সাধু বেনেডিক্ট মঠের ওয়েব-সাইট - মহেশ্বরপাশা - খুলনা - বাংলাদেশ
[অনলাইন পঞ্জিকা]
আগমনকাল
• আগমনকালের মূখ্য বিষয়গুলোর মধ্য প্রভু যিশুর পুনরাগমন একটি।
• ছবিতে বিচারকর্তা প্রভু প্রদর্শিত।
• তিনি মাতা মারীয়া ও বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে আশীর্বাদ করছেন; ডানে ও বামে দু'জন প্রেরীতদূতও উপস্থিত।
• যিশুর সিংহাসন থেকে দু'টো লিপিফলক নির্গত; সেগুলোতে লেখা রয়েছে মেষ ও ছাগের বিচারের রায় (“এসো, আমার পিতার আশীর্বাদের পাত্র যে তোমরা” ইত্যাদি বাণী এবং “আমার কাছ থেকে দূর হও, অভিশাপের পাত্র যে তোমরা” ইত্যাদি বাণী)।
• প্রভুর বিচারাসনের নিচে মানবজাতির আদি পিতামাতা প্রভুকে প্রণাম করেন। • মহাদূত মিখায়েলও উপস্থিত। তাঁর হাতে রয়েছে বিচারের দাঁড়িপাল্লা; ও তাঁর দু' পাশে দু’জন স্বর্গদূত দু’টো পুস্তক তুলে ধরেন যেখানে মানবের কর্ম লিখিত (ঐশপ্রকাশ (বা প্রত্যাদেশ) ২০:১১-১৩)। • দূতগণ তুরি বাজাচ্ছেন,তাতে তাঁরা প্রভুর পুনরাগমন ও শেষ বিচারের কথা ঘোষণা করছেন (১ থে ৪:১৬-১৭)।
   
রবিবার: ১ | ২ | ৩ |

১ম রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তোমার এ ভক্তদের অন্তরে সদিচ্ছা জাগিয়ে তোল: শুভকর্মের মালা দিয়ে
তোমার আসন্ন খ্রিষ্টকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য দৌড়িয়ে চ’লে
তারা যেন একদিন তাঁর ডান পাশে একত্রিত হয়ে
স্বর্গীয় রাজ্য উত্তরাধিকার রূপে পেতে পারে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (২:১-৫)

আমোজের সন্তান ইশাইয়া যুদা ও যেরুশালেম সম্বন্ধে এ দর্শন পান:
সেই চরম দিনগুলিতে এমনটি ঘটবে,
প্রভুর গৃহের পর্বত পর্বতশ্রেণির চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত হবে,
উঁচু হয়ে উঠবে সমস্ত উপপর্বতের চেয়ে,
তখন সকল দেশ তার কাছে ভেসে আসবে।
বহু জাতি এসে বলবে,
‘চল, আমরা গিয়ে উঠি প্রভুর পর্বতে, যাকোবের পরমেশ্বরের গৃহে,
তিনি যেন আমাদের দেখিয়ে দেন তাঁর মার্গসকল,
আর আমরা যেন তাঁর সকল পথ ধরে চলতে পারি।’
কারণ সিয়োন থেকেই বেরিয়ে আসবে নির্দেশবাণী,
যেরুশালেম থেকেই প্রভুর বাণী।
তিনি দেশে দেশে বিচার সম্পাদন করবেন,
বহু জাতির বিবাদ মিটিয়ে দেবেন।
তারা নিজেদের খড়্গ পিটিয়ে পিটিয়ে করবে লাঙলের ফলা,
নিজেদের বর্শাকে করবে কাস্তে।
এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে খড়্গ উঁচু করবে না,
তারা রণশিক্ষাও আর করবে না।
যাকোবকুল, চল, প্রভুর আলোতে চলি।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১২২
ধুয়ো:
আমরা আনন্দের সঙ্গে
যাব প্রভুর গৃহে।

আমি আনন্দ পেলাম ওরা যখন আমাকে বলল,
‘এসো, চলি প্রভুর গৃহে!’
এখন এসে থেমেছে আমাদের চরণ
তোমার তোরণদ্বারে, হে যেরুশালেম।   [ধুয়ো]

সেইখানে উঠে আসে গোষ্ঠীসকল, প্রভুরই গোষ্ঠীসকল—
ইস্রায়েলের বিধি তো তারা করবে প্রভুর নামের স্তুতি,
সেইখানে যে অধিষ্ঠিত আছে বিচারাসনগুলি,
দাউদকুলের সিংহাসনগুলি।   [ধুয়ো]

যেরুশালেমের জন্য তোমরা শান্তি যাচনা কর!
যারা তোমাকে ভালবাসে, তাদের সমৃদ্ধি হোক;
শান্তি হোক তোমার প্রাচীর-মাঝে,
তোমার দুর্গশ্রেণির মাঝে সমৃদ্ধি হোক!   [ধুয়ো]

আমার ভাই ও বন্ধুদের খাতিরে
আমি বলব, ‘তোমাতেই বিরাজ করুক শান্তি!’
আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর গৃহের খাতিরে
আমি তোমার মঙ্গল অন্বেষণ করব।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১৩:১১-১৪ক)

ভাইবোনেরা, এখন কোন্‌ সময়, সে কথা তোমাদের তো জানাই আছে; এখন তো তোমাদের ঘুম থেকে জেগে ওঠারই লগ্ন; কেননা সেই যেদিন আমরা প্রথমে বিশ্বাস করেছিলাম, তখনকার চেয়ে আমাদের পরিত্রাণ এখন কাছেই এসে গেছে।
রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে, দিন কাছে এসে গেছে। তাই অন্ধকারের কাজকর্ম পরিত্যাগ ক’রে, এসো, আলোরই উপযোগী রণসজ্জা পরিধান করি।
এসো, দিনমানের মত উজ্জ্বলভাবে চলাফেরা করি: বেসামাল ভোজ-উৎসব বা মাতলামি নয়, যৌন অনাচার বা যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, বিবাদ বা ঈর্ষাও নয়; তোমরা বরং স্বয়ং প্রভু যিশুখ্রিষ্টকেই পরিধান কর।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা,
আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২৪:৩৭-৪৪)

একদিন যিশু শিষ্যদের কাছে এই কথা বললেন: ‘নোয়ার সেই দিনগুলিতে যেমন ঘটেছিল, মানবপুত্রের আগমনেও সেইমত ঘটবে; কারণ জলপ্লাবনের আগের দিনগুলিতে, জাহাজে নোয়ার প্রবেশ দিন পর্যন্ত লোকদের যেমন খাওয়া-দাওয়া ও বিয়ে করা-বিয়ে দেওয়া চলছিল, ও তারা কিছুরই আঁচ পেল না যতক্ষণ না বন্যা এসে সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল, মানবপুত্রের আগমনে সেইমত ঘটবে। তখন দু’জন লোক মাঠে থাকবে: একজনকে নিয়ে যাওয়া হবে আর একজনকে ফেলে রাখা হবে; দু’জন স্ত্রীলোক জাঁতা ঘোরাবে: একজনকে নিয়ে যাওয়া হবে আর একজনকে ফেলে রাখা হবে।
অতএব জেগে থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসবেন, তা তোমরা জান না। কিন্তু এবিষয়ে নিশ্চিত হও যে, চোর রাতের কোন্‌ প্রহরে আসবে, গৃহকর্তা যদি তা জানত, তবে জেগে থাকত, নিজের ঘরে সিঁধ কাটতে দিত না। এজন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে ক্ষণ তোমরা কল্পনা করবে না, সেই ক্ষণে মানবপুত্র আসবেন।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
মথি-রচিত সুসমাচারে মঠাধ্যক্ষ সাধু পাস্কাসিউসের ব্যাখ্যা

