সাধারণকাল
![]() • পরমপবিত্র ত্রিত্ব পঞ্চাশত্তমীর পরবর্তী রবিবারে পালিত হয়। • খ্রিষ্টের পরমপবিত্র দেহরক্ত পরমপবিত্র ত্রিত্বের পরবর্তী রবিবারে পালিত হয়। • পরমারাধ্য যিশুহৃদয় পঞ্চাশত্তমীর পরবর্তী দ্বিতীয় রবিবারের পরবর্তী শুক্রবারে পালিত হয়। • বিশ্বরাজ আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্ট সাধারণকালের শেষ রবিবারে পালিত হয়। |
রবিবার: ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ | ৩২ | ৩৩
সাধারণকালের মহাপর্বচতুষ্টয়: ত্রিত্ব | খ্রিষ্টের দেহরক্ত | যিশুহৃদয় | খ্রিষ্টরাজা
১০ম রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, যা কিছু মঙ্গলকর, তুমিই তার উৎস! আশীর্বাদ কর:
তোমার উদ্দীপনায় উদ্দীপিত হয়ে আমরা যেন মঙ্গল নির্ণয় করতে পারি
ও তোমার পরিচালনায় শুভকর্ম সাধনে উত্তীর্ণ হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী হোশেয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৬:৩-৬)
এসো, প্রভুকে জানবার জন্য ছুটে চলি,
ভোরের মতই সুনিশ্চিত তাঁর আগমন।
ঘন ঘন বৃষ্টির মতই তিনি আমাদের কাছে আসবেন,
আসবেন বসন্তের সেই জলবর্ষণের মত যা মাটিকে জলসিক্ত করে।’
এফ্রাইম, তোমাকে নিয়ে আমি কীবা করব?
যুদা, তোমাকে নিয়ে আমি কীবা করব?
সকালের মেঘের মতই তোমার প্রেম,
তা শিশিরেরই মত, যা প্রত্যূষে উবে যায়।
এজন্যই নবীদের দ্বারা আমি তাদের আঘাত করলাম,
আমার মুখের বচন দ্বারা তাদের সংহার করলাম,
আলোকের মতই উদিত হয় আমার বিচার:
কারণ আমি প্রেমেই প্রীত, বলিদানে নয়,
আহুতির চেয়ে ঈশ্বরজ্ঞানেই বরং আমি প্রীত।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৫০
ধুয়ো: যার আচরণ নিখুঁত,
তাকে দেখাব পরমেশ্বরের পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর স্বয়ং প্রভু কথা বলছেন,
সূর্যের উদয়স্থল থেকে তার অস্তস্থল পর্যন্ত মর্তকে ডাকছেন।
তোমার সমস্ত যজ্ঞের জন্য যে তোমাকে ভর্ৎসনা করছি, তা নয়,
তোমার আহুতি সবসময়ই তো আমার সামনে। [ধুয়ো]
আমার ক্ষুধা পেলেও আমি বলতাম না তোমায়,
আমারই তো জগৎ ও তার যত বস্তু।
আমি কি খাই বলদের মাংস?
আমি কি পান করি ছাগের রক্ত? [ধুয়ো]
স্তুতিবাদই হোক পরমেশ্বরের কাছে তোমার যজ্ঞ,
পরাৎপরের কাছে তোমার ব্রতসকল উদ্যাপন কর;
সঙ্কটের দিনে আমায় ডাক:
আমি তোমাকে নিস্তার করব আর তুমি আমাকে সম্মান করবে। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৪:১৮-২৫)
প্রিয়জনেরা, আশা না থাকলেও আশা রেখে আব্রাহাম বিশ্বাস করলেন যে, তিনি বহুজাতির পিতা হবেন—যেমনটি তাঁকে বলা হয়েছিল: তোমার বংশ এরূপ হবে।
আর যদিও তিনি তাঁর নিজের মৃতকল্প শরীর—তাঁর বয়স তখন প্রায় একশ’ বছর!—ও সারার গর্ভকেও মৃতকল্প টের পাচ্ছিলেন, তবু বিশ্বাসে টলমান হননি। ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করে তিনি কোন প্রকার অবিশ্বাস বা সন্দেহ পোষণ করলেন না, বরং ঈশ্বরকে গৌরব আরোপ করে বিশ্বাসে বলবান হলেন, তিনি নিশ্চিত হয়ে জানতেন, ঈশ্বর যা প্রতিশ্রুত হয়েছেন, তা সফল করবারও সামর্থ্য তাঁর আছে। এজন্যই তা তাঁর পক্ষে ধর্মময়তা বলে পরিগণিত হল।
‘তাঁর পক্ষে পরিগণিত হল’ কথাটা যে কেবল তাঁর জন্য লেখা হয়েছে এমন নয়, কিন্তু আমাদেরও জন্য,—এই আমাদেরও পক্ষে তা পরিগণিত হবে, যারা তাঁকেই বিশ্বাস করি যিনি আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, সেই যে যিশুকে আমাদের অপরাধের জন্য মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের ধর্মময়তার লক্ষ্যে পুনরুত্থিত করা হয়েছে।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
প্রভু দীনদুঃখীদের কাছে শুভসংবাদ দিতে
ও বন্দিদের কাছে মুক্তিলাভের কথা প্রচার করতে প্রেরণ করেছেন আমায়।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৯:৯-১৩)
সেসময়ে, এগিয়ে যেতে যেতে যিশু দেখলেন, মথি নামে একজন লোক শুল্কঘরে বসে আছেন; তিনি তাঁকে বললেন, ‘আমার অনুসরণ কর।’ আর তিনি উঠে তাঁর অনুসরণ করলেন।
তখন এমনটি ঘটল যে, তিনি বাড়িতে ভোজে বসেছেন, সেসময় অনেক কর-আদায়কারী ও পাপী এসে যিশুর ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে বসল। তা দেখে ফরিসিরা তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘তোমাদের গুরু কেন কর-আদায়কারী ও পাপীদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছেন?’
কথাটা শুনে তিনি বললেন, ‘সুস্থ লোকদেরই যে চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় এমন নয়, যারা পীড়িত, তাদেরই প্রয়োজন। আপনারা গিয়ে এই বচনের অর্থ শিখে নিন: আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়; কেননা আমি ধার্মিকদের নয়, পাপীদেরই আহ্বান জানাতে এসেছি।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিন-লিখিত ‘সামসঙ্গীত-মালায় উপদেশাবলি’
অনেকে আছে যারা ধন-সম্পত্তির জন্য নয়, দৈহিক বলের জন্যও নয়, তাঁদের কোন উচ্চ মর্যাদার জন্যও নয়, কিন্তু নিজেদের পবিত্রতার জন্যই নিজেদের মহান গণ্য করে। তেমন লোকদের এড়াতেই হবে, তাদের কাছ থেকে দূরে পালাতে হবে, তাদের অনুকরণ করতে নেই, ঠিক এই কারণে যে তারা নিজেদের দেহের জন্য নয়, ধন-সম্পত্তির জন্যও নয়, বংশের জন্যও নয়, সম্মানের জন্যও নয়—এসব কিছু এমন যা স্পষ্টই সময়সাপেক্ষ, ভঙ্গুর, অনিত্য, অস্থায়ী,—কিন্তু তাদের ধর্মনিষ্ঠার জন্যই নিজেদের মহান মনে করে। তেমন মাহাত্ম্যই সেই সুচের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে যেতে তাদের প্রতিরোধ করল। কেননা নিজেদের ধার্মিক গণ্য করে ও সুস্থ গণ্য করে তারা ঔষধ অস্বীকার করে স্বয়ং আরোগ্যদাতাকেও হত্যা করল।
যিনি বলেছেন, সুস্থ লোকদেরই যে চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় এমন নয়, যারা পীড়িত, তাদেরই প্রয়োজন। আমি ধার্মিকদের নয়, পাপীদেরই আহ্বান জানাতে এসেছি (মথি ৯:১২, ১৩), তিনি এই বলিষ্ঠ ও সুস্থ লোকদের আহ্বান জানাতে আসেননি। তারাই বলিষ্ঠ ছিল, যারা খ্রিষ্টের শিষ্যদের অবজ্ঞা করছিল তাঁদের গুরু অসুস্থদের কাছে যেতেন ও আত্মাপীড়িতদের ভোজে বসতেন ব’লে। তারা নাকি বলছিল, তোমাদের গুরু কেন কর-আদায়কারী ও পাপীদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছেন? (মথি ৯:১১)। বলিষ্ঠ হওয়ায় তাদের চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল না! অথচ তেমন বল সুস্থতার নয়, নির্বুদ্ধিতারই লক্ষণ। ঈশ্বর না করুন, আমরা পাছে তেমন বলিষ্ঠদের আদর্শ পালন করি! কেননা তাদের আদর্শ পালন করবে, কারও কারও মনে তেমন চিন্তার উদয় হতেও পারে।
যিনি নিজে ঈশ্বরত্বের সহভাগী হতে অনুগ্রহ করে আমাদের দুর্বলতার সহভাগী হলেন, ও আমাদের পথ দেখাবার জন্য ও নিজেই পথ হবার জন্য এলেন, বিনম্রতার সেই সদ্গুরু আমাদের কাছে তাঁর নিজের বিনম্রতার আদর্শই বিশেষভাবে উপস্থাপন করা সমীচীন মনে করলেন; এজন্য তিনি দাসেরই হাতে বাপ্তিস্ম নিতে লজ্জাবোধ করেননি, আমরা যেন নিজেদের পাপ স্বীকার করতে, বলিষ্ঠ হবার জন্য নিজেদের নত করতে, ও প্রেরিতদূতের এবাণী আপন করতে শিখি, যখন আমি দুর্বল, তখনই বলিষ্ঠ (২ করি ১২:১০)। কিন্তু যারা নিজেদের কর্মফলেই নিজেদের ধার্মিক মনে ক’রে বলিষ্ঠ বলে দাবি করল ও নিজেদের আদর্শবান গণ্য করল, তারা, যে পাথর পতন ঘটায় সেই পাথরে পা দিয়ে হোঁচট খেল: তারা দিব্য মেষশাবককে সাধারণ ছাগ মনে করল, আর ছাগ বলেই তাকে হত্যা করল, ফলে দিব্য মেষশাবক দ্বারা মুক্তি পাবার অযোগ্য হল। তারা সেই বলিষ্ঠ, যারা নিজেদের ধর্মনিষ্ঠা রক্ষা করার জন্য খ্রিষ্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল।
যখন যেরুশালেমের কয়েকটা লোক খ্রিষ্টকে গ্রেপ্তার করতে প্রেরিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সাহস করেনি, একটু শোন, যারা তাদের পাঠিয়েছিল তারা তখন কী বলল: তোমরা তাকে আননি কেন? তারা উত্তর দিল, উনি যেভাবে কথা বলেন, কোনও মানুষ কখনও সেভাবে কথা বলেনি। তাতে ফরিসিরা তাদের বললেন, তোমাদেরও ভ্রষ্ট করা হয়েছে নাকি? সমাজনেতাদের মধ্যে কিংবা ফরিসিদের মধ্যে কেউ কি তাঁকে বিশ্বাস করেছেন? সেই সাধারণ লোকেরা কিন্তু, যারা বিধান জানে না, তারা তো অভিশপ্ত (যোহন ৭:৪৫-৪৯)। তারা এমন পীড়িত লোকদের ভিড়ের মাথায় দাঁড়িয়েছিল যারা চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিল; নিজেদের বলিষ্ঠ মনে করছিল, একারণ ছাড়া কোন্ কারণেই বা তাই করছিল? এমনকি, গুরুতর বিষয়—তাদের নিজেদের বলে তারা সেই ভিড় এমন পর্যায়ে নিজেদের সঙ্গে টেনে নিল যে সকলের চিকিৎসককে হত্যা করল। কিন্তু নিহত হলেন বিধায়ই তিনি সকল পীড়িতের জন্য নিজ রক্ত ঔষধ বলে দান করতে পারলেন।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৮
ধুয়ো: প্রভুই আমার শৈল, আমার গিরিদুর্গ,
তিনিই আমার ঈশ্বর, আমার ত্রাণশক্তি, আমার মুক্তিদাতা।
আমি তোমাকে ভালবাসি, প্রভু, আমার বল!
প্রভুই আমার শৈল, আমার গিরিদুর্গ, আমার মুক্তিদাতা,
আমি প্রশংসনীয় সেই প্রভুকে ডাকি,
আমার শত্রুদের হাত থেকে পাবই পরিত্রাণ। [ধুয়ো]
মৃত্যুর বাঁধন জড়িয়ে ধরেছিল আমায়,
ধ্বংসের খরস্রোত আতঙ্কিত করেছিল আমায়;
পাতালের বাঁধন আমায় ঘিরে ফেলেছিল,
সম্মুখীন ছিল মৃত্যুর ফাঁদ। [ধুয়ো]
সেই সঙ্কটে আমি প্রভুকে ডাকলাম,
আমার পরমেশ্বরের কাছে চিৎকার করলাম;
তাঁর মন্দির থেকে তিনি শুনলেন আমার কণ্ঠ,
আমার সেই চিৎকার তাঁর কানে গেল। [ধুয়ো]
প্রভু আমার ধর্মময়তা অনুযায়ী আমাকে প্রতিদান দেন,
আমার হাতের শুচিতা অনুযায়ী আমাকে পুরস্কৃত করেন;
কারণ আমি পালন করেছি প্রভুর পথসকল,
আমার পরমেশ্বরকে ত্যাগ করেছি, তেমন কুকর্ম করিনি। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার এ সাক্রামেন্তের নিরাময়কারী শক্তির গুণে
আমরা যেন সমস্ত অনিষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে
দৃঢ় পদক্ষেপে মঙ্গল পথে এগিয়ে চলতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১১শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, তুমিই তোমার শরণাগতদের শক্তি!
