সাধারণকাল
![]() • পরমপবিত্র ত্রিত্ব পঞ্চাশত্তমীর পরবর্তী রবিবারে পালিত হয়। • খ্রিষ্টের পরমপবিত্র দেহরক্ত পরমপবিত্র ত্রিত্বের পরবর্তী রবিবারে পালিত হয়। • পরমারাধ্য যিশুহৃদয় পঞ্চাশত্তমীর পরবর্তী দ্বিতীয় রবিবারের পরবর্তী শুক্রবারে পালিত হয়। • বিশ্বরাজ আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্ট সাধারণকালের শেষ রবিবারে পালিত হয়। |
রবিবার: ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ | ৩২ | ৩৩
সাধারণকালের মহাপর্বচতুষ্টয়: ত্রিত্ব | খ্রিষ্টের দেহরক্ত | যিশুহৃদয় | খ্রিষ্টরাজা
২৬শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, তুমি তো করুণা ও ক্ষমা দানেই নিজেকে সর্বশক্তিমান বলে প্রকাশ কর;
অনুনয় করি: আমাদের উপর তোমার অনুগ্রহধারা অবিরতই বর্ষণ কর,
আমরা যেন তোমার অঙ্গীকৃত দানের দিকে দ্রুত পদে চলে
তোমার অনুগ্রহে স্বর্গীয় ধন-ঐশ্বর্যের অংশীদার হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী এজেকিয়েলের পুস্তক থেকে পাঠ (১৮:২৫-২৮)
প্রভু একথা বলছেন: ‘তোমরা নাকি বলছ: প্রভুর ব্যবহার সঠিক নয়। হে ইস্রায়েলকুল, একবার শোন! আমার ব্যবহার কি সঠিক নয়, না, তোমাদেরই ব্যবহার সঠিক নয়?
ধার্মিক মানুষ যখন নিজের ধর্মিষ্ঠতা থেকে ফিরে অন্যায় করে ও তার কারণে মরে, তখন ঠিক তার সাধিত অন্যায়ের কারণেই মরে।
একই প্রকারে দুর্জন যখন নিজের সাধিত দুষ্কর্ম থেকে ফিরে ন্যায় ও ধর্মাচরণ করে, তখন সে নিজেকে বাঁচায়। সে বিবেচনা করে নিজের সাধিত সমস্ত অধর্ম থেকে ফিরল; তাই সে অবশ্যই বাঁচবে, মরবে না।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ২৫
ধুয়ো: তোমার স্নেহ, তোমার কৃপা
মনে রেখ, প্রভু।
আমাকে চিনিয়ে দাও তোমার পথসকল, প্রভু,
আমাকে শিখিয়ে দাও তোমার পন্থাসকল।
তোমার সত্যে আমাকে চালনা কর, আমাকে শিক্ষা দাও,
তুমিই তো আমার ত্রাণেশ্বর; তোমাতেই আশা রাখি সারাদিন। [ধুয়ো]
তোমার স্নেহ, তোমার কৃপা মনে রেখ, প্রভু,
অনাদিকাল থেকেই সেই স্নেহ, সেই কৃপা।
আমার যৌবনকালের পাপ ও অন্যায় মনে রেখো না,
তোমার কৃপায় আমায় মনে রেখ, তোমার মঙ্গলময়তার খাতিরে, প্রভু। [ধুয়ো]
প্রভু মঙ্গলময়, ন্যায়শীল,
তাই পাপীদের তিনি শেখান তাঁর আপন পথ।
ন্যায়মার্গে বিনম্রদের চালনা করেন,
বিনম্রদের শিখিয়ে দেন তাঁর আপন পথ। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
ফিলিপ্পীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (২:১-১১)
প্রিয়জনেরা, খ্রিষ্টে যদি কোন প্রেরণা, যদি ভালবাসার কোন সান্ত্বনা, যদি আত্মার কোন সহভাগিতা, যদি কোন স্নেহ ও করুণা থাকে, তবে আমার আনন্দ পূর্ণ কর, অর্থাৎ তোমরা হয়ে ওঠ একমন, একপ্রেম, একপ্রাণ, একচিত্ত।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা অসার অহঙ্কারের বশে কিছুই করো না; বরং বিনম্রভাবে একে অন্যকে নিজের চেয়ে ভাল বলেই মনে কর। তোমরা প্রত্যেকে নিজের স্বার্থের দিকে নয়, পরের স্বার্থের দিকেই লক্ষ রাখ।
খ্রিষ্টযিশুতে যে মনোভাব ছিল, তা তোমাদের অন্তরেও যেন থাকে:
অবস্থায় ঈশ্বর হয়েও
তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সমতুল্যতাকে
আঁকড়ে ধরার বস্তু মনে করলেন না;
বরং দাসের অবস্থা ধারণ করে
ও মানুষের সাদৃশ্য আপন করে
তিনি নিজেকে রিক্ত করলেন;
আকারে প্রকারে মানুষ বলে প্রতিপন্ন হয়ে
তিনি মৃত্যু পর্যন্ত,
এমনকি ক্রুশমৃত্যু পর্যন্তই নিজেকে বাধ্য করায়
নিজেকে অবনমিত করলেন।
আর এইজন্য ঈশ্বর তাঁকে উন্নীত করলেন,
ও তাঁকে দিলেন সেই নাম,
সকল নামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ যে নাম,
যেন যিশু-নামে স্বর্গে মর্তে ও ভূগর্ভে
প্রতিটি জানু আনত হয়,
ও পিতা ঈশ্বরের গৌরবার্থে
প্রতিটি জিহ্বা স্বীকার করে, ‘যিশুখ্রিষ্টই প্রভু’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমার মেষগুলি আমার কণ্ঠে কান দেয়—একথা বলছেন প্রভু;
তাদের আমি জানি আর তারা আমার অনুসরণ করে।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২১:২৮-৩২)
একদিন যিশু প্রধান যাজকদের ও জাতির প্রবীণদের বললেন, ‘আপনারা এ ব্যাপারে কী মনে করেন? একজন লোকের দু’টি ছেলে ছিল; তিনি প্রথমজনকে গিয়ে বললেন, বৎস, যাও, আজ আঙুরখেতে কাজ কর। সে উত্তর দিল, আমার ইচ্ছা নেই; কিন্তু শেষে অনুশোচনা করে গেল। পরে তিনি দ্বিতীয়জনকে গিয়ে একই কথা বললেন; সে উত্তর দিল, প্রভু, আমি যাচ্ছি, কিন্তু গেল না। সেই দু’জনের মধ্যে কে পিতার ইচ্ছা পালন করল?’ তাঁরা বললেন, ‘প্রথমজন।’
যিশু তাঁদের বললেন, ‘আমি আপনাদের সত্যি বলছি, কর-আদায়কারীরা ও বেশ্যারা আপনাদের আগে আগেই ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে চলছে; কেননা যোহন ধর্মময়তার পথে আপনাদের কাছে এসেছিলেন, কিন্তু আপনারা তাঁকে বিশ্বাস করলেন না; অথচ কর-আদায়কারীরা ও বেশ্যারা তাঁকে বিশ্বাস করল। আর তা দেখা সত্ত্বেও আপনারা এমন অনুশোচনা করলেন না যাতে তাঁকে বিশ্বাস করেন।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
আলেক্সান্দ্রিয়ার ক্লেমেণ্ট-লিখিত ‘কোন্ ধনী পরিত্রাণ পাবে?’