জেগে থাক, কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই ক্ষণ জান না (মথি ২৫:১৩)। শাস্ত্রের অন্যত্রও যেমনটি বারবার ঘটে, তেমনি এখানেও মনে হয়, খ্রিষ্ট সেকালের মানুষকেই মাত্র উদ্দেশ করে একথা বলছেন, অথচ তিনি সকলকেই উদ্দেশ করে একথা বলছেন। একথা সকলকেই সমানভাবে লক্ষ করে, কেননা প্রতিটি মানুষের পক্ষে মৃত্যু-ক্ষণ হল তার নিজের জীবনেরও শেষ দিন, গোটা জগতেরও শেষ ক্ষণ। প্রতিটি মানুষ যেভাবে সেই দিনটিতে বিচারিত হবে, সেইভাবে এজগৎ ছেড়ে চলে যাবে, এ অনিবার্য।
সুতরাং সৎপথে চলা ও অবিরত জেগে থাকা, মানুষের পক্ষে তেমন সতর্কতা প্রয়োজন, যাতে প্রভুর আগমনের দিন তাকে অপ্রস্তুত না পায়। সেই দিন তাকেই অপ্রস্তুত পাবে, জীবনের শেষ দিনে যে অপ্রস্তুত ছিল।
আমি মনে করি, প্রেরিতদূতেরা জানতেন, শেষ বিচারের জন্য প্রভু তাঁদের জীবনকালে আসবেন না; অথচ প্রভু যেন তাঁদের অপ্রস্তুত না পান, তাঁরা প্রবঞ্চিত না হবার জন্য নিঃসন্দেহেই সতর্ক থাকতেন, জেগে থাকতেন ও সেই সব কিছু পালন করতেন যা সকলের জন্য আদিষ্ট।
আমাদের সবসময় খ্রিষ্টের দ্বিবিধ আগমনের কথা স্মরণ করতে হয়: সেই প্রথম আগমনের কথা, যখন তিনি আবির্ভূত হবেন আর আমাদের সমস্ত কাজকর্মের কৈফিয়ত দিতে হবে; প্রতিদিনের সেই দ্বিতীয় আগমনেরও কথা, যখন তিনি আমাদের বিবেক অবিরত লক্ষ করতে আসেন ও আমাদের কাছে আসেন যেন তাঁর আগমনে আমাদের প্রস্তুত পান।
যতক্ষণ আমি তত পাপের বিষয়ে সচেতন, ততক্ষণ বিচারের দিনের কথা জানা আমার কী প্রয়োজন? তিনি প্রথমে আমার আত্মায় না এলে, আমার প্রাণে ফিরে না এলে, আমার অন্তরে তিনিই জীবন যাপন না করলে, তিনি আমার সঙ্গে কথা না বললে, তবে প্রভু আসবেন কিনা বা কখন আসবেন এসব জানাও কীবা প্রয়োজন? খ্রিষ্ট আমার মধ্যে আর আমি তাঁর মধ্যে জীবন যাপন করতে থাকলে, তবেই তাঁর আগমন আমার পক্ষে মঙ্গলকর, এমনকি আমার পক্ষে তাঁর দ্বিতীয় আগমনের ক্ষণও প্রায় উপস্থিত, যে ক্ষণে এই জগতে যা কিছু মূল্যবান তা আমার চোখে মিলিয়ে যায় আর আমি একপ্রকারে বলতে পারি, আমার কাছে জগৎ, ও জগতের কাছে আমি ক্রুশবিদ্ধ (গা ৬:১৪)।
খ্রিষ্টের এই বাণীও ভাব: আমার নামে অনেকেই আসবে (মথি ২৪:৫)। এই প্রবঞ্চকই হল সেই খ্রিষ্টবৈরী ও তার অনুগামীদের নামান্তর, যারা খ্রিষ্টের কাজকর্ম, সত্যবাণী ও প্রজ্ঞা ধারণ না করে তাঁর নাম ধারণ করে। শাস্ত্রের এমন স্থান নেই যেখানে প্রভু নিজের বেলায় বলেছেন, আমিই খ্রিষ্ট। তিনি যে প্রকৃতই খ্রিষ্ট, তাঁর পক্ষে উপদেশ ও অলৌকিক কাজের মাধ্যমেই তা প্রমাণ করা যথেষ্ট ছিল, কেননা তাঁর মধ্যে পিতার কাজ, তাঁর দেওয়া শিক্ষা ও তাঁর প্রতাপ ‘আমিই খ্রিষ্ট’ একথা এমন উদাত্ত কণ্ঠে বলছিল যে, হাজার কণ্ঠ চিৎকার করলেও তত জোরে পারত না।
তিনি কথায় তা ঘোষণা করেছেন কিনা, আমি তা জানি না, তবু তিনি যে খ্রিষ্ট, পিতার কাজ সাধন করায় ও ভালবাসা শেখানোতেই তা প্রমাণ করলেন; এসব কিছুর অভাবের ফলে খ্রিষ্টবৈরীরা মুখে তা-ই ঘোষণা করত যা আসলে তারা ছিল না।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৮৫
ধুয়ো:
প্রভু দান করবেন মঙ্গল,
আর আমাদের ভূমি দান করবে তার আপন ফসল।

হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, আমাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত কর,
আমাদের উপর তোমার এ ক্ষোভ নিবৃত্ত কর।
তুমি কি আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ থাকবে চিরকাল ধরে?
তুমি কি তোমার ক্রোধ প্রসারিত করে যাবে যুগে যুগান্তরে?   [ধুয়ো]

তোমার আপন জনগণ যেন তোমাতে হতে পারে আনন্দিত,
তুমি কি আমাদের করবে না পুনরুজ্জীবিত?
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা,
আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।   [ধুয়ো]

আমি শুনব প্রভু ঈশ্বর কী কথা বলবেন;
আপন জনগণের কাছে, আপন ভক্তদের কাছে তিনি বলেন শান্তি;
যারা তাঁকে ভয় করে, তাদের জন্য কাছেই রয়েছে তাঁর পরিত্রাণ,
আমাদের এ দেশে তাঁর গৌরব করবে বসবাস;   [ধুয়ো]