প্রসন্ন হয়ে আমাদের মিনতিতে সাড়া দাও:
যেহেতু তোমার সহায়তা ছাড়া দুর্বল মানুষ সম্পূর্ণরূপে অক্ষম,
সেজন্য আমাদের সর্বদাই মঞ্জুর কর তোমার অনুগ্রহের সহায়তা,
যাতে তোমার আজ্ঞাবলি পালন ক’রে
আমরা চিন্তায় কর্মে তোমার গ্রহণযোগ্য হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
যাত্রাপুস্তক থেকে পাঠ (১৯:২-৬ক)
সেসময়ে ইস্রায়েলীয়রা রেফিদিম থেকে শিবির তুলে সিনাই মরুপ্রান্তরে এসে পৌঁছলে সেই মরুপ্রান্তরে শিবির বসাল; ইস্রায়েল পর্বতের ঠিক সামনেই শিবির বসাল।
তখন মোশি পরমেশ্বরের কাছে উঠে গেলেন, আর প্রভু পর্বত থেকে তাঁকে ডেকে বললেন, ‘তুমি যাকোবকুলকে একথা বলবে, ইস্রায়েল সন্তানদের কাছে একথা ঘোষণা করবে: আমি মিশরীয়দের প্রতি যা করেছি, তা তোমরা নিজেরাই দেখেছ; এও দেখেছ, কীভাবে আমি ঈগলের ডানায়ই তোমাদের বহন করে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। এখন, তোমরা যদি আমার প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্য হয়ে আমার সন্ধি পালন কর, তবে সকল জাতির মধ্যে তোমরাই হবে আমার নিজস্ব অধিকার, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার! আর আমার কাছে তোমরা হবে এক যাজকীয় রাজ্য, এক পবিত্র জনগণ।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ১০০
ধুয়ো: আমরা তাঁর জনগণ,
তাঁর চারণভূমির মেষপাল।
সমগ্র পৃথিবী,
প্রভুর উদ্দেশে জাগিয়ে তোল জয়ধ্বনি,
সানন্দে প্রভুর সেবা কর,
তাঁর সম্মুখে এসো হর্ষধ্বনির ছন্দে। [ধুয়ো]
জেনে রেখ—প্রভুই স্বয়ং পরমেশ্বর,
তিনি আমাদের গড়লেন আর আমরা তাঁরই,
আমরা তাঁর জনগণ,
তাঁর চারণভূমির মেষপাল। [ধুয়ো]
প্রভু সত্যি মঙ্গলময়,
তাঁর কৃপা চিরস্থায়ী,
তাঁর বিশ্বস্ততা
যুগে যুগান্তরে। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৫:৬-১১)
প্রিয়জনেরা, আমরা যখন শক্তিহীন ছিলাম, তখনই খ্রিষ্ট উপযুক্ত সময়ে ভক্তিহীনদের জন্য মরলেন।
বস্তুত ধার্মিকের জন্য প্রায় কেউই মরতে সম্মত নয়, হয় তো এমন কেউ থাকতে পারে, যে সৎমানুষের জন্যই মরতে সাহস করে। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা প্রমাণ করছেন, কেননা আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনই খ্রিষ্ট আমাদের জন্য মরলেন।
সুতরাং এখন তাঁর রক্তে আমাদের যখন ধর্মময় বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে, তখন ঐশক্রোধ থেকে যে আমরা তাঁরই দ্বারা পরিত্রাণ পাব, তা আরও কতই না সুনিশ্চিত। কেননা আমরা যখন শত্রু ছিলাম, তখন যদি তাঁর পুত্রের মৃত্যু দ্বারা ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলিত হলাম, তবে পুনর্মিলিত হয়ে আমরা যে তাঁর জীবনের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণ পাব, তা আরও কতই না সুনিশ্চিত! শুধু তাই নয়: যাঁর দ্বারা পুনর্মিলন পেয়ে গেছি, আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের মাধ্যমে আমরা এখন ঈশ্বরে গর্ববোধও করে থাকি।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে:
মনপরিবর্তন কর, সুসমাচারে বিশ্বাস কর।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (৯:৩৬–১০:৮)
একদিন, বহু লোকের ভিড় দেখে যিশু তাদের প্রতি দয়ায় বিগলিত হলেন, কেননা তারা ব্যাকুল ও পরিশ্রান্ত ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপালেরই মত। তখন তিনি নিজের শিষ্যদের বললেন, ‘ফসল প্রচুর বটে, কিন্তু কর্মী অল্প; তাই ফসলের প্রভুর কাছে মিনতি জানাও, তিনি যেন নিজ শস্যখেতে কর্মী পাঠান।’
তাঁর সেই বারোজন শিষ্যকে কাছে ডেকে তাঁদের তিনি অশুচি আত্মাদের তাড়িয়ে দেওয়া ও সব ধরনের রোগ ও সব ধরনের ব্যাধি নিরাময় করার অধিকার দিলেন।
সেই বারোজন প্রেরিতদূতের নাম এই: প্রথম, শিমোন যাঁকে পিতর বলা হয়, ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয়, জেবেদের ছেলে যাকোব ও তাঁর ভাই যোহন; ফিলিপ ও বার্থলমেয়; থোমাস ও কর-আদায়কারী মথি; আল্ফেয়ের ছেলে যাকোব ও থাদেয়; উগ্রধর্মা শিমোন ও সেই যুদা ইস্কারিয়োৎ, যিনি তাঁর বিশ্বাসঘাতক হয়েছিলেন।
এই বারোজনকে যিশু প্রেরণ করলেন, আর তাঁদের এই নির্দেশ দিলেন: ‘তোমরা বিজাতীয়দের এলাকায় যেয়ো না, সামারীয়দের কোন শহরেও প্রবেশ করো না; বরং ইস্রায়েলকুলের হারানো মেষগুলোর কাছে যাও। পথে যেতে যেতে তোমরা একথা প্রচার কর, স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে। পীড়িতদের নিরাময় কর, মৃতদের পুনরুত্থিত কর, সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত মানুষকে শুচীকৃত কর, অপদূত তাড়াও; তোমরা বিনামূল্যে পেয়েছ, বিনামূল্যেই দান কর।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
যোহন-রচিত সুসমাচারে বিশপ সাধু আগস্তিনের ব্যাখ্যা
খ্রিষ্ট আপন কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন, ও কর্মীদের প্রেরণ করতে উদ্যত হচ্ছিলেন। তাই তিনি কর্মীদের প্রেরণ করতে যাচ্ছিলেন। বাস্তবিকই এক্ষেত্রে প্রবাদটা যথার্থ হয়ে ওঠে, একজন বোনে, আর একজন কাটে, যেন ফসলকাটিয়ে ও বীজবুনিয়ে দু’জনে একসঙ্গেই আনন্দ পায়। আমি তোমাদের এমন ফসল কাটতে প্রেরণ করলাম, যার জন্য তোমরা শ্রম করনি; অন্যেরা শ্রম করেছে, আর তোমরা তাদের শ্রমের ফল ভোগ করতে এসেছ (যোহন ৪:৩৭, ৩৬, ৩৮)। তাই কি, তিনি ফসলকাটিয়েদের প্রেরণ করলেন কিন্তু বীজবুনিয়েদের প্রেরণ করেননি? আর সেই ফসলকাটিয়েদের তিনি কোথায় প্রেরণ করলেন? সেখানেই তাঁদের প্রেরণ করলেন যেখানে অপরে পরিশ্রম করেছিলেন। যেখানে পরিশ্রম করা হয়েছিল, সেখানে বীজ বোনা হয়েছিল; আর যেখানে বীজ বোনা হয়েছিল, সেখানে ফসল পরিপক্ব হয়ে গেছিল, ফসল কাস্তে ও মাড়াইযন্ত্রের অপেক্ষায় ছিল।
তাই কোথায় সেই ফসলকাটিয়েদের প্রেরণ করতে হবে? সেখানেই যেখানে নবীরা প্রচার করেছিলেন, কেননা তাঁরাই বীজবুনিয়ে: অপরে শ্রম করেছে, আর তোমরা তাদের শ্রমের ফল ভোগ করতে এসেছ (যোহন ৪:৩৮)। কে কে পরিশ্রম করেছিলেন? স্বয়ং আব্রাহাম, ইসহাক ও যাকোব।
তাঁদের পরিশ্রমের কথা ভেবে দেখ: তাঁদের সমস্ত পরিশ্রমে খ্রিষ্টের একটা ভাববাণী উপস্থিত, সুতরাং তাঁরাই সেই বীজবুনিয়ে। তেমন প্রতিকূল অবস্থায় বীজ বুনতে বুনতে মোশি ও অন্যান্য কুলপতি ও সকল নবী কত কিছুই না সহ্য করলেন! এজন্যই তো এসময়ে যুদেয়ায় ফসল প্রস্তুত ছিল; এমনকি, যখন এত হাজার হাজার লোক নিজ ধনসম্পত্তি বিক্রি করে টাকাটা প্রেরিতদূতদের পায়ে রেখে যিশুর অনুসরণ করছিল, তখন এর মানে হল যে ফসলটা পরিপক্বও ছিল।
এরপর কী ঘটল? সেই এক ফসলের কিছুটা দানা ছড়িয়ে দেওয়া হল, তাতে সমগ্র বিশ্ব বীজ গ্রহণ করল: এখনও অন্য ফসল গজিয়ে উঠছে, যা অন্তিমকালে কাটার কথা। এ ফসল সম্বন্ধে বলা হয়, যে অশ্রুর মধ্যে বীজ বোনে, সানন্দে চিৎকার করতে করতেই সে ফসল সংগ্রহ করবে (সাম ১২৬:৫), আর এ ফসল কাটতে প্রেরিতদূতদের নয় স্বর্গদূতদের প্রেরণ করা হবে, কারণ তিনি নিজে বললেন, স্বর্গদূতেরাই ফসলকাটিয়ে (মথি ১৩:১৯)। এ ফসল শ্যামাগাছের মধ্যে গজিয়ে উঠছে, ও অন্তিমকালের শোধনের প্রতীক্ষায় রয়েছে। কিন্তু যে শস্যখেতে শিষ্যেরা প্রেরিত হয়েছিলেন, তার ফসল পরিপক্বই ছিল, কারণ সেখানে নবীরাই পরিশ্রম করেছিলেন। তথাপি, ভ্রাতৃগণ, যা বলা হয়েছে তা লক্ষ কর: যেন ফসলকাটিয়ে ও বীজবুনিয়ে দু’জনে একসঙ্গেই আনন্দ পায় (যোহন ৪:৩৬)। নানা সময় নানা কর্মী পরিশ্রম করলেন, কিন্তু সবাই একই আনন্দ ভোগ করবেন, কারণ একসঙ্গেই অনন্ত জীবনের পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ২৭
ধুয়ো: প্রভুর কাছে আমার শুধু এই যাচনা, এইটুকু মাত্র অন্বেষণ করি:
আমি প্রভুর গৃহে বাস করতে চাই আমার জীবনের সমস্ত দিন।
তিনি তো অশুভ দিনে
আপন কুটিরে লুকিয়ে রাখবেন আমায়,
আপন তাঁবু-নিভৃতে আমায় গোপন করে রাখবেন,
শৈলশিখরে আমায় তুলে আনবেন। [ধুয়ো]
তখন যত শত্রু ঘিরে ফেলেছে আমায়,
তাদের উপর আমার মাথা উঁচু করব;
জয়ধ্বনি তুলে তাঁর তাঁবুতে আমি বলি উৎসর্গ করব,
বাদ্যের ঝঙ্কারে প্রভুর উদ্দেশে গাইব গান। [ধুয়ো]
শোন, প্রভু, আমার কণ্ঠ—ডাকছি তো আমি:
আমাকে দয়া কর, আমাকে সাড়া দাও।
তোমার বিষয়ে আমার অন্তর বলে: ‘তাঁর শ্রীমুখ অন্বেষণ কর তোমরা,’
আমি তোমার শ্রীমুখ অন্বেষণ করি, প্রভু। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার এ পবিত্র সাক্রামেন্ত গ্রহণে যেমন তোমাতেই ভক্তদের মিলন পূর্বনির্দেশিত, তেমনি তোমার মণ্ডলীতেও যেন একতা গভীরতর হয়ে ওঠে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১২শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, যাদের তুমি তোমার ভালবাসায় দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত কর,
তুমি তো তাদের কখনও তোমার পরিচালনা থেকে বঞ্চিত কর না।
তাই মিনতি জানাই: তোমার আশীর্বাদে আমরা যেন নিয়তই
তোমার পবিত্র নাম শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী যেরেমিয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (২০:১০-১৩)
আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আমার বিষয়ে অনেকের কানাকানি:
‘চারদিকে সন্ত্রাস!
ওর নামে অভিযোগ আন; আমরাও ওর নামে অভিযোগ আনব।’
আমার সকল বন্ধু আমার পতনের অপেক্ষায় ওত পেতে ছিল:
‘কি জানি, ও নিজেকে ভোলাতে দেবে,
তবে আমরা বিজয়ী হব, আমাদের প্রতিশোধ নিতে পারব!’
কিন্তু প্রভু বীরযোদ্ধার মত আমার পাশে পাশে থাকেন,
তাই আমার নির্যাতকেরা হোঁচট খাবে, জয়ী হতে পারবে না;
অক্ষম হওয়ার ফলে ভীষণ লজ্জায় পড়বে,
ওদের অপমান হবে চিরন্তন, কেউই তা মুছতে পারবে না।
হে সেনাবাহিনীর প্রভু, তুমি তো ধার্মিককে যাচাই করে থাক,
তুমি তো মানুষের অন্তর ও প্রাণ পরীক্ষা করে থাক;
আমি যেন দেখতে পাই তাদের উপর তোমার প্রতিশোধ!