যে কেউ সমস্ত অন্তর দিয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশে মন ফেরায়, তার জন্য দরজা উন্মুক্ত, ও পিতা মনের আনন্দে সন্তানকে গ্রহণ করেন—কিন্তু সন্তানের প্রকৃত অনুতাপ চাই। যাতে প্রকৃত তপস্যা ঘটে, একই অপরাধে পতিত না হওয়া যথেষ্ট নয়, বরং তখনই প্রকৃত তপস্যা ঘটে, যখন আমরা আত্মা থেকে সেই সমস্ত পাপ উচ্ছেদ করি যেগুলোর জন্য আমরা মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য বলে নিজেদের স্বীকার করি। সেই সমস্ত পাপ বাতিল করলে তবেই ঈশ্বর তোমার সঙ্গে আবার বসবাস করবেন; কেননা খ্রিষ্ট একথা বলেন যে, পাপী মনপরিবর্তন করে তপস্যা করলে, তা স্বর্গে পিতা ও দূতদের জন্য গভীরতম ও অতুলনীয় আনন্দ। এজন্য তিনি ঘোষণা করেন, আমি বলিদানে নয়, প্রেমেই প্রীত (হো ৬:৬); আমি দুর্জনের মৃত্যুতে প্রীত নই, আমি বরং চাই, দুরাচার ছেড়ে সে যেন বাঁচে (এজে ৩৩:১১); সিঁদুরে-লাল হলেও তোমাদের পাপ তুষারের মত শুভ্র হয়ে উঠবে; টকটকে লাল হলেও হয়ে উঠবে পশমের মত (ইশা ১:১৮)।
পাপ মুছে দেওয়া ও দোষ আরোপ না করা কেবল ঈশ্বরেরই অধিকার, কারণ তিনি আমাদেরও এ আদেশ দিয়েছেন আমরা যেন প্রত্যেক দিন অনুতপ্ত ভাইকে ক্ষমা করি। আর খারাপ হয়েও আমরা যখন মঙ্গলকর কিছু করতে পারি, তখন যিনি দয়াদানকারী পিতা, তিনি আর কতই না মঙ্গলময় হবেন। যাঁর কাছ থেকে সমস্ত সান্ত্বনা উদ্গত, যিনি দয়ায় ও প্রসন্নতায় পূর্ণ, তিনি যারা মনপরিবর্তন করে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বহু ধৈর্য দেখাতে পারেন।
প্রকৃত মনপরিবর্তন তখনই ঘটে, যখন অতীত বিষয়ের দিকে আর তাকাই না, যখন দৃঢ়তার সঙ্গে বলি, আর পাপ নয়। তাই ঈশ্বর অতীত জীবনের পাপ ক্ষমা করেন; কিন্তু পুনরায় পাপে পতিত না হওয়ার জন্য প্রত্যেকে নিজের কাছেই দায়ী। আর অনুতাপের প্রকৃত মনোভাব এরূপ: আমরা কৃত পাপগুলোর জন্য দুঃখভোগ করব ও অবিরতই প্রার্থনা করব পিতা যেন সেগুলোর স্মৃতি মুছে দেন: কেবল তিনিই নিজের দয়ায় অতীত কিছু মুছে দিতে পারেন ঠিক যেন তা কখনও ঘটেনি; আবার কেবল তিনিই পবিত্র আত্মার অনুগ্রহ দ্বারা অতীত জীবনের অমঙ্গল মুছে দিতে পারেন।
হে চোর, তুমি কি চাও তোমার অপরাধ মুছে দেওয়া হোক? আর চুরি নয়! যা চুরি করেছ, তা ফিরিয়ে দাও, আর তার উপরে বাড়তি কিছুও দাও। হে মিথ্যাসাক্ষী, সত্যবাদী হতে শেখ! তুমি যে শপথ ভঙ্গ করে থাক, আর শপথ নয়! তাছাড়া অন্য যত অন্যায় প্রবণতা ও রিপুও ছিন্নভিন্ন কর।
যে বিশৃঙ্খল ভাবাবেগ ইতিমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেগুলোকে একপলকেই উচ্ছেদ করা হয়তো সম্ভবপর নয়; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ, অন্যদের প্রার্থনা ও ভাইবোনদের সহায়তার সঙ্গে প্রকৃত তপস্যা ও অবিরত বাণীধ্যানও মিলিত করলে মানুষ এতেও কৃতকার্য হতে পারে।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১১৯
ধুয়ো: স্মরণে রেখো, প্রভু, তোমার এ দাসের কাছে দেওয়া তোমার সেই কথা,
যার উপর তুমি স্থাপন করেছ আমার আশা।
দর্পী মানুষ আমাকে কতই না অবজ্ঞা করে,
আমি কিন্তু সরে যাইনি তোমার বিধান থেকে।
অতীতকালের তোমার সুবিচার সকল স্মরণে রাখি,
প্রভু, এতেই সান্ত্বনা পাই। [ধুয়ো]
যারা পরিত্যাগ করে তোমার বিধান,
সেই দুর্জনদের বিরুদ্ধে রোষ ধরেছে আমায়।
আমার এ নির্বাসনের দেশে
তোমার বিধিমালা আমার কাছে সঙ্গীত যেন। [ধুয়ো]
রাতে তোমার নাম স্মরণ করি, প্রভু,
আমি মেনে চলি তোমার বিধান।
তোমার আদেশমালা পালন করা:
এটিই সাধনা আমার। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এই স্বর্গীয় সাক্রামেন্ত আমাদের জন্য হয়ে উঠুক দেহমনের যথার্থ প্রতিকার:
খ্রিষ্টের মৃত্যু ঘোষণা ক’রে আমরা যেমন তাঁর সঙ্গে যন্ত্রণায় মিলিত হয়েছি,
তেমনি যেন তাঁর স্বর্গীয় গৌরবেরও অংশীদার হতে পারি।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
২৭শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান সনাতন ঈশ্বর, আমাদের প্রার্থনায় তোমার সাড়া
আমাদের প্রত্যাশার অতীত, আমাদের যোগ্যতারও অতীত। আমাদের উপর
তোমার করুণা বর্ষণ কর: আমাদের বিবেক যা ভয় করে, তা দূর করে দাও;
আমাদের যা মিনতি করার সাহসও নেই, তা মঞ্জুর কর।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৫:১-৭)
আমার সখার উদ্দেশে আমি একটা গান গাইব,
তার আঙুরখেতের প্রেমগান।
আমার সখার ছিল একটা আঙুরখেত,
উর্বরতম এক উপপর্বতের উপর।
সে তার চারপাশ কোদাল দিয়ে কোপাল, তার যত পাথর তুলে ফেলল,
সেখানে পুঁতল সেরা আঙুরগাছ;
তার মাঝখানে একটা উচ্চ ঘর গেঁথে তুলল,
মাড়াইকুণ্ডও খুঁড়ে নিল।
সে প্রত্যাশা করছিল, লতায় ফল ধরবে,
কিন্তু ধরল বুনো আঙুর।
তাই এখন, যেরুশালেম-অধিবাসীরা ও যুদার মানুষ, বিনয় করি,
আমার ও আমার আঙুরখেতের মধ্যে তোমরাই বিচার কর।
আমার আঙুরখেতে আমার পক্ষে আর এমন কী করার ছিল,
যা আমি করিনি?
আমি যখন প্রত্যাশা করছিলাম, আঙুরফল ধরবে,
তখন কেন তাতে ধরল বুনো আঙুর?
এখন শোন, আমার আঙুরখেতের প্রতি যা করতে যাচ্ছি,
তা তোমাদের জানিয়ে দেব:
আমি তার বেড়া উঠিয়ে দেব যাতে খেতটা চারণমাঠ হয়ে যায়;
তার প্রাচীর ভেঙে ফেলব যাতে খেতটা পদদলিত হয়।
আমি তা মরুভূমি করব,
তার লতা ছাঁটা হবে না, খেত কোদাল দিয়ে কোপানো হবে না,
সেখানে গজিয়ে উঠবে শেয়ালকাঁটা ও কাঁটাগাছ;
মেঘপুঞ্জকে আজ্ঞা দেব, যেন তার উপর বৃষ্টির জল আর বর্ষণ না করে।
আচ্ছা, সেনাবাহিনীর প্রভুর সেই আঙুরখেত, সে তো ইস্রায়েলকুল;
তাঁর সুখের সেই চারাগাছ, তা তো যুদার মানুষ;
তিনি ন্যায় প্রত্যাশা করছিলেন,
কিন্তু দেখ, অন্যায়!
তিনি ধর্মময়তা প্রত্যাশা করছিলেন,
কিন্তু দেখ, অত্যাচারিতের চিৎকার!
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৮০
ধুয়ো: প্রভুর আঙুরখেত,
সে তো ইস্রায়েলকুল।
মিশর থেকে তুমি আনলে একটি আঙুরলতা,
বিজাতিদের তাড়িয়ে দিয়েই তুমি সেই লতা পুঁতলে;
তার জন্য তুমি নিড়িয়ে নিলে ভূমি,
তা শিকড় নামাল আর সেই লতায় পৃথিবী হল পরিপূর্ণ। [ধুয়ো]
তুমি কেন ভেঙে দিলে তার প্রাচীর?
