সাধু বেনেডিক্ট মঠের ওয়েব-সাইট - মহেশ্বরপাশা - খুলনা - বাংলাদেশ
ঐক্যবদ্ধ জীবন-বাসীরা হল সেই সন্ন্যাসী যারা এক মঠাশ্রমে বাস ক’রে
এক নিয়ম ও এক পরিচালকের অধীনে থেকে সেবা করে।
প্রান্তরনিবাসীরা হল সেই সন্ন্যাসীরা
যারা মঠের সুদীর্ঘ পরীক্ষার পর
একাকই হয়েও দিয়াবলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে শিখেছে।

(সাধু বেনেডিক্টের নিয়ম)

খ্রিষ্টীয় সন্ন্যাসজীবনের সূচনা
তৃতীয় শতাব্দীর শেষ দিকে, বিশেষভাবে ৩১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যখন সম্রাট কনস্তানতাইন খ্রিষ্টধর্মকে সরকারী স্বীকৃতি দান করেছিলেন, খ্রিষ্টিয়ানদের উপর নির্যাতন খুবই কমে গেছিল। এর ফলে খ্রিষ্টিয়ান হওয়াটি আর তত কঠিন ব্যাপার ছিল না। ঠিক এ সময়েই খ্রিষ্টাদর্শকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পালন করার জন্যই খ্রিষ্টমণ্ডলীর মধ্যে সন্ন্যাস আন্দলন শুরু হয়।

এই আন্দলনের প্রধান দু’জন ব্যক্তিত্ব হলেন বিজনাশ্রমী সাধু আন্তনি এবং আশ্রমবাসী সাধু পাখমিওস। সাধু বেনেডিক্ট নিজ নিয়মে বিজনাশ্রমী ও আশ্রমবাসীদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সম্ভবত এই দুই ব্যক্তিত্বের কথা ভাবছিলেন।

সাধু আন্তনি
মহাত্মা আন্তনি ২৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের উত্তর অঞ্চলে একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মিশরীয় আন্তনি, মরুবাসী আন্তনি ও বিজনাশ্রমী আন্তনি বলেও পরিচিত। তিনি সেই মরুবাসী পিতৃগণের পথদিশারী বলে গণ্য ছিলেন, যারা ৩য় ও ৪র্থ শতাব্দীতে মিশরের প্রান্তরে সন্ন্যাস জীবন পালন করছিলেন।
একদিন যিশুর এই বাক্য শুনে ‘তুমি যদি সিদ্ধপুরুষ হতে চাও, তাহলে যাও, তোমার যা কিছু আছে সবই বিক্রি করে গরিবদের দান কর তবেই স্বর্গে তোমার জন্য ধন গচ্ছিত থাকবে, পরে আমার অনুসরণ কর’ তিনি সবকিছু বিক্রি করে গরিবদের বিলিয়ে দিয়ে লোকালয় ছেড়ে মরুপ্রান্তরে চলে গেলেন।
তিনি প্রথম খ্রিষ্টিয়ান সন্ন্যাসী এমনকি খ্রিষ্টিয়ান সন্ন্যাসজীবনের আদিপিতা বলে পরিগণিত। তিনি একাকি হয়ে পবিত্র বাইবেলে ও মরুপ্রান্তরের নির্জনতায় ঈশ্বরের অন্বেষণ করলেন। কয়েক বছর পর লোকে তাঁকে সাধু বলে গণ্য করায় তাঁর কাছে পরামর্শ ও প্রার্থনার জন্য আসতে লাগল। তাঁর লিখিত ‘আন্তনির জীবনি’-তে আলেকজান্দ্রিয়ার ধর্মপাল সাধু আথানাসিউস একথা বলেন যে, আন্তনি সমগ্র বাইবেল মুখস্থ করেছিলেন, যার ফলে লোকেরা তাঁকে দেখে স্বয়ং খ্রিষ্টকেই দেখতেন।
তিনি ৩৫৬ খ্রিষ্টব্দে প্রাণত্যাগ করেন: আপন শিষ্যদের কাছে এমন নির্দেশ রেখে গেছিলেন যেন তাঁর মৃতদেহ গোপন স্থানে সমাধি দেওয়া হয় যাতে করে তাঁর মৃতদেহ জনগণের ভক্তির বস্তু না হয়।