কারণ আমি তোমারই হাতে তুলে দিয়েছি আমার পক্ষ সমর্থনের ভার।
প্রভুর উদ্দেশে গান গাও, কর প্রভুর প্রশংসাগান,
কারণ তিনি অপকর্মাদের হাত থেকে
উদ্ধার করেছেন নিঃস্বের প্রাণ।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৩৯
ধুয়ো: তোমার মহাকৃপায়, প্রভু,
আমাকে সাড়া দাও।
তোমার জন্যই আমি অপবাদ সহ্য করছি,
লজ্জায় ঢেকে যায় আমার মুখ।
আমার আপন ভাইদের কাছে আমি আজ বিদেশী যেন,
আমার সহোদরদের কাছে অপরিচিত লোকের মত। [ধুয়ো]
কারণ তোমার গৃহের জন্য
আগ্রহ গ্রাস করছে আমায়,
আমার উপরেই পড়ছে
তোমার অপমানকারীদের অপবাদ। [ধুয়ো]
আমি কিন্তু তোমার কাছে, প্রভু,
প্রসন্নতার সময়ে প্রার্থনা করি;
তোমার মহাকৃপায়, পরমেশ্বর,
তোমার পরিত্রাণের বিশ্বস্ততায় আমাকে সাড়া দাও। [ধুয়ো]
আমাকে সাড়া দাও, প্রভু, তোমার কৃপা যে মঙ্গলময়!
তোমার অপার স্নেহের দোহাই আমার দিকে ফিরে চাও।
তা দেখে বিনম্ররা আনন্দিত হোক,
ঈশ্বর-অন্বেষী সকল! তোমাদের হৃদয় উজ্জীবিত হোক; [ধুয়ো]
কারণ প্রভু নিঃস্বকে শোনেন,
বন্দিদশায় পতিত তাঁর আপনজনদের তিনি অবজ্ঞা করেন না।
আকাশ ও পৃথিবী তাঁর প্রশংসা করুক,
করুক যত সাগর ও সাগর-গর্ভে যত জলচর প্রাণী। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৫:১২-১৫)
প্রিয়জনেরা, যেমন একজনের মধ্য দিয়ে পাপ, ও পাপের মধ্য দিয়ে মৃত্যু জগতে প্রবেশ করল, তেমনি মৃত্যু সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যেহেতু সকলেই পাপ করেছে।
বাস্তবিকই বিধানের আগেও পাপ জগতে উপস্থিত ছিল; এবং বিধান না থাকলে যদিও পাপ গণ্য করা না যায়, কিন্তু তবুও আদম থেকে মোশি পর্যন্ত মৃত্যু রাজত্ব করল, এমনকি তাদের উপরেও রাজত্ব করল যারা আদমের আজ্ঞা-লঙ্ঘনের মত কোন পাপ করেনি; আদম তাঁরই পূর্বচ্ছবি, যাঁর আসার কথা ছিল।
কিন্তু অপরাধ, অনুগ্রহদানও তেমন—এমন তুলনা চলেই না! কেননা সেই একজনের অপরাধের ফলে যখন বহুজন মৃত্যু ভোগ করল, তখন ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং সেই একজনমাত্র মানুষের—যিশুখ্রিষ্টেরই—অনুগ্রহে দেওয়া দান বহুজনেরই প্রতি আরও বেশি উপচে পড়ল।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
সেই সত্যময় আত্মা আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন—একথা বলছেন প্রভু;
আর তোমরাও আমার সাক্ষী হবে।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১০:২৬-৩৩)
একদিন যিশু তাঁর প্রেরিতদূতদের বললেন, ‘তোমরা মানুষকে ভয় পেয়ো না, কেননা ঢাকা এমন কিছুই নেই যা প্রকাশ পাবে না, ও গুপ্ত এমন কিছুই নেই যা জানা যাবে না। আমি অন্ধকারে তোমাদের যা বলি, তা তোমরা আলোতে বল, আর কানে কানে যা শোন, তা ছাদের উপরে প্রচার কর।
যারা দেহ মেরে ফেলে কিন্তু প্রাণকে মেরে ফেলতে পারে না, তাদের ভয় করো না, তাঁকেই বরং ভয় কর, যিনি প্রাণ ও দেহ দুই-ই জাহান্নামে বিনাশ করতে পারেন।
এক জোড়া চড়ুই পাখি কি এক টাকায় বিক্রি হয় না? অথচ তোমাদের পিতার অনুমতি ছাড়া তাদের একটাও মাটিতে পড়ে না। তোমাদের মাথার চুলেরও একটা হিসাব রাখা আছে; সুতরাং ভয় করো না, তোমরা অনেক চড়ুই পাখির চেয়ে অধিক মূল্যবান।
তাই যে কেউ মানুষের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আমার স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাকে স্বীকার করব; কিন্তু যে কেউ মানুষের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আমার স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাকে অস্বীকার করব।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আথানাসিউস-লিখিত ‘বাণীর মাংসধারণ’
যখন ক্রুশের জয়ধ্বজা ও খ্রিষ্টবিশ্বাস দ্বারা মৃত্যু ভূপাতিত হয়, তখন অধিক নিশ্চয়তার সঙ্গে স্পষ্ট দাঁড়ায় যে স্বয়ং খ্রিষ্ট ছাড়া এমন কেউ নেই যে মৃত্যুর উপরে গৌরবময় বিজয় লাভ করল ও তাকে শক্তিহীন করে ফেলল। আর যখন মৃত্যু আগে শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ের বস্তু ছিল কিন্তু ত্রাণকর্তার আগমনের পরে ও তাঁর দেহের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পরে অবজ্ঞার পাত্র হয়ে গেছে, তখন একথা সুস্পষ্ট যে, খ্রিষ্ট ক্রুশে আরোহণ করায়ই মৃত্যু ধ্বংসিত ও পরাভূত হয়েছে। কেননা যেমন রাতের পরে সূর্য আবির্ভূত হলে পৃথিবীর সকল প্রান্ত তার আলোতে আলোকিত হওয়ায় কোন সন্দেহ থাকতে পারে না যে, যে সূর্য নিজের আলো সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে, তা সেই একই সূর্য যা অন্ধকার দূর করে দিল ও সবকিছু আলোকিত করল, তেমনি যখন দেহে ত্রাণকর্তার পরিত্রাণদায়ী আবির্ভাব ও ক্রুশে তাঁর মৃত্যুর পরেই মৃত্যু অবজ্ঞার বস্তু হল ও ভূপাতিত হল, তখন একথা স্পষ্ট যে, তিনিই সেই একই ত্রাণকর্তা যিনি দেহে আবির্ভূত হয়েছিলেন, মৃত্যু ধ্বংস করলেন ও আপন শিষ্যদের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর উপর নতুন নতুন বিজয় দিনে দিনে দেখিয়ে থাকেন।
কেননা যখন দেখা যায়, স্বভাবে দুর্বল মানুষ মৃত্যুর অবক্ষয়ে ভীত না হয়ে মৃত্যুর দিকে দৌড় দেয়, ও পাতালে নামতে ভয় না করে তৎপর অন্তরে পাতাল তুচ্ছই করে ও তার যন্ত্রণার চিন্তায়ও অটল থাকে, কিন্তু এ বর্তমান জীবনের চেয়ে খ্রিষ্টের খাতিরে মৃত্যুরই আকাঙ্ক্ষা করে; আবার, যখন দেখা যায়, খ্রিষ্টভক্তির খাতিরে নর-নারী ও বালকও মৃত্যুর দিকে স্বচ্ছন্দেই ধাবিত, তখন তত নির্বোধ বা অবিশ্বাসী এমন কেইবা থাকতে পারে, কিংবা মনে তত অন্ধ এমন কেইবা না বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারে যে, মানুষ যাঁর সাক্ষ্য বহন করছে, সেই খ্রিষ্টই প্রত্যেককে মৃত্যুর উপর বিজয় দান ও মঞ্জুর করেন, ও যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাসী ও ক্রুশচিহ্ন পরিধান করে, তাদের মধ্যে তিনিই মৃত্যুকে শক্তিহীন করে ফেলেন!
তবে মৃত্যু ধ্বংসিত, ও তার উপরে প্রভুর ক্রুশই জয়ধ্বজা রূপে স্থাপিত—এবিষয় উপরের কথা দ্বারা যথেষ্ট প্রমাণিত। আবার, একটা মরদেহের অমর পুনরুত্থান যে সার্বজনীন ত্রাণকর্তা সেই সত্যকার জীবন খ্রিষ্ট দ্বারাই সাধিত হয়েছে, যাদের মনশ্চক্ষু সুস্থ, তাদের কাছে একথা বাহ্যিক যুক্তির চেয়ে এই সমস্ত ঘটনা দ্বারাই স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। কারণ যখন মৃত্যু ধ্বংসিত হয়েছে—একথা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে—ও খ্রিষ্টের মধ্য দিয়ে সকলেই মৃত্যুকে পদদলিত করতে পারে, তখন অধিক যুক্তিসঙ্গত কথা যে তিনিই প্রথম আপন দেহে মৃত্যু মাড়িয়ে দিলেন ও ধ্বংস করলেন। আর যখন মৃত্যু তাঁর দ্বারা নিহত হয়েছে, তখন দেহ যে পুনরুত্থান করবে ও মৃত্যুর উপরে জয়ধ্বজারূপে প্রতীয়মান হবে, এছাড়া আর কীবা হতে পারত? প্রভুর দেহ যদি পুনরুত্থান না করত, তাহলে কেমন করে দেখা যেতে পারত যে এবার মৃত্যু ধ্বংসিত?
তবু তাঁর পুনরুত্থান বিষয়ে এই প্রমাণ যদি কার পক্ষে যথেষ্ট নয়, তাহলে চোখে যা দেখা যেতে পারে, সে কমপক্ষে তার সাহায্যেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করুক। কেননা যে কেউ মৃত, সে আর কিছুই করতে পারে না, আর তার স্মৃতি সেইপর্যন্ত মাত্র জীবিত থাকে, যেপর্যন্ত তাকে সমাধিতে নেওয়া হয়; তারপর স্মৃতিও নিঃশেষ হয়। যারা জীবিত, তারাই মাত্র কাজ সাধন করতে পারে ও অন্য মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই যে কেউ ইচ্ছা করে, সে দেখুক; আর যা দেখেছে সে নিজেই তা বিচার ক’রে তা থেকে সত্য স্বীকার করুক: ত্রাণকর্তা যখন লোকদের মাঝে তত কাজ সাধন করে থাকেন, ও প্রতিদিন সর্বস্থানে তিনি নীরবে গ্রীক ও বর্বরদের বিরাট জনতাকে বিশ্বাসের দিকে আকর্ষণ করে থাকেন, আর সকলে তাঁর ধর্মশিক্ষা মেনে নেয়, তখন ত্রাণকর্তার পুনরুত্থান যে সত্যিই ঘটেছে ও খ্রিষ্ট যে জীবিত, এমনকি তিনি যে স্বয়ং জীবন, এবিষয় সন্দেহ করার মত আর কেউ কি থাকবে?