কৃপা ও সত্যের হবে সম্মিলন,
ধর্মময়তা ও শান্তি করবে পরস্পর চুম্বন;
মর্ত থেকে সত্য হবে অঙ্কুরিত,
স্বর্গ থেকে ধর্মময়তা বাড়াবে মুখ।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, যে মহারহস্যে আমরা যোগদান করলাম,
তা আমাদের অন্তরে পূর্ণ সার্থকতা অর্জন করুক:
অনিত্য সংসারের পথিক এই আমরা
যেন তোমার নির্দেশমত স্বর্গীয় যা কিছু তা-ই ভালবাসি,
ও যা কিছু চিরস্থায়ী তা-ই যেন আঁকড়ে ধরে থাকি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২য় রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান করুণাময় ঈশ্বর,
আমরা তোমার পুত্রকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য দ্রুতপদে এগিয়ে চলছি।
আশীর্বাদ কর, যেন কোন পার্থিব বিষয়ে বিঘ্নিত না হই,
বরং স্বর্গীয় প্রজ্ঞায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যেন তাঁর সাহচর্য লাভ করতে পারি।
পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে তিনি ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন
ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (১১:১-১০)

সেইদিন যেসের মূলকাণ্ড থেকে এক পল্লব উৎপন্ন হবেন;
তার শিকড় থেকে এক নবাঙ্কুর অঙ্কুরিত হবেন।
প্রভুর আত্মা—প্রজ্ঞা ও সুবুদ্ধির আত্মা,
সুমন্ত্রণা ও পরাক্রমের আত্মা,
সুবিবেচনা ও প্রভুভয়ের আত্মা তাঁর উপর অধিষ্ঠান করবে।
তিনি প্রভুভয়ে প্রীত হবেন।
তিনি চেহারা অনুসারে বিচার করবেন না,
জনশ্রুতি অনুসারেও নিষ্পত্তি করবেন না;
বরং ধর্মময়তায় দীনহীনদের বিচার করবেন,
সততায় দেশের অত্যাচারিতদের পক্ষে নিষ্পত্তি করবেন;
তিনি নিজ মুখের লাঠি দ্বারা দেশ আঘাত করবেন,
নিজ ওষ্ঠের ফুৎকারে দুর্জনকে বধ করবেন;
ধর্মময়তা হবে তাঁর কটিবাস,
বিশ্বস্ততা হবে তাঁর কোমর-বন্ধনী।
নেকড়েবাঘ মেষশাবকের সঙ্গে বাস করবে,
চিতাবাঘ ছাগশিশুর পাশে শুয়ে থাকবে,
বাছুর, যুবসিংহ ও নধর পশু একসঙ্গে চরে বেড়াবে,
একটি ছোট্ট বালকই তাদের চালনা করবে।
গাভী ও ভালুকী একসঙ্গে চরে বেড়াবে,
তাদের বাচ্চা একসঙ্গে শুয়ে থাকবে।
বলদের মত সিংহও বিচালি খাবে।
দুধের শিশু কেউটে সাপের গর্তের উপরে খেলা করবে,
দুধ-ছাড়ানো বালক চন্দ্রবোড়ার আস্তানার মধ্যে হাত ঢোকাবে।
তারা আমার পবিত্র পর্বতের কোন স্থানেই
অনিষ্ট বা ক্ষতিকর কিছুই আর ঘটাবে না,
কারণ সমুদ্র যেমন জলরাশিতে আচ্ছন্ন,
তেমনি পৃথিবী হবে প্রভুজ্ঞানে পরিপূর্ণ।
সেদিন যেসের শিকড়—যিনি জাতিসকলের নিশানারূপে দাঁড়ান—
হবেন দেশগুলির অন্বেষার পাত্র,
তাঁর বিশ্রামস্থান গৌরবময় হয়ে উঠবে।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৭২
ধুয়ো:
তাঁর জীবনকালে ধর্মময়তা হবে প্রস্ফুটিত,
মহাশান্তি হবে বিরাজিত চিরকাল।

পরমেশ্বর, রাজাকে তোমার সুবিচার,
রাজপুত্রকে তোমার ধর্মময়তা প্রদান কর;
তিনি ধর্মময়তায় তোমার আপন জনগণকে,
সুবিচার মতে তোমার দীনদুঃখীদের বিচার করুন।   [ধুয়ো]

তাঁর জীবনকালে ধর্মময়তা হবে প্রস্ফুটিত,
চন্দ্র যতদিন না বিলীন হয়, ততদিন মহাশান্তি হবে বিরাজিত।
তিনি এক সাগর থেকে আর এক সাগর পর্যন্ত আধিপত্য করবেন,
মহানদী থেকে পৃথিবীর প্রান্তসীমায়।   [ধুয়ো]

কেননা যে-নিঃস্ব সাহায্যের জন্য চিৎকার করে,
যে-দীনজন অসহায় হয়, তিনি তাদের উদ্ধার করবেন।
তিনি দীনহীন ও নিঃস্বের প্রতি দয়া করবেন,
ত্রাণ করবেন নিঃস্বদের প্রাণ।   [ধুয়ো]

তাঁর নাম বিরাজ করুক চিরকাল!
সূর্যের সামনে চিরস্থায়ী থাকুক সেই নাম,
তবেই সেই নামে সকল দেশ হবে আশিসধন্য,
তারা তাঁকে সুখী বলবে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১৫:৪-৯)

প্রিয়জনেরা, আমাদের আগে যা কিছু লেখা হয়েছে, তা সবই আমাদের শিক্ষার উদ্দেশেই লেখা হয়েছে, শাস্ত্র যে নিষ্ঠা ও আশ্বাস জাগিয়ে তোলে, তা দ্বারা আমরা যেন আমাদের প্রত্যাশা উদ্দীপিত করে রাখি।
নিষ্ঠা ও আশ্বাস দানকারী ঈশ্বর তোমাদের এই বর প্রদান করুন, যিশুখ্রিষ্টের আদর্শ অনুসারে তোমরা যেন পরস্পর একমন হতে পার, যেন একপ্রাণে এককণ্ঠে তোমরা আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের ঈশ্বর ও পিতার গৌরবকীর্তন করতে পার।
তাই ঈশ্বরের গৌরবের খাতিরে তোমরা পরস্পরকে সাদরে গ্রহণ কর, স্বয়ং খ্রিষ্ট যেইভাবে তোমাদের গ্রহণ করেছেন। কেননা আমার কথা এ: খ্রিষ্ট পরিচ্ছেদিতদের সেবক হলেন ঈশ্বরের বিশ্বাসযোগ্যতার উদ্দেশেই, অর্থাৎ তিনি যেন কুলপতিদের প্রতি উচ্চারিত সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে পারেন, এবং বিজাতীয়রাও যেন ঈশ্বরের দয়ার জন্য তাঁর গৌরবকীর্তন করে; যেমনটি লেখা আছে: এইজন্য আমি বিজাতীয়দের মধ্যে তোমার গৌরব স্বীকার করব, তোমার নামের উদ্দেশে স্তবগান করব।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর, তাঁর রাস্তা সমতল কর।
সমস্ত মানবকুল প্রভুর পরিত্রাণ দেখতে পাবে।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৩:১-১২)