সাধু পাখমিওস
যখন সাধু আন্তনি বিজনাশ্রমের উপর জোর দেন, সাধু পাখমিওস (২৯২-৩৪৮) ঐক্যবদ্ধজীবনের উপরেই জোর দেন।
তিনি উত্তর মিশরের থেবেস অঞ্চলে এমন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যারা খ্রিষ্টিয়ান ছিলেন না। তিনি সেখানে উচ্চশিক্ষা লাভ করার পর ২১ বছর বয়সে রোমীয় সামরিক সৈন্যদলে যোগ দিলেন। সেসময়ই তিনি এমন একটি স্থানে অন্যান্য নতুন সৈন্যদের সঙ্গে বাস করতেন যেটি খ্রিষ্টিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত হত। তিনি প্রতিবেশীর প্রতি তাদের ভালবাসা দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, সৈন্য শিবিরে তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হলে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন।
৩১৪ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে তিনি কৃচ্ছ্র সাধনাময় জীবন শুরু করলেন। তিন বছর পর তিনি মরুপ্রান্তরে গিয়ে প্রবীণ পালামোনের শিষ্য হলেন। কথিত আছে, পালামোনের সঙ্গে দশ বছর কাটাবার পর তিনি একটি কণ্ঠস্বর শুনলেন যা তাঁকে তাবেন্নেসি-তে একটি সন্ন্যাস সঙ্ঘ স্থাপন করতে নির্দেশ দিল। তাই তিনি ও পালামোন সেখানে গেলেন, আর পরবর্তীকালে পাখমিওস একটি দর্শন পেলেন যা অনুসারে এক স্বর্গদূত এসে তাঁকে সন্ন্যাস পোশাক পরালেন এবং ঐক্যজীবন উপযোগী নিয়ম তাঁকে দিলেন। ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা সেকাল পর্যন্ত তপস্বীগণ সাধারণত একসাথে একস্থানে নয় বরং একাকই হয়েই জীবন কাটাতেন। পাখমিওসের নিয়ম ঐক্যবদ্ধ জীবন ও বিজনাশ্রমের সমন্বয় ঘটাল, তথা: সন্ন্যাসীরা নিজ নিজ কক্ষে দিন কাটাবেন, কিন্তু সকলের কল্যাণের জন্য একসাথে কাজ করবেন।
যারা তাঁর সঙ্গে যোগ দিত, তাদের প্রতি তিনি যথেষ্ট কঠোর ছিলেন। সকলে একই প্রকার খাবার খেত ও একই ধরনের পোশাক পরত; আশ্রমের সার্বিক কল্যাণের জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করত; কেউই নিজস্ব বলে অর্থ নিজের কাছে রাখতে পারত না, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকেও কোন কিছু গ্রহণ করতে পারত না। তাঁর ধারণায়, একাগ্রতার সঙ্গে বাধ্যতা পালন উপবাস ও প্রার্থনার চেয়ে অধিক মূল্যবান। তাছাড়া তিনি সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম-পালন আশা করতেন ও তাদের তিরস্কার করতেন যারা নিয়ম পালনে শিথিল ছিলেন।
৩৪৮ খ্রিষ্টব্দে পাখমিওস নিজ অধীনে তিন হাজার সন্ন্যাসীকে পরিচালনা করতেন যারা নিকটবর্তী বিভিন্ন আশ্রমে বাস করতেন। একই সালে একপ্রকার মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করলেন।
সাধু পাখমিওসের নিয়ম (যা সাধু যেরোম দ্বারা ৪০৪ সালে লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল) পাশ্চাত্য সন্ন্যাস জীবনের প্রধান ব্যক্তিত্ব সাধু বেনেডিক্টকে তাঁর নিজ নিয়ম লেখায় প্রভাবান্বিত করেছিল।

কিন্তু যে মহাব্যক্তিত্বদ্বয়ের কথা সাধু বেনেডিক্ট নিজ নিয়মে উল্লেখ করেন, তাঁরা হলেন মহাপ্রাণ সাধু বাসিল ও জন কাসিয়ানুস। দু’জনই ঐক্যবদ্ধ জীবনের সমর্থক।