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৪৫
ধুয়ো: সকলের চোখ তোমার দিকে চেয়ে থাকে, প্রভু,
যথাসময়ই তুমি তাদের খাদ্য দান কর।
প্রভু সকল বাণীতে বিশ্বাসযোগ্য,
সকল কাজে কৃপাময়।
যারা পতনোন্মুখ, প্রভু তাদের সকলকে ধরে রাখেন,
যারা অবনত, তিনি তাদের সকলকে টেনে তোলেন। [ধুয়ো]
সকলের চোখ তোমার দিকে চেয়ে থাকে,
যথাসময়ই তুমি তাদের খাদ্য দান কর।
তুমি যেই খোল হাত,
যত জীবের বাসনা পূর্ণ কর। [ধুয়ো]
প্রভু সকল পথে ধর্মময়,
সকল কাজে কৃপাময়।
যারা তাঁকে ডাকে, অন্তর দিয়েই তাঁকে ডাকে,
প্রভু তাদের সকলের কাছে কাছেই থাকেন। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার পুত্রের অমূল্য দেহরক্ত গুণে নবায়িত হয়ে
আমরা তোমার দয়া প্রার্থনা করি: দৈনন্দিন যা ভক্তিভরে উদ্যাপন করি,
তা যেন আমাদের মুক্তিলাভের নিশ্চিত চিহ্ন হয়ে উঠে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১৩শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, দত্তকপুত্রত্বের অনুগ্রহ গুণে
তুমি আমাদের করে তুলেছ আলোর সন্তান। অনুনয় করি:
তোমার আশীর্বাদে ভুলভ্রান্তির তমসায় জড়িত না হয়ে আমরা বরং
যেন তোমার সত্যের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে জীবনযাপন করতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
রাজাবলির দ্বিতীয় পুস্তক থেকে পাঠ (৪:৮-১১,১৪-১৬ক)
একদিন এলিশেয় শুনেমের দিকে যাচ্ছিলেন; সেখানে সম্ভ্রান্ত ঘরের একটি মহিলা থাকতেন। তিনি পীড়াপীড়ি করে এলিশেয়কে তাঁর কাছে খাওয়া-দাওয়া করতে নিমন্ত্রণ করলেন। পরেও তিনি যতবার সেই পথ দিয়ে যেতেন, ততবার খাওয়া-দাওয়ার জন্য সেই বাড়িতে থাকতেন।
সেই মহিলা স্বামীকে বললেন, ‘দেখ, আমি নিশ্চিত আছি, ওই যে লোক আমাদের এখানে প্রায়ই আসেন, উনি পরমেশ্বরের একজন পবিত্র মানুষ। এসো, তাঁর জন্য আমরা ছাদে দেওয়াল গেঁথে ছোট একটা থাকার ঘর তৈরি করি; সেই ঘরে একটা বিছানা, একটা টেবিল, একটা বসার আসন ও একটা বাতিও রাখি; তাহলে উনি যখন আমাদের এখানে আসবেন, তখন সেখানে থাকতে পারবেন।’
একদিন এলিশেয় সেখানে এসে ছাদের সেই নিরিবিলি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। এলিশেয় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাঁর জন্য আমরা কী করতে পারি?’ গেহজি উত্তর দিল, ‘আচ্ছা, উনি নিঃসন্তান, আর স্বামীর বেশ বয়স হয়েছে।’ এলিশেয় বললেন, ‘তাঁকে ডেকে আন।’ সে তাঁকে ডাকলে তিনি দরজায় এসে দাঁড়ালেন। এলিশেয় বললেন, ‘আগামী বছর ঠিক এই সময়ে আপনি নিজের ছেলেকে কোলে করে থাকবেন।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৮৯
ধুয়ো: আমি প্রভুর কৃপাধারার কথা
গাইব চিরকাল।
আমি প্রভুর কৃপাধারার কথা গাইব চিরকাল,
নিজ মুখেই তোমার বিশ্বস্ততার কথা প্রচার করব যুগে যুগান্তরে;
হ্যাঁ, আমি বলেছি, ‘তোমার কৃপা চিরস্থায়ী,
তোমার বিশ্বস্ততা স্বর্গে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত।’ [ধুয়ো]
সুখী সেই জাতি, যে তোমার জয়ধ্বনি জানে,
যে তোমার শ্রীমুখের আলোতে চলে, প্রভু।
তোমার নামেই তারা আনন্দে মেতে থাকে সারাদিন ধরে,
তোমার ধর্মময়তায় উন্নীত হয়। [ধুয়ো]
তুমিই তো আমাদের শক্তির কান্তি,
তোমার প্রসন্নতায় তুমি আমাদের শক্তি উন্নীত কর।
কারণ আমাদের ঢাল, তা তো প্রভুরই,
আমাদের রাজা, তিনিও তো ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৬:৩-৪,৮-১১)
প্রিয়জনেরা, আমরা যারা খ্রিষ্টযিশুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছি, সকলে তাঁর মৃত্যুর উদ্দেশেই বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছি।
সুতরাং মৃত্যুর উদ্দেশে সাধিত বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমরা তাঁর সঙ্গে সমাহিত হয়েছি, মৃতদের মধ্য থেকে খ্রিষ্টকে যেমন পিতার গৌরব দ্বারা পুনরুত্থিত করা হয়েছে, তেমনি আমরাও যেন জীবনের নবীনতায় চলতে পারি।
কিন্তু খ্রিষ্টের সঙ্গে আমাদের যখন মৃত্যু হয়েছে, তখন আমরা বিশ্বাস করি যে তাঁর সঙ্গে জীবিতও থাকব। কারণ আমরা জানি, মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করেছেন বলে খ্রিষ্টের আর মৃত্যু নেই, তাঁর উপর মৃত্যুর আর কোন কর্তৃত্ব নেই। বস্তুত তিনি যে মৃত্যু ভোগ করেছেন, তাতে একবার চিরকালের মত পাপেরই কাছে মরলেন; কিন্তু যে জীবন ভোগ করছেন, তাতে তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশেই জীবিত আছেন। একই প্রকারে, নিজেদের সম্বন্ধে সচেতন হও যে, তোমরাও পাপের কাছে মৃত, কিন্তু খ্রিষ্টযিশুতে ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিত।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
তোমরা এক মনোনীত বংশ,
এক রাজকীয় যাজক-সমাজ, এক পবিত্র জনগণ;
তাঁরই গুণকীর্তন কর যিনি অন্ধকার থেকে
তাঁর অপরূপ আলোতে তোমাদের আহ্বান করেছেন।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১০:৩৭-৪২)
একদিন যিশু তাঁর আপন প্রেরিতদূতদের বললেন, ‘যে কেউ নিজের পিতা বা মাতাকে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসে, সে আমার যোগ্য নয়; যে কেউ ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসে, সে আমার যোগ্য নয়; যে কেউ নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার পদক্ষেপে আমাকে অনুসরণ না করে, সে আমার যোগ্য নয়।
যে কেউ নিজের প্রাণ খুঁজে পায়, সে তা হারাবে, আর যে কেউ আমার জন্য নিজের প্রাণ হারায়, সে তা খুঁজে পাবে।
তোমাদের যে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর আমাকে যে গ্রহণ করে, সে তাঁকেই গ্রহণ করে, আমাকে যিনি প্রেরণ করেছেন।
নবীকে নবী বলে যে গ্রহণ করে, সে নবীরই যোগ্য মজুরি পাবে; আর ধার্মিককে ধার্মিক বলে যে গ্রহণ করে, সে ধার্মিকেরই যোগ্য মজুরি পাবে।
যে কেউ এই ক্ষুদ্রজনদের মধ্যে কোন একজনকে শিষ্য বলে কেবল এক ঘটি ঠাণ্ডা জলও খেতে দেয়, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সে কোনমতে নিজের মজুরি থেকে বঞ্চিত হবে না।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিনের উপদেশ
প্রভুর আজ্ঞা কঠিন ও ভারী মনে হয়: যে তাঁর অনুসরণ করতে চায়, তাকে আত্মত্যাগ করতে হয়। কিন্তু যিনি আদেশ পালন করতে সাহায্য করেন, তাঁর আজ্ঞা কঠিন ও ভারী হতে পারে না; আর তিনি যা বলেছেন, তা সত্য: আমার জোয়াল সুবহ ও আমার বোঝা লঘুভার (মথি ১১:৩০)। কেননা আজ্ঞাগুলিতে যা কিছু ভারী, ভালবাসা তা লঘুভার করে তোলে। আমরা তো জানি ভালবাসা যে কী সাধন করতে পারে! বারবার ভালবাসা নিন্দনীয় ও অবাধ্য; ভালবাসার বস্তু পাবার জন্য মানুষ কঠিন কতই না কিছু বহন করেছে, অযোগ্য ও অসহনীয় কতই না কিছু সহ্য করেছে! আর যেহেতু ভালবাসা যেরূপ মানুষও সেরূপ, সেজন্য বাহ্যিক জীবনাবস্থা নিয়ে তত চিন্তিত হতে নেই, বরং যা ভালবাসার যোগ্য তা বাছাই করায়ই সতর্ক হতে হয়। তাহলে খ্রিষ্টকে যে ভালবাসে ও তাঁর অনুসরণ করতে চায়, তাঁকে ভালবেসে যে আত্মত্যাগ করতে হয়, একথা কেনই বা তোমার আশ্চর্য লাগে? বস্তুতপক্ষে নিজেকে ভালবেসে মানুষ যখন নিজেকে হারায়, তখন আত্মত্যাগ ক’রে সে আবার নিজেকে খুঁজে পায়।
যাঁর মধ্যে পূর্ণ আনন্দ, পরম শান্তি ও সনাতন রক্ষা রয়েছে, কেইবা বা সেই খ্রিষ্টের অনুসরণ করতে অস্বীকার করবে? সেই আনন্দ, শান্তি ও রক্ষা পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করা ভালই বটে, কিন্তু পথের কথাই বিবেচনা করা দরকার। প্রভু যিশু যে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থান করার পরেই এ সমস্ত কথা বলেছেন, এমন নয়; তিনি তখনও যন্ত্রণাভোগ করেননি, বরং ক্রুশ, অসম্মান, অপমান, কশাঘাত, কাঁটার মুকুট, ঘা, দুর্নাম ও মৃত্যু বরণ করতে উদ্যত হচ্ছিলেন। পথটা খুবই কঠোর—তার সামনে তুমি তো অলস হয়ে পড়, প্রভুর অনুসরণ করতে অসম্মতি দেখাও।
তাঁর অনুসরণ কর! মানুষ যে পথ তৈরি করেছে, তা অগম্য; কিন্তু খ্রিষ্ট ধাপে ধাপে কষ্টের সঙ্গে সেই পথ চলে তা সহজগম্য করেছেন।
গৌরবের দিকে ছুটতে কে অস্বীকার করবে? মহিমা তো সকলেরই পছন্দ বটে, অথচ বিনম্রতাই তার প্রথম ধাপ। তুমি কেন তোমার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে পা উঁচু করছ? উপরে না গিয়ে তুমি বরং কি নিচে পড়ে যেতে চাও? প্রথম ধাপ থেকে শুরু কর—আগে থেকে তুমি উচ্চতর স্থানে উঠেছ! যাঁরা বলছিলেন, এমনটি করুন, যেন আপনার গৌরবে আমরা একজন আপনার ডান পাশে, আর একজন বাঁ পাশে আসন পেতে পারি (মার্ক ১০:৩৭), সেই দু’জন শিষ্য বিনম্রতার এই ধাপ পার হতে অসম্মত ছিলেন; উচ্চ আসনের অন্বেষণ করতে করতে তাঁরা ধাপটা দেখতে পাচ্ছিলেন না। প্রভু কিন্তু তাঁদের কাছে এ ধাপ দেখালেন: তিনি কী উত্তর দিলেন? আমি যে পাত্রে পান করি, তাতে কি তোমরা পান করতে পার? (মার্ক ১০:৩৮)। তোমরা যারা মর্যাদার শীর্ষস্থান অন্বেষণ করছ, তোমরা কি বিনম্রতার পাত্রে পান করতে পার? এজন্য তিনি নিজেকে অস্বীকার ক’রে সে আমার অনুসরণ করুক শুধু নয়, কিন্তু নিজ ক্রুশ তুলে নিয়েই সে আমার অনুসরণ করুক বলেছেন (মথি ১৬:২৪)।
নিজ ক্রুশ তুলে নেওয়া, এর অর্থ কী? সে সেই সবকিছু সহ্য করুক যা বিরক্তিকর—এভাবেই সে আমার অনুসরণ করবে! আমার আদর্শ ও আজ্ঞাগুলি পালন করতে করতে সে যখন আমার অনুসরণ করতে শুরু করবে, তখন সে দেখবে, বহু মানুষ—এমনকি খ্রিষ্টের অনুগামীদের মধ্যেও বহু মানুষ তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তাকে বাধা দেয়, তার মন পাল্টাতে চেষ্টা করে। যারা অন্ধদের চিৎকার করতে বারণ দিত, তারা তো খ্রিষ্টের সঙ্গেই পথ চলত! সুতরাং, তুমি যদি তাঁর অনুসরণ করতে ইচ্ছা কর, তাহলে হুমকি কি তোষামোদ কি যত বাধা ক্রুশ বলে বিবেচনা কর: ধৈর্য ধর, সহনশীল হও, ভেঙে পড়ো না। সাক্ষ্যমরেরা প্রভুর এ বাণী দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আমরা যদি নির্যাতিত, তাহলে খ্রিষ্টপ্রেমের খাতিরে কি সবকিছু তুচ্ছ করতে হবে না?
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১০৩
ধুয়ো: প্রাণ আমার, প্রভুকে বল ধন্য;
আমার অন্তরে যা কিছু আছে, ধন্য কর তাঁর পবিত্র নাম।
প্রাণ আমার, প্রভুকে বল ধন্য;
আমার অন্তরে যা কিছু আছে, ধন্য কর তাঁর পবিত্র নাম।
প্রাণ আমার, প্রভুকে বল ধন্য;
ভুলে যেয়ো না তাঁর সমস্ত উপকার: [ধুয়ো]
তিনিই তো তোমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করেন,
তোমার সমস্ত রোগ-ব্যাধি নিরাময় করেন,
গহ্বর থেকে মুক্ত করেন তোমার জীবন,
তোমাকে কৃপা ও স্নেহে করেন মুকুট-ভূষিত, [ধুয়ো]
তোমার আকাঙ্ক্ষা মঙ্গলদানে পরিতৃপ্ত করেন,
তাই তোমার যৌবন ঈগলের মত নবীন হয়ে ওঠে।
সকল অত্যাচারিতের প্রতি
ধর্মময়তা ও ন্যায়ই প্রভুর আচরণ। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আমরা যা অর্পণ ও গ্রহণও করেছি, সেই দিব্য সাক্রামেন্ত
আমাদের উজ্জীবিত করুক, যেন অচলা ভক্তিতে তোমার সঙ্গে মিলিত থেকে
আমরা এমন ফল দেখাতে পারি যা চিরস্থায়ী।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১৪শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার পুত্রের অবমাননার মধ্য দিয়ে
তুমি পতিত জগৎকে উন্নতশির করেছ।
তাই তোমার ভক্তজন সকলকে পবিত্র আনন্দ মঞ্জুর কর,
পাপের দাসত্ব থেকে যাদের তুমি উদ্ধার করেছ,
তারা যেন শাশ্বত সুখের অংশীদার হতে পারে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী জাখারিয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৯:৯-১০)
প্রভু একথা বলছেন:
সিয়োন কন্যা, মহা উল্লাসে মেতে ওঠ;
সানন্দে চিৎকার কর, যেরুশালেম কন্যা।
এই দেখ! তোমার রাজা তোমার কাছে আসছেন।
তিনি ধর্মময়, তিনি বিজয়ভূষিত।
তিনি বিনম্র, একটা গাধার পিঠে আসীন,
একটা বাচ্চা, গাধীর একটা বাচ্চারই পিঠে আসীন।
তিনি এফ্রাইম থেকে যত রথ,
ও যেরুশালেম থেকে যত রণ-অশ্ব বাতিল করে দেবেন,
রণ-ধনুকও বাতিল করা হবে;
তিনি সর্বদেশের কাছে বলবেন ‘শান্তি!’