নির্ধারিত সময়ে বাপ্তিস্মদাতা যোহন আবির্ভূত হলেন; তিনি যুদেয়ার মরুপ্রান্তরে প্রচার করতেন; তিনি বলতেন: ‘মনপরিবর্তন কর, কেননা স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে।’ ইনিই সেই ব্যক্তি যাঁর বিষয়ে নবী ইশাইয়া বলেছিলেন,
এমন একজনের কণ্ঠস্বর
যে মরুপ্রান্তরে চিৎকার করে বলে,
প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর,
তাঁর রাস্তা সমতল কর।
এই যোহন উটের লোমের এক কাপড় পরতেন, তাঁর কোমরে চামড়ার বন্ধনী, ও তাঁর খাদ্য পঙ্গপাল ও বনের মধু ছিল। তখন যেরুশালেম, সমস্ত যুদেয়া ও যর্দনের নিকটবর্তী সমস্ত অঞ্চলের লোক তাঁর কাছে যেতে লাগল, ও নিজেদের পাপ স্বীকার করে যর্দন নদীতে তাঁর হাতে বাপ্তিস্ম নিতে লাগল।
কিন্তু অনেক ফরিশী ও সাদ্দুকী বাপ্তিস্মের জন্য আসছে দেখে তিনি তাদের বললেন, ‘হে সাপের বংশ, আসন্ন ক্রোধ থেকে পালাতে তোমাদের কে চেতনা দিল? অতএব এমন এক ফল দেখাও, যা তোমাদের মনপরিবর্তনের যোগ্য ফল। আর এমনটি ভাববে না যে তোমরা মনে মনে বলতে পার, আব্রাহাম আমাদের পিতা; কেননা আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বর এ সমস্ত পাথর থেকে আব্রাহামের জন্য সন্তানদের উদ্ভব ঘটাতে পারেন। আর এখনই তো গাছগুলোর শিকড়ে কুড়ালটা লাগানো রয়েছে; অতএব, যে কোন গাছে উত্তম ফল ধরে না, তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে। আমি মনপরিবর্তনের উদ্দেশে জলে তোমাদের বাপ্তিস্ম দিই বটে, কিন্তু আমার পরে যিনি আসছেন, তিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী; আমি তাঁর জুতো খুলবার যোগ্য নই; তিনি পবিত্র আত্মা ও আগুনেই তোমাদের বাপ্তিস্ম দেবেন। তাঁর কুলো তাঁর হাতে রয়েছে, আর তিনি নিজের খামার পরিষ্কার করবেন, ও নিজের গম গোলায় সংগ্রহ করবেন, কিন্তু তুষ অনির্বাণ আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিনের উপদেশ

আমরা সুসমাচারের কথা শুনেছি; হ্যাঁ, শুনেছি যে, প্রভু তাদের ভর্ৎসনা করেন, যারা আকাশের চেহারা বুঝতে পারে, কিন্তু কাছে এসে যাওয়া স্বর্গরাজ্যে বিশ্বাস করার সময়টিকে চিনতে পারে না। তিনি একথা ইহুদীদের বলছিলেন, তাঁর বাণী কিন্তু আমাদেরও কাছে আসে। আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্ট এভাবেই আপন প্রচারকর্ম শুরু করেছিলেন: মনপরিবর্তন কর, কেননা স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে (মথি ৪:১৭)। তাঁর অগ্রদূত সেই বাপ্তিস্মদাতা যোহনও একই কথা বলে শুরু করেছিলেন, মনপরিবর্তন কর, কেননা স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে। আজও প্রভু তাদের ভর্ৎসনা করেন, স্বর্গরাজ্য কাছে আসতে আসতে যারা মন ফেরাতে চায় না। তিনি বলেন, স্বর্গরাজ্য এমনভাবে আসে না, যা মনোযোগ আকর্ষণ করবে (লুক ১৭:২১); এর পর তিনি বলে চলেন, স্বর্গরাজ্য তোমাদের মাঝেই উপস্থিত।
সুতরাং প্রত্যেকে চিন্তা-ভাবনা করেই প্রভুর সাবধান বাণী গ্রহণ করুক, যাতে সে ত্রাণকর্তার দয়া সক্রিয় হওয়ার ক্ষণ না হারায়, সেই যে দয়া ততদিন দান করা হয় যতদিন মানবজাতিকে সময় দেওয়া হয়। মানুষ যেন মন ফেরায়, কেউই যেন বিনাশে পতিত না হয়, এজন্যই মানুষকে সময় দেওয়া হয়। ঈশ্বর তো জানেন কবে জগতের সমাপ্তি ঘটবে: এখন বিশ্বাসের সময়। জগতের সমাপ্তি তোমাদের কাউকে জীবিত পাবে কিনা, আমি তা জানি না; হয় তো পাবে না। তবু যেহেতু আমরা মরণশীল, সেজন্য সেই ক্ষণ প্রত্যেকেরই সন্নিকট। আমরা তো বহু বিপদের মধ্যে পথ চলি। কাঁচের তৈরী হলে আমরা পতন তত ভয় করতাম না; একটা কাঁচের পাত্রের চেয়ে ভঙ্গুর কিছু আছে কি? তবু তা অক্ষুণ্ণই থাকে ও শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকে যায়; আর যদিও ভয় করা যায়, কাঁচের পাত্র পড়তে পারে, তার জন্য বার্ধক্যকাল বা জ্বর ভয় করা যায় না।
আমরা কাঁচের চেয়েও ভঙ্গুর ও দুর্বল; মানবজীবনে যত অপ্রত্যাশিত বিপদ পরপর ঘটে, আমাদের ভঙ্গুরতা প্রতিদিন সেই সবকিছুর জন্য আমাদের উদ্বিগ্ন করে; আর যদিও এসব কিছু আমাদের স্পর্শ না করে, তবু সময় তো যায়: মানুষ একটা আঘাত এড়াতে পারে বটে, কিন্তু সে কি মৃত্যু এড়াতে পারে? বাইরে থেকে আগত যত বিপদ সে এড়াতে পারে, কিন্তু দেহে নিহিত যে অসুখ, সে কি তা এড়াতে পারে? তাছাড়া, একবার সামান্য জীবাণু তোমাকে হুমকি দেয়, একবার পুরো অসুস্থতা হঠাৎ তোমার উপর এসে পড়ে; শেষে একজন এসব কিছু থেকে যতই না নিজেকে বাঁচায় না কেন, যখন বার্ধক্যকাল উপস্থিত হয়, তখন কোন বিরতি আর থাকেই না।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৪৭
ধুয়ো:
ওঠ, যেরুশালেম,
উচ্চস্থানে সোজা হয়ে দাঁড়াও,
চেয়ে দেখ সেই আনন্দ,
যা স্বয়ং ঈশ্বর থেকেই তোমার কাছে আসছে!

যেরুশালেম! প্রভুর মহিমাকীর্তন কর;
সিয়োন! তোমার পরমেশ্বরের প্রশংসা কর,
তিনি যে সুদৃঢ় করেন তোমার নগরদ্বারের অর্গল,
তোমার সন্তানদের আশিসধন্য করেন তোমার অন্তঃস্থলে।

তিনি এ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন তাঁর বচন,
তাঁর বাণী দ্রুত বেগে ছুটে যায়।
তিনি তুষার বিছিয়ে দেন গালিচার মত,
ছাইয়ের মত ছড়িয়ে দেন জমাট শিশির।

তিনি তাঁর আপন বাণী ঘোষণা করেন যাকোবের কাছে,
তাঁর সমস্ত বিধি ও সুবিচার ইস্রায়েলের কাছে।
অন্যান্য দেশের জন্য তাই করলেন, এমন নয়,
অন্য কেউ জানতে পারেনি তাঁর সমস্ত সুবিচার।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আত্মিক খাদ্য গ্রহণে পরিতৃপ্ত হয়ে উঠে
আমরা তোমাকে অনুনয় করি:
এ রহস্যময় ভোজে যোগদানের ফলে আমাদের উদ্বুদ্ধ কর,
যেন পার্থিব সমস্ত কিছু প্রজ্ঞার সঙ্গে নির্ণয় ক’রে
আমরা স্বর্গীয় সমস্ত কিছুতেই স্থিতমূল থাকি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৩য় রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, চেয়ে দেখ তোমার এ জনগণের দিকে
যারা জাগ্রত বিশ্বাসের সঙ্গেই প্রভুর জন্মলগ্নের প্রতীক্ষায় রত আছে।
আশীর্বাদ কর:
পরিত্রাণ-মহারহস্য ভক্তিপূর্ণ অন্তরে অনুধ্যান করতে করতে
আমরা যেন মনের আনন্দেই আসন্ন মহোৎসবে পৌঁছতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৩৫:১-৬ক,৮ক,১০)

প্রান্তর ও শুষ্ক মাটি পুলকিত হোক,
মরুভূমি উল্লসিত হোক, মুকুলিত হোক,
গোলাপফুলের মত প্রস্ফুটিত হোক।
হ্যাঁ, আনন্দফুর্তির সঙ্গে গান করুক;
তাকে দেওয়া হবে লেবাননের গৌরব,
কার্মেল ও শারোনের মহিমা।
তারা দেখতে পাবে প্রভুর গৌরব, আমাদের পরমেশ্বরের মহিমা।
সবল কর দুর্বল যত হাত, সুস্থির কর কম্পিত যত হাঁটু,
ভীরুহৃদয়দের বল: ‘সাহস ধর, ভয় করো না; এই যে তোমাদের পরমেশ্বর!
ঐশ্বরিক প্রতিদান সেই প্রতিশোধ আসছে।
তিনি তোমাদের ত্রাণ করতে আসছেন।’
তখন অন্ধের চোখ খুলে যাবে, বধিরের কান উন্মোচিত হবে।
খোঁড়া মানুষ হরিণের মত লাফ দেবে, বোবার মুখ আনন্দচিৎকার করবে।
[সেই প্রান্তরের] মাঝখান দিয়ে চলে যাবে একটা রাস্তা,
তা পবিত্র পথ বলে অভিহিত হবে;
কারণ প্রভু যাদের মুক্তিকর্ম সাধন করলেন, তারা ফিরে আসবে,
হর্ষধ্বনি তুলতে তুলতে তারা সিয়োনে প্রবেশ করবে;
তাদের মাথা হবে চিরন্তন আনন্দে বিভূষিত;
সুখ ও আনন্দ হবে তাদের সহচর;
শোক ও কান্না তখন পালিয়ে যাবে।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৪৬
ধুয়ো:
এসো, প্রভু,
আমাদের ত্রাণ করতে এসো।

তিনি বিশ্বস্ততা বজায় রাখেন চিরকাল ধরে,
অত্যাচারিতের পক্ষে সুবিচার করেন,
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করেন,
প্রভু কারারুদ্ধকে মুক্ত করেন।   [ধুয়ো]

প্রভু খুলে দেন অন্ধের চোখ,
প্রভু অবনতকে টেনে তোলেন,
প্রভু ধার্মিককে ভালবাসেন,
প্রভু প্রবাসীকে রক্ষা করেন।   [ধুয়ো]

তিনি এতিম ও বিধবাকে সুস্থির রাখেন,
কিন্তু বাঁকা করেন দুর্জনের পথ।
প্রভু রাজত্ব করেন চিরকাল ধরে।
হে সিয়োন, তোমার পরমেশ্বর রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
প্রেরিতদূত সাধু যাকোবের পত্র থেকে পাঠ (৫:৭-১০)

ভাইবোনেরা, প্রভুর আগমনের দিন পর্যন্ত ধৈর্য ধর। দেখ, কৃষক ভূমির মূল্যবান ফসলের প্রতীক্ষায় থাকে, এই ব্যাপারে সে অধৈর্য হয় না, যে পর্যন্ত আশুপক্ব ও শেষপক্ব সবই ফল সংগ্রহ না করে। তোমরাও তেমনি ধৈর্যশীল হও, অন্তর সুস্থির কর, কেননা প্রভুর আগমনের দিন সন্নিকট; ভাই, তোমরা একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলো না, যেন তোমাদের নিজেদের বিচারাধীন না হতে হয়: দেখ, বিচারকর্তা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।
ভাই, কষ্টভোগ ও সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্তস্বরূপ তোমরা চোখের সামনে সেই নবীদের রাখ, যাঁরা প্রভুর নামে কথা বলেছিলেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
প্রভুর আত্মা আমার উপর অধিষ্ঠিত,
তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন দীনদুঃখীদের কাছে শুভসংবাদ দিতে।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১১:২-১১)

সেসময়ে, যোহন কারাগারে থেকে খ্রিষ্টের কর্মের কথা শুনে নিজের শিষ্যদের মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করে পাঠালেন, ‘যিনি আসছেন, আপনিই কি সেই ব্যক্তি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকব?’ উত্তরে যিশু তাদের বললেন, ‘তোমরা যা কিছু শুনতে ও দেখতে পাচ্ছ, তা যোহনকে গিয়ে জানাও: অন্ধ আবার দেখতে পায় ও খোঁড়া হেঁটে বেড়ায়, সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত মানুষ শুচীকৃত হয় ও বধির শুনতে পায়, এবং মৃত পুনরুত্থিত হয় ও দীনদরিদ্রদের কাছে শুভসংবাদ প্রচার করা হয়; আর সুখী সেই জন, আমার কারণে যার পতন হবে না।’
তারা চলে যাচ্ছে, সেসময় যিশু লোকদের কাছে যোহন বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন: ‘তোমরা প্রান্তরে কী দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে দোলা একটা নলগাছ? তবে কি দেখতে গিয়েছিলে? মোলায়েম পোশাক-পরা কোন ব্যক্তিকে? দেখ, যারা মোলায়েম পোশাক পরে, তারা তো রাজপ্রাসাদেই থাকে। তবে কী দেখতে গিয়েছিলে? একজন নবীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, নবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠই এক মানুষকে দেখতে গিয়েছিলে। ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর বিষয়ে লেখা আছে: দেখ, আমি আমার দূত তোমার সামনে প্রেরণ করছি; তোমার সামনে সে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।
আমি তোমাদের সত্যি বলছি, নারী-গর্ভজাতদের মধ্যে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের চেয়ে মহান কেউই কখনও আবির্ভূত হয়নি; তবু স্বর্গরাজ্যে যে ক্ষুদ্রতম, সে তাঁর চেয়ে মহান।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
লুক-রচিত সুসমাচারে বিশপ সাধু আম্ব্রোজের ব্যাখ্যা

যোহন দু’জন শিষ্যকে ডেকে প্রভুর কাছে একথা জিজ্ঞাসা করতে পাঠালেন, যিনি আসছেন, আপনিই কি সেই ব্যক্তি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকব? (মথি ১১:৩)। এ সাধারণ কথা সাধারণ ও আক্ষরিক অর্থ বহন করে না, নইলে সুসমাচারে যা ইতিমধ্যে বলা হয়েছে তার সঙ্গে পরস্পর-বিরুদ্ধ অর্থ দাঁড়াত। যিনি আগে পিতা ঈশ্বরের ঐশপ্রকাশ গুণে যিশুকে চিনেছিলেন, সেই যোহন কেমন করে এখন বোঝাতে পারেন, তিনি তাঁকে চেনেন না? তিনি যাঁকে চিনতেন না, যদি আগেই তাঁকে চিনতেন, তাহলে এখন কেমন করে তাঁর পরিচয় নাই জেনে পারেন? তিনি বলেছিলেন, আমি তাঁকে চিনতাম না, কিন্তু যিনি মানুষকে বাপ্তিস্ম দিতে আমাকে পাঠিয়েছিলেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি যাঁর উপরে পবিত্র আত্মাকে নেমে আসতে ও অধিষ্ঠান করতে দেখবে, তিনিই তো পবিত্র আত্মায় মানুষকে বাপ্তিস্ম দেন (যোহন ১:৩৩)। যোহন সেই বাণী বিশ্বাস করলেন, যাঁর পরিচয় তাঁকে প্রকাশ করা হয়েছিল তিনি তাঁকে চিনলেন, তাঁকে বাপ্তিস্ম দেওয়ার পর তাঁকে আরাধনা করলেন ও তাঁরই বর্তমান আগমনের ভাববাণী দিলেন যিনি ইতিমধ্যে উপস্থিত। এজন্য তিনি বললেন, আমি দেখেছি ও সাক্ষ্য দিয়েছি, ইনি ঈশ্বরের পুত্র (যোহন ১:৩৪)। তাহলে কী করে তেমন মহানবী এতই প্রবঞ্চিত হবেন যে, তিনি তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলে বিশ্বাস করবেন না যাঁর বিষয়ে আগে বলেছিলেন, ওই দেখ, ইনি জগতের পাপ হরণ করেন (যোহন ১:২৯)। সুতরাং আক্ষরিক অর্থ যখন পরস্পর-বিরুদ্ধ মনে হয়, তখন এসো, তার আধ্যাত্মিক অর্থের অনুসন্ধান করি।
আমরা আগেও বলেছি, যোহন ছিলেন খ্রিষ্টের অগ্রগামী বিধানের প্রতীক, যে বিধানকে যথার্থই বিধান বলা হত, কারণ তা ছিল বিশ্বাসহীন হৃদয়ের মধ্যে কারারুদ্ধ, সনাতন আলোয় বঞ্চিত ও কেমন যেন অমঙ্গল ও নির্বুদ্ধিতায় উর্বর গর্ভের মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ। সুসমাচারের সাক্ষ্যদানের জামিন ছাড়া বিধান ঐশপরিকল্পনার বিষয়ে আপন সাক্ষ্যদানের পূর্ণতা সম্পূর্ণরূপে এনে দিতে পারেনি। যেহেতু খ্রিষ্টই বিধানের পূর্ণতা, সেজন্য যোহন খ্রিষ্টের কাছে আপন শিষ্যদের পাঠালেন, তারা যেন তাঁর কাছ থেকে অতিরিক্ত জ্ঞান পেতে পারে।
বিশ্বাসের সূত্রপাত প্রাক্তন সন্ধিতেই বটে, কিন্তু তার পূর্ণতা নবসন্ধিতেই সাধিত, ফলে সুসমাচার বাদ দিয়ে কেউই সম্পূর্ণ রূপে বিশ্বাস করতে পারে না, একথা জানতেন বিধায় প্রভু, যখন সেই লোকেরা তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে প্রশ্ন রাখল, তখন কথায় নয়, কাজেই তিনি নিজের বিষয় প্রমাণ করলেন: তোমরা যা কিছু শুনতে ও দেখতে পাচ্ছ, তা যোহনকে গিয়ে জানাও: অন্ধ আবার দেখতে পায় ও খোঁড়া হেঁটে বেড়ায়, চর্মরোগী শুচীকৃত হয় ও বধির শুনতে পায়, এবং মৃত পুনরুত্থিত হয় ও দীনদরিদ্রদের কাছে শুভসংবাদ প্রচার করা হয় (মথি ১১:৪-৫)। তবু প্রভুর সাক্ষ্যদানের এ উদাহরণগুলি এখনও যথেষ্ট নয়: বিশ্বাসের পূর্ণতা হল প্রভুর ক্রুশ, তাঁর মৃত্যু ও তাঁর সমাধি। এজন্য তিনি বলে চললেন, সুখী সেই জন, আমার কারণে যার পতন হবে না (মথি ১১:৬)। ক্রুশ মনোনীতদের পক্ষেও পতনের কারণ হতে পারত, অথচ ঐশব্যক্তিত্বের বেলায় ক্রুশের চেয়ে যথার্থ সাক্ষ্যদান আর থাকতে পারে না, সম্পূর্ণ ও স্বেচ্ছাকৃত আত্মোৎসর্গের মত মানবীয় ব্যাপার অতিক্রম করবে আর তেমন কিছুই নেই: এই একমাত্র কাজের মধ্য দিয়ে তিনি পূর্ণমাত্রায় প্রমাণ দেন, তিনিই প্রভু।
এজন্য যোহন একথায় তাঁকে অঙুলি দিয়ে নির্দেশ করেন, ওই দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, জগতের পাপ যিনি হরণ করেন (যোহন ১:২৯)। এমন কথা যা সেই দু’জন শিষ্যের প্রতি শুধু নয়, আমাদের সকলের প্রতিও উদ্দেশ করা হয়, যাতে বাস্তব ঘটনাগুলির সাক্ষ্যদানের উপর নির্ভর করে বিশ্বাস করি।
তবে তোমরা কী দেখতে গিয়েছিলে? একজন নবীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, নবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠই এক মানুষকে দেখতে গিয়েছিলে (মথি ১১:৯)। যিনি দেহগত জন্মে তাঁর অগ্রদূত হয়ে ও বিশ্বাস-স্বীকৃতিতে তাঁর প্রচারক হয়ে শুধু নয়, বরং গৌরবময় সাক্ষ্যমরণেও তাঁর অগ্রদূত হয়ে তাঁর পথ প্রস্তুত করেছিলেন, প্রভু তাঁকেই অনুকরণযোগ্য আদর্শরূপে তুলে ধরেন। তিনি অবশ্যই নবীদের চেয়ে মহান, যিনি নবী-ধারার সমাপ্তিস্বরূপ। তিনি নবীর চেয়ে মহান, কেননা তিনি যাঁর কথা প্রচার করলেন, যাঁকে স্বচক্ষে দেখলেন ও নিজেই বাপ্তিস্ম দিলেন, অনেকেই সেই প্রভুকে দেখতে আকাঙ্ক্ষা করল।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৪৭
ধুয়ো:
ভীরুহৃদয়দের বল:
‘সাহস ধর, ভয় করো না;
এই যে আমাদের পরমেশ্বর!
তিনি আমাদের ত্রাণ করতে আসছেন।’