সাধু বাসিল
মহাপ্রাণ সাধু বাসিল (৩৩০-৩৭৯) কাপ্পাদোসিয়া অঞ্চলের (আজকালের তুরস্ক) সিজারিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সিজারিয়া, কনস্তান্তিনপোলিস ও এথেন্সে উচ্চশিক্ষা পাবার পর, আনুমানিক ৩৫৮ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, জাগতিক শিক্ষা ত্যাগ করে তপস্যা-জীবন পালন করবেন। সুতরাং সিজারিয়াতে ফিরে এসে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি আবার সিজারিয়া ছেড়ে সিরিয়া, পালেস্তাইন ও মিশরের সন্ন্যাস-জীবন সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লাভের জন্য সেই দেশগুলোর আশ্রমগুলো ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়লেন।
৭ বছর পর তিনি দেশে ফিরে এলেন, সংসার ত্যাগ করলেন, এবং কৃচ্ছ্র সাধনায় রত থেকে বাইবেল-অধ্যয়নে নিবিষ্ট হলেন। তেমন অধ্যয়নের প্রথম ফল হল তাঁর লেখা ‘নীতিগত নিয়ম-কানুন’ যা তিনি রচনা করলেন ৩৬০ সালে: লেখাটির উদ্দেশ্য হল খ্রিষ্টীয় জীবনযাপনের জন্য নানা সূত্র ব্যক্ত করা; নিজ ধারণা সমর্থনে তিনি নতুন নিয়মের ১৫৪২ উক্তি উদ্ধৃত করেন। কেননা তাঁর মতে সন্ন্যাসজীবন হল খ্রিষ্টীয় জীবনেরই সামীল, অর্থাৎ কিনা এমন জীবন যা সুসমাচার অনুসারেই যাপিত জীবন।
পরবর্তীকালে, যখন তিনি সিজারিয়ার ধর্মপাল হলেন, তখন আর একটি পুস্তক লিখলেন যে পুস্তকের মধ্য দিয়ে তিনি সন্ন্যাস-জীবন ও খ্রিষ্টীয় জীবন সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। তাঁর ধারণায়, খ্রিষ্টীয় জীবন তখনই প্রকৃত খ্রিষ্টীয় জীবন যখন মানুষ ঈশ্বর ও প্রতিবেশীকে ভালবাসার দ্বিবিধ আজ্ঞায় সাড়া দেয়। পরবর্তী সূত্রে তিনি বলেন, দ্বিবিধ আজ্ঞায় সাড়া দিতে দিতে মানুষ যেন অন্য চিন্তা-ভাবনা দ্বারা লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে সেদিকে সতর্ক থাকে; আর এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন যে প্রতিবেশীকে ভালবাসবার জন্য মানুষকে অবশ্যই মানব-সমাজে থাকা দরকার; অন্য কথায়, সন্ন্যাসীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ জীবনই যাপন করা দরকার। বাইবেলের কথা, বিশেষভাবে সাধু পলেরই কথা অনুসরণ করে তিনি প্রর্থনা ও কাজ দু’টোরই প্রয়োজনীয়তা সমর্থন করেন।