এখন যত পথিক লুটে নেয় তার ফল।
বন্যশূকর তা তছনছ করে ফেলে,
সেখানে চরে বনের পশু। [ধুয়ো]
হে সেনাবাহিনীর পরমেশ্বর, ফিরে এসো,
স্বর্গ থেকে চেয়ে দেখ, এ আঙুরলতাকে দেখতে এসো।
রক্ষা কর সেই চারাগাছ যা তোমার ডান হাত পুঁতেছে একদিন,
সেই পুত্রসন্তানকে যাকে নিজের জন্যই করেছ শক্তিশালী। [ধুয়ো]
আর কখনও তোমাকে ছেড়ে আমরা চলে যাব না,
তুমি আমাদের সঞ্জীবিত করবে আর আমরা করব তোমার নাম।
হে প্রভু, সেনাবাহিনীর পরমেশ্বর, আমাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত কর,
শ্রীমুখ উজ্জ্বল করে তোল, তবেই আমরা পাব পরিত্রাণ। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
ফিলিপ্পীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৪:৬-৯)
প্রিয়জনেরা, কোন বিষয়ে চিন্তিত হয়ো না, কিন্তু সমস্ত বিষয়ে প্রার্থনা ও মিনতি দ্বারা ধন্যবাদ-স্তুতি করে তোমাদের সকল যাচনা ঈশ্বরের কাছে জানাও। তবে ঈশ্বরের সেই শান্তি, যা সমস্ত ধারণার অতীত, তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রিষ্টযিশুতে রক্ষা করবে।
শেষ কথা, ভাই: যা কিছু সত্য, শ্রদ্ধার যোগ্য, ধর্মসম্মত ও পুণ্যময়, প্রীতিকর, শুভদায়ক, সদ্গুণমণ্ডিত ও প্রশংসনীয়, তোমরা তারই অনুধ্যান কর। আমার কাছে যা কিছু শিখেছ, গ্রহণ করেছ, শুনেছ ও দেখেছ, সেই সবই কর; তাহলে শান্তিবিধাতা ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে থাকবেন।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমিই তোমাদের বেছে নিয়েছি,
—একথা বলছেন প্রভু—
যেন তোমরা গিয়ে ফলশালী হয়ে ওঠ
ও তোমাদের ফল স্থায়ী হতে পারে।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২১:৩৩-৪৩)
একদিন যিশু প্রধান যাজকদের ও জাতির প্রবীণদের বললেন, ‘আর একটা উপমা-কাহিনী শুনুন: একজন গৃহস্বামী ছিলেন, তিনি আঙুরখেত করে তার চারদিকে বেড়া দিলেন, তার মধ্যে আঙুর পেষাইয়ের জন্য গর্ত কেটে নিলেন ও একটা উচ্চ ঘরও গাঁথলেন; পরে তা কৃষকদের কাছে ইজারা দিয়ে অন্য দেশে চলে গেলেন।
ফসল-সংগ্রহের সময় এলে তিনি নিজের অংশ সংগ্রহ করতে কৃষকদের কাছে নিজের কর্মচারীদের প্রেরণ করলেন। কিন্তু কৃষকেরা তাঁর কর্মচারীদের ধরে একজনকে মারধর করল, আর একজনকে হত্যা করল, আর একজনকে পাথর মারল। আবার তিনি আগের চেয়ে আরও বহু কর্মচারী প্রেরণ করলেন; কিন্তু তাদের প্রতিও তারা সেইমত ব্যবহার করল।
পরিশেষে তিনি নিজের পুত্রকে তাঁদের কাছে প্রেরণ করলেন; ভাবছিলেন, তারা আমার পুত্রকে সম্মান দেখাবে। কিন্তু সেই কৃষকেরা পুত্রকে দেখে নিজেদের মধ্যে বলল, এ উত্তরাধিকারী; এসো, আমরা একে হত্যা করে এর উত্তরাধিকার হাতিয়ে নিই। তাই তারা তাঁকে ধরে আঙুরখেতের বাইরে ফেলে দিল ও হত্যা করল।
আচ্ছা, আঙুরখেতের প্রভু যখন আসবেন, তখন সেই কৃষকদের কি করবেন?’ তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘সেই ধূর্তদের শোচনীয় মৃত্যু ঘটাবেন, এবং সেই খেত এমন অন্য কৃষকদের কাছে ইজারা দেবেন, যারা ফলের সময়ে তাঁকে ফল দেবে।’ যিশু তাঁদের বললেন, ‘আপনারা কি শাস্ত্রে একথা কখনও পড়েননি,
গৃহনির্মাতারা যে প্রস্তরটি প্রত্যাখ্যান করল,
তা তো হয়ে উঠেছে সংযোগপ্রস্তর;
এ কাজ স্বয়ং প্রভুরই কাজ,
আমাদের দৃষ্টিতে তা আশ্চর্যময়!
এজন্য আমি আপনাদের বলছি, আপনাদের কাছ থেকে ঈশ্বরের রাজ্য কেড়ে নেওয়া হবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হবে, যে জাতি তা ফলপ্রসূ করবে।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
ইশাইয়ার পুস্তকে আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ সাধু সিরিলের ব্যাখ্যা
আমাদের দশা ধারণ করা ও মানব হীনাবস্থায় নিজেকে নত করা বাণীর পক্ষে কষ্টকর ছিল; অথচ তিনি বলেন: আমার বিচার প্রভুর কাছে, ও আমার কষ্ট আমার ঈশ্বরের সম্মুখে। তাদের পরিত্রাণের জন্য আমি কী কষ্ট বহন করেছি, তা পিতা জানেন, সেজন্য তিনি বিচারও ব্যক্ত করলেন।
তুমি কি পিতার বিচার দেখতে ও মানুষের উপরে জারীকৃত রায় শুনতে চাও? তাহলে ত্রাণকর্তাকে শোন, তিনি তো ইহুদীদের প্রধানদের একথা বলেন, একজন গৃহস্বামী ছিলেন, তিনি আঙুরখেত করে তার চারদিকে বেড়া দিলেন, তার মধ্যে আঙুর পেষাইয়ের জন্য গর্ত কেটে নিলেন ও একটা উচ্চ ঘরও গাঁথলেন; পরে তা কৃষকদের কাছে ইজারা দিয়ে চলে গেলেন (মথি ২১:৩৩)।
সময় হলে তিনি ফল সংগ্রহ করতে নিজ দাসদের পাঠালে তাদের সকলের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হল। শেষে তিনি যখন পুত্রকে প্রেরণ করলেন, তখন তারা দূর থেকে তাঁকে দেখে নিজেদের মধ্যে বলল, এ উত্তরাধিকারী; এসো, আমরা একে হত্যা করে এর উত্তরাধিকার হাতিয়ে নিই (মথি ২১:৩৮)। আর তারা সত্যিই তাঁকে হত্যা করল।
উপমা-কাহিনী বর্ণনা শেষ করে প্রভু বলে চলেন, আঙুরখেতের প্রভু যখন আসবেন, তখন সেই কৃষকদের কি করবেন? (মথি ২১:৪০)। তাঁরা তাঁকে বললেন, সেই ধূর্তদের শোচনীয় মৃত্যু ঘটাবেন, এবং সেই খেত এমন অন্য কৃষকদের কাছে ইজারা দেবেন, যারা ফলের সময়ে তাঁকে ফল দেবে (মথি ২১:৪১)। তখন খ্রিষ্ট বলে চললেন, এজন্য আমি আপনাদের বলছি, আপনাদের কাছ থেকে ঈশ্বরের রাজ্য কেড়ে নেওয়া হবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হবে, যে জাতি তা ফলপ্রসূ করবে (মথি ২১:৪৩)। আর তেমনটি ঘটল, কারণ আঙুরখেতের অন্য রক্ষক ও প্রজ্ঞাবান কৃষক নিযুক্ত হলেন, তথা প্রভুর শিষ্যেরা। তাঁদের সেবাকালে মেঘপুঞ্জ জল দিল, যদিও মেঘপুঞ্জকে ইহুদীদের আঙুরখেত জলসিক্ত না করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে খ্রিষ্ট কাঁটা নয়, আঙুরফলই সংগ্রহ করলেন; এজন্য আমাদের একথা বলতে শেখানো হয়েছে, যখন প্রভু নিজ মঙ্গল দান করবেন, তখন আমাদের ভূমি দান করবে তার নিজের ফল (সাম ৮৫:১৩)।
কেউ এ কথাও বলতে পারবে যে, পিতার চোখের সামনে পুত্রের কষ্ট উপস্থিত ছিল, ফলে তিনি ন্যায্য রায় জারি করলেন। তুমি আমার সঙ্গে ব্যাপারটার যুক্তি লক্ষ কর, ও সেই ব্যবস্থাই বিচার-বিবেচনা কর যা প্রজ্ঞাপূর্ণ পল একথায় ব্যক্ত করেন: খ্রিষ্ট অবস্থায় ঈশ্বর হয়েও ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সমতুল্যতাকে আঁকড়ে ধরার বস্তু মনে করলেন না; বরং মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশমৃত্যু পর্যন্ত পিতার কাছে বাধ্য হয়ে নিজেকে অবনমিত করলেন; এজন্য ঈশ্বর তাঁকে উন্নীত করলেন এবং তাঁকে দিলেন সেই নাম, সকল নামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ যে নাম, যেন যিশু-নামে প্রতিটি জানু আনত হয় (ফিলি ২:৬, ৮-১০)। কেননা বাণী ছিলেন ঈশ্বর ও এখনও তিনি ঈশ্বর, কিন্তু মানুষ বলে অভিহিত হওয়ার পর, অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ হওয়ার পর তিনি সশরীরে নিজ গৌরবে আরোহণ করলেন। তিনি বাস্তবিকই ঈশ্বর বলে স্বীকৃত হলেন, ও তাঁর কষ্টও বৃথা হয়নি, কেননা এ ব্যবস্থা তাঁর এমন গৌরবলাভেই সিদ্ধি লাভ করার কথা ছিল, যাতে তিনি নিজেকে অদ্ভুত ও অজানা এক ব্যক্তি করেন এমন নয়, বরং বিশ্বজগতের ত্রাণকর্তা ও মুক্তিসাধক রূপেই নিজেকে ঘোষণা করেন। তেমন কথা প্রকাশিত হলে এমনটি ঘটল যে, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী ও পাতালও তাঁর সম্মুখে প্রণতি জানাল।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩১
ধুয়ো: প্রভুর উপরে যে আশা রাখে, যে প্রাণ তাঁর অন্বেষণ করে,
তার পক্ষে প্রভুই মঙ্গল।
কতই না মহান তোমার সেই মঙ্গলময়তা, প্রভু,
যা তাদের জন্য তুমি সঞ্চিত রাখ যারা ভয় করে তোমায়,
যা আদমসন্তানদের দৃষ্টিগোচরে
তুমি তোমার আশ্রিতজনকে মঞ্জুর কর। [ধুয়ো]
মানুষের চক্রান্ত থেকে তুমি আপন শ্রীমুখের নিভৃতে তাদের লুকিয়ে রাখ,
জিভের আক্রমণ থেকে তুমি আপন কুটিরেই তাদের নিরাপদে রাখ।
ধন্য প্রভু! সুরক্ষিত নগরে আমার জন্য
তিনি সাধন করলেন তাঁর কৃপার আশ্চর্য কীর্তি। [ধুয়ো]
বিহ্বল হয়ে আমি বলেছিলাম,
‘তোমার দৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন আমি,’
তবু যখন তোমার কাছে চিৎকার করলাম,
তুমি তখন শুনলে আমার মিনতির কণ্ঠ। [ধুয়ো]
প্রভুকে ভালবাস, তাঁর ভক্তজন সবাই, প্রভু আপন বিশ্বস্তদের রক্ষা করেন,
কিন্তু অহঙ্কারীর উপর অপর্যাপ্ত প্রতিফল দেন।
শক্ত হও, অন্তর দৃঢ় করে তোল তোমরা,
তোমরা সকলে, যারা প্রভুর প্রত্যাশায় আছ। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আশীর্বাদ কর:
এ সাক্রামেন্ত গ্রহণের ফলে যেন আমাদের ক্ষুধা ও পিপাসা মিটে যায়:
যাঁকে গ্রহণ করেছি, আমরা যেন সেই খ্রিষ্টে রূপান্তরিত হতে পারি।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
২৮শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার অনুগ্রহ আমাদের যত কর্মের সূচনা উদ্দীপিত করুক,
তোমার অনুগ্রহ সেই কর্মের সমাপ্তি আশিসমণ্ডিত করুক,
তোমার অনুগ্রহ শুভকর্ম সম্পাদনে আমাদের চিরতৎপর করে তুলুক।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (২৫:৬-১০ক)
সেনাবাহিনীর প্রভু এই পর্বতের উপর সকল জাতির জন্য
সাজিয়ে রাখবেন উৎকৃষ্ট খাদ্যের এক মহাভোজ,
উত্তম আঙুররস, রসাল-শাঁসাল খাদ্য, সেরা আঙুররসের এক মহাভোজ।
এই পর্বতের উপরে তিনি বিলুপ্ত করবেন সেই আচ্ছাদন,
যা আচ্ছন্ন করে রাখছিল সকল জাতির মানুষের মুখ,
সেই আবরণ, যা পাতা ছিল সকল দেশের মানুষের উপর।
তিনি মৃত্যুকে চিরকালের মতই বিলুপ্ত করবেন;
স্বয়ং পরমেশ্বর প্রভু সকলের মুখ থেকে মুছে দেবেন অশ্রুজল,
তাঁর আপন জাতির অপমান গোটা পৃথিবী থেকে দূর করে দেবেন,
কারণ স্বয়ং প্রভুই একথা বললেন।
সেদিন সকলে বলবে, ‘দেখ, ইনিই আমাদের পরমেশ্বর;
আমরা তাঁর উপরেই এই প্রত্যাশা রেখেছিলাম যে,
ইনি আমাদের ত্রাণ করবেন;
ইনিই সেই প্রভু, যাঁর উপরে প্রত্যাশা রেখেছিলাম;
এসো, তাঁর পরিত্রাণের জন্য উল্লাস করি, আনন্দ করি!’
কারণ প্রভুর হাত এই পর্বতের উপরেই থাকবে।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ২৩
ধুয়ো: আমি প্রভুর গৃহে বাস করব
চিরদিনের মত।
প্রভু আমার পালক;
অভাব নেই তো আমার।
আমায় তিনি শুইয়ে রাখেন নবীন ঘাসের চারণমাঠে,
আমায় নিয়ে যান শান্ত জলের কূলে; [ধুয়ো]
তিনি সঞ্জীবিত করেন আমার প্রাণ,
তাঁর নামের খাতিরে আমায় চালনা করেন ধর্মপথে।
মৃত্যু-ছায়ার উপত্যকাও যদি পেরিয়ে যাই,
আমি কোন অনিষ্টের ভয় করি না, তুমি যে আমার সঙ্গে আছ। [ধুয়ো]
তোমার যষ্টি, তোমার পাচনি আমাকে সান্ত্বনা দেয়।
আমার সম্মুখে তুমি সাজাও ভোজনপাট আমার শত্রুদের সামনে;
আমার মাথা তুমি তৈলসিক্ত কর;
আমার পানপাত্র উচ্ছলিত। [ধুয়ো]
মঙ্গল ও কৃপাই হবে আমার সহচর
আমার জীবনের সমস্ত দিন ধরে,
আমি প্রভুর গৃহে বাস করব
চিরদিনের মত! [ধুয়ো]
[ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
ফিলিপ্পীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৪:১২-১৪,১৯-২০)
প্রিয়জনেরা, আমি অভাবও ভোগ করতে শিখেছি, প্রাচুর্যও ভোগ করতে শিখেছি; সবকিছুতে সব দিক দিয়ে আমি দীক্ষিত: তৃপ্তি বা ক্ষুধা, প্রাচুর্য বা অভাব ভোগ করতে আমি দীক্ষিত। যিনি আমাকে শক্তি যোগান, তাঁর মধ্যে আমি সবই করতে সক্ষম। তবু তোমরা ক্লেশের সহভাগী হওয়ায় ভালই করেছ।
আর আমার ঈশ্বর বদান্যতা দেখিয়ে খ্রিষ্টযিশুতে তাঁর ঐশ্বর্য অনুসারে তোমাদের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করবেন। আমাদের পিতা ঈশ্বরের গৌরব হোক চিরদিন চিরকাল। আমেন!
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের পিতা
আমাদের অন্তর্দৃষ্টি আলোকিত করে তুলুন
যেন উপলব্ধি করতে পারি
তাঁর আহ্বানের প্রত্যাশা কী।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২২:১-১0)
সেসময়ে যিশু [প্রধান যাজকদের ও ফরিশীদের কাছে] আবার উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে কথা বলতে লাগলেন, তিনি তাঁদের বললেন, ‘স্বর্গরাজ্য তেমন এক রাজার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যিনি নিজের পুত্রের বিবাহভোজের আয়োজন করলেন। ভোজে নিমন্ত্রিতদের ডাকতে তিনি নিজ দাসদের পাঠালেন, কিন্তু তারা আসতে চাইল না।
তিনি আবার অন্য দাসদের এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, তোমরা নিমন্ত্রিতদের বল, দেখ, আমার ভোজ প্রস্তুত করেছি: আমার নানা বলদ ও নধর পশুগুলো কাটা হয়েছে, সবই তৈরী; বিবাহভোজে এসো। কিন্তু তারা কোন আগ্রহ না দেখিয়ে কেউ নিজের জমিতে, কেউ বা নিজের ব্যবসায় চলে গেল; আর বাকি সকলে তাঁর দাসদের ধরে অপমান করল ও হত্যা করল। তখন রাজা ক্রুদ্ধ হলেন, ও সৈন্যদল পাঠিয়ে সেই খুনীদের ধ্বংস করলেন ও তাদের শহর পুড়িয়ে দিলেন।
পরে তিনি নিজ দাসদের বললেন, বিবাহভোজ তো তৈরী, কিন্তু ওই নিমন্ত্রিতেরা যোগ্য ছিল না; তাই তোমরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে গিয়ে যত লোকের দেখা পাও, সকলকেই বিবাহভোজে ডেকে আন। তাই ওই দাসেরা রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে ভাল মন্দ যত লোকের দেখা পেল সকলকেই জড় করে আনল, তাতে বিবাহ-বাড়ি সেই সকল অতিথিতে ভরে গেল।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিনের উপদেশ
রাজপুত্রের বিবাহোৎসবের উপমা-কাহিনী ও সেই বিবাহভোজের কথা সকল ভক্তজনের কাছে জানা; আবার সকল ভক্তজন প্রভুর ভোজের মাহাত্ম্য, ও সেই ভোজ যে ইচ্ছুক সকলের জন্য নিবেদিত, তাও জানে। যখন রাজা অতিথিদের সঙ্গে দেখা করতে ভিতরে এলেন, তখন এমন একজনকে লক্ষ করলেন যে বিবাহ-পোশাক পরে ছিল না; তিনি তাকে বললেন, বন্ধু, কেমন করে তুমি বিবাহ-পোশাক ছাড়া এখানে প্রবেশ করেছ? (মথি ২২:১১-১২)।
আসলে ব্যাপারটা কী? এসো, আমার ভাইবোনেরা, ভক্তদের মধ্যে সেই বস্তু খোঁজ করি যা উত্তম ভক্তদের মন্দ ভক্তদের থেকে পৃথক করে: তা হল সেই বিবাহ-পোশাক। আমরা যদি বলি, সেই বিবাহ-পোশাক সাক্রামেন্তগুলোকে লক্ষ করে, তবে তোমরা নিজেরা দেখতে পাচ্ছ যে, সাক্রামেন্তগুলো ভাল মন্দ সকলেরই জন্য সমান। তাহলে সেই বিবাহ-পোশাক কি বাপ্তিস্ম লক্ষ করে? এ সাক্রামেন্ত বিনা কেউই ঈশ্বরের কাছে যেতে পারে না, একথা সন্দেহের অতীত বটে, তবুও যারা তা গ্রহণ করেছে, তারা সকলেই যে ঈশ্বরের কাছে এসে পৌঁছে এমন নয়। সুতরাং আমরা একথা সমর্থন করতে পারি না যে, সেই বিবাহ-পোশাক ঠিকই বাপ্তিস্মটা লক্ষ করে, কারণ আমি তেমন পোশাক ভাল মন্দ সকলেরই সম্পদ বলে দেখি। তাহলে কি যজ্ঞবেদিকে লক্ষ করে? বা বেদি থেকে যা গ্রহণ করি, তা কি লক্ষ করে? না, কারণ আমরা তাও দেখতে পাচ্ছি যে, অনেকে তা গ্রহণ ক’রে নিজেদের দণ্ডই খায় ও পান করে। তবে সেই বিবাহ-পোশাক কীবা হতে পারে? তা কি উপবাস? কিন্তু দুর্জনেরাও উপবাস করে। গির্জায় যাওয়া? দুর্জনেরাও যায়।
তবে সেই বিবাহ-পোশাক কী? দেখ, এই তো বিবাহ-পোশাক: প্রেরিতদূত বলেন, এই আদেশের শেষ লক্ষ্য হল ভালবাসা, যে ভালবাসা শুদ্ধ হৃদয়, সদ্বিবেক ও অকপট বিশ্বাস থেকে উৎপন্ন (১ তি ১:৫)। এই তো সেই বিবাহ-পোশাক। সাধারণ ভালবাসা নয়, কেননা প্রায়ই দেখা যায় যে দুর্জনেরাও একে অন্যকে ভালবাসে, তবু তাদের মধ্যে এমন ভালবাসা নেই যা শুদ্ধ হৃদয়, সদ্বিবেক ও অকপট বিশ্বাস থেকে উৎপন্ন। তেমন ভালবাসাই বিবাহ-পোশাক।
প্রেরিতদূত বলেন, আমি মানুষের ও স্বর্গদূতের ভাষায় কথা বলতে পারলেও আমার যদি ভালবাসা না থাকে, তবে আমি ঢংঢঙানো কাঁসর বা ঝনঝনে করতালমাত্র। আমি নবীয় বাণীর অধিকারী হলেও, ও সমস্ত রহস্য ও সমস্ত ধর্মজ্ঞান উপলব্ধি করতে পারলেও, আমার পর্বত সরিয়ে দেবার মত পূর্ণ বিশ্বাস থাকলেও আমার যদি ভালবাসা না থাকে, তবে আমি কিছুই নই (১ করি ১৩:১-২)। তিনি বলেন, আমার যদি এসব কিছু থাকে, কিন্তু আমার খ্রিষ্টই না থাকেন, তবে আমি কিছুই নই। তাহলে নবীয় বাণী কি নিষ্প্রয়োজন? নিগূঢ়তত্ত্ব উপলব্ধি করা কি মূল্যহীন? এ সমস্ত কিছু মূল্যবান বটে; কিন্তু আমার যদি এ সমস্ত দান থাকে কিন্তু ভালবাসা না থাকে, তবে আমি কিছুই নই।
কতগুলো না অনুগ্রহদান আছে, সেগুলোর একটিমাত্র না থাকলে যেগুলোর আর কোন মূল্য নেই! আমি যদিও মুক্তহস্তে গরিবদের ভিক্ষা দান করি, রক্তদান পর্যন্ত এমনকি পোড়াবার জন্য দেহদান পর্যন্তই যদিও খ্রিষ্টনাম বিষয়ে সাক্ষ্য দিই, তবু তা বৃথাই হবে, কারণ এসব কিছু গৌরবের খাতিরেও করা যেতে পারে। আর যেহেতু উত্তম কর্ম ভক্তির খাতিরে শুধু নয়, গৌরবের খাতিরেও সাধন করা যেতে পারে, সেজন্য প্রেরিতদূত নিজেই বিষয়টা উত্থাপন করেন; শোন তিনি কী বলেন, আর আমি আমার সমস্ত সম্পদ ক্ষুধার্তদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেও, এবং নিজের দেহকে পোড়াবার জন্যও নিবেদন করলেও আমার যদি ভালবাসা না থাকে, তবে তা আমার কোন উপকারে আসে না (১ করি ১৩:৩)। এই তো সেই বিবাহ-পোশাক। মন পরীক্ষা কর: তেমন পোশাক তোমাদের থাকলে তবে প্রভুর ভোজে নিশ্চিন্তে থাকবে।
বিবাহ-পোশাক বিবাহ-মর্যাদার উদ্দেশে, অর্থাৎ বর-কনের সম্মানার্থেই গ্রহণ করা হয়। তোমরা তো বরকে জান: বর সেই খ্রিষ্ট। কনেকেও জান: কনে সেই মণ্ডলী। তবে কনেকে সম্মান দেখাও, বরকে সম্মান দেখাও। তাঁদের উত্তমরূপে সম্মান দেখালে তোমরা তাঁদের সন্তান হবে। এর মধ্যে ভালবাসায় অগ্রসর হও: প্রভুকে ভালবাস, এতে নিজেদেরও ভালবাসতে শিখবে; প্রভুকে ভালবাসায় যদি নিজেদেরই ভালবাস, তাহলে নিশ্চয় ভাইদেরও নিজেদের মত ভালবাসবে।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩৪
ধুয়ো: ধনীরা অভাবগ্রস্ত হয়ে ক্ষুধায় ভুগছে,
কিন্তু প্রভুর অন্বেষীদের নেই কোন মঙ্গলের অভাব।
সর্বদাই আমি প্রভুকে বলব ধন্য,
নিয়তই আমার মুখে তাঁর প্রশংসাবাদ।
প্রভুতে গর্ব করে আমার প্রাণ,
শুনুক, আনন্দ করুক বিনম্র সকল। [ধুয়ো]
আমার সঙ্গে প্রভুর মহিমাকীর্তন কর,
এসো, আমরা একসঙ্গে তাঁর নাম বন্দনা করি।
প্রভুর অন্বেষণ করেছি, তিনি আমাকে সাড়া দিলেন,
যত ভয়-শঙ্কা থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন। [ধুয়ো]
তাঁর দিকে চেয়ে দেখ, তোমরা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে,
লজ্জায় ঢেকে যাবে না কো তোমাদের মুখ।
এই দীনহীন ডাকে, প্রভু শোনেন,
তার সকল সঙ্কট থেকে তাকে পরিত্রাণ করেন। [ধুয়ো]
প্রভুর দূত প্রভুভীরুদের চারপাশে শিবির বসান,
তাদের নিস্তার করেন।
আস্বাদন কর, দেখ প্রভু কত মঙ্গলময়,
সুখী সেই মানুষ, যে তাঁর আশ্রিতজন। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার মাহাত্ম্য স্বীকার করে আমরা বিনীত কণ্ঠে মিনতি জানাই:
তুমি যখন দেহরক্তের পরমপবিত্র খাদ্য দানে আমাদের পরিপুষ্ট কর,
তখন আমাদের সকলকে তাঁর ঐশস্বরূপের সহভাগী করে তোল।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
২৯শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান সনাতন ঈশ্বর, আশীর্বাদ কর:
আমাদের ইচ্ছা যেন সর্বদাই তোমার ইচ্ছার অনুরূপ হয়,
আমাদের অন্তর যেন নিয়তই তোমার মাহাত্ম্যের সেবায় একাগ্র থাকে।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৪৫:১,৪-৬)
প্রভু তাঁর তৈলাভিষিক্তজন কুরোশ সম্বন্ধে একথা বলেন,
‘আমি তার ডান হাত শক্ত করে ধরে আছি,
যেন তার সামনে দেশগুলিকে বশীভূত করি,
রাজাদের কোমরের রাজবন্ধনী খুলে ফেলি,
তার সামনে সমস্ত দ্বারের অর্গল খুলে দিই,
যাতে আর কোন নগরদ্বার বন্ধ না থাকে।
আমার দাস যাকোবের খাতিরে,
আমার মনোনীতজন ইস্রায়েলের খাতিরেই
আমি তোমার নাম ধরে তোমাকে ডেকেছি;
তুমি আমাকে না জানা সত্ত্বেও
আমি তোমাকে একটা উপাধি দিয়েছি।
আমিই প্রভু, আর কেউ নয়;
আমি ছাড়া অন্য ঈশ্বর নেই।
তুমি আমাকে না জানা সত্ত্বেও
আমি তোমাকে বলবান করব,
যেন পুব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকলে জানতে পারে যে,
আমি ব্যতীত অন্য কেউ নেই।
আমিই প্রভু, আর কেউ নয়।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৯৬
ধুয়ো: প্রভুতে আরোপ কর
গৌরব ও শক্তি।
প্রভুর উদ্দেশে গাও নতুন গান,
প্রভুর উদ্দেশে গান গাও, সমগ্র পৃথিবী।
জাতি-বিজাতির মাঝে বর্ণনা কর তাঁর গৌরব,
সর্বজাতির মাঝে তাঁর সমস্ত আশ্চর্য কাজ। [ধুয়ো]
প্রভু মহান, মহাপ্রশংসনীয়,
সকল দেবতার চেয়ে ভয়ঙ্কর তিনি।
জাতিগুলির সকল দেবতা পুতুল মাত্র,
কিন্তু প্রভুই আকাশমণ্ডলের নির্মাণকর্তা। [ধুয়ো]
প্রভুতে আরোপ কর, হে জাতিগুলির গোত্রসকল,
প্রভুতে আরোপ কর গৌরব ও শক্তি,
প্রভুতে আরোপ কর তাঁর নামের গৌরব;
অর্ঘ্যদান হাতে করে তাঁর প্রাঙ্গণে কর প্রবেশ। [ধুয়ো]
তাঁর পবিত্রতার আবির্ভাবে প্রভুর সম্মুখে কর প্রণিপাত।
সমগ্র পৃথিবী, তাঁর উদ্দেশে কম্পিত হও।
জাতি-বিজাতির মাঝে বল, ‘প্রভু রাজত্ব করেন।’
তিনি সততার সঙ্গে জাতিসকলকে বিচার করবেন। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
থেসালোনিকীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (১:১-৫খ)
আমরা, পল, সিল্ভানুস ও তিমথি, আমরা পিতা ঈশ্বরে ও প্রভু যিশুখ্রিষ্টে আশ্রিত থেসালোনিকীয় মণ্ডলীর সমীপে: অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের উপর বর্ষিত হোক।
আমাদের প্রার্থনায় তোমাদের কথা স্মরণ করে আমরা তোমাদের সকলের জন্য সর্বদাই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই; আমরা তোমাদের সক্রিয় বিশ্বাস, তোমাদের পরিশ্রমী ভালবাসা ও আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টে তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ প্রত্যাশার কথা আমাদের ঈশ্বর ও পিতার সামনে অবিরত স্মরণ করে থাকি; কেননা, ভাই, তোমরা যারা ঈশ্বরের ভালবাসার পাত্র, সেই তোমাদের সম্বন্ধে আমরা জানি, তোমরা তাঁর মনোনীতজন, কারণ আমাদের সুসমাচার কথার মধ্য দিয়ে শুধু নয়, কিন্তু পরাক্রমে ও পবিত্র আত্মায় ও গভীরতম প্রত্যয়েও তোমাদের কাছে ব্যাপ্ত হয়েছিল।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
জীবনের বাণী উচ্চ করে ধরে রেখে
জগতে জ্যোতিষ্কেরই মত উজ্জ্বল আলোতে উদ্ভাসিত হও।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২২:১৫-২১)
সেসময়ে ফরিশীরা চলে গিয়ে পরামর্শ করতে বসলেন, কীভাবে যিশুকে তাঁর নিজের কথার ফাঁদে ফেলা যায়: হেরোদের সমর্থকদের সঙ্গে নিজেদের কয়েকজন শিষ্যের মাধ্যমে তাঁরা তাঁকে বলে পাঠালেন, ‘গুরু, আমরা জানি, আপনি সত্যাশ্রয়ী, এবং ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে সত্য শিক্ষা দেন ও কারও সামনে ভয় পান না, কেননা আপনি মানুষের চেহারার দিকে তাকান না। তবে আমাদের বলুন, এবিষয়ে আপনার মত কী: কায়েসারকে কর দেওয়া বিধেয় কিনা।’
কিন্তু তাদের শঠতা সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন বিধায় যিশু বললেন, ‘ভণ্ড, আমাকে যাচাই করছ কেন? সেই করের মুদ্রা আমাকে দেখাও।’ তারা তাঁকে একটা রুপোর টাকা এনে দিল। তিনি তাদের বললেন, ‘এই প্রতিকৃতি ও এই নাম কার্?’ তারা বলল, ‘কায়েসারের।’
তখন তিনি তাদের বললেন, ‘তবে কায়েসারের যা, তা কায়েসারকে দাও, আর ঈশ্বরের যা, তা ঈশ্বরকে দাও।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
ব্রিন্দিসির পুরোহিত সাধু লরেন্সের উপদেশ
আজকের সুসমাচারে আমরা দু’টো প্রশ্ন পাই: প্রথমটা হল খ্রিষ্টের প্রতি ফরিশীদের প্রশ্ন, দ্বিতীয়টা হল ফরিশীদের প্রতি খ্রিষ্টের প্রশ্ন। প্রথমটা সম্পূর্ণরূপে পার্থিব, দ্বিতীয়টা সম্পূর্ণরূপে স্বর্গীয় ও দিব্য। প্রথমটা গভীর অজ্ঞতা থেকে উদ্গত, দ্বিতীয়টা গভীরতম প্রজ্ঞা ও মঙ্গলময়তা থেকে উদ্গত। এই প্রতিমূর্তি ও এই নাম কার্? তারা বলল, কায়েসারের। তখন তিনি তাদের বললেন, তবে কায়েসারের যা, তা কায়েসারকে দাও, আর ঈশ্বরের যা, তা ঈশ্বরকে দাও (মথি ২২:২০-২১)। তিনি বললেন, প্রত্যেকের যা যা, তা তাকে দিতে হয়: এ উত্তর সত্যিই স্বর্গীয় প্রজ্ঞা ও চেতনায় পূর্ণ। এতে তিনি শিক্ষা দেন যে, দুই প্রকার অধিকার আছে: পার্থিব ও মানবীয় এক অধিকার, ও স্বর্গীয় ও ঐশ্বরিক আর এক অধিকার; এবং এ শিক্ষাও দেন যে, আমাদের পক্ষে দুই প্রকার বাধ্যতা দেখানো উচিত: মানব-বিধানের প্রতি ও ঐশ্বরিক বিধানের প্রতি বাধ্যতা; ফলে আমাদের দুই প্রকার কর দিতে হবে: একটা কায়েসারের কাছে, অপর একটা ঈশ্বরের কাছে। যে মুদ্রায় কায়েসারের প্রতিমূর্তি ও নাম রয়েছে, তা কায়েসারকে দিতে হবে, কিন্তু ঈশ্বরকে তা দিতে হবে, যা তাঁর প্রতিমূর্তি ও সাদৃশ্য দ্বারা চিহ্নিত: প্রভু, আমাদের উপর তোমার শ্রীমুখের আলো উদ্ভাসিত হোক (সাম ৪:৭)।
আমরা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে ও তাঁর সাদৃশ্যে সৃষ্ট (আদি ১:২৬ দ্রঃ)। হে খ্রিষ্টিয়ান, তুমি মানুষ, ফলে তুমি ঐশ ধনভাণ্ডারেরই মুদ্রা, তুমি সেই মুদ্রা যা স্বর্গরাজ্যের প্রতিমূর্তি ও নাম দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত। খ্রিষ্টের সঙ্গে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি: এই প্রতিমূর্তি ও এই নাম কার্? (মথি ২২:২০)। তুমি তো উত্তর দাও: ঈশ্বরের। আর আমি বলি, তবে ঈশ্বরের যা, তা ঈশ্বরকে দাও না কেন?
আমরা যদি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি হতে চাই, তাহলে আমাদের খ্রিষ্টের সদৃশ হতে হবে, কারণ তিনিই ঈশ্বরের মঙ্গলময়তার প্রতিমূর্তি ও তাঁর স্বরূপের প্রতিরূপ। উপরন্তু ঈশ্বর আগে থেকে যাদের জানতেন, তাদের সম্বন্ধে আগে থেকেই তিনি স্থির করেও রেখেছিলেন যে, তারা তাঁর আপন পুত্রের প্রতিমূর্তির অনুরূপ হয়ে উঠবে (রো ৮:২৯)। আর খ্রিষ্ট সত্যিই কায়েসারের যা যা, তা কায়েসারকে দিলেন, ও ঈশ্বরের যা যা, তা ঈশ্বরকে দিলেন, কারণ মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশমৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য হয়ে (ফিলি ২:৮) তিনি ঐশবিধানের লিপিফলক দু’টোই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করলেন, ও আন্তরিক ও বাহ্যিক সমস্ত গুণে অধিক নিখুঁতভাবে ভূষিত ছিলেন।
তাছাড়া আজ খ্রিষ্টের উত্তম সুবুদ্ধি অধিক উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত, আর তেমন সুবুদ্ধি গুণে তিনি সূক্ষ্ম ও উপযুক্ত উত্তর দ্বারা বিরোধীদের ফাঁদ এড়িয়ে যান; তাঁর ন্যায্যতাও আজ অতি উজ্জ্বল পরিচয় দেয়, কারণ ‘যার যা যা, তা তাকে দিতে’ এশিক্ষা দান করতে করতে তিনিও নিজের জন্য ও পিতরের জন্য কর দিতে চাইলেন; শেষে তাঁর মনোবলও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত, কারণ যারা করের কথা পর্যন্ত সহ্য করতে পারত না, সেই ইহুদীদের ভয় না করে তিনি স্বচ্ছন্দেই এ শিক্ষা দিলেন যে, কায়েসারকে কর দেওয়া প্রজাদের কর্তব্য। এই তো ঈশ্বরের সেই পথ, যা খ্রিষ্ট পূর্ণ সত্যের শরণে শিখিয়ে গেছেন।
অতএব, জীবনে, আচরণে ও সদ্গুণে যে খ্রিষ্টের অনুরূপ, সে প্রকৃতভাবেই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ব্যক্ত করে; আর তেমন দিব্য প্রতিমূর্তির জ্যোতি নিখুঁত ন্যায্যতায়ই বাস্তব রূপ লাভ করে: কায়েসারের যা, তা কায়েসারকে দাও, আর ঈশ্বরের যা, তা ঈশ্বরকে দাও। যার যা, তাকে তা দেওয়া হোক।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩৩
ধুয়ো: দেখ, প্রভুর চোখ নিবদ্ধ তাদেরই প্রতি,
যারা তাঁকে ভয় করে, যারা তাঁর কৃপার প্রত্যাশায় থাকে।
সুখী সেই দেশ,
প্রভুই যার আপন পরমেশ্বর;
সুখী সেই জাতি,
যাকে তিনি বেছে নিলেন আপন উত্তরাধিকার রূপে। [ধুয়ো]
প্রভু স্বর্গ থেকে তাকিয়ে সকল আদমসন্তানকে দেখেন,
নিজ বাসস্থান থেকে সকল মর্তবাসীর দিকে লক্ষ করেন;
তিনিই তো গড়েছেন এক একজনেরই হৃদয়,
তিনিই তো বোঝেন তাদের সকল কাজ। [ধুয়ো]
আপন সুবিপুল বাহিনীগুণে রাজা পান না কো পরিত্রাণ,
আপন মহাপ্রতাপে যোদ্ধাও উদ্ধার পায় না,
অশ্বও তো ত্রাণের জন্য বৃথা আশা,
তার প্রবল শক্তিবলেও সে নিষ্কৃতি দিতে পারে না। [ধুয়ো]
কিন্তু দেখ, প্রভুর চোখ নিবদ্ধ তাদেরই প্রতি,
যারা তাঁকে ভয় করে, যারা তাঁর কৃপার প্রত্যাশায় থাকে,
তিনি মৃত্যু থেকে তাদের প্রাণ উদ্ধার করবেন,
তাদের বাঁচিয়ে রাখবেন দুর্ভিক্ষের দিনে। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আশীর্বাদ কর: স্বর্গীয় বিষয়ের দৈনন্দিন সহভাগিতার ফলে
আমরা যেন এ বর্তমান জীবনে উপকৃত হই,
ভাবী মঙ্গলদান পাবার আশায়ও যেন দৃঢ় নিশ্চয়তা লাভ করি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
৩০শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান সনাতন ঈশ্বর,
গভীরতর করে তোল আমাদের বিশ্বাস আশা ও ভালবাসা:
আশীর্বাদ কর: তুমি যা আজ্ঞা কর, আমরা যেন তা ভালবাসি,
যাতে যা দান করবে বলে তুমি প্রতিশ্রুত, আমরা তা পাবার যোগ্য হয়ে উঠি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
যাত্রাপুস্তক থেকে পাঠ (২২:২০-২৬)
প্রভু একথা বলছেন, ‘তুমি কোন প্রবাসীর প্রতি অন্যায় করবে না, তাকে অত্যাচারও করবে না, কেননা তোমরা নিজেরাই মিশর দেশে প্রবাসী ছিলে।
তোমরা কোন বিধবা বা কোন এতিমের প্রতি দুর্ব্যবহার করবে না; তুমি যদি তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার কর আর তারা চিৎকার করে আমাকে ডাকে, আমি তাদের ডাকে সাড়া দেবই, আর আমার ক্রোধ জ্বলে উঠবে এবং আমি খড়্গের আঘাতে তোমাদের হত্যা করব; তখন তোমাদের স্ত্রীই হবে বিধবা, তোমাদের সন্তানেরাই হবে এতিম।
তুমি যদি আমার আপন জনগণের কোন মানুষের কাছে, তোমার প্রতিবেশী কোন গরিবের কাছে টাকা ধার দাও, মহাজনের মত ব্যবহার করবে না; না, তার কাছ থেকে কোন সুদ আদায় করবে না।
তুমি যদি তোমার কোন প্রতিবেশীর চাদর বন্ধক রাখ, সূর্যাস্তের আগেই তা ফিরিয়ে দেবে, কেননা নিজেকে ঢেকে রাখার মত তা ছাড়া তার আর কিছু নেই, গায়ের জন্য তা তার একমাত্র আবরণ: গায়ে কী জড়িয়ে সে শুতে পারবে?
আর সে যদি চিৎকার করে আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবই, কারণ আমি দয়াময়।’
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ১৮
ধুয়ো: আমি তোমাকে ভালবাসি, প্রভু,
তুমি আমার বল!
আমি তোমাকে ভালবাসি, প্রভু, আমার বল!
প্রভুই আমার শৈল, আমার গিরিদুর্গ, আমার মুক্তিদাতা,
আমার ঈশ্বর, আমার সেই শৈল যার কাছে নিয়েছি আশ্রয়,
আমার ঢাল, আমার ত্রাণশক্তি, আমার দুর্গ। [ধুয়ো]
আমি প্রশংসনীয় সেই প্রভুকে ডাকি,
আমার শত্রুদের হাত থেকে পাবই পরিত্রাণ।
চিরজীবী হোন প্রভু! ধন্য আমার শৈল!
আমার ত্রাণেশ্বর বন্দিত হোন! [ধুয়ো]
তিনি তাঁর রাজাকে
বিজয়দানে মহিমান্বিত করেন,
তাঁর মশীহের প্রতি
কৃপা দেখান চিরকাল। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
থেসালোনিকীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (১:৫গ-১০)
প্রিয়জনেরা, তোমরা তো ভালই জান, তোমাদের খাতিরে আমরা তোমাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম।
আর তোমরা বহু ক্লেশের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও পবিত্র আত্মার আনন্দে বাণী সাদরে গ্রহণ করে আমাদের ও প্রভুর অনুকারী হয়েছ; এতে তোমরা মাকিদনিয়া ও আখাইয়ার সমস্ত বিশ্বাসীদের কাছে একটা আদর্শ হয়ে উঠেছ; কেননা তোমাদের মধ্য দিয়ে প্রভুর বাণী ধ্বনিত হয়েছে, আর শুধুমাত্র মাকিদনিয়াতে ও আখাইয়ায় নয়, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের বিশ্বাসের কথা সর্বস্থানেই ছড়িয়ে পড়েছে; তাই সেকথা উল্লেখ করা আমাদের আর প্রয়োজন নেই; তারা নিজেরাই তো আমাদের বিষয়ে এই কথা বলে যে, আমরা কেমন করে এসে উপস্থিত হয়েছিলাম, আর কেমন করে তোমরা দেবমূর্তিগুলো ত্যাগ করে ঈশ্বরের দিকে ফিরেছিলে, যেন সেই জীবনময় প্রকৃত ঈশ্বরের সেবা করতে পার এবং যাঁকে তিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, স্বর্গ থেকে তাঁর পুত্রের প্রতীক্ষায় থাক—সেই খ্রিষ্টেরই প্রতীক্ষায় থাক, যিনি আসন্ন ক্রোধ থেকে আমাদের নিস্তারকর্তা।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
যদি কেউ আমাকে ভালবাসে—একথা বলছেন প্রভু,
তবে সে আমার বাণী মেনে চলবে,
আর আমার পিতা তাকে ভালবাসবেন,
এবং আমরা তার কাছে আসব।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২২:৩৪-৪০)
সেসময়ে, ফরিশীরা যখন শুনতে পেলেন, যিশু সাদ্দুকীদের নিরুত্তর করেছেন, তখন দল বেঁধে একজোট হলেন, এবং তাঁদের মধ্যে একজন—তিনি ছিলেন বিধানপণ্ডিত—যাচাই করার অভিপ্রায়ে তাঁর কাছে এই প্রশ্ন রাখলেন, ‘গুরু, বিধানের মধ্যে কোন্ আজ্ঞা শ্রেষ্ঠ?’
তিনি তাঁকে বললেন, ‘তুমি তোমার ঈশ্বর প্রভুকে তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে, তোমার সমস্ত প্রাণ দিয়ে ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে ভালবাসবে, এ শ্রেষ্ঠ ও প্রথম আজ্ঞা।
আর দ্বিতীয়টা এটার সদৃশ: তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।
এই আজ্ঞা দু’টোর উপরেই সমস্ত বিধান ও নবী-পুস্তক ভর করে আছে।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
অজানা প্রাচীন লেখকের উপদেশ
তোমাদের কাছে আমি সেই ভালবাসা সম্বন্ধে কথা বলব, যা বিষয়ে খ্রিষ্ট বলেছেন: তুমি তোমার ঈশ্বর প্রভুকে তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে, তোমার সমস্ত প্রাণ দিয়ে ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে ভালবাসবে। তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে (মথি ২২:৩৭, ৩৯)। তিনি তেমন আদেশ করলেন কারণ এই আজ্ঞা দু’টোর উপরেই সমস্ত বিধান ও নবী-পুস্তক ভর করে আছে (মথি ২২:৪০)।
তাই তুমি তোমার ঈশ্বরকে ভালবাসবে ও তোমার ভাইকে ভালবাসবে, কারণ নিজের ভাইকে যে ভালবাসে, সে আলোতে বসবাস করে, আর তার অন্তরে পরস্পর বিরোধী বলতে কিছুই থাকে না (১ যোহন ২:১০)। সুতরাং, হে প্রিয়তম ভাইবোনেরা, পরস্পরকে ভালবাস, বন্ধুদের ভালবাস, শত্রুদের ভালবাস। অনেককে ভালবাসলে তোমাদের কী ক্ষতি হতে পারে? সুসমাচারে প্রভু একথা বলেন, আমি এক নতুন আজ্ঞা তোমাদের দিচ্ছি: তোমরা পরস্পরকে ভালবাস। তোমরা যে আমার শিষ্য, তা সকলে এতেই বুঝতে পারবে, যদি পরস্পরের প্রতি তোমাদের ভালবাসা থাকে (যোহন ১৩:৩৪-৩৫)। যিনি আজ্ঞা দিলেন আমরা যেন পরস্পরকে ভালবাসি, দেখ, সেই প্রভু নিজেই সকলকে কেমন ভালবাসলেন। নিত্য সঙ্গীরূপে যাঁরা তাঁর অনুসরণ করতেন, তিনি সেই শিষ্যদের ভালবাসলেন; শত্রুরূপে যারা তাঁর নির্যাতন করত, তিনি সেই ইহুদীদেরও ভালবাসলেন। শিষ্যদের কাছে স্বর্গরাজ্যের কথা প্রচার করলেন; তাঁর বাণী শুনে তাঁরা সবকিছু ত্যাগ করে তাঁর অনুসরণ করলেন, আর তিনি তাঁদের বললেন: আমি তোমাদের যা আজ্ঞা করি, তোমরা যদি তা পালন কর, তবে আমি তোমাদের আর দাস বলব না, বন্ধুই বলব (যোহন ১৫:১৪, ১৫ দ্রঃ)। সুতরাং তাঁরাই তাঁর বন্ধু ছিলেন, যাঁরা তাঁর আদেশ মেনে চলতেন। তিনি তাঁদের জন্য প্রার্থনা করলেন, বিশেষভাবে যখন বললেন: পিতা, আমি ইচ্ছা করি, যাদের তুমি আমাকে দিয়েছ, যেখানে আমি আছি তারাও যেন সেখানে আমার সঙ্গে থাকে, যাতে আমার সেই গৌরব দেখতে পায়, সেই যে গৌরব তুমি আমাকে দিয়েছ (যোহন ১৭:২৪)।
তিনি নাকি বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করলেন, কিন্তু শত্রুদের কথা উল্লেখ করেননি? মনোযোগ দিয়ে শোন: তাঁর যন্ত্রণাভোগের সময়ে ইহুদীরা তাঁকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করছিল ও চারদিক থেকে চিৎকার করছিল যাতে তাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়, অথচ তা দেখেও তিনি উচ্চকণ্ঠে পিতার কাছে প্রার্থনা করে বললেন, পিতা, এদের ক্ষমা কর, কেননা এরা কি করছে, তা জানে না (লুক ২৩:৩৪)। ঠিক যেন বলতেন, ওদের শঠতা ওদের অন্ধ করেছে, তোমার প্রসন্নতা ওদের ক্ষমাই করুক। আর পিতার কাছে তাঁর মিনতি বৃথা যায়নি, কারণ পরবর্তীকালে বহু ইহুদী বিশ্বাস করল—এখনও বিশ্বাসী হয়ে উঠে—আর যাঁর রক্ত নির্মমভাবে পাত করেছিল সেই রক্ত পান করল ও যাঁকে নির্যাতন করেছিল তাঁর অনুসরণ করল।
খ্রিষ্ট এ পথ দিয়েই চললেন। এসো, তাঁর অনুসরণ করি, যাতে বৃথাই খ্রিষ্টপন্থী বলে অভিহিত না হই।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ২০
ধুয়ো: তোমার ত্রাণকর্মের জন্য আমরা আনন্দধ্বনি তুলব,
আমাদের পরমেশ্বরের নামে উল্লাস করব।
এখন আমি জানি—
প্রভু তাঁর তৈলাভিষিক্তজনকে পরিত্রাণ করেন;
তাঁর ডান হাতের বিজয়ী পরাক্রম দ্বারা
তাঁর পবিত্র স্বর্গ থেকে তাঁকে সাড়া দিলেন। [ধুয়ো]
কেউ যুদ্ধরথে, আবার কেউ অশ্বে প্রতাপশালী,
আমরা কিন্তু প্রতাপশালী আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর নামে।
ওরা হাঁটু পেতে লুটিয়ে পড়ে,
আমরা কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, থাকি অবিচল। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, অনুনয় করি: তোমার এই সাক্রামেন্ত
আমাদের অন্তরে তার নিজের শক্তি ব্যক্ত করুক:
আমরা রহস্যের আড়ালে যা সম্পাদন করি,
একদিন যেন তার পূর্ণ বাস্তবতা লাভ করতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
৩১শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান দয়াবান পরমেশ্বর, তোমারই কৃপায়
তোমার ভক্তগণ তোমাকে যথার্থ ও প্রশংসনীয় সেবা অর্পণ করতে সক্ষম।
আশীর্বাদ কর: আমরা যেন তোমার অঙ্গীকৃত পুরস্কারের দিকে
নির্বিঘ্নেই ধাবিত হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
নবী মালাখির পুস্তক থেকে পাঠ (১:১৪খ–২:২খ,৮-১০)
আমি মহান রাজা—একথা বলছেন সেনাবাহিনীর প্রভু—আর সর্বদেশের মাঝে আমার নাম ভয়ঙ্কর!
এখন, হে যাজকেরা, তোমাদের প্রতিই এই সাবধান বাণী। তোমরা যদি না শোন, ও আমার নাম গৌরবান্বিত করতে যদি দৃঢ়সঙ্কল্প না হও, তবে—সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন—আমি তোমাদের উপরে অভিশাপ প্রেরণ করব, ও তোমাদের যত আশীর্বাদ অভিশাপেই পরিণত করব।
তোমরা পথ থেকে সরে পড়েছ, ও তোমাদের নির্দেশবাণী দ্বারা অনেককে হোঁচট খাইয়েছ; যেহেতু তোমরা লেবির সন্ধি ভঙ্গ করেছ—একথা বলছেন সেনাবাহিনীর প্রভু—সেজন্য আমিও গোটা জনগণের সাক্ষাতে তোমাদের তাচ্ছিল্যের বস্তু ও নীচু করলাম, কারণ তোমরা আমার সমস্ত পথ পালন করনি ও বিধান অনুশীলনে পক্ষপাত করেছ।
আমাদের সকলের কি এক পিতা নন? এক ঈশ্বর কি আমাদের সৃষ্টি করেননি? তবে আমরা কেন প্রত্যেকে একে অন্যের প্রতি অবিশ্বস্ততা দেখিয়ে আমাদের পিতৃপুরুষদের সন্ধি অপবিত্র করি?
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ১৩১
ধুয়ো: তোমার সান্নিধ্যে, প্রভু,
শান্তিতে রক্ষা কর আমার প্রাণ।
প্রভু, আমার হৃদয় গর্বিত নয়,
আমার চোখও উদ্ধত নয়।
বিরাট কোন কিছুর পিছনে,
আমার বোধাতীত আশ্চর্যময় কোন কিছুর পিছনে যাই না কো আমি। [ধুয়ো]
আমার প্রাণ বরং আমি শান্ত রাখি, রাখি নিশ্চুপ;
মায়ের কোলে দুধ-ছাড়ানো শিশুর মত,
দুধ-ছাড়ানো তেমন শিশুরই মত আমার প্রাণ।
ইস্রায়েল, প্রভুর প্রতীক্ষায় থাক এখন থেকে চিরকাল ধরে। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
থেসালোনিকীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (২:৭খ-৯,১৩)
প্রিয়জনেরা, মা যেমন নিজ শিশুদের লালন-পালন করেন, তোমাদের মধ্যে আমরা তেমনি স্নেহ-মমতা দেখিয়েছিলাম; তোমাদের প্রতি তেমন স্নেহ এত গভীর ছিল যে, আমরা ঈশ্বরের সুসমাচার শুধু নয়, নিজ প্রাণও তোমাদের কাছে অর্পণ করতে ইচ্ছুক ছিলাম, কারণ তোমরা আমাদের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছিলে!
ভাই, তোমাদের অবশ্যই মনে আছে আমাদের পরিশ্রম ও কষ্টের ভার: তোমাদের কারও বোঝা যেন না হই, আমরা