যেরুশালেম! প্রভুর মহিমাকীর্তন কর;
সিয়োন! তোমার পরমেশ্বরের প্রশংসা কর,
তিনি যে সুদৃঢ় করেন তোমার নগরদ্বারের অর্গল,
তোমার সন্তানদের আশিসধন্য করেন তোমার অন্তঃস্থলে।

তিনি এ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন তাঁর বচন,
তাঁর বাণী দ্রুত বেগে ছুটে যায়।
তিনি তুষার বিছিয়ে দেন গালিচার মত,
ছাইয়ের মত ছড়িয়ে দেন জমাট শিশির।

তিনি তাঁর আপন বাণী ঘোষণা করেন যাকোবের কাছে,
তাঁর সমস্ত বিধি ও সুবিচার ইস্রায়েলের কাছে।
অন্যান্য দেশের জন্য তাই করলেন, এমন নয়,
অন্য কেউ জানতে পারেনি তাঁর সমস্ত সুবিচার।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে কৃপাময় প্রভু, অনুনয় করি:
তোমার এ দিব্য খাদ্য সমস্ত দোষত্রুটি থেকে আমাদের পরিশুদ্ধ ক’রে
যেন আসন্ন খ্রিষ্টজন্মোৎসবের জন্য আমাদের হৃদয়-মন প্রস্তুত করে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


৪র্থ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর বাতিল।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, মিনতি জানাই: আমাদের অন্তরে তোমার অনুগ্রহ সঞ্চার কর,
আমরা যারা দূত-সংবাদ দ্বারা
তোমার পুত্র সেই খ্রিষ্টের মাংসধারণের কথা জেনেছি,
তাঁর যন্ত্রণাভোগ ও ক্রুশমৃত্যু গুণে
যেন পুনরুত্থানের গৌরবে উপনীত হতে পারি।
পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে তিনি ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন
ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৭:১০-১৪)

সেসময়ে প্রভু আহাজের সঙ্গে কথা বললেন; তাঁকে বললেন, ‘তোমার পরমেশ্বর প্রভুর কাছে একটা চিহ্ন যাচনা কর, তা অধোলোক কিংবা ঊর্ধ্বলোকের চিহ্ন হোক।’
কিন্তু আহাজ উত্তরে বললেন, ‘আমি যাচনা করব না; আমি প্রভুকে যাচাই করব না।’
তখন ইশাইয়া বললেন,
‘হে দাউদকুল, তোমরা একবার শোন:
মানুষের ধৈর্য যাচাই করতে তোমরা কি এখনও ক্ষান্ত নও যে,
এবার আমার পরমেশ্বরেরও ধৈর্য যাচাই করবে?
তাই প্রভু নিজেই তোমাদের একটা চিহ্ন দেবেন।
দেখ, যুবতীটি গর্ভবতী হয়ে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে,
তাঁর নাম রাখবে ইম্মানুয়েল।’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ২৪
ধুয়ো:
প্রবেশ করছেন প্রভু,
স্বয়ং তিনিই গৌরবের রাজা!

প্রভুরই তো পৃথিবী ও তার যত বস্তু,
জগৎ ও জগদ্বাসী সকল;
তিনি সাগরের জলরাশির উপরে তা স্থাপন করলেন,
নদনদীর উপরে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত করলেন।   [ধুয়ো]

প্রভুর পর্বতে কে গিয়ে উঠবে,
তাঁর পবিত্রধামে কে থাকতে পারবে?
সেই তো, যার হাত নির্দোষ, শুদ্ধ যার হৃদয়,
অলীকতার প্রতি যে তোলে না প্রাণ, নেয় না ছলনার শপথ।   [ধুয়ো]

সেই তো পাবে প্রভুর কাছ থেকে আশিসধারা,
তার ত্রাণেশ্বরের কাছ থেকে ধর্মময়তা পাবে।
এই তো তাঁর সেই অনুসন্ধানী বংশের মানুষ,
তোমার শ্রীমুখ অন্বেষী, যাকোবের ঈশ্বর।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১:১-৭)

আমি পল, খ্রিষ্টযিশুর দাস, প্রেরিতদূত হতে আহূত। আমাকে ঈশ্বরের সুসমাচারের উদ্দেশে স্বতন্ত্র করে রাখা হয়েছে, যে সুসমাচার দেবেন বলে ঈশ্বর পবিত্র শাস্ত্রবাণীতে তাঁর নবীদের মধ্য দিয়ে আগে প্রতিশ্রুত হয়েছিলেন।
এই সুসমাচার তাঁর আপন পুত্রেরই বিষয়ে, যিনি মাংস অনুসারে দাউদ-বংশে সঞ্জাত, পবিত্রতার আত্মা অনুসারে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে সপরাক্রমেই ঈশ্বরের পুত্র বলে নিযুক্ত,—তিনি আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্ট, যাঁর দ্বারা আমরা, তাঁর নামের উদ্দেশে, প্রেরিতদূত হবার অনুগ্রহ পেয়েছি, যেন সকল জাতিকে বিশ্বাসের বাধ্যতার কাছে চালিত করি; তাদের মধ্যে তোমরাও আছ, যারা যিশুখ্রিষ্টেরই হবার জন্য আহূত। রোমে ঈশ্বরের প্রিয়জন যারা, পবিত্রজন হতে আহূত যারা, তোমাদের সকলের সমীপে: আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যিশুখ্রিষ্ট থেকে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের উপর বর্ষিত হোক।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
দেখ, কুমারীটি গর্ভবতী হয়ে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে,
লোকে তাঁকে ইম্মানুয়েল—আমাদের-সঙ্গে-ঈশ্বরই—বলে ডাকবে।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১:১৮-২৪)

যিশুখ্রিষ্টের জন্ম এভাবে হয়: তাঁর মা মারীয়া যোসেফের প্রতি বাগ্‌দত্তা হলে তাঁরা একসঙ্গে থাকার আগে দেখা গেল, তিনি গর্ভবতী—পবিত্র আত্মার প্রভাবে। তাঁর স্বামী যোসেফ যেহেতু ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন, আবার তাঁকে প্রকাশ্যে নিন্দার পাত্র করতে অনিচ্ছুক ছিলেন বিধায় তাঁকে গোপনেই ত্যাগ করার সঙ্কল্প নিলেন।
তিনি এ সমস্ত ভাবছেন, এমন সময় দেখ, প্রভুর দূত স্বপ্নে তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, ‘দাউদসন্তান যোসেফ, তোমার স্ত্রী মারীয়াকে গ্রহণ করে নিতে ভয় করো না, কেননা তার গর্ভে যা জন্মেছে, তা পবিত্র আত্মার প্রভাবেই হয়েছে; সে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে আর তুমি তাঁর নাম যিশু রাখবে, কারণ তিনিই নিজ জনগণকে তাদের পাপ থেকে ত্রাণ করবেন।’
এই সমস্ত ঘটল যেন নবীর মধ্য দিয়ে উচ্চারিত প্রভুর এই বচন পূর্ণ হয়: দেখ, কুমারীটি গর্ভবতী হয়ে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে, আর লোকে তাঁকে ইম্মানুয়েল বলে ডাকবে; নামটির অর্থ হল, আমাদের-সঙ্গে-ঈশ্বর।
যোসেফ ঘুম থেকে জেগে উঠে, প্রভুর দূত তাঁকে যেমন আদেশ করেছিলেন, সেইমত করলেন: তিনি নিজ স্ত্রীকে গ্রহণ করে নিলেন।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
পুরোহিত মাননীয় সাধু বীডের উপদেশ

সুসমাচার-রচয়িতা মথি স্বল্প কথায় অথচ পূর্ণ সত্যের সঙ্গেই বর্ণনা করেন আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্তা সেই যিশুখ্রিষ্টের জন্ম-কাহিনী, যিনি সর্বযুগের আগে ঈশ্বরের সনাতন পুত্র হয়ে আব্রাহাম থেকে মারীয়ার স্বামী যোসেফ পর্যন্ত পিতৃগণের বংশধারা থেকে উদ্ভূত হয়ে মানবকালের মধ্যে মানবপুত্র রূপে আবির্ভূত হলেন। আর সবদিক দিয়ে এ সমুচিত ছিল যে, যিনি মানুষের প্রতি ভালবাসার খাতিরে মানুষ হতে অভিপ্রেত ছিলেন, সেই ঈশ্বর কুমারী-গর্ভে ছাড়া জন্ম নেবেন না, কেননা একটি কুমারী ঈশ্বরের পুত্রকে ছাড়া অন্যকে জীবন দান করবেন, তা হতে পারত না।
দেখ, কুমারীটি গর্ভবতী হয়ে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে, তাঁর নাম রাখবে ইম্মানুয়েল (ইশা ৭:১৪), যার অর্থ আমাদের-সঙ্গে-ঈশ্বর।
‘আমাদের-সঙ্গে-ঈশ্বর’ এই যে নামে নবী ত্রাণকর্তাকে অভিহিত করেন, সেই নাম ঈশ্বরপুত্রের অনন্য ব্যক্তিত্বে খ্রিষ্টের দু’টো স্বরূপ নির্দেশ করে। কালের আগে পিতা থেকে জাত হয়ে তিনি কালের পূর্ণতায় জননীর গর্ভে হলেন ইম্মানুয়েল, অর্থাৎ আমাদের-সঙ্গে-ঈশ্বর; যখন বাণী হলেন মাংস ও আমাদের মাঝে বাস করলেন (যোহন ১:১৪), তখন তিনি আপন স্বরূপের ঐক্যে আমাদের ভঙ্গুর স্বরূপ ধারণ করতে প্রসন্ন হলেন, অর্থাৎ তিনি যা ছিলেন তা হওয়া বন্ধ না করে, নিজের স্বরূপে বঞ্চিত না হওয়ার জন্য আমাদের স্বরূপ ধারণ ক’রে, আমরা যা আছি, তিনি অপরূপভাবে তা-ই হতে লাগলেন।
মারীয়া তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে অর্থাৎ তাঁর আপন গর্ভের পুত্রকে জন্ম দিলেন; যিনি সমস্ত সৃষ্টবস্তুর আগে ঈশ্বর থেকে ঈশ্বর হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন ও আপন সৃষ্ট মানবতায় সমস্ত সৃষ্টজীবদের ঊর্ধ্বে ছিলেন, মারীয়া তাঁকেই জন্ম দিলেন; এবং তাঁর নাম যিশু রাখলেন (মথি ১:২৫)।
সুতরাং যিশু নাম হল কুমারীর পুত্রের নাম, সেই যে নাম দূতের সংবাদে উল্লিখিত হয়েছিল যাতে প্রকাশ পেতে পারত যে তিনি পাপ থেকে আপন জনগণকে পরিত্রাণ করবেন। যিনি পাপ থেকে ত্রাণ করেন, তিনি আত্মায় ও দেহে যত পাপসূচিত বিশৃঙ্খলা থেকেও ত্রাণ করবেন।
খ্রিষ্ট শব্দটা যাজকীয় বা রাজকীয় মর্যাদা নির্দেশ করে। বিধানে ‘খ্রিষ্মা’ শব্দ থেকে যাজকদের ও রাজাদের ‘খ্রিষ্ট’ বলা হত, আর খ্রিষ্মা শব্দার্থ পবিত্র তেলে অভিষেক: তাঁরা তাঁরই পূর্বচিহ্ন ছিলেন, জগতে সত্যকার রাজা ও মহাযাজক রূপে আবির্ভূত হয়ে যিনি তাঁর সমকক্ষদের চেয়ে আনন্দ-তেলে অভিষিক্ত হলেন (সাম ৪৫:৮)।
এ তৈলাভিষেক থেকে, অর্থাৎ খ্রিষ্মা থেকে খ্রিষ্ট শব্দ উদ্ভূত; আর যারা তাঁর অভিষেকের অংশীদার, অর্থাৎ তাঁর আত্মিক অনুগ্রহের অংশীদার, তাদের খ্রিষ্টিয়ান বলে।
পরিত্রাতা হওয়ায় আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্ট প্রসন্ন হয়ে পাপ থেকে আমাদের ত্রাণ করুন; মহাযাজক হওয়ায় তিনি পিতা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের পুনর্মিলিত করুন; রাজা হওয়ায় তিনি আমাদের তাঁর পিতার শাশ্বত রাজ্য দান করুন, তিনি যে পিতা ও পবিত্র আত্মার সঙ্গে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে আমেন।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৪৭
ধুয়ো:
দেখ, কুমারীটি গর্ভবতী হয়ে
একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবেন,
তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানুয়েল
—আমাদের-সঙ্গে-ঈশ্বর।

যেরুশালেম! প্রভুর মহিমাকীর্তন কর;
সিয়োন! তোমার পরমেশ্বরের প্রশংসা কর,
তিনি যে সুদৃঢ় করেন তোমার নগরদ্বারের অর্গল,
তোমার সন্তানদের আশিসধন্য করেন তোমার অন্তঃস্থলে।

তিনি এ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন তাঁর বচন,
তাঁর বাণী দ্রুত বেগে ছুটে যায়।
তিনি তুষার বিছিয়ে দেন গালিচার মত,
ছাইয়ের মত ছড়িয়ে দেন জমাট শিশির।

তিনি তাঁর আপন বাণী ঘোষণা করেন যাকোবের কাছে,
তাঁর সমস্ত বিধি ও সুবিচার ইস্রায়েলের কাছে।
অন্যান্য দেশের জন্য তাই করলেন, এমন নয়,
অন্য কেউ জানতে পারেনি তাঁর সমস্ত সুবিচার।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর,
শাশ্বত মুক্তির পণ গ্রহণ করে আমরা অনুনয় করি:
আমাদের মুক্তির মহাদিবস যতখানি ঘনিয়ে আসছে,
আমাদের ভক্তি ততখানি বৃদ্ধিশীল হোক,
আমরা যেন তোমার পুত্রের জন্মোৎসব
যোগ্য অন্তরে উদ্‌যাপন করতে পারি।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]