জন কাসিয়ানুস
জন কাসিয়ানুস (৩৬০-৪৩৫) দোব্রগেয়া শহরে (আজকালের রোমানিয়া দেশে) জন্মগ্রহণ করেন। ৩৮২ সালে তিনি বেথলেহেমে একটি আশ্রমে যোগ দেন, এবং অনুমতি পেয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের ছেলেবেলার বন্ধু জের্মানুসের সঙ্গে মিশরের মরুপ্রান্তরের পিতৃগণকে দেখতে যান। তাঁরা দু’জনে মিশরে ৩৯৯ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ সময়ই মিশরে থাকেন।
মিশর ছেড়ে তাঁরা কনস্তান্তিনপলিতে যান, আর সেখানে সাধু যোহন খ্রিসোস্তমের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেন যিনি জন কাসিয়ানুসকে পরিসেবক পদে অভিষিক্ত করেন। ৪০৩ সালে যখন খ্রিসোস্তম নির্বাসিত হন, তখন তিনিও কনস্তান্তিনপলিস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে ফ্রান্সের দক্ষিণ অঞ্চলে বসবাস করতে লাগেন; সেখানে পুরোহিত পদে অভিষিক্ত হয়ে দু’টো আশ্রম স্থাপন করেন, একটি মহিলাদের জন্য, অপরটি পুরুষদের জন্য।
তাঁর সবচেয়ে পরিচিত লেখা হল রীতি-নীতিআলোচন-মালারীতি-নীতি-তে তিনি পোশাক, প্রার্থনা, হাতের কাজ, দরিদ্রতা, খাবার, বাধ্যতা, নিয়ম-পালন, ত্যাগস্বীকার ইত্যাদি বিষয় তন্ন তন্ন করে বিশ্লেষণ করে দেখান কিভাবে সন্ন্যাস জীবন যাপন করতে হয়। আলোচন-মালা-তে তিনি ২৪টা বিষয় নির্দিষ্ট করে এক একটার আলোচনা-কালে মিশরীয় পিতৃগণের সঙ্গে তাঁর যে কথাবার্তা হয়েছিল, তারই বিবরণী দেন। পাশ্চত্য খ্রিষ্টীয় আধ্যাত্মিকতার উপরে তাঁর এ লেখা দু’টোর প্রভাব সেকালের মত আজও বর্ণনার অতীত; আর ঠিক এ লেখা দু’টোকেই সাধু বেনেডিক্ট নিজ শিষ্যদের পড়তে নির্দেশ দেন তারা যেন সন্ন্যাস-পথের গুরুত্ব গভীরভাবে বুঝতে পারে।
জন কাসিয়ানুস অনুসারে মিশরের মরুবাসী সন্ন্যাসীরা তিন ধাপ-বিশিষ্ট আধ্যাত্মিকতা পালন করতেন। প্রথম ধাপ ছিল আত্মশোধন: এই ধাপে যুবা সন্ন্যাসী নিজ দেহকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, বিশেষভাবে পেটুকতা, কামাসক্তি ও পার্থিব লোভই নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রার্থনা ও কৃচ্ছ্রসাধনার মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করত। এসময় যুবা সন্ন্যাসীকে শিখতে হত যে, দেহের যত কামনা রোধ করার তার যে শক্তি হয়েছিল তা সরাসরিই পবিত্র আত্মা থেকেই এসেছিল। আত্মশোধন-কাল বহু বছর ধরেও লাগতে পারত, আর একাল শেষে সন্ন্যাসী তাঁর নিজের সমস্ত প্রয়োজনীয়তার জন্য শান্তভাবে প্রভুর উপরে ভরসা রাখতে শিখেছিল। এই আত্মশোধনকালে সন্ন্যাসী মরুপ্রান্তরে পরীক্ষিত খ্রিষ্টের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম বোধ করত (মথি ৪:১-১১; মার্ক ১:১২-১৩; লুক ৪:১-১৩)।
এসময়ে শুরু হত তাঁর আলোকিত হওয়ার কাল। অর্থাৎ তিনি সুসমাচারে প্রকাশিত পবিত্রতার সমস্ত পথ শিখত। একালে অনেক সন্ন্যাসী তীর্থযাত্রীদের ও সন্ন্যাসজীবন-প্রার্থীদের নিজ কক্ষে স্থান দিত, এবং তাদের সমর্থ অনুসারে অভাবীদের সেবা করত। এই কালে তারা পর্বতে উপদেশ দান কালে খ্রিষ্টের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম বোধ করত (মথি ৫-৭)। সন্ন্যাসী ঈশ্বরের আত্মায় নিজের বিনম্র জীবন চালিয়ে যেত; তার নিজের দুঃখ-কষ্ট শান্তমনে মেনে নেওয়াটি বহুবার তাকে তেমন মানুষ করে তুলত যে স্থানীয় খ্রিষ্টমন্ডলীর জন্য একাই বীর্যপূর্ণ বা কঠিন দ্বায়িত্ব আপন করে নিতে সক্ষম। বহু সন্ন্যাসী এই দ্বিতীয় কাল পার না করেই মারা যেত।
সর্বশেষ কালকে মিলন কাল বলা হত। এসময় সন্ন্যাসীর আত্মা ও ঈশ্বরের আত্মা সেই মিলনে এক হত যা বাইবেলের পরমগীত বহুবার বিবাহের মিলন বলে বর্ণনা করে। প্রবীণ সন্ন্যাসীরা অনেক সময় গভীর মরুভূমিতে অথবা অগম্য বনে পালিয়ে যেত সেই নির্জনতা ও শান্তি পাওয়ার জন্য যা তেমন আধ্যাত্মিক সচেতনতার জন্য একান্ত প্রয়োজন। এই পর্যায়ে সন্ন্যাসী সেই রূপান্তরিত খ্রিষ্টের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম বোধ করত যিনি আপন পুনরুত্থানের পরে নিজ শিষ্যদের কাছে প্রায়ই অদৃশ্য ছিলেন।

আজকালের সন্ন্যাস জীবন
সন্ন্যাস জীবনে নীরব পরিবেশে সাধিত প্রার্থনাকাজ আজও প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসাবে পরিগণিত। সুতরাং একজন সন্ন্যাসীর প্রতিটি দিন নির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা, অধ্যয়ন ও হাতের কাজের জন্য ভাগ করা থাকে। সকাল বেলায় জাগরণী ও প্রভাতী বন্দনা, দুপুরে মধ্যাহ্ন প্রহরের প্রার্থনা, সন্ধ্যা বেলায় সন্ধ্যারতি ও নৈশ প্রার্থনা: এই সকল উপাসনার জন্য একটি স্তোস্ত্র ও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা অনুযায়ী কয়েকটি সামসঙ্গীত গাওয়া হয়, তার পর বাইবেল থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট বাণী পাঠ, এবং অবশেষে মানবজাতির মঙ্গলার্থে প্রার্থনা নিবেদন করা হয়।
লেক্তিও দিভিনা (অর্থাৎ বাইবেল পাঠ): বাইবেল পাঠের নির্দিষ্ট সময়ও সন্ন্যাসীর দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ: জাগরণী ও সন্ধ্যারতির পরে সন্ন্যাসী বাইবেল পাঠে সময় অতিবাহিত করে। লেক্তিও দিভিনা করার একটি প্রাচীন ও সহজ মাধ্যম হল বাইবেলের একটি অংশ মুখস্থ করা যাতে পাঠকের মন ঈশ্বরের বাণীতে ডুবে যায়।
প্রতিদিনের এই সময়সূচীই তাকে সন্ন্যাস আহ্বানে টিকিয়ে রাখে, এবং এই আশাও রাখা যেতে পারে যে, যারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তারা মহাপ্রাণ আন্তনির মত তাকেও দেখে খ্রিষ্টকে দেখে।

সন্ন্যাসী ঈশ্বরের ও মণ্ডলীর সামনে তিনটি প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে: বাধ্যতা, স্থিতিশীলতা ও অবিরত মনপরিবর্তন। বাধ্যতা তাকে খ্রিষ্টের অনুরূপ করে যিনি নিজের ইচ্ছা নয় বরং যিনি তাঁকে পাঠিয়েছিলেন তাঁরই ইচ্ছা পূর্ণ করতে এসেছিলেন। স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে সে নির্দিষ্ট এক আশ্রমে আমরণ থাকবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। অবিরত মনপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে ঈশ্বরের হাতে নিজেকে সঁপে দেয় তিনি যেন তাকে খ্রিষ্টে রূপান্তরিত করেন।

যেমনটি প্রভু যিশু বিবাহ করেননি, তেমনি সন্ন্যাসীরাও বিবাহ করবে না, এবং শিষ্যচরিতের বর্ণনা অনুসারে যেমনটি খ্রিষ্টভক্তরা সকলকে নিজেদের ধনসম্পদের অংশীদার করত, তেমনি সন্ন্যাসীরাও নিজস্ব অধিকারে কিছুই রাখতে পারবে না। সবকিছু, এমনকি নিজেদের পোশাক পর্যন্তও, সহভ্রাতাদের সম অধিকার।