তাঁর কর্তৃত্ব এক সাগর থেকে অন্য সাগরে,
মহানদী থেকে পৃথিবীর প্রান্তসীমায় ব্যাপ্ত হবে।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ১৪৫
ধুয়ো: ওগো আমার পরমেশ্বর, ওগো রাজন্,
ধন্য করব তোমার নাম চিরদিন চিরকাল।
ওগো আমার পরমেশ্বর, ওগো রাজন, আমি তোমার বন্দনা করব,
ধন্য করব তোমার নাম চিরদিন চিরকাল।
প্রতিদিন তোমাকে বলব ধন্য,
প্রশংসা করব তোমার নাম চিরদিন চিরকাল। [ধুয়ো]
প্রভু দয়াবান, স্নেহশীল,
ক্রোধে ধীর, কৃপায় মহান।
প্রভু সকলের প্রতি মঙ্গলময়,
তাঁর স্নেহ তাঁর সকল কাজে বিরাজিত। [ধুয়ো]
প্রভু, তোমার সকল কাজ করবে তোমার স্তুতি;
তোমার ভক্তরা তোমাকে বলবে ধন্য।
তারা বলে যাবে তোমার রাজ্যের গৌরব,
প্রচার করবে তোমার পরাক্রম। [ধুয়ো]
প্রভু সকল বাণীতে বিশ্বাসযোগ্য,
সকল কাজে কৃপাময়।
যারা পতনোন্মুখ, প্রভু তাদের সকলকে ধরে রাখেন,
যারা অবনত, তিনি তাদের সকলকে টেনে তোলেন। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:৯,১১-১৩)
প্রিয়জনেরা, তোমরা মাংসের অধীনে নয়, আত্মার অধীনেই রয়েছ, যেহেতু ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে নিজের আবাস করেছেন। কিন্তু খ্রিষ্টের আত্মা যার নেই, সে খ্রিষ্টের নয়। আর যিনি যিশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, তাঁর আত্মা যদি তোমাদের অন্তরে নিবাসী হয়ে থাকেন, তাহলে যিনি খ্রিষ্টযিশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, তিনি তোমাদের অন্তরে নিবাসী তাঁর সেই আত্মা দ্বারা তোমাদের মরদেহকেও সঞ্জীবিত করে তুলবেন।
সুতরাং ভাই, আমরা ঋণী বটে, কিন্তু মাংসের কাছে নয় যে, মাংসময় ভাবে জীবনযাপন করব; কারণ যদি তোমরা মাংসময় ভাবে জীবনযাপন কর, তবে নিশ্চয় তোমাদের মৃত্যু ঘটবে, কিন্তু যদি আত্মা গুণে দৈহিক আচরণের মৃত্যু ঘটাও, তবে জীবন পাবে।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
হে পিতা, হে স্বর্গমর্তের প্রভু,
আমি তোমাকে ধন্য বলি,
কারণ তুমি স্বর্গরাজ্যের রহস্যময় কথা
শিশুদেরই কাছে প্রকাশ করেছ।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১১:২৫-৩০)
একদিন যিশু বলে উঠলেন, ‘হে পিতা, হে স্বর্গমর্তের প্রভু, আমি তোমাকে ধন্য বলি, কারণ তুমি প্রজ্ঞাবান ও বুদ্ধিমানদের কাছে এই সকল বিষয় গুপ্ত রেখে শিশুদেরই কাছে তা প্রকাশ করেছ; হ্যাঁ, পিতা, তোমার প্রসন্নতায় তুমি তা-ই নিরূপণ করলে। পিতা আমার হাতে সবই তুলে দিয়েছেন, এবং পিতা ছাড়া আর কেউই পুত্রকে জানে না, পিতাকেও কেউ জানে না সেই পুত্র ছাড়া ও তারাই ছাড়া, যাদের কাছে পুত্র নিজেই তাঁকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন।
তোমরা, পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত যারা, সকলে আমার কাছে এসো, আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়াল কাঁধে তুলে নাও, ও আমার কাছ থেকে শিখে নাও, কারণ আমি কোমল ও নম্রহৃদয়; আর তোমরা নিজ নিজ প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাবে; হ্যাঁ, আমার জোয়াল সুবহ, ও আমার বোঝা লঘুভার।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
নূতন নিয়মের কতিপয় পদে বিশপ সাধু জন খ্রিসোস্তমের উপদেশ
এসো, শত্রুদের ভালবেসেই প্রভুর অনুকরণ করি: ক্রুশে ঝুলে তিনি যারা তাঁকে ক্রুশে দিয়েছে তাদের জন্য পিতার কাছে প্রার্থনা করেন। হয় তো তুমি বলবে, তবে আমি কেমন করে প্রভুর মত হব? ইচ্ছা করলে পারবেই: তাঁর অনুকরণ সম্ভব না হলে, তবে তিনি কেনই বা বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে শিখে নাও, কারণ আমি কোমল ও নম্রহৃদয়? (মথি ১১:২৯)। তুমি তাঁর সদৃশ হতে না পারলে, তবে কেনই বা পল বললেন, তোমরা আমার অনুকারী হও, আমিও যেমন খ্রিষ্টের? (১ করি ১১:১)।
যাই হোক, প্রভুর অনুকরণ করতে না চাইলে, কমপক্ষে তাঁর সেবক স্তেফানের আদর্শ অনুসরণ কর, কেননা তিনি সত্যিই তাঁর অনুকরণ করলেন। আপন ক্রুশবিদ্ধকারীদের মধ্যে থাকাকালে খ্রিষ্ট যেমন পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, তেমনি যারা তাঁকে পাথর ছুড়ে মারছিল, যারা তাঁকে অপমান করছিল, তাদের মধ্যে থাকাকালে তিনি পাথরের আঘাত খেতে খেতে আপন অসহনীয় যন্ত্রণা উৎসর্গ করে বলছিলেন, প্রভু, এ পাপের জন্য তাদের দায়ী করো না (প্রেরিত ৭:৬০)।
তুমি কি চাও, আমি ঈশ্বরের আর একটি সেবকের আদর্শ দেখাব যিনি আরও গুরুতর যন্ত্রণা ভোগ করেছেন? তিনি সেই পল যিনি বললেন, ইহুদীদের হাতে আমি পাঁচবার ঊনচল্লিশ কশাঘাত-দণ্ড ভোগ করেছি। তিনবার বেত্রাঘাত, একবার পাথর ছুড়ে মারা, তিনবার নৌকাডুবি সহ্য করেছি, অতল গহ্বরের উপর এক দিন এক রাত কাটিয়েছি (২ করি ১১:২৫)। আর একথার পরে তিনি কী বলছিলেন? আহা, নিজেই এই ভিক্ষা রাখতাম, আমার ভাইদের খাতিরে—জন্মসূত্রে যারা আমার স্বজাতি, তাদের খাতিরে—আমি নিজেই যেন অভিশপ্ত হয়ে খ্রিষ্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হই (রো ৯:৩)। তুমি কি চাও, আমি নূতন নিয়ম থেকে নয়, পুরাতন নিয়ম থেকেও কোন দৃষ্টান্ত তোমাকে দেখাব? কেননা এই তো আশ্চর্যের বিষয় যে, শত্রুদের ভালবাসার আদেশ যাদের কাছে তখনও দেওয়া হয়নি, এমনকি অমঙ্গলের বদলে অমঙ্গল, অর্থাৎ চোখের বদলে চোখ ও দাঁতের বদলে দাঁত তেমন আদেশ যাদের দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রেরিতদূতদের যোগ্য আধ্যাত্মিকতায় পৌঁছতে পেরেছে।
ইহুদীরা যাঁকে বারবার পাথর ছুড়ে মেরেছিল ও অবজ্ঞা করেছিল, সেই মোশির কথা শোন: আহা, তুমি যদি ওদের পাপ ক্ষমা করতে! অন্যথা, তোমার পুস্তক থেকে আমার নাম মুছে দাও (যাত্রা ৩২:৩২)।
তুমি কি দেখতে পার না, কেমন করে ধার্মিক মানুষ নিজের পরিত্রাণের চেয়ে পরেরই পরিত্রাণ ইচ্ছা করেন? তুমি নিরপরাধী হলে তবে কেনই বা তাদের দণ্ডের সহভাগী হতে চাও? তাঁর উত্তর, কারণ অন্যরা কষ্টভোগ করলে আমি আমার আনন্দের কথা চিন্তাই করি না।
যখন প্রভু ও তাঁর প্রাক্তন ও নব সন্ধির সকল সেবকও শত্রুদের জন্য প্রার্থনা করতে আবেদন জানান, তখন আমরা যারা তাদের অভিশাপ দিই কেমন করে ক্ষমা পেতে পারব? ভাইবোনেরা, আমার অনুরোধ, আমরা যেন তেমন ব্যবহার না করি। অন্যথা, তাঁদের দৃষ্টান্ত যত মহান ও অগণিত, আমরা তাঁদের অনুকরণ না করলে আমাদের দণ্ড তত গুরুতর হবেই। বন্ধুদের চেয়ে শত্রুদের জন্যই প্রার্থনা করা শ্রেয়, কেননা এতে মহত্তর পুরস্কার সঞ্চিত। তিনি নিজে বলেছেন, যারা তোমাদের ভালবাসে, তাদেরই ভালবাসলে তোমাদের কী মজুরি হবে? কর-আদায়কারীরাও কি সেইমত করে না? (মথি ৫:৪৬)।
অতএব, কেবল বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করলে আমরা বিধর্মীদের ও কর-আদায়কারীদের চেয়ে ভাল নই। কিন্তু মানুষের পক্ষে শত্রুদের যতদূর সম্ভব ভালবাসলে তবে আমরা ঈশ্বরের সদৃশ হব যিনি ভাল মন্দ সকলের উপরেই নিজের সূর্য জাগান, ও ধার্মিক অধার্মিক সকলের উপরেই বৃষ্টি নামিয়ে আনেন (মথি ৫:৪৫)। তবে এসো, পিতারই সদৃশ হই, কারণ প্রভু বলেছেন, এক্ষেত্রে তোমাদের যেন কোন সীমা না থাকে, যেমনটি তোমাদের স্বর্গস্থ পিতারও কোন সীমা নেই (মথি ৫:৪৮), যেন আমাদের প্রভু ঈশ্বর ও ত্রাণকর্তা সেই যিশুখ্রিষ্টেরই অনুগ্রহ ও মঙ্গলময়তা গুণে স্বর্গরাজ্য লাভ করতে পার, যাঁর গৌরব হোক যুগে যুগান্তরে। আমেন।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩৪
ধুয়ো: আস্বাদন কর, দেখ প্রভু কত মঙ্গলময়,
সুখী সেই মানুষ, যে তাঁর আশ্রিতজন।
সর্বদাই আমি প্রভুকে বলব ধন্য,
নিয়তই আমার মুখে তাঁর প্রশংসাবাদ।
প্রভুতে গর্ব করে আমার প্রাণ,
শুনুক, আনন্দ করুক বিনম্র সকল। [ধুয়ো]
আমার সঙ্গে প্রভুর মহিমাকীর্তন কর,
এসো, আমরা একসঙ্গে তাঁর নাম বন্দনা করি।
প্রভুর অন্বেষণ করেছি, তিনি আমাকে সাড়া দিলেন,
যত ভয়-শঙ্কা থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন। [ধুয়ো]
তাঁর দিকে চেয়ে দেখ, তোমরা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে,
লজ্জায় ঢেকে যাবে না কো তোমাদের মুখ।
এই দীনহীন ডাকে, প্রভু শোনেন,
তার সকল সঙ্কট থেকে তাকে পরিত্রাণ করেন। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আশীর্বাদ কর: তোমার অগণন মঙ্গলদানে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে
আমরা যেন পরিত্রাণের পুরস্কার লাভ ক’রে
তোমার প্রশংসাগান থেকে কখনও বিরত না থাকি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১৫শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, পথভ্রান্ত হলে মানুষ যেন শুভ পথে ফিরে যেতে পারে,
এজন্য তুমি তো তোমার সত্যের আলো জ্বালিয়ে রাখ।
আশীর্বাদ কর: খ্রিষ্টবিশ্বাসী বলে যারা নিজেদের পরিচয় দেয়,
তারা যেন সেই সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করে যা ‘খ্রিষ্ট’ নামের প্রতিকূল,
এবং তা-ই পালন করে যা সেই নামের অনুকূল।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৫৫:১০-১১)
প্রভু একথা বলছেন:
‘বৃষ্টি ও তুষার যেমন আকাশ থেকে নেমে আসে,
এবং মাটি জলসিক্ত না করে,
ও সেই মাটি যেন বীজবুনিয়েকে বীজ ও মানুষকে খাদ্য দান করে
তা উর্বর ও অঙ্কুরিত না করে সেখানে ফিরে যায় না,
তেমনি ঘটে আমার মুখনিঃসৃত বাণীর বেলায়:
আমি যা ইচ্ছা করি, তা সম্পন্ন না করে,
এবং যে উদ্দেশ্যে আমি তা প্রেরণ করেছি, তা সাফল্যমণ্ডিত না করে
আমার বাণী নিষ্ফল হয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে না।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৬৫
ধুয়ো: বীজ উত্তম মাটিতে প’ড়ে
শতগুণ ফল দিল।
এই পৃথিবীকে দেখতে এসে তা তুমি জলসিক্ত কর,
প্রচুর দানেই তাকে ধনবতী করে তোল;
উছলে পড়ে পরমেশ্বরের নদী,
শস্যের ফসল ফলাও তুমি; [ধুয়ো]
এভাবেই তুমি প্রস্তুত কর মাটির বুক:
জলসিক্ত কর তার খাঁজ, সমান কর তার আল,
তা কোমল কর বৃষ্টিধারায়,
তার অঙ্কুর আশীর্বাদ কর। [ধুয়ো]
তুমি বছরকে তোমার মঙ্গলদানেই মুকুটভূষিত কর,
তোমার রথ গমনে ঝরে পড়ে প্রাচুর্যের ধারা;
প্রান্তরের চারণভূমিতেও ঝরে পড়ে থাকে সেই ধারা;
গিরিশ্রেণির গায়ে আনন্দের সাজ। [ধুয়ো]
মাঠ মেষপাল-বসনে পরিবৃত,
উপত্যকা শস্য-আবরণে অলঙ্কৃত,
সবকিছু জয়ধ্বনি করে,
সবকিছু করে গান। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:১৮-২৩)
প্রিয়জনেরা, আমি মনে করি যে, আমাদের প্রতি যে গৌরব প্রকাশিত হবে বলে স্থিরীকৃত আছে, তার সঙ্গে এ বর্তমানকালের দুঃখকষ্ট তুলনার যোগ্য নয়।
বিশ্বসৃষ্টি নিজেই তো ব্যাকুল প্রত্যাশা নিয়ে ঈশ্বরসন্তানদের গৌরব প্রকাশের প্রতীক্ষায় রয়েছে; কারণ বিশ্বসৃষ্টিকে অসারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে—তার নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং যিনি তা তুলে দিয়েছেন, তাঁরই ইচ্ছায়। আর বিশ্বসৃষ্টির প্রত্যাশা এই, সেও অবক্ষয়ের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে উঠবে ঈশ্বরসন্তানদের গৌরবময় স্বাধীনতায় অংশ নেবার জন্য।
কারণ আমরা জানি, সমস্ত সৃষ্টি আজ পর্যন্তও আর্তনাদ করে আসছে, প্রসব-বেদনা ভোগ করছে; শুধু বিশ্বসৃষ্টি নয়, আমরা যারা ঐশআত্মার প্রথমফসল পেয়ে থাকি, আমরা নিজেরাও দত্তকপুত্রত্ব লাভের প্রতীক্ষায়, আমাদের দেহের মুক্তিরই প্রতীক্ষায় অন্তরে আর্তনাদ করছি।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
বীজ হল ঈশ্বরের বাণী, বীজবুনিয়ে হলেন স্বয়ং খ্রিষ্ট:
খ্রিষ্টকে যে খুঁজে পায়, সে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৩:১-২৩)
একদিন যিশু বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সমুদ্র-কূলে বসলেন, কিন্তু এত বহুলোকের ভিড় তাঁর কাছে জমতে লাগল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে সেইখানে বসলেন। সমস্ত লোক তীরে দাঁড়িয়ে রইল, আর তিনি উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে তাদের অনেক কথা বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, ‘দেখ, বীজবুনিয়ে বীজ বুনতে বেরিয়ে পড়ল। বোনার সময়ে কিছু বীজ পথের ধারে পড়ল; তখন পাখিরা এসে তা খেয়ে ফেলল। আবার কিছু বীজ পাথুরে জায়গায় পড়ল, যেখানে বেশি মাটি ছিল না; তাই মাটি গভীর না হওয়ায় তা শীঘ্র গজিয়ে উঠল, কিন্তু সূর্য উঠলেই তা পুড়ে গেল, ও তার শিকড় না থাকায় শুকিয়ে গেল। আবার কিছু বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে পড়ল; তাই কাঁটাগাছ বেড়ে তা চেপে রাখল। আবার কিছু বীজ উত্তম মাটিতে পড়ল ও ফল দিল: কোনটায় একশ’ গুণ, কোনটায় ষাট গুণ, ও কোনটায় ত্রিশ গুণ। যার কান আছে, সে শুনুক।’
তখন শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কেন উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে তাদের কাছে কথা বলেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘এর কারণ, স্বর্গরাজ্য সংক্রান্ত রহস্যগুলো তোমাদের বুঝতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি; যার আছে তাকে আরও বেশি দেওয়া হবে, আর সে প্রাচুর্যেই থাকবে; কিন্তু যার কিছু নেই, তার যেটুকু আছে তাও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। এজন্য আমি তাদের কাছে উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে কথা বলি, কারণ তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না ও বোঝেও না। ফলে তাদের সম্বন্ধে নবী ইশাইয়ার এই বাণী পূর্ণ হয়:
তোমরা কান পেতে শুনবে, কিন্তু বুঝবে না;
তোমরা তাকিয়ে দেখবে, কিন্তু দেখতে পাবে না,
কেননা এই লোকদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেছে,
তারা কানে খাটো হয়ে গেছে, চোখ বন্ধ করে দিয়েছে,
পাছে তারা চোখে দেখে ও কানে শোনে,
হৃদয়ে বোঝে ও পথ ফেরায়, আর আমি তাদের সুস্থ করি।
কিন্তু তোমাদের চোখ সুখী, কারণ দেখতে পায়; তোমাদের কান সুখী, কারণ শুনতে পায়; আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা দেখছ, তা অনেক নবী ও ধার্মিক মানুষ দেখতে বাসনা করেও দেখতে পাননি; এবং তোমরা যা শুনছ, তা তাঁরা শুনতে বাসনা করেও শুনতে পাননি।
তাই তোমরা বীজবুনিয়ের উপমা-কাহিনী মন দিয়ে শোন: যখন কেউ সেই রাজ্যের বাণী শুনে তা বোঝে না, তখন সেই ধূর্তজন এসে তার হৃদয়ে যা বোনা হয়েছিল, তা কেড়ে নেয়; এ হল সেই মানুষ যে পথের ধারে বোনা। সেও আছে যে পাথুরে মাটিতে বোনা: এ এমন মানুষ যে সেই বাণী শুনতে না শুনতেই তা সানন্দে গ্রহণ করে, কিন্তু তার অন্তরে শিকড় নেই; সে তো ক্ষণস্থির মানুষ, ফলে বাণীর কারণে কোন ক্লেশ বা নির্যাতন দেখা দিলেই সে স্খলিত হয়। সেও আছে যে কাঁটাঝোপের মধ্যে বোনা: এ এমন মানুষ যে সেই বাণী শোনে, কিন্তু এসংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া বাণীটা চেপে রাখে; তাই তা ফলহীন হয়। সেও আছে যে উত্তম মাটিতে বোনা: এ এমন মানুষ যে সেই বাণী শুনে তা বোঝে; সে-ই বাস্তবিক ফলবান হয়: সে কখনও একশ’ গুণ, কখনও ষাট গুণ, কখনও ত্রিশ গুণ ফল দেয়।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আথানাসিউসেরই বলে ধরে নেওয়া উপদেশ
ত্রাণকর্তা ফসলপূর্ণ মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন: ‘গমের দানা’ যিনি, তিনি শস্যখেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন: তিনি ছিলেন সেই আত্মিক দানা যা একটামাত্র স্থানে পড়ে উর্বর হয়ে সারাবিশ্ব জুড়ে পুনরুত্থান করল ও যে দানার বিষয়ে তিনি নিজে বললেন, গমের দানা যদি মাটিতে পড়ে মরে না যায়, তবে তা মাত্র একটাই হয়ে থাকে; কিন্তু যদি মরে যায়, তবে বহু ফল উৎপন্ন করে (যোহন ১২:২৪)।
তাই যিশু ফসলপূর্ণ মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন: যিনি একদিন এমন গমের দানা হওয়ার কথা যাতে প্রাণশক্তি দান করতে পারেন, তিনি এবার হচ্ছেন বীজবুনিয়ে, যেভাবে সুসমাচারে লেখা আছে, দেখ, বীজবুনিয়ে বীজ বুনতে বেরিয়ে পড়লেন (মথি ১৩:৩)।
যিশু প্রচুর পরিমাণ বীজ বোনেন বটে, কিন্তু ফসলের পরিমাণ মাটির প্রকৃতির উপরেই নির্ভর করে। কেননা পাথুরে মাটিতে বীজ সহজে শুকিয়ে যায়; কিন্তু তা বীজের অক্ষমতার জন্য নয়, মাটির অযোগ্যতার জন্যই ঘটে, কারণ বীজ তেজময় বটে, কিন্তু গভীর না হওয়ায় মাটি অনুর্বর। মাটি আর্দ্রতা ধরে না নিলে সূর্যের রশ্মি তীব্রতর ভাবে মাটিতে ঢুকে বীজকে শোকায়। কিন্তু তেমনটি বীজের দুর্বলতার জন্য নয়, মাটির অযোগ্যতার জন্যই ঘটে।
বীজটা কাঁটাঝোপের মধ্যেও বোনা হয়: এ বীজও তেজময় বটে, কিন্তু কাঁটাগাছ তা চাপিয়ে রাখায় তার প্রাণশক্তি ফলশালী হতে বাধা পায়। আর যখন বীজ ভাল মাটিতে পড়ে, তখন ভিন্ন ভিন্ন ফল ফলায়, কোনটায় তিরিশ গুণ, কোনটায় ষাট গুণ, আবার কোনটায় একশ’ গুণ। কেননা বীজ একই প্রকার, ফসল কিন্তু ভিন্ন, আত্মিক ফলাফলও ভিন্ন।
তাই সেই বীজবুনিয়ে বীজ বুনতে বেরিয়ে পড়লেন: স্থানে স্থানে তিনি নিজেই বীজ বুনলেন, আবার স্থানে স্থানে শিষ্যদের মধ্য দিয়েই কাজ করলেন। প্রেরিতদের কার্যবিবরণীতে, স্তেফানের মৃত্যুর পরে একথা লেখা আছে: সকলে বিক্ষিপ্ত হলেন (প্রেরিত ৮:১১); নিজেদের দুর্বলতার জন্যই যে তাঁরা পালিয়ে গেলেন, কিংবা বিশ্বাসের কোন মতভেদের ফলে যে বিচ্ছিন্ন হলেন তেমন কথা তো লেখাই নেই, তাঁরা বরং ‘বিক্ষিপ্তই হলেন।’ বীজবুনিয়ের শক্তিগুণে গম হয়ে উঠে ও জীবনদায়ী শিক্ষা-বাণী দ্বারা স্বর্গীয় রুটিতে রূপান্তরিত হয়ে তাঁরা নিজেদের কর্মকাণ্ড সর্বত্রই ‘বুনে দিলেন।’
সত্যবাণীর বীজবুনিয়ে ঈশ্বরের সেই একমাত্র পুত্র যিশু ফসলপূর্ণ মাঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি কিন্তু কেবল বীজ বুনছিলেন না, অপরূপ চিন্তাধারাও বুনছিলেন—তেমন বীজের অবশ্যই আশ্চর্য কাজ উৎপন্ন করার কথা!
এবার এসো, বপনকালে মাটির অবস্থা ও বসন্তকালে মাটির অঙ্কুরের কথা ধরি—বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেবার জন্য নয়, বরং আমরা যেন তেমন আশ্চর্য কাজের সাধকের আরাধনা করতে পারি। নিজ কর্তব্য পালন ক’রে মানুষ লাঙলে বলদ লাগায়, মাটি টুকরো টুকরো করে যাতে মাটি নরম হলে বর্ষার জল সরে না গিয়ে বরং মাটির গভীরে নেমে প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে। তেমন নরম মাটিতে পড়া বীজের পক্ষে দ্বিগুণ সুবিধা আছে: প্রথম, মাটি গভীর ও নরম; দ্বিতীয়, বীজ পাখির কাছে আবৃত থাকে। কিন্তু তবুও যথাসাধ্য কাজ করেও মানুষ ফল ফলাতে পারে না। বীজ বোনা মানুষের উপর নির্ভর করে, কিন্তু বৃদ্ধি ঈশ্বরেরই হাতে। আর যখন বীজ শিষ তৈরি করতে করতে অঙ্কুরিত হয়, তখন শিষ থেকে ফলটা বোঝা যায়, যথা গম কি শ্যামাঘাস। তোমরা যা পাঠ করেছ, তা বুঝতে পেরেছ: এবার আমারই পালা, যাতে অধিকতর আধ্যাত্মিক বিষয়ের দিকে তোমাদের চালিত করি। প্রেরিতদূতদের মধ্য দিয়ে যিশু সারা পৃথিবী জুড়ে স্বর্গরাজ্যের বাণী প্রচার করলেন।
বাণী যে গ্রহণ করেছে, সে ততক্ষণই নিজের অন্তরে সেই বাণী রক্ষা করে যতক্ষণ না বাণী অঙ্কুর অঙ্কুরিত না করে: এজন্য সে নিয়মিতই মণ্ডলীর অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয়। আমরা সকলে এক স্থানে এসে একত্র হই—কেউ গম, আবার কেউ শ্যামাঘাস নিয়ে আসে, অর্থাৎ কিনা ভক্ত ও ভণ্ড উভয়ই এখানে উপস্থিত, আমরা যা পাঠ করেছি তা যেন আরও বাস্তব হয়ে ওঠে। মণ্ডলীর কৃষক এই আমরা বাণীপ্রচারের কোদাল দিয়ে মাটি কোপাই ও মাঠকে এমন ভাবে চাষ করি যাতে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়; কিন্তু তবুও আমরা মাটির আসল অবস্থা জানি না, কেননা বিভিন্ন পাতার মধ্যে সাদৃশ্য বহুবার কৃষককেও ভোলায়। কিন্তু শিক্ষা কাজেই পরিণত হলে ও শ্রমের ফল প্রকাশ পেলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কে কে ভক্ত, কে কে ভণ্ড।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৮৪
ধুয়ো: চড়ুই পাখিও খুঁজে পায় বাসা, দোয়েলও পায় শাবকদের রেখে যাওয়ার নীড়—
সেই তো তোমার বেদি, হে সেনাবাহিনীর প্রভু, হে আমার রাজা, হে আমার পরমেশ্বর।
সুখী তারা, যারা বাস করে তোমার গৃহে,
তারা তোমার প্রশংসা নিত্যই করে থাকে।
সুখী তারা, তোমাতেই যাদের শক্তি,
যাদের অন্তরে বিরাজিত তোমার যত পথ। [ধুয়ো]
গন্ধতরুর উপত্যকা পেরিয়ে যেতে যেতে তারা তা ঝরনায় পরিণত করে,
প্রথম বৃষ্টিও তা ভূষিত করে আশিসধারায়;
প্রাকার প্রাকার তারা এগিয়ে চলে,
যতক্ষণ না দেবতাদের দেবতা সিয়োনেই দর্শন দেন। [ধুয়ো]
হে প্রভু, সেনাবাহিনীর পরমেশ্বর, আমার প্রার্থনা শোন,
কান দাও, হে যাকোবের পরমেশ্বর।
হে পরমেশ্বর, হে আমাদের ঢাল, চেয়ে দেখ,
দেখ তোমার তৈলাভিষিক্তজনের মুখের দিকে। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এ দিব্য উপহার গ্রহণ করে আমরা তোমাকে অনুনয় করি:
এ মহারহস্যে দৈনন্দিন যোগদানের ফলে
আমরা যেন তোমার পরিত্রাণকর্মের পূর্ণ সার্থকতা উপলব্ধি করতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১৬শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, করুণাবিষ্ট হয়ে তোমার অনুগ্রহের দানগুলি
অপর্যাপ্ত মাত্রায় তোমার মণ্ডলীর উপর বর্ষণ কর,
তারা যেন উদ্দীপ্ত বিশ্বাস, আশা ও ভালবাসার সঙ্গে
জাগ্রত অন্তরে তোমার আজ্ঞা পালনে নিষ্ঠাবান থাকতে পারে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
প্রজ্ঞা পুস্তক থেকে পাঠ (১২:১৩,১৬-১৯)
তুমি ছাড়া এমন আর কোন দেবতা নেই
যে সবকিছুর প্রতি যত্ন দেখাবে,
যার কাছে তোমাকে দেখাতে হবে যে,
তোমার বিচার অন্যায়-বিচার নয়।
কারণ তোমার শক্তি ধর্মময়তার উৎস,
তোমার সার্বজনীন কর্তৃত্ব তোমাকে সকলের প্রতি মমতাপূর্ণ করে।
তুমি তো তোমার প্রতাপ তখনই দেখাও,
যখন তোমার সার্বিক পরাক্রমে বিশ্বাস রাখা হয় না;
যারা স্পর্ধা জানে, তাদেরই বেলায় তুমি সেই স্পর্ধা নমিত কর।
শক্তি সংযত রেখে তুমি তো বরং কোমলতার সঙ্গেই বিচার কর,
মহা মমতার সঙ্গেই আমাদের শাসন কর,
কারণ তুমি এমনি ইচ্ছা করলে, আর তখনই তোমার প্রতাপ উপস্থিত!
তেমন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তুমি তোমার জনগণকে
একথায় উদ্বুদ্ধ করলে যে,
ধার্মিকজনকে মানবপ্রেমিক হতে হবে;
তোমার সন্তানদের তুমি এই মধুর আশায়ও পূর্ণ করলে যে,
পাপের পরে তুমি অনুতাপ মঞ্জুর কর।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৮৬
ধুয়ো: প্রভু, তুমি মঙ্গলময়,
তুমি ক্ষমাশীল।
প্রভু, তুমি মঙ্গলময়, তুমি ক্ষমাশীল,
যারা তোমাকে ডাকে, তাদের প্রতি তোমার কৃপা মহান।
আমার প্রার্থনায় কান দাও, প্রভু,
মন দিয়ে শোন আমার মিনতির কণ্ঠ। [ধুয়ো]
তোমার গড়া সকল দেশ এসে তোমার সম্মুখে, প্রভু, করবে প্রণিপাত,
তারা গৌরবান্বিত করবে তোমার নাম;
কারণ তুমি মহান, তুমি সাধন কর আশ্চর্য কাজ,
শুধু তুমিই যে পরমেশ্বর। [ধুয়ো]
তুমি কিন্তু, প্রভু, স্নেহশীল দয়াবান ঈশ্বর,
ক্রোধে ধীর, কৃপা ও বিশ্বস্ততায় ধনবান,
আমার দিকে মুখ ফেরাও,
আমাকে দয়া কর। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:২৬-২৭)
প্রিয়জনেরা, পবিত্র আত্মা আমাদের দুর্বলতায় আমাদের সাহায্য করেন; কারণ উচিত মত কীবা প্রার্থনা করা উচিত, আমরা তা তো জানি না; কিন্তু স্বয়ং আত্মাই অনির্বচনীয় আর্তনাদের মধ্য দিয়ে আমাদের হয়ে প্রবল অনুরোধ করেন। আর যিনি সকলের হৃদয় তলিয়ে দেখেন, তিনি জানেন, আত্মার ভাব কী, যেহেতু আত্মা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই পবিত্রজনদের হয়ে অনুরোধ করেন।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
হে পিতা, হে স্বর্গমর্তের প্রভু,
আমি তোমাকে ধন্য বলি,
কারণ তুমি স্বর্গরাজ্যের রহস্যময় কথা
শিশুদেরই কাছে প্রকাশ করেছ।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৩:২৪-৪৩)
একদিন যিশু উপস্থিত লোকদের কাছে একটা উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন; তিনি বললেন, ‘স্বর্গরাজ্য তেমন এক লোকের সঙ্গে তুলনা করা যায়, যে নিজের জমিতে ভাল বীজ বুনল। সকলে যখন ঘুমোচ্ছিল, তখন তার শত্রু এসে ওই গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বুনে চলে গেল। পরে যখন বীজ গজিয়ে উঠে ফল দিল, তখন শ্যামাঘাসও দেখা দিল।
সেই গৃহস্বামীর দাসেরা এসে তাকে বলল, প্রভু, আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেননি? তবে শ্যামাঘাস এল কোথা থেকে? সে তাদের বলল, কোন শত্রু এ কাজ করেছে। দাসেরা তাকে বলল, তবে আপনি কি চান, আমরা গিয়ে তা সংগ্রহ করব? সে বলল, না, পাছে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করতে করতে তোমরা তার সঙ্গে গমও উপড়ে ফেল। ফসল কাটার সময় পর্যন্ত তোমরা বরং দুই-ই একসঙ্গে বাড়তে দাও, আর ফসল কাটার সময়ে আমি কাটিয়েদের বলব, তোমরা আগে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে তা পোড়াবার জন্য আঁটি বেঁধে রাখ, কিন্তু গম আমার গোলায় এনে রেখে দাও।’
তিনি তাদের কাছে আর একটা উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন; তিনি বললেন, ‘স্বর্গরাজ্য তেমন একটা সর্ষে-দানার মত, যা একজন লোক নিয়ে নিজের জমিতে বুনল। সকল বীজের চেয়ে ওই বীজ ছোট, কিন্তু একবার বেড়ে উঠলে তা যত শাকের চেয়ে বড় হয়; আর এমন গাছ হয়ে উঠে যে, আকাশের পাখিরা এসে তার শাখায় বাসা বাঁধে।’
তিনি তাদের কাছে আর একটা উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন: ‘স্বর্গরাজ্য এমন খামিরের মত, যা একজন স্ত্রীলোক নিয়ে তিন পাল্লা ময়দার সঙ্গে মাখল, শেষে সমস্তই গেঁজে উঠল।’
যিশু উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়েই লোকদের কাছে এই সমস্ত কথা বলতেন; উপমা না দিয়ে লোকদের কিছুই বলতেন না, যেন নবীর মধ্য দিয়ে উচ্চারিত এই বচন পূর্ণ হয়:
উপমা-কাহিনী বলার জন্যই আমি মুখ খুলব,
এমন কিছু উচ্চারণ করব,
যা জগৎপত্তনের সময় থেকে গুপ্ত।
পরে তিনি লোকের ভিড় ছেড়ে বাড়ি ফিরে এলেন। তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, ‘জমির শ্যামাঘাসের উপমা-কাহিনীটার অর্থ বুঝিয়ে দিন।’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যিনি ভাল বীজ বোনেন, তিনি মানবপুত্র। জমি হল জগৎ, ভাল বীজ রাজ্যের সন্তানেরা, শ্যামাঘাস সেই ধূর্তজনের সন্তানেরা; যে শত্রু শ্যামাঘাস বুনেছিল, সে দিয়াবল, ফসল কাটার সময় হল অন্তিম কাল, কাটিয়েরা হলেন স্বর্গদূত। সুতরাং যেমন শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, অন্তিম কালে তেমনি ঘটবে: মানবপুত্র নিজ দূতদের প্রেরণ করবেন; যা যা পতন ঘটায় তাঁরা সেইসব কিছু ও যত জঘন্য কর্মের সাধককে তাঁর রাজ্য থেকে সংগ্রহ করবেন ও তাদের সেই অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেবেন যেখানে হবে কান্না ও দাঁত ঘষাঘষি। তখন ধার্মিকেরা নিজেদের পিতার রাজ্যে সূর্যের মত দীপ্তিমান হয়ে উঠবে। যার কান আছে, সে শুনুক।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
মথি-রচিত সুসমাচারে বিশপ সাধু জন খ্রিসোস্তমের উপদেশ
স্বর্গরাজ্য এমন খামিরের মত, যা একজন স্ত্রীলোক নিয়ে তিন পাল্লা ময়দার সঙ্গে মাখল, শেষে সমস্তই গেঁজে উঠল (মথি ১৩:৩৩)। খামির যেমন সমস্ত ময়দা গাঁজিয়ে তোলে, তেমনি তোমরা সমস্ত জগৎকে বিশ্বাস দ্বারা জয় করবে। তবে তুমি একথা বলো না, আমরা বারোজনে কেমন করে তেমন বিরাট লোকের ভিড়ের রূপান্তর সাধন করতে পারব? তোমরা যে ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকতে অস্বীকার কর না, এ-ই তো তোমাদের গুণ অতিশয় উজ্জ্বল করছে। ময়দায় মাখানো হলে খামির যেমন সমস্ত ময়দাই গাঁজিয়ে তোলে, এমনকি ময়দার সঙ্গে মিশে যাবার জন্যই তাতে মাখানো হয়, তেমনি তিনি বলেননি, ‘স্ত্রীলোকটি খামির নিল’, কিন্তু বললেন, তা ময়দার সঙ্গে মাখল; কেননা তোমরাও তোমাদের বিরোধীদের সঙ্গে মিশ্রিত ও একীভূত হয়েই তাদের জয় করবে। খামির সমস্ত ময়দার মধ্যে লুকিয়ে থাকায় নষ্ট হয় না, এমনকি আস্তে আস্তে ময়দাকে তার নিজের শক্তির সহভাগী করে: একই প্রকারে বাণীপ্রচারের বেলায় ঘটে। আমি যে তোমাদের কাছে বহু যন্ত্রণার ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছি, তাতে তোমাদের ভয় করতে নেই, কেননা এভাবেই তোমরা আলো হয়ে উঠবে ও সবকিছু জয় করতে পারবে।
খ্রিষ্টই খামিরকে আপন শক্তি দান করেন। আর এইজন্য তিনি ভিড়ের সঙ্গে আপন বিশ্বাসীদের মিশিয়ে দিলেন, যাতে সকলের মধ্যে তাঁর অভিজ্ঞতার কথার পরস্পর বিনিময় হয়। কেউ যেন নিজের ক্ষুদ্রতা নিয়ে চিন্তান্বিত না হয়। বাণীপ্রচারের শক্তি সত্যিই মহান; আর খামিরের ফলে যা কিছু গেঁজে ওঠে, তাও খামির হয়ে ওঠে।
আগুনের একটা স্ফুলিঙ্গ যেমন কাঠের উপরে পড়ে তা পুড়িয়ে ফেলে ও কাঠকে এমন আগুনে পরিণত করে যা অন্য কাঠকেও দখল করে, তেমনি বাণীপ্রচারের বেলায় ঘটে। তিনি কিন্তু আগুনের দৃষ্টান্ত দেননি, খামিরের কথা বললেন। কেন? কারণ দাহনের বেলায় সবকিছু আগুনের উপর নির্ভর করে না, কাঠের উপরেও নির্ভর করে; খামির কিন্তু স্বশক্তিতেই সবকিছু গাঁজিয়ে তোলে। তাহলে, যখন বারোজন লোক সমস্ত পৃথিবীকে গাঁজিয়ে তুলেছেন, তখন চিন্তা কর আমাদের শঠতা কতই না বড় যে, অনেকে হয়েও বাকি জগদ্বাসীকে বিশ্বাসে জয় করতে পারি না—হাজার জগৎকেও আমাদের গাঁজিয়ে তোলা উচিত! হয় তো তুমি প্রতিবাদ করে বলবে, তাঁরা কিন্তু ছিলেন প্রেরিতদূত। তাতে কী? তাঁরাও কি তোমার একই অবস্থায় ছিলেন না? তাঁরা কি শহরে বাস করতেন না? তাঁরা কি তাঁদের সহনাগরিকদের একই পরিস্থিতির মানুষ ছিলেন না? তাঁরা কি নিজ নিজ পেশার অনুশীলন করতেন না? তাঁরা কি স্বর্গদূত ছিলেন? তাঁরা কি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন? উত্তরে তুমি বলছ, তাঁরা কিন্তু অলৌকিক কাজ সাধন করতেন। হায়! আর কত দিন আমরা নিজেদের অলসতা ঢাকবার জন্য অলৌকিক কাজকে সূত্র হিসাবে ব্যবহার করব? যিনি বহু নগর আকর্ষণ করলেন, সেই যোহন কী চিহ্ন দেখালেন? একটাও না: সেই সুসমাচার-রচয়িতার নিজের কথা শোন: যোহন কোন চিহ্নকর্ম সাধন করেননি (যোহন ১০:৪১)।
আর শিষ্যদের কাছে নির্দেশ দিতে দিতে খ্রিষ্ট কি কখনও একথা বললেন যে, মানুষের কাছে নিজেদের দেখানোর জন্য অলৌকিক কাজ করা দরকার? মোটেই না, তিনি বরং বললেন, তোমাদের আলো মানুষের সামনে উজ্জ্বল হোক, যেন তারা তোমাদের সৎকর্ম দেখে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরবকীর্তন করে। তাই তুমি কি দেখতে পাচ্ছ, জীবন কেমন শুভ ও মহৎ কর্মে পূর্ণ হওয়া উচিত? তাদের ফল দ্বারাই তাদের চিনতে পারবে (মথি ৭:১৬)—প্রভুর উক্তি।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১১১
ধুয়ো: দয়াবান স্নেহশীল প্রভু আপন আশ্চর্য কর্মকীর্তির এক স্মারক চিহ্ন দেন:
যারা তাঁকে ভয় করে, তিনি তাদের খাদ্য দান করেন।
াঁর হাতের কর্মকীর্তি বিশ্বস্ততা ও ন্যায়বিচার-মণ্ডিত,
তাঁর সকল আদেশ বিশ্বাসযোগ্য,
তা দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত চিরদিন চিরকাল ধরে,
বিশ্বস্ততা ও ন্যায়নীতিতেই সাধিত। [ধুয়ো]
তাঁর আপন জাতির কাছে তিনি মুক্তি পাঠিয়ে দিলেন,
আপন সন্ধি জারি করলেন চিরকালের মত;
তাঁর নাম পবিত্র, ভয়ঙ্কর,
প্রভুভয়ই প্রজ্ঞার সূত্রপাত। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, প্রসন্ন হয়ে তোমার জনগণের সহায় হও।
যখন তাদের স্বর্গীয় রহস্যময় অন্নে পরিপূর্ণ করেছ,
তখন প্রাচীন জীবনধারণ থেকে
জীবনের নবীনতায়ই তাদের উপনীত কর।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
১৭শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, হে শরণাগত ভক্তদের রক্ষাকর্তা,
তুমি ছাড়া এজগতে চিরস্থায়ী ও পবিত্র বলতে কোন কিছুই নেই।
আমাদের উপর তোমার করুণাধারা বর্ষণ কর:
তুমি নিজে আমাদের নিয়ন্তা ও পথদিশারী হলে
আমরা যেন এ অস্থায়ী শুভদানগুলি এমনভাবে ব্যবহার করি
যার ফলে এজীবনকালেও চিরস্থায়ী মঙ্গলদানগুলির অধিকারী হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
রাজাবলির প্রথম পুস্তক থেকে পাঠ (৩:৫,৭-১২)
একদিন, গিবেয়োনে, প্রভু রাতের বেলায় শলোমনকে স্বপ্নে দেখা দিলেন; পরমেশ্বর বললেন, ‘যাচনা কর, আমি তোমাকে কী দেব?’
শলোমন বললেন, ‘প্রভু, পরমেশ্বর আমার, তুমি আমার পিতা দাউদের পদে তোমার এই দাসকে রাজা করেছ। কিন্তু আমি নিতান্ত ছেলেমানুষ, গণপরিচালনায় আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই। আর তোমার এই দাস তোমার সেই জনগণের মধ্যে রয়েছে যাদের তুমি বেছে নিয়েছ; তারা এমন বহুসংখ্যক এক জাতি যে, তাদের গণনা করাও সম্ভব নয়, তাদের সংখ্যা কল্পনা করাও সম্ভব নয়। তাই তোমার এই দাসকে এমনই এক বিবেচনাপূর্ণ অন্তর দান কর, যেন সে তোমার জনগণের সুবিচার করতে পারে ও মঙ্গল-অমঙ্গল নির্ণয় করতে পারে; কারণ তোমার এই এত বহুসংখ্যক জাতিকে শাসন করতে পারে এমন সাধ্য কারই বা আছে?’
শলোমন যে তেমন যাচনা রেখেছেন, তাতে প্রভু প্রীত হলেন, তাই পরমেশ্বর তাঁকে বললেন, ‘তুমি যখন এই যাচনা রেখেছ, যখন নিজের জন্য দীর্ঘায়ু বা ধন-ঐশ্বর্য বা তোমার শত্রুদের প্রাণও যাচনা করনি, বরং বিচার-সম্পাদনে নিজের জন্য বিচারবুদ্ধি যাচনা করেছ, তখন দেখ, আমি তোমার যাচনা মঞ্জুর করলাম। দেখ, আমি তোমাকে এমন প্রজ্ঞাময় ও সদ্বিবেচক অন্তর দিচ্ছি যে, তোমার আগে তোমার মত কেউই কখনও হয়নি, পরেও তোমার মত কারও উদ্ভবও কখনও হবে না।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ১১৯
ধুয়ো: আমি কতই না ভালবাসি
তোমার বিধান, প্রভু।
আমার নিয়তি—এ কথা বলেছি, প্রভু,
তোমার প্রতিটি বাণী মেনে চলাই নিয়তি আমার।
তোমার মুখের বিধান আমার কাছে
অজস্র সোনা ও রুপোর চেয়েও শ্রেয়তর। [ধুয়ো]
তোমার এ দাসের কাছে তোমার কথামত
তোমার কৃপাই হোক সান্ত্বনা আমার।
আসুক আমার কাছে তোমার স্নেহধারা, তবে আমি জীবন পাব,
তোমার বিধানই তো আমার সুখ। [ধুয়ো]
তাই আমি সোনার চেয়ে, নিখাদ সোনার চেয়েও
তোমার আজ্ঞাবলি ভালবাসি।
তাই তোমার আদেশমালা অনুসারেই পথ চলতে থাকি,
ঘৃণা করি সকল মিথ্যা পথ। [ধুয়ো]
তোমার নির্দেশমালা আশ্চর্যময়,
তাই তা পালন করে আমার প্রাণ।
তোমার বাণী ফুটেই আলো দান করে,
সরলমনাকে সুবুদ্ধি দান করে। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:২৮-৩০)
প্রিয়জনেরা, আমরা তো জানি, যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে, তাঁর সঙ্কল্প অনুসারে যারা আহূত, সবকিছুই তাদের মঙ্গলের উদ্দেশে কার্যকর হয়ে ওঠে, কেননা আগে থেকে যাদের জানতেন, তাদের তিনি তাঁর আপন পুত্রের প্রতিমূর্তির অনুরূপ হবার জন্য আগে থেকে নিরূপণও করেছিলেন, তিনি যেন বহু ভ্রাতার মধ্যে প্রথমজাত হতে পারেন। আর আগে থেকে যাদের তিনি নিরূপণ করেছিলেন, তাদের আহ্বানও করেছেন; এবং যাদের আহ্বান করেছেন, তাদের ধর্মময় বলেও সাব্যস্ত করেছেন; এবং যাদের ধর্মময় বলে সাব্যস্ত করেছেন, তাদের গৌরবান্বিতও করেছেন।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
হে পিতা, হে স্বর্গমর্তের প্রভু,
আমি তোমাকে ধন্য বলি,
কারণ তুমি স্বর্গরাজ্যের রহস্যময় কথা
শিশুদেরই কাছে প্রকাশ করেছ।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৩:৪৪-৫২)
একদিন যিশু তাঁর আপন শিষ্যদের বললেন, ‘স্বর্গরাজ্য কোন জমিতে গুপ্ত এমন ধনের মত, যা খুঁজে পেয়ে একজন লোক আবার গোপন করে রাখে; পরে মনের আনন্দে গিয়ে সবকিছু বিক্রি করে সেই জমি কিনে নেয়। আবার, স্বর্গরাজ্য তেমন এক বণিকের মত যে উত্তম মুক্তার খোঁজে বেড়াচ্ছে; একটা মহামূল্যবান মুক্তা খুঁজে পেয়ে সে গিয়ে সবকিছু বিক্রি করে তা কিনে নেয়।
আবার স্বর্গরাজ্য তেমন এক টানা জালের মত, যা সমুদ্রে ফেলা হলে সব ধরনের মাছ সংগ্রহ করে। জালটা ভর্তি হলে লোকে তা ডাঙায় টেনে তোলে, আর সেখানে বসে ভাল মাছগুলো সংগ্রহ করে ঝুড়িতে রাখে, ও মন্দগুলোকে ফেলে দেয়। অন্তিম কালে তেমনিই ঘটবে: দূতেরা এসে ধার্মিকদের মধ্য থেকে দুর্জনদের পৃথক করে দেবেন, ও তাদের সেই অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেবেন যেখানে হবে কান্না ও দাঁত ঘষাঘষি।
তোমরা কি এই সমস্ত কিছু বুঝেছ?’ তাঁরা বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তখন তিনি তাঁদের বললেন, ‘এজন্য যে শাস্ত্রী স্বর্গরাজ্যের শিষ্য হয়েছেন, তিনি তেমন গৃহস্বামীর মত, যে নিজের ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরাতন দু’ রকমেরই জিনিস বের করে আনে।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
মথি-রচিত সুসমাচারে পুরোহিত অরিগেনেসের উপদেশ
মূল্যবান রত্ন যে খোঁজ করে বেড়ায়, তার বেলায়ই একথা প্রযোজ্য যে, খোঁজ, তোমরা খুঁজে পাবে… যে খোঁজে, সে খুঁজে পায় (লুক ১১:৯, ১০)। কিন্তু কিসের খোঁজ করতে হবে? এমনকি, ‘যে খোঁজে, সে খুঁজে পায়’ উক্তির অর্থ কী? কোন সন্দেহ নেই: সেই রত্ন বলতে সেই সবকিছু বোঝায় যা একদিন সে-ই পাবে, যে এখন নিজ সমস্ত সম্পদ বিলিয়ে দেয় ও তা তুচ্ছ করে; এজন্য পল বলেন, আমি ওই সবকিছু আবর্জনা বলেই গণ্য করি খ্রিষ্টকেই যেন লাভ করতে পারি (ফিলি ৩:৮), যিনি একমাত্র অমূল্য রত্ন।
যারা অন্ধকারে রয়েছে, তাদের পক্ষে প্রদীপ মূল্যবান, এবং তারা সূর্যোদয় পর্যন্তই তা ব্যবহার করে থাকে; মোশি ও অন্যান্য নবীদের মুখে যে গৌরব প্রকাশ পায়, সেই গৌরবও মূল্যবান; তার মধ্য দিয়ে আমরা অনুমান করতে পারি, আমরাও সেই খ্রিষ্টের গৌরবদর্শন অর্জন করব যাঁর বিষয়ে পিতা সাক্ষ্যদান করে বললেন, ইনি আমার প্রিয় পুত্র, এঁতে আমি প্রসন্ন (মথি ৩:১৭)।
তবু মহত্তর গৌরবের কারণেই এখনও তা গৌরবান্বিত হয়নি যা সেসময় আংশিকভাবে গৌরবান্বিত হয়েছিল—যদিও চূড়ান্ত ও সিদ্ধ গৌরবলাভ করতে আমাদের প্রস্তুত করার জন্য আমাদের পক্ষে সেই গৌরবও প্রয়োজন যা একদিন বাতিল করা হবে। উদাহরণ স্বরূপ, অসিদ্ধ জ্ঞান আমাদের পক্ষে প্রয়োজন, যদিও তেমন জ্ঞান তখন লোপ পাবে যখন সিদ্ধ জ্ঞান আবির্ভূত হবে।
কেননা প্রতিটি আত্মা যা প্রথম বয়সে রয়েছে ও পরমসিদ্ধি লাভের জন্য সচেষ্ট আছে, পরিপক্ব বয়সে না পৌঁছা পর্যন্ত তার পক্ষে একজন অভিভাবক, পরিচালক ও ব্যবস্থাপকেরই প্রয়োজন। তখনই যে ব্যক্তি একসময় সবকিছুর মালিক হয়েও তবু দাসের চেয়ে ভিন্ন ছিল না, সেই ব্যক্তি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে অভিভাবক, পরিচালক ও ব্যবস্থাপকের হাত থেকে সেই সমস্ত পৈতৃক সম্পদ গ্রহণ করে।
অবস্থা বুঝে এসব কিছু সেই মূল্যবান রত্নেরই অনুরূপ, সেই পরমসিদ্ধিরও অনুরূপ যা আগমন করামাত্র অসিদ্ধ ও সাময়িক সমস্ত কিছু বাতিল করে দেয়। অর্থাৎ কিনা, তেমনটি তখনই ঘটে, একজন যখন পূর্ণ প্রভুজ্ঞান সংক্রান্ত সমস্ত বিদ্যা দ্বারা তৈরী হয়ে খ্রিষ্টতত্ত্বের পরমসিদ্ধি লাভ করে। তথাপি অনেকেই রয়েছে, যারা বিধানের অগণিত রত্নের সৌন্দর্য ও নবীদের শিক্ষার পরিপক্বতা উপলব্ধি না করে—সেই সমস্ত কিছু যদিও এখনও অপূর্ণাঙ্গ—নিজেদের ভুলিয়ে মনে করে তারা মূল্যবান রত্ন খুঁজেই পেয়েছে; আরও, তারা মনে করে, সেই সমস্ত ব্যাখ্যা ও ধারণার সহায়তায় ছাড়াও তারা খ্রিষ্টযিশু-জ্ঞানের অসাধারণ সৌন্দর্য দর্শন করতে পারবে।
সে জ্ঞানের তুলনায় আমরা বলতে পারি, যা কিছু তেমন জ্ঞানের পূর্ববর্তী, তা যদিও প্রকৃতপক্ষে আবর্জনা বলে অভিহিত করা যায় না, তবু আবর্জনার মতই দেখতে! তথাপি কৃষক ডুমুরগাছের গোড়ায় যদিও আবর্জনাই দেয়, তবু ঠিক সেই আবর্জনাই গাছ ফলশালী হতে সাহায্য করে।
সুতরাং, এক একটা জিনিসের জন্য উপযুক্ত সময় আছে, ও আকাশের নিচে যত কিছু রয়েছে তার অনুকূল সুযোগ রয়েছে; ফলে অপরূপ রত্নগুলো সংগ্রহ করার এক সময় রয়েছে, ও সংগ্রহ করার পর একমাত্র মূল্যবান রত্ন খুঁজে পাবার অন্য এমন সময় রয়েছে, যে সময়ে তা কিনবার জন্য সমস্ত কিছু বিক্রি করা বাঞ্ছনীয়।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১০৩
ধুয়ো: প্রাণ আমার, প্রভুকে বল ধন্য;
ভুলে যেয়ো না তাঁর সমস্ত উপকার।
তিনিই তো তোমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করেন,
তোমার সমস্ত রোগ-ব্যাধি নিরাময় করেন,
গহ্বর থেকে মুক্ত করেন তোমার জীবন,
তোমাকে কৃপা ও স্নেহে করেন মুকুট-ভূষিত, [ধুয়ো]
তোমার আকাঙ্ক্ষা মঙ্গলদানে পরিতৃপ্ত করেন,
তাই তোমার যৌবন ঈগলের মত নবীন হয়ে ওঠে।
সকল অত্যাচারিতের প্রতি
ধর্মময়তা ও ন্যায়ই প্রভুর আচরণ। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আমরা গ্রহণ করেছি এই দিব্য সাক্রামেন্ত
যা তোমার পুত্রের যন্ত্রণাভোগের চিরন্তন স্মারক চিহ্ন।
আশীর্বাদ কর: তোমার অসীম ভালবাসার এই দান
যেন আমাদের পরিত্রাণের জন্য সার্থক হয়ে ওঠে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]