পাঠ (২২:১-২,৯ক,১০-১৩,১৫-১৮)

একদিন পরমেশ্বর আব্রাহামকে যাচাই করলেন। তিনি তাঁকে বললেন, ‘আব্রাহাম, আব্রাহাম!’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এই যে আমি।’ তিনি বলে চললেন, ‘তোমার সন্তানকে, তোমার সেই একমাত্র সন্তানকে যাকে তুমি ভালবাস, সেই ইস্‌হাককে নাও ও মোরিয়া দেশে যাও, আর সেখানে যে এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলব, তার উপরে তাকে আহুতিরূপে বলিদান কর।’
যখন সেই জায়গায় এসে পৌঁছলেন, যার কথা পরমেশ্বর তাঁকে বলেছিলেন, তখন আব্রাহাম একটি যজ্ঞবেদি গাঁথলেন ও কাঠ সাজালেন। পরে আব্রাহাম হাত বাড়িয়ে নিজের ছেলেকে বধ করার জন্য খড়্গ তুলে নিলেন, কিন্তু স্বর্গ থেকে প্রভুর দূত তাঁকে ডাকলেন, বললেন, ‘আব্রাহাম, আব্রাহাম!’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এই যে আমি!’ দূত বললেন, ‘ছেলেটির উপর হাত বাড়িয়ো না, তার কোন ক্ষতি করো না, কেননা এখন আমি জানি, তুমি পরমেশ্বরকে ভয় কর; তুমি আমাকে তোমার সন্তানকে, তোমার একমাত্র সন্তানকে দিতেও অস্বীকার করনি।’
তখন আব্রাহাম চোখ তুলে দেখতে পেলেন, পাশে একটা ভেড়া, তার শিং একটা ঝোপের মধ্যে জড়ানো। আব্রাহাম গিয়ে সেই ভেড়াটা নিলেন ও নিজের ছেলের বদলে আহুতি রূপে তা বলিদান করলেন।
প্রভুর দূত দ্বিতীয়বারের মত স্বর্গ থেকে আব্রাহামকে ডাকলেন, বললেন, ‘প্রভুর উক্তি! নিজের দিব্যি দিয়েই বলছি, তুমি এই কাজ করেছ বলে—তোমার সন্তানকে, তোমার একমাত্র সন্তানকেও আমাকে দিতে অস্বীকার করনি বলে আমি তোমাকে অশেষ আশীর্বাদে ধন্য করব, এবং তোমার বংশের সংখ্যা আকাশের তারানক্ষত্রের মত ও সমুদ্রতীরের বালুকণার মত করব; তোমার বংশধরেরা শত্রুদের নগরদ্বার দখল করবে। তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশিসপ্রাপ্ত হবে, কারণ তুমি আমার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছ।’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১১৬
ধুয়ো:
আমি প্রভুর সম্মুখে চলতে থাকব
জীবিতের দেশে।

আমি তখনও বিশ্বাস রেখেছি যখন বলতাম,
‘আমি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত,’
প্রভুর দৃষ্টিতে মূল্যবান
তাঁর ভক্তদের মৃত্যু।   [ধুয়ো]

দোহাই প্রভু! আমি তো তোমার দাস,
আমি তোমারই দাস, তোমার দাসীর পুত্র,
তুমি খুলে দিয়েছ আমার শৃঙ্খল।
তোমার উদ্দেশে ধন্যবাদ-বলি উৎসর্গ ক’রে আমি করব প্রভুর নাম।   [ধুয়ো]

প্রভুর উদ্দেশে আমার ব্রতসকল উদ্‌যাপন করব
তাঁর সমস্ত জনগণের সামনে,
প্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে,
হে যেরুশালেম, তোমারই অন্তঃস্থলে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:৩১খ-৩৪)

প্রিয়জনেরা, ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষে, তখন কে আমাদের বিপক্ষে? যিনি নিজের পুত্রকে রেহাই দেননি, কিন্তু আমাদের সকলের জন্য তাঁকে সঁপে দিলেন, তিনি কি তাঁর সঙ্গে সমস্ত কিছুও আমাদের প্রদান করবেন না?
ঈশ্বরের মনোনীতজনদের বিপক্ষে কে অভিযোগ আনবে? ঈশ্বর যখন তাদের ধর্মময় করে তোলেন, তখন কেইবা অভিযোগ উত্থাপন করবে? খ্রিষ্ট যিশু তো মরলেন, এমনকি পুনরুত্থানও করলেন, তিনিই তো ঈশ্বরের ডান পাশে রয়েছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ রাখছেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।
সেই উজ্জ্বল মেঘ থেকে এক কণ্ঠস্বর বলে উঠল:
‘ইনি আমার প্রিয় পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন; তাঁর কথা শোন।’
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
মার্ক-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৯:২-১০)

একদিন, কেবল পিতর, যাকোব ও যোহনকে সঙ্গে করে যিশু নিজেদের মধ্যে একাকী হয়ে থাকবার জন্য একটা উঁচু পর্বতের উপরে তাঁদের নিয়ে গেলেন; এবং তাঁদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হলেন: তাঁর পোশাক উজ্জ্বল ও অধিক নির্মল হয়ে উঠল, পৃথিবীতে কোন রজক তা এত নির্মল করতে পারে না। আর এলিয় ও মোশি তাঁদের দেখা দিলেন: তাঁরা যিশুর সঙ্গে কথা বলছিলেন।
তখন পিতর যিশুকে বললেন, ‘রাব্বি, এখানে আমাদের থাকা উত্তম; আসুন, তিনটে কুটির তৈরি করি, আপনার জন্য একটা, মোশির জন্য একটা ও এলিয়ের জন্য একটা।’ কারণ কী বলতে হবে, তা তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না, যেহেতু তাঁরা ভয়ে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। তখন একটি মেঘ এসে নিজের ছায়ায় তাঁদের ঘিরে রাখল, আর সেই মেঘ থেকে এক কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হল: ‘ইনি আমার প্রিয় পুত্র; তাঁর কথা শোন।’ পরে তাঁরা হঠাৎ চারদিকে তাকিয়ে তাঁদের সঙ্গে আর কাউকে দেখতে পেলেন না, কেবল যিশুকেই দেখলেন।
পর্বত থেকে নামবার সময়ে তিনি তাঁদের কড়া আদেশ দিলেন: তাঁরা যা দেখেছিলেন, তা যেন কাউকেই না বলেন, যতদিন না মানবপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করেন। তাঁরা আদেশটা মেনে নিলেন, তবু ‘মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান’ কথাটার অর্থ নিয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ সাধু সিরিলের উপদেশ

যিশু মনোনীত সেই তিনজন শিষ্যের সঙ্গে পর্বতে গিয়ে উঠলেন; তারপর এমন অসাধারণ ও দিব্য জ্যোতিতে রূপান্তরিত হলেন যে, তাঁর পোশাক আলোর মতই উজ্জ্বল বলে প্রতীয়মান হল। তখন মোশি ও এলিয় তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে সেই প্রস্থান বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন যা যিশু যেরুশালেমে পূর্ণ করতে উদ্যত ছিলেন, অর্থাৎ সেই পরিত্রাণ রহস্য বিষয়ে, যা তাঁর দেহের মধ্য দিয়ে সাধিত হবার কথা,—আমি বলছি—সেই যন্ত্রণাভোগ বিষয়ে যা ক্রুশে সিদ্ধি লাভ করতে যাচ্ছিল। কেননা একথা সত্য যে, মোশির বিধান ও পুণ্যবান নবীদের সমস্ত বাণী খ্রিষ্ট রহস্যটি পূর্বঘোষণা করেছিল: বিধানের ফলকগুলো যেন দৃষ্টান্তে, আবৃতভাবেই তাঁর বর্ণনা দিয়েছিল; অন্য দিকে নবীরা বহুস্থানে বহুরূপেই তাঁর কথা প্রচার করেছিলেন—তাঁরা নাকি বলেছিলেন, উপযুক্ত সময়ে তিনি মানবরূপে আবির্ভূত হবেন ও সকলের জীবন ও পরিত্রাণের জন্য ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করতে সম্মত হবেন।
মোশি ও এলিয় উপস্থিত হয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন: এতে প্রকাশিত হয়, সেই বিধান ও নবী-সকল ছিলেন আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের উপগ্রহই যেন; ফলে তাঁরা যা পূর্বপ্রচার করেছিলেন এবং যা কিছু পরস্পর-একমত ছিল, সেই সবকিছুর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁদের দ্বারা ঈশ্বর বলে প্রদর্শিত হচ্ছিলেন। কেননা নবীদের বাণী বিধান-বিরুদ্ধ নয়; আর আমি মনে করি ঠিক এবিষয়েই মোশি ও নবীদের প্রধান সেই এলিয় কথা বলছিলেন।
আবির্ভূত হয়ে তাঁরা নীরব ছিলেন না, বরং সেই গৌরব বিষয়ে কথা বলছিলেন যা যিশুর যেরুশালেমে পূর্ণ করার কথা, অর্থাৎ তাঁর সেই যন্ত্রণাভোগ ও ক্রুশ বিষয়ে কথা বলছিলেন যেগুলিতে তাঁরা পুনরুত্থানেরও একটা আভাস পাচ্ছিলেন। এমনকি, ঈশ্বরের রাজ্যের সময় ইতিমধ্যে এসে গেছে মনে ক’রে সাধু পিতর পর্বতে থাকায় আনন্দিত, আর এজন্য তিন তাঁবু গাড়তে চান—তিনি কিন্তু জানতেন না যে কী বলছিলেন। তবু জগতের পরিণাম এখনও আসেনি, ভাবী পুণ্যবানেরাও প্রত্যাশিত ও প্রতিশ্রুত বিষয়গুলো বর্তমান কালে পেতে পারেন না। সাধু পলও এবিষয়ে বলেন, খ্রিষ্ট আমাদের হীনাবস্থার এই দেহটি তাঁর আপন গৌরবময় দেহেরই সাদৃশ্যে রূপান্তরিত করবেন (ফিলি ৩:২১)।
কিন্তু তাঁর কর্তব্য কাজ কেবল শুরু হয়েছিল ও তখনও সমাপ্ত হয়নি বিধায় যিনি ভালবাসার খাতিরে এজগতে এসেছিলেন সেই খ্রিষ্ট কেমন করে তার জন্য যন্ত্রণাভোগ করতে না চেয়ে পারতেন? কেননা তিনি সেই মানবস্বরূপটা বজায় রাখলেন যার মধ্য দিয়ে আপন মাংসে মৃত্যু বরণ করবেন ও পুনরুত্থান দ্বারা মৃত্যুকে ধ্বংস করবেন। অন্যদিকে, খ্রিষ্টের গৌরবের অপরূপ ও রহস্যময় দর্শন ছাড়া, শিষ্যদের শুধু নয় আমাদেরও বিশ্বাস স্থিতমূল করার জন্য উপযোগী ও প্রয়োজনীয় আর একটি ঘটনা বর্তমান, বস্তুত সেসময় পিতা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শোনা হল যিনি ঊর্ধ্ব থেকে বলছিলেন, ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন: তোমরা তাঁর কথা শোন (মথি ১৭:৫)।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১১৯
ধুয়ো:
ইনি আমার প্রিয় পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন;
তাঁর কথা শোন।

ুখী তারা, নিখুঁত যাদের পথ,
প্রভুর বিধানে যারা চলে।
সুখী তারা, যারা তাঁর নির্দেশমালা পালন করে,
সমস্ত হৃদয় দিয়ে যারা তাঁর অন্বেষণ করে।   [ধুয়ো]

তারা কোন অন্যায় করে না,
তারা তাঁর সমস্ত পথে চলে।
তুমি জারি করেছ তোমার আদেশমালা,
তারা যেন তা সযত্নেই মেনে চলে।   [ধুয়ো]

আহা! তোমার বিধিকলাপ মেনে চলায়
আমার পথসকল সুস্থির হোক।
তবে তোমার সকল আজ্ঞার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকলে
আমি লজ্জায় পড়ব না।   [ধুয়ো]

আমি যখন শিখব তোমার ন্যায়বিচার সকল,
তখন সরল অন্তরে তোমাকে জানাব ধন্যবাদ।
তোমার বিধিকলাপ মেনে চলব,
আমায় কখনও পরিত্যাগ করো না।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এ গৌরবময় রহস্যময় খাদ্য গ্রহণ ক’রে
আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাই: কেননা এ পৃথিবীতে থাকতেও
আমরা তোমার কৃপায় স্বর্গীয় বিষয়ের সহভাগী হয়েছি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৩য় রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
সমস্ত দয়া ও মঙ্গলকর কর্মের সাধক হে পরমেশ্বর,
তুমি শিখিয়েছ, উপবাস, প্রার্থনা ও অর্থদানেই পাপের প্রতিকার।
আমাদের নিম্নাবস্থার কথা স্বীকার করে আমরা নম্রচিত্তে মিনতি জানাই:
আমাদের দিকে মুখ তুলে চাও,
পাপের বোঝা যখন আমাদের ভূলুণ্ঠিত করে,
তখন তোমার দয়াই যেন আমাদের উন্নতশির করে তোলে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশু খ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
যাত্রাপুস্তক থেকে পাঠ (২০:১-১৭)

সেসময়ে পরমেশ্বর এই সমস্ত কথা বললেন, ‘আমি তোমার পরমেশ্বর প্রভু, যিনি মিশর দেশ থেকে, দাসত্ব-অবস্থা থেকে তোমাকে বের করে এনেছেন: আমার প্রতিপক্ষ কোন দেবতা যেন তোমার না থাকে!
তুমি তোমার জন্য খোদাই করা কোন প্রতিমূর্তি তৈরি করবে না; উপরে সেই আকাশে, নিচে এই পৃথিবীতে, ও পৃথিবীর নিচে জলরাশির মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তার সাদৃশ্যেও কোন কিছুই তৈরি করবে না। তুমি তেমন বস্তুগুলির উদ্দেশে প্রণিপাত করবে না, সেগুলির সেবাও করবে না; কেননা আমি, তোমার পরমেশ্বর প্রভু যিনি, আমি এমন ঈশ্বর, যিনি কোন প্রতিপক্ষকে সহ্য করেন না; যারা আমাকে ঘৃণা করে, তাদের বেলায় আমি পিতার শঠতার দণ্ড সন্তানদের উপরে ডেকে আনি—তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত; কিন্তু যারা আমাকে ভালবাসে ও আমার আজ্ঞাগুলি পালন করে, আমি সহস্র পুরুষ পর্যন্তই তাদের প্রতি কৃপা দেখাই।
তোমার পরমেশ্বর প্রভুর নাম তুমি অযথা নেবে না, কারণ যে কেউ তাঁর নাম অযথা নেয়, প্রভু তাকে শাস্তি থেকে রেহাই দেবেন না।
শাব্বাৎ দিনের কথা এমনভাবে স্মরণ করবে, যেন তার পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখ। পরিশ্রম করার জন্য ও তোমার যাবতীয় কাজ করার জন্য তোমার ছ’ দিন আছে; কিন্তু সপ্তম দিনটি তোমার পরমেশ্বর প্রভুর উদ্দেশে শাব্বাৎ: সেদিন তুমি কোন কাজ করবে না—তুমিও নয়, তোমার ছেলেমেয়েও নয়, তোমার দাসদাসীও নয়, তোমার পশুও নয়, তোমার সঙ্গে বাস করে এমন প্রবাসী মানুষও নয়; কেননা প্রভু ছ’দিনে আকাশ, পৃথিবী ও সমুদ্র এবং সেগুলির মধ্যে যা কিছু আছে, সমস্তই নির্মাণ করেছেন, কিন্তু সপ্তম দিনে বিশ্রাম করেছেন; এজন্য প্রভু শাব্বাৎকে আশীর্বাদ করেছেন ও পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন।
তোমার পিতা ও তোমার মাতাকে গৌরব আরোপ করবে, তোমার পরমেশ্বর প্রভু তোমাকে যে দেশভূমি দিচ্ছেন, সেই দেশভূমিতে তুমি যেন দীর্ঘজীবী হও।
নরহত্যা করবে না।
ব্যভিচার করবে না।
অপহরণ করবে না।
তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না।
তোমার প্রতিবেশীর ঘরের প্রতি লোভ করবে না।
প্রতিবেশীর স্ত্রী, তার দাসদাসী, তার বলদ-গাধা, তার কোন কিছুরই প্রতি লোভ করবে না।’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৯
ধুয়ো:
অনন্ত জীবনের কথা
তোমার কাছেই রয়েছে, প্রভু।

প্রভুর বিধান নিখুঁত,
প্রাণকে পুনরুজ্জীবিত করে;
প্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য,
সরলমনাকে প্রজ্ঞাবান করে।   [ধুয়ো]

প্রভুর আদেশমালা ন্যায্য,
হৃদয়ে আনন্দ সঞ্চার করে;
প্রভুর আজ্ঞা নির্মল,
চোখে আলো দান করে।   [ধুয়ো]

প্রভুভয় শুদ্ধ, চিরস্থায়ী,
প্রভুর বিচারগুলি সত্যাশ্রয়ী, সব ক’টি ধর্মময়,
সোনার চেয়ে, অজস্র খাঁটি সোনার চেয়েও মূল্যবান,
মধুর চেয়ে, মৌচাকের ঝরে পড়া মধুর চেয়েও সুমধুর।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
করিন্থীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (১:২২-২৫)

প্রিয়জনেরা, ইহুদীরা নানা চিহ্ন দেখবার দাবি করতে করতে ও গ্রীকেরা প্রজ্ঞার সন্ধান করতে করতে আমরা এমন ক্রুশবিদ্ধ খ্রিষ্টকে প্রচার করি, যিনি ইহুদীদের পক্ষে পতনের কারণ ও বিজাতীয়দের কাছে মূর্খতার নামান্তর; কিন্তু আহূত যারা—তারা ইহুদী হোক বা গ্রীক হোক—তাদের কাছে আমরা এমন খ্রিষ্টকে প্রচার করি, যিনি ঈশ্বরের পরাক্রম ও ঈশ্বরের প্রজ্ঞা।
কারণ যা ঈশ্বরের মূর্খতা, তা মানুষের চেয়ে প্রজ্ঞাময় এবং যা ঈশ্বরের দুর্বলতা, তা মানুষের চেয়ে শক্তিশালী।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।
ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালবেসেছেন যে,
তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করেছেন;
তাঁর প্রতি যে কেউ বিশ্বাস রাখে,
সে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে।
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
যোহন-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২:১৩-২৫)

ইহুদীদের পাস্কা সন্নিকট ছিল, তাই যিশু যেরুশালেমে গেলেন। মন্দিরের মধ্যে তিনি দেখলেন, লোকে বলদ, মেষ ও পায়রা বিক্রি করছে, পোদ্দারেরাও সেখানে বসে আছে। দড়ি দিয়ে একগাছা চাবুক বানিয়ে তিনি তাদের সকলকে মন্দির থেকে বের করে দিলেন: বলদ ও মেষ তাড়ালেন, পোদ্দারদের টাকা-কড়ি ছড়িয়ে তাদের টেবিল উল্টিয়ে দিলেন, এবং যারা পায়রা বিক্রি করছিল তাদের বললেন, ‘এখান থেকে ওই সমস্ত সরিয়ে নিয়ে যাও; আমার পিতার গৃহকে একটা ব্যবসার ঘর করো না।’ তাঁর শিষ্যদের শাস্ত্রের এই বচন মনে পড়ল, ‘তোমার গৃহের প্রতি আগ্রহের আগুন আমাকে গ্রাস করবে।’
ইহুদীরা তখন তাঁকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘এই যা আপনি করছেন, তার জন্য আমাদের কী চিহ্ন দেখাতে পারেন?’ যিশু এই বলে তাঁদের উত্তর দিলেন, ‘এই পবিত্রধাম ভেঙে ফেলুন, আমি তিন দিনের মধ্যে তা পুনরুত্তোলন করব।’ তখন ইহুদীরা বলে উঠলেন, ‘এই পবিত্রধাম নির্মাণ করতে ছেচল্লিশ বছর লেগেছিল, আর আপনি নাকি তিন দিনের মধ্যে তা উত্তোলন করবেন?’ তিনি কিন্তু তাঁর নিজের দেহ-পবিত্রধামের কথাই বলছিলেন।
তাই যখন তিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করলেন, তখন তাঁর শিষ্যদের মনে পড়ল যে, তিনি এই কথা বলেছিলেন; এবং তাঁরা শাস্ত্রে ও যিশু যা বলেছিলেন, সেই কথায় বিশ্বাস করলেন।
পাস্কাপর্ব উপলক্ষে তিনি যখন যেরুশালেমে ছিলেন, তখন যে সকল চিহ্নকর্ম সাধন করছিলেন, তা দেখে অনেকে তাঁর নামে বিশ্বাস রাখল; কিন্তু যিশু নিজে তাদের উপর আস্থা রাখতেন না, কারণ তিনি সকলকে জানতেন; তাছাড়া মানুষের বিষয়ে কারও সাক্ষ্যের প্রয়োজন তাঁর ছিল না: মানুষের অন্তরে কী আছে, তা নিজেই জানতেন।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিন-লিখিত ‘সামসঙ্গীত-মালায় উপদেশাবলি’ (সাম ১৩০, ১-৩)

আমরা অনেকবার তোমাদের সতর্ক করেছি, সামসঙ্গীতগুলো একজনমাত্র গায়কের কণ্ঠস্বর ব’লে নয়, বরং যারা খ্রিষ্টদেহে রয়েছে তাদের সকলেরই কণ্ঠস্বর ব’লে বিবেচনাযোগ্য। আর যেহেতু তাঁর দেহে সকলেই অন্তর্ভুক্ত, সেজন্য তিনি যেন একজনমাত্র মানুষ হয়েই কথা বলেন; কেননা খ্রিষ্ট অনেকের মধ্যে এক: আবার অনেক হয়েও অনেকে তাঁর মধ্যে এক, কারণ তিনি এক। তিনি আবার হলেন ঈশ্বরের মন্দির, যে মন্দিরের বিষয়ে প্রেরিতদূত বলেন, পবিত্রই ঈশ্বরের মন্দির—আর তোমরাই তো সেই মন্দির (১ করি ৩:১৭)। যারা খ্রিষ্টে বিশ্বাসী, তারা সকলে ভালবাসবার জন্যই বিশ্বাসী; কেননা খ্রিষ্টে বিশ্বাস করা বলতে তাঁকে ভালবাসা বোঝায়—সেই অপদূতদের মত নয়, যারা বিশ্বাস করছিল কিন্তু ভালবাসত না; ফলে বিশ্বাস করলেও তারা বলছিল, ঈশ্বরের পুত্র, আমাদের সঙ্গে আপনার আবার কী? (মথি ৮:২৯)। আমরা কিন্তু এমনভাবে বিশ্বাস করি যে, তাঁকে ভালবেসেই বিশ্বাস করি; তাছাড়া আমরা তো বলি না, ঈশ্বরের পুত্র, আমাদের সঙ্গে আপনার আবার কী! আমরা বরং একথা বলি, আমরা তোমার সম্পদ, তুমি আমাদের মুক্ত করেছ। যারা এভাবে বিশ্বাস করে, তারা সেই জীবন্ত প্রস্তরের মত যা নিয়ে ঈশ্বরের মন্দির নির্মিত; তারা সেই অক্ষয়শীল কাঠের মত যা নিয়ে সেই জাহাজ নির্মিত হয়েছিল, যে জাহাজ জলপ্লাবন দ্বারাও নিমজ্জিত হতে পারল না। মানুষই তো ঈশ্বরের প্রকৃত মন্দির যেখানে তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন ও সাড়া দেন। ঈশ্বরের মন্দিরে যে প্রার্থনা করে, সে-ই মাত্র অনন্ত জীবনের উদ্দেশে সাড়া পায়; সেই তো ঈশ্বরের মন্দিরে প্রার্থনা করে, মণ্ডলীর শান্তিতে তথা খ্রিষ্টদেহের ঐক্যে যে প্রার্থনা করে—আর তেমন দেহ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত বিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত। সুতরাং মন্দিরে যে প্রার্থনা করে, সে সাড়া পায়। কেননা মণ্ডলীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যে প্রার্থনা করে, সে-ই আত্মা ও সত্যের শরণে প্রার্থনা করে,—সে তো আগেকার মন্দিরে নয়, যা ছিল কেবল একটা দৃষ্টান্ত। যারা তাদের নিজেদের স্বার্থ খুঁজছিল, অর্থাৎ কেনা-বেচার জন্যই মন্দিরে যাচ্ছিল, প্রভু তাদের সকলকে মন্দির থেকে বের করে দিলেন। সেই মন্দির যখন দৃষ্টান্তই ছিল, তখন স্পষ্ট দাঁড়ায় যে, প্রতীকাকারে মন্দিরের চেয়ে প্রকৃত মন্দির সেই খ্রিষ্টদেহেও কেনা-বেচার মত লোক, অর্থাৎ খ্রিষ্টের নয়, নিজেরই স্বার্থের অন্বেষী লোক মিশে আছে।
আর যেহেতু মানুষ নিজ নিজ পাপে নিমজ্জিত, সেজন্য প্রভু একটা চাবুক বানিয়ে মন্দির থেকে সেই সকল মানুষকে বের করে দিলেন যারা নিজেদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিল কিন্তু যিশু খ্রিষ্টকে নিয়ে নয়। সামসঙ্গীতে এ মন্দিরের কথা পরিলক্ষিত। আমি বলেছি, এই মন্দিরেই—বাহ্যিক সেই মন্দিরে নয়—আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আর তিনি আত্মা ও সত্যের শরণে সাড়া দেন। সেই মন্দিরে এমন আভাস দেওয়া হয়েছিল যা পরবর্তীকালে ঘটবার কথা: আর আসলে সেই মন্দির বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে কি আমাদের প্রার্থনা-গৃহও ধ্বংসিত হয়েছে? কখনও না! যা এখনও আর নেই, তা প্রার্থনা-গৃহ বলা চলে না, যেমন লেখা হয়েছিল, আমার গৃহকে বলা হবে সকল জাতির জন্যই প্রার্থনা-গৃহ (ইশা ৫৬:৭ দ্রঃ)। তোমরা তো শুনেছ প্রভু যিশু খ্রিষ্ট কী বললেন, লেখা রয়েছে: আমার গৃহকে বলা হবে সকল জাতির জন্যই প্রার্থনা-গৃহ; অথচ তোমরা তা দস্যুদের আস্তানা করেছ (মার্ক ১১:১৭)। যারা ঈশ্বরের গৃহকে চোরের আস্তানায় পরিণত করতে চাইল, তারাই নাকি মন্দিরের ধ্বংসের কারণ হয়নি? একই প্রকারে, যারা কাথলিক মণ্ডলীতে ভাল মত জীবন যাপন করে না, তারা ঈশ্বরের গৃহকে চোরের আস্তানা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে বটে, তবু মন্দিরটা ধ্বংস করে না; বরং এমন দিন আসবে যখন তাদের নিজেদের পাপের চাবুক দ্বারা তাদেরই বের করে দেওয়া হবে। অপরদিকে ঈশ্বরের এ মন্দির যা খ্রিষ্টেরই দেহ, এ ভক্তমণ্ডলীর একটামাত্র কণ্ঠস্বর আছে, আর সামসঙ্গীতে যেন একমাত্র মানুষ হয়েই গান করে। আমরা ইতিমধ্যে বহু সামসঙ্গীতেই তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম: এসো, এখনও সেই কণ্ঠস্বর শুনি। আমরা ইচ্ছা করলে, তবে এ আমাদেরই কণ্ঠস্বর; ইচ্ছা করলে, আমরা কান দিয়ে গায়কের কণ্ঠ শুনি আর আমরা হৃদয় দিয়ে গান করি। কিন্তু ইচ্ছা না করলে, তবে আমরা হব সেই মন্দিরের ব্যবসায়ীর মত, অর্থাৎ এমন মানুষ যারা নিজেদেরই স্বার্থের খোঁজ করে: এভাবেও আমরা মণ্ডলীতে প্রবেশ করি বটে, কিন্তু ঈশ্বরের যা গ্রহণীয়, তা করতে নয়।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৮৪
ধুয়ো:
সুখী তারা, যারা বাস করে তোমার গৃহে,
তারা তোমার প্রশংসা নিত্যই করে থাকে।

তোমার আবাসগৃহগুলো কতই না মনোরম, হে সেনাবাহিনীর প্রভু;
প্রভুর প্রাঙ্গণের জন্য আমার প্রাণ ব্যাকুল, আহা মূর্ছাতুর;
জীবনময় ঈশ্বরের জন্য আনন্দচিৎকারে ফেটে পড়ে
আমার হৃদয়, আমার দেহ।   [ধুয়ো]

চড়ুই পাখিও খুঁজে পায় বাসা,
দোয়েলও পায় শাবকদের রেখে যাওয়ার নীড়—
সেই তো তোমার বেদি, হে সেনাবাহিনীর প্রভু,
হে আমার রাজা, হে আমার পরমেশ্বর।   [ধুয়ো]

সুখী তারা, যারা বাস করে তোমার গৃহে,
তারা তোমার প্রশংসা নিত্যই করে থাকে।
সুখী তারা, তোমাতেই যাদের শক্তি,
যাদের অন্তরে বিরাজিত তোমার যত পথ।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এ পৃথিবীতে স্বর্গীয় গৌরবের পণ সেই দিব্য রুটি গ্রহণ ক’রে
আমরা তোমাকে অনুনয় করি:
যা কিছু রহস্যের আড়ালে উদ্‌যাপন করছি,
তা যেন আমাদের অন্তরে পূর্ণ সার্থকতা অর্জন করে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৪র্থ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, মানবসমাজের যে পুনর্মিলন তোমার ঐশবাণী সাধন করেছেন,
তা সত্যি তোমার এক অপূর্ব কীর্তি।
আশীর্বাদ কর:
গোটা খ্রিষ্টমণ্ডলী যেন উদ্দীপ্ত ভক্তি ও জ্বলন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে
আসন্ন পাস্কাপর্বের দিকে দ্রুতপদে এগিয়ে চলতে পারে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশু খ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
বংশাবলির দ্বিতীয় পুস্তক থেকে পাঠ (৩৬:১৪-১৬,১৯-২৩)

সেসময়ে যুদার সমাজনেতারা, যাজকেরা সকলে ও জনগণ জাতিগুলোর সমস্ত জঘন্য প্রথা অনুসরণ করে উত্তরোত্তর অবিশ্বস্ততা দেখাল এবং প্রভু যেরুশালেমে যে গৃহ নিজের উদ্দেশে পবিত্রীকৃত করেছিলেন, তা কলুষিত করল।
তাদের পিতৃপুরুষদের পরমেশ্বর প্রভু তাদের কাছে বারে বারেই তাঁর দূতদের প্রেরণ করলেন, কেননা তাঁর আপন জনগণের ও তাঁর আপন বাসস্থানের প্রতি তাঁর মমতা ছিল। কিন্তু তারা পরমেশ্বরের দূতদের ঠাট্টা করল, তাঁর বাণী অবজ্ঞা করল ও তাঁর নবীদের বিদ্রূপ করল, তাই শেষে তাঁর আপন জনগণের উপরে প্রভুর রোষ শেষ মাত্রায় এসে পৌঁছল—তখন প্রতিকারের আর কোন উপায় রইল না!
তাদের শত্রুরা পরমেশ্বরের গৃহ পুড়িয়ে দিল, যেরুশালেমের প্রাচীর ভেঙে ফেলল, সেখানকার প্রাসাদগুলোতে আগুন ধরাল, ও সেখানকার সমস্ত মনোরম পাত্র বিনাশ-মানতের বস্তু করল। খড়্গ থেকে যারা রেহাই পেয়েছিল, [কাল্দীয়দের] রাজা তাদের দেশছাড়া করে বাবিলনে নিয়ে গেলেন, আর পারস্য-রাজ্য স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তাঁর নিজের ও তাঁর সন্তানদের দাস হয়ে থাকল। এইভাবে যেরেমিয়ার মুখ দিয়ে উচ্চারিত প্রভুর বাণী সিদ্ধি লাভ করল: যতদিন দেশ তার বাকি শাব্বাৎগুলোর ঋণ মিটিয়ে না দেয়, ততদিন, সত্তর বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত, দেশ দুর্দশার সমস্ত কাল ধরে বিশ্রাম করবে।
পারস্য-রাজ কুরোশের শাসনকালের প্রথম বর্ষে প্রভু, যেরেমিয়ার মুখ দিয়ে উচ্চারিত প্রভুর বাণী যেন সিদ্ধিলাভ করে, সেজন্য পারস্য-রাজ কুরোশের অন্তরে এমন প্রেরণা জাগালেন, যেন তিনি নিজের রাজ্যের সমস্ত জায়গায় এই হুকুম—লিখিত ঘোষণাপত্রের মাধ্যমেও—প্রচার করিয়ে দেন:
‘পারস্য-রাজ কুরোশ একথা বলছেন, স্বর্গেশ্বর প্রভু পৃথিবীর যত রাজ্য আমাকে মঞ্জুর করেছেন; তিনি আমাকে এমন ভার দিয়েছেন, যেন আমি যুদায়, যেরুশালেমেই, তাঁর জন্য একটা গৃহ গেঁথে তুলি। তোমাদের মধ্যে যে কেউ পরমেশ্বরের গোটা জনগণের অঙ্গ, তার পরমেশ্বর তার সঙ্গে সঙ্গে থাকুন; সে রওনা দিক!’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৩৭
ধুয়ো:
আমার জিহ্বা তালুতে লেগে যাক,
আমি যদি স্মরণে না রাখি তোমায়।

বাবিলনের নদনদী কূলে বসে
আমরা কাঁদছিলাম সিয়োনের কথা স্মরণ ক’রে;
সেখানকার ঝাউগাছে
ঝুলিয়ে রেখেছিলাম আমাদের বীণা।   [ধুয়ো]

আমাদের বন্দি করে এনেছিল যারা,
সেইখানে যে তারা চাইত আমরা গাইব গান;
আমাদের অত্যাচারীরা আনন্দই চাইত—
‘আমাদের শোনাও সিয়োনের একটি গান।’   [ধুয়ো]

আমরা কী করে গাইব প্রভুর গান
এ বিদেশী মাটির বুকে?
ওগো যেরুশালেম, আমি যদি তোমায় ভুলে যাই,
আমার ডান হাতও আমাকে ভুলে যাক!   [ধুয়ো]

আমার জিহ্বা তালুতে লেগে যাক,
আমি যদি স্মরণে না রাখি তোমায়,
যেরুশালেমকে যদি না রাখি
আমার সমস্ত আনন্দের ঊর্ধ্বে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
এফেসীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (২:৪-১০)

প্রিয়জনেরা, ঈশ্বর, দয়ায় ঐশ্বর্যবান হওয়ায়, যে মহা ভালবাসায় আমাদের ভালবাসলেন, অপরাধের ফলে মৃত ছিলাম যে আমরা এই আমাদের তিনি খ্রিষ্টের সঙ্গে জীবিত করে তুললেন—অনুগ্রহেই তোমরা পরিত্রাণকৃত!—এবং আমাদের তাঁর সঙ্গে পুনরুত্থিত করলেন ও তাঁর সঙ্গে স্বর্গধামে আসন দিলেন—খ্রিষ্ট যিশুতে।
তিনি তেমনটি করলেন যেন আসন্ন যুগগুলোতে তিনি, খ্রিষ্ট যিশুতে আমাদের প্রতি তাঁর মঙ্গলময়তার মাধ্যমে, তাঁর সেই অসীম অনুগ্রহের ঐশ্বর্য দেখাতে পারেন।
কেননা এই অনুগ্রহেই তোমরা বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ পেয়েছ; এবং তা তোমাদের কাজ নয়, ঈশ্বরেরই দান; তা কর্মের ফলও নয়, কেউই যেন গর্ব না করতে পারে। কারণ আমরা তাঁরই শিল্পকর্ম, খ্রিষ্ট যিশুতে সেই সমস্ত সৎকর্মের উদ্দেশ্যেই সৃষ্ট, যা ঈশ্বর আগে থেকে স্থিরীকৃত করেছিলেন, যেন আমরা সেই পথে চলি।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।
ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালবেসেছেন যে,
তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করেছেন;
তাঁর প্রতি যে কেউ বিশ্বাস রাখে,
সে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে।
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
যোহন-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৩:১৪-২১)

একদিন যিশু নিকোদেমকে বললেন: ‘মোশি যেমন মরুপ্রান্তরে সেই সাপ উত্তোলন করেছিলেন, মানবপুত্রকেও তেমনি উত্তোলিত হতে হবে, যে কেউ বিশ্বাস করে, সে যেন তাঁর মধ্যে অনন্ত জীবন পেতে পারে।
কেননা ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালবেসেছেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করেছেন, তাঁর প্রতি যে কেউ বিশ্বাস রাখে, তার যেন বিনাশ না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পেতে পারে। কেননা ঈশ্বর জগৎকে বিচার করার জন্য তাঁর পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেননি, কিন্তু এজন্য, জগৎ যেন তাঁর দ্বারা পরিত্রাণ পেতে পারে। তাঁর প্রতি যে বিশ্বাসী, তার বিচার হয় না; কিন্তু যে অবিশ্বাসী, তার বিচার হয়েই গেছে, যেহেতু ঈশ্বরের একমাত্র পুত্রের নামে বিশ্বাস করেনি।
আর এই তো সেই বিচার: জগতের মধ্যে আলো আসা সত্ত্বেও মানুষ সেই আলোর চেয়ে অন্ধকার ভালবেসেছে, কেননা তাদের কর্ম অসৎ ছিল। বাস্তবিক, যে অপকর্মের সাধক, সে আলোকে ঘৃণা করে, ও আলোর দিকে সে আসে-ই না, পাছে তার কর্ম ব্যক্ত হয়; কিন্তু যে সত্যের সাধক, সে আলোর দিকে এগিয়ে আসে, তার সমস্ত কর্ম যে ঈশ্বরে সাধিত তা যেন প্রকাশিত হয়।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু জন খ্রিসোস্তম-লিখিত ‘ঈশ্বরের দূরদৃষ্টি’

আমরা যারা কতগুলো কারণ নিয়ে প্রভুকে সম্মান করি, তিনি যে ক্রুশদণ্ড ভোগ করলেন ও তেমন জঘন্য মৃত্যু বরণ করলেন, বিশেষভাবে এর জন্যই আমাদের কি তাঁর মহিমাগান, গৌরবকীর্তন ও বন্দনা করতে হবে না? পল কি আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসার প্রমাণ স্বরূপ তাঁর মৃত্যুর কথা অবিরতই স্মরণ করিয়ে দেন না? আর তিনি মানুষের জন্য কী ধরনের মৃত্যু বরণ করলেন? আমাদের খাতিরে ও আমাদের সান্ত্বনা দেবার জন্য খ্রিষ্ট যা করেছেন, একথা বাতিল করে তিনি সবসময় ক্রুশের কথায় আসেন: ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রমাণ করছেন, কেননা আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনই খ্রিষ্ট আমাদের জন্য মরলেন (রো ৫:৮)। একথার পর কিন্তু তিনি বিরাট আশায় আমাদের উন্নীত করেন, আমরা যখন শত্রু ছিলাম, তখন যদি তাঁর পুত্রের মৃত্যু দ্বারা ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলিত হলাম, তবে পুনর্মিলিত হয়ে আমরা যে তাঁর জীবনের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণ পাব, তা আরও কতই না সুনিশ্চিত (রো ৫:১০)। তিনি নিজে এ নিয়ে গর্ব করেন, এমনকি তিনি আনন্দ করেন, উল্লাস করেন ও আনন্দের আতিশয্যে গালাতীয়দের কাছে লেখেন, আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশে ছাড়া আমি আর অন্য কিছুতেই যেন গর্ব না করি (গা ৬:১৪)।
যিনি যন্ত্রণাভোগ করলেন, তিনিও যখন ক্রুশকে গৌরব গণ্য করেন, তখন পল যে এ নিয়ে উল্লাস করেন, আনন্দে মেতে ওঠেন ও গর্ব করেন, এতে আমরা কেন বিস্মিত হব? তিনি বললেন, পিতা, সেই ক্ষণ এসেছে: তোমার পুত্রকে গৌরবান্বিত কর (যোহন ১৭:১)। আর যে শিষ্য একথা লিখেছেন, তিনি বলছিলেন, আত্মা তখনও ছিলেন না, যেহেতু যিশু তখনও গৌরবান্বিত হননি (যোহন ৭:৩৯)—একথা ব’লে তিনি ক্রুশের গৌরব বোঝাতে চাচ্ছিলেন।
আর যখন তিনি খ্রিষ্টের ভালবাসার কথা স্পষ্ট করে ব্যক্ত করতে চাইলেন, তখন কী বললেন? তিনি কি কোন অলৌকিক কাজ বা আশ্চর্য চিহ্নের ইঙ্গিত করলেন? মোটেই না, তিনি বরং ক্রুশে ছাড়া অন্য কিছুই উল্লেখ করেন না: ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালবেসেছেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করেছেন, তাঁর প্রতি যে কেউ বিশ্বাস রাখে, তার যেন বিনাশ না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পেতে পারে (যোহন ৩:১৬)।
আর পল বলেন, যিনি নিজের পুত্রকে রেহাই দেননি, কিন্তু আমাদের সকলের জন্য তাঁকে সঁপে দিলেন, তিনি কি তাঁর সঙ্গে সমস্ত কিছুও আমাদের প্রদান করবেন না? (রো ৮:৩২)।
বিনম্রতার দিকে আমাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তিনি এ বাণী স্মরণ করিয়ে দেন, খ্রিষ্ট যিশুতে যে মনোভাব ছিল, তা তোমাদের অন্তরেও যেন থাকে: অবস্থায় ঈশ্বর হয়েও তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে সমতাকে আঁকড়ে ধরার বস্তু মনে করলেন না; বরং দাসের অবস্থা ধারণ করে ও মানুষদের সদৃশ হয়ে তিনি নিজেকে রিক্ত করলেন; আকারে প্রকারে মানুষ বলে প্রতিপন্ন হয়ে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশমৃত্যু পর্যন্তই নিজেকে বাধ্য করায় নিজেকে অবনমিত করলেন (ফিলি ২:৫)। আর যখন তিনি ভালবাসা-সংক্রান্ত পরামর্শ দেন, তখন একথা বলেন, ভালবাসায় চল, যেইভাবে খ্রিষ্টও আমাদের ভালবেসেছেন ও আমাদেরই জন্য ঈশ্বরের কাছে নৈবেদ্য ও সুরভিত বলিরূপে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন (এফে ৫:২)।
আবার, যখন মণ্ডলীর ভিত্তিস্বরূপ সেই প্রেরিতদূতদের প্রধান অজ্ঞতাবশত তাঁকে আপত্তি করে বলেছিলেন, দূরের কথা, প্রভু! অমনটি আপনার কখনও ঘটবে না, তখন প্রভু নিজে যে ক্রুশকে কতই না বাসনা করছিলেন ও কোন্‌ ব্যগ্রতার প্রেরণায় অনুপ্রাণিত ছিলেন, তা দেখাবার জন্য তিনি পিতরকে কীভাবেই না উদ্দেশ ক’রে কথা বলেছিলেন, সেকথা শোন, আমার পিছনে চলে যাও, শয়তান! তুমি আমার পথের বাধা (মথি ১৬:২৩)। তেমন শক্ত ও কঠোর ভর্ৎসনা করে তিনি দেখাতে চাইলেন, কতই না মনের আগ্রহে ক্রুশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সুতরাং, যখন খ্রিষ্ট ক্রুশকে গৌরব বলেন ও পল ক্রুশ নিয়ে গর্ববোধ করেন, তখন এজীবনে ক্রুশ যে তত কীর্তিত, এতে বিস্মিত হব কেন?

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩৪
ধুয়ো:
প্রভু আমার চোখে প্রলেপ দিলেন:
আমি গেলাম, নিজেকে ধৌত করলাম,
আমি এখন চোখে দেখতে পাচ্ছি,
আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি।

সর্বদাই আমি প্রভুকে বলব ধন্য,
নিয়তই আমার মুখে তাঁর প্রশংসাবাদ।
প্রভুতে গর্ব করে আমার প্রাণ,
শুনুক, আনন্দ করুক বিনম্র সকল।

আমার সঙ্গে প্রভুর মহিমাকীর্তন কর,
এসো, আমরা একসঙ্গে তাঁর নাম বন্দনা করি।
প্রভুর অন্বেষণ করেছি, তিনি আমাকে সাড়া দিলেন,
যত ভয়-শঙ্কা থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন।

তাঁর দিকে চেয়ে দেখ, তোমরা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে,
লজ্জায় ঢেকে যাবে না কো তোমাদের মুখ।
এই দীনহীন ডাকে, প্রভু শোনেন,
তার সকল সঙ্কট থেকে তাকে পরিত্রাণ করেন।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, যত মানুষ এজগতে আসে, তুমিই যখন তাদের আলোকিত কর,
তখন অনুনয় করি: তোমার অনুগ্রহের বিভায় আমাদের অন্তর আলোকিত কর,
আমরা যেন সর্বদা তা-ই ভাবি যা তোমার মাহাত্ম্যের গ্রহণযোগ্য,
আর অকপট অন্তরে যেন তোমাকে ভালবাসতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৫ম রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু ঈশ্বর, আশীর্বাদ কর: জগতের প্রতি যে ভালবাসার খাতিরে
তোমার পুত্র মৃত্যুর হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন,
তোমার সহায়তায় আমরাও যেন একাগ্রতার সঙ্গে
সেই ভালবাসার পথে চলতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশু খ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী যেরেমিয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৩১:৩১-৩৪)

দেখ, এমন দিনগুলি আসছে—প্রভুর উক্তি—যখন আমি ইস্রায়েলকুল ও যুদাকুলের সঙ্গে এক নতুন সন্ধি স্থাপন করব।
মিশর দেশ থেকে তাদের পিতৃপুরুষদের বের করে আনার জন্য যখন আমি তাদের হাত ধরেছিলাম, তখন আমি তাদের সঙ্গে যে সন্ধি স্থির করেছিলাম, এই সন্ধি সেই অনুসারে নয়; আমি তাদের প্রভু হলেও তারা আমার সেই সন্ধি লঙ্ঘন করল—প্রভুর উক্তি।
এটি হবে সেই সন্ধি যা আমি সেই দিনগুলির পরে ইস্রায়েলকুলের সঙ্গে স্থাপন করব—প্রভুর উক্তি: আমি তাদের অন্তঃস্থলে আমার নির্দেশগুলি রেখে দেব, তাদের হৃদয়েই তা লিখে দেব। তখন আমি হব তাদের আপন পরমেশ্বর আর তারা হবে আমার আপন জনগণ। “তোমরা প্রভুকে জানতে শেখ!” একথা ব’লে আপন প্রতিবেশীকে ও ভাইকে উপদেশ দেওয়া আর কারও প্রয়োজন হবে না, কারণ তারা ছোট বড় সকলেই আমাকে জানবে—প্রভুর উক্তি—কেননা আমি তাদের শঠতা ক্ষমা করব, তাদের পাপও আর স্মরণে আনব না।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৫১
ধুয়ো:
আমার মধ্যে এক শুদ্ধ হৃদয়
সৃষ্টি কর গো পরমেশ্বর।

আমাকে দয়া কর গো পরমেশ্বর, তোমার কৃপা অনুসারে,
তোমার অপার স্নেহে মুছে দাও আমার অপরাধ।
আমার অন্যায় থেকে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর,
আমার পাপ থেকে শোধন কর আমায়।   [ধুয়ো]

আমার মধ্যে এক শুদ্ধ হৃদয় সৃষ্টি কর গো পরমেশ্বর,
আমার মধ্যে এক সুস্থির আত্মা নবীন করে তোল।
তোমার শ্রীমুখ থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ো না কো দূরে,
আমা থেকে তোমার পবিত্র আত্মাকে করো না হরণ।   [ধুয়ো]

আমাকে ফিরিয়ে দাও তোমার ত্রাণের পুলক,
আমার মধ্যে এক উদার আত্মা ধরে রাখ।
আমি অপরাধীদের শেখাব তোমার পথসকল,
পাপীরা তখন ফিরবে তোমার কাছে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
হিব্রুদের কাছে পত্র থেকে পাঠ (৫:৭-৯)

খ্রিষ্ট তাঁর পার্থিব জীবনকালে, একটা তীব্র আর্তনাদে ও চোখের জলে তাঁরই কাছে প্রার্থনা ও মিনতি উৎসর্গ ক’রে যিনি তাঁকে মৃত্যু থেকে ত্রাণ করতে সক্ষম, ও তাঁর এই ভক্তি-সম্ভ্রমের জন্য সাড়া পেয়ে, পুত্র হয়েও নিজের দুঃখকষ্ট থেকে বাধ্যতা শিখেছিলেন, এবং নিজ সিদ্ধতায় চালিত হয়ে তিনি, তাঁর প্রতি যারা বাধ্য, তাদের সকলেরই অনন্ত পরিত্রাণের কারণ হয়ে উঠলেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।
কেউ যদি আমার সেবা করে,
সে আমার অনুসরণ করুক;
যেখানে আমি আছি,
আমার সেবকও সেখানে থাকবে—বলছেন প্রভু।
প্রণাম প্রভু যিশু, মহাপ্রশংসা ও মহাবন্দনার যোগ্য তুমি।

৮। সুসমাচার
যোহন-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১২:২০-৩৩)

পাস্কাপর্ব উপলক্ষে উপাসনা করার জন্য যারা এসেছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীক ছিল। তারা ফিলিপের কাছে এল—তিনি গালিলেয়ার বেথ্সাইদার মানুষ ছিলেন—এবং তাঁর কাছে এই অনুরোধ রাখল, ‘মহাশয়, আমরা যিশুকে দেখতে ইচ্ছা করি।’
ফিলিপ গিয়ে আন্দ্রিয়কে বললেন, এবং আন্দ্রিয় ও ফিলিপ যিশুর কাছে এসে কথাটা জানালেন। যিশু তাঁদের উত্তর দিলেন, ‘মানবপুত্রের গৌরবান্বিত হওয়ার ক্ষণ উপস্থিত হয়েছে। আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, গমের দানা যদি মাটিতে পড়ে মরে না যায়, তবে তা মাত্র একটাই হয়ে থাকে; কিন্তু যদি মরে যায়, তবে বহু ফল উৎপন্ন করে। নিজের প্রাণকে যে ভালবাসে, সে তা হারিয়ে ফেলে, আর এই জগতে নিজের প্রাণকে যে ঘৃণা করে, সে অনন্ত জীবনের উদ্দেশে তা রক্ষা করবে। কেউ যদি আমার সেবা করে, সে আমার অনুসরণ করুক, যেখানে আমি আছি, আমার সেবকও সেখানে থাকবে। কেউ যদি আমার সেবা করে, তবে আমার পিতা তাকে সম্মানিত করবেন। এখন আমার প্রাণ কম্পিত; তবে কী বলব? পিতা, এই আসন্ন ক্ষণ থেকে আমাকে ত্রাণ কর? কিন্তু এর জন্যই আমি এই ক্ষণ পর্যন্ত এসেছি! পিতা, তোমার আপন নাম গৌরবান্বিত কর।’
তখন স্বর্গ থেকে এক কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হল, ‘তা গৌরবান্বিত করেছি, আবার তা গৌরবান্বিত করব।’
সেখানে উপস্থিত লোকেরা তা শুনতে পেয়ে বলল, ‘এ একটা বজ্রধ্বনি।’ অন্যেরা বলল, ‘এক স্বর্গদূত তাঁর সঙ্গে কথা বললেন।’ যিশু উত্তরে বললেন, ‘এই কণ্ঠস্বর আমার জন্য নয়, তোমাদেরই জন্য ধ্বনিত হল। এখন এই জগতের বিচার উপস্থিত, এখন এই জগতের অধিপতিকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। আর আমাকে যখন ভূলোক থেকে উত্তোলন করা হবে, তখন সকলকে নিজের কাছে আকর্ষণ করব।’ তিনি যে কী ধরনের মৃত্যুতে মারা যাবেন, এই কথায় তার ইঙ্গিত দিলেন।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
গণনাপুস্তকে আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ সাধু সিরিলের ব্যাখ্যা

খ্রিষ্ট হলেন এ গমের প্রথমফসল—তিনি যে তখন একাই অভিশাপ থেকে রেহাই পেলেন, ঠিক যখন আমাদের জন্য অভিশাপস্বরূপ হতে চাইলেন। এমনকি, মৃতদের মধ্যে মুক্ত হয়ে জীবনে ফিরে আসায় তিনি ক্ষয়শক্তিও জয় করলেন। কেননা তিনি মৃত্যুকে নিঃশেষে পরাভূত করেই পুনরুত্থান করলেন; এমনকি, অক্ষয়শীলতায় নবায়িত মানবস্বরূপের প্রথমফসল স্বরূপ নিবেদিত দানরূপে তিনি পিতার কাছে আরোহণ করলেন। আসলে খ্রিষ্ট মানুষের হাতে গড়া পবিত্রধামে প্রবেশ করেননি—এ তো সত্যকার পবিত্রধামের প্রতিরূপমাত্র!—তিনি তো স্বর্গধামেই প্রবেশ করেছেন, যেন এখন আমাদের সপক্ষে ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াতে পারেন (হিব্রু ৯:২৪)। তিনিই যে স্বর্গ থেকে নেমে আসা জীবন-রুটি, তিনি যে পিতা ঈশ্বরের কাছে সুরভিত বলিরূপে নিজেকে উৎসর্গ করায় মানুষকে তার অপরাধ থেকে মুক্ত করেন ও তার পাপ ক্ষমা করেন, তুমি এ সমস্ত কথা ভালই বুঝতে পারবে যদি মনশ্চক্ষুতে তাঁকে জনগণের জন্য সেই বলীকৃত বৃষ বা উৎসর্গীকৃত ছাগ রূপেই দর্শন করতে পার। কেননা খ্রিষ্ট জগতের পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে আমাদের জন্য আপন প্রাণ উৎসর্গ করলেন। সুতরাং আমরা যেমন রুটিতে খ্রিষ্টকে জীবন ও জীবনদাতা রূপে, বৃষে তাঁকে পিতা ঈশ্বরের কাছে সুরভিত নৈবেদ্যরূপেই যেন পুনরুৎসর্গীকৃত বলিরূপে, ও ছাগের প্রতীকাকারে তাঁকে আমাদের জন্য পাপরূপে ও পাপার্থে বলিরূপে দর্শন করি, তেমনি তাঁকে গমের শিষ রূপেও দর্শন করতে পারি। একথা কেমন করে সত্য, তা কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝিয়ে দেব।
মানবজাতিকে মাঠে গমের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে: মাটি থেকে উদ্ভূত হয়ে উপযুক্ত বৃদ্ধি লাভ করতে করতেই তা মৃত্যু দ্বারা কেড়ে নেওয়া হয়। তেমন কথা খ্রিষ্ট শিষ্যদের বলেছিলেন, তোমরা কি একথা বল না যে, আর চার মাস বাকি, তারপর ফসল হবে? দেখ, আমি তোমাদের একটা কথা বলি: চোখ তুলে তোমরা মাঠের দিকে চেয়ে দেখ, ফসল কেমন সোনালী হয়ে কাটার অপেক্ষায় আছে; এর মধ্যে ফসলকাটিয়ে মজুরি পাচ্ছে, ও অনন্ত জীবনের উদ্দেশে ফসল সংগ্রহ করে যাচ্ছে (যোহন ৪:৩৫-৩৬)। সুতরাং যারা পৃথিবীতে জীবনযাপন করে, যুক্তিসঙ্গত ভাবে খেতের ফসলের সঙ্গে তাদের তুলনা করা যায়। কুমারী থেকে জন্ম গ্রহণ করে খ্রিষ্ট আমাদের মাঝে গমের এক শিষের মত উৎপন্ন হলেন। এমনকি তিনি নিজেই নিজেকে গমের দানা বলেন: আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, গমের দানা যদি মাটিতে পড়ে মরে না যায়, তবে তা মাত্র একটাই হয়ে থাকে; কিন্তু যদি মরে যায়, তবে বহু ফল উৎপন্ন করে (যোহন ১২:২৪)। এজন্য তিনি পিতার সামনে শপথ স্বরূপ হলেন, বা আমাদের জন্য উৎসর্গীকৃত ও বলীকৃত এমন কিছু যা পৃথিবীর প্রথমফসল সেই গমের শিষেরই সদৃশ। একটামাত্র শিষ ঠিকই, কিন্তু একক নয় বরং আমাদের সকলেরই সঙ্গে যুক্ত, যারা বহু শিষ নিয়ে গঠিত আঁটি রূপে একটামাত্র রাশি।
এ দৃষ্টান্ত আমাদের আত্মার মঙ্গল ও অগ্রগতির জন্য উপযুক্ত; রহস্যের প্রতীকও স্পষ্ট করে তোলে। কেননা খ্রিষ্ট যিশু মাত্র একজন ঠিকই, কিন্তু যেহেতু আশ্চর্যময় আত্মিক ঐক্যে নিজের মধ্যে সকল বিশ্বাসীকে সংগ্রহ করেন, সেজন্য শিষের সুসংবদ্ধ আঁটি বলে পরিগণিত হতে পারেন, আর তিনি আসলে তাই। তা না হলে, কেন সাধু পল লিখবেন, তিনি তাঁর নিজের সঙ্গে আমাদের পুনরুত্থিতও করেছেন ও স্বর্গধামে আমাদের আসন দিয়েছেন? (এফে ২:৬)। তিনি আমাদের একজন হওয়ায় আমরা তাঁর সঙ্গে সহদেহী হয়েছি ও তাঁর মাংসের মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে একতা লাভ করেছি। এজন্য অন্য স্থানে তিনি নিজেই পিতা ঈশ্বরের কাছে একথা বলেন, পিতা, তুমি যেমন আমাতে আছ আর আমি তোমাতে আছি, তেমনি তারাও যেন আমাদের মধ্যে এক হয় (যোহন ১৭:২১)।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১২১
ধুয়ো:
জীবিত যে কেউ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে,
সে কখনও মরবে না—প্রভুর উক্তি।

আমি চোখ তুলি গিরিমালার দিকে,
আমার সাহায্য কোথা থেকে আসবে?
আমার সাহায্য সেই প্রভু থেকেই আসবে,
আকাশ ও পৃথিবীর নির্মাতা যিনি।   [ধুয়ো]

তিনি তোমার পা দেবেন না টলমল হতে,
ঘুমিয়ে পড়বেন না কো তোমার রক্ষক।
দেখ, ঘুমিয়ে পড়বেন না, হবেন না নিদ্রামগ্ন
ইস্রায়েলের রক্ষক।   [ধুয়ো]

প্রভুই তোমার রক্ষক, প্রভুই তোমার ছায়া,
তিনি তোমার ডান পাশে দাঁড়ান।
দিনমানের সূর্য কি রাত্রিবেলার চাঁদ,
কিছুই তোমায় আঘাত করবে না।   [ধুয়ো]

প্রভু যত অনিষ্ট থেকে তোমাকে রক্ষা করবেন,
রক্ষা করবেন তোমার প্রাণ।
প্রভু তোমার গমনাগমন রক্ষা করবেন
এখন থেকে চিরকাল ধরে।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, অনুনয় করি:
পুণ্যসংযোগের ফলে আমরা যখন খ্রিষ্টের দেহরক্তের অংশী হয়েছি,
তখন যেন সর্বদাই তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বলে পরিগণিত হতে পারি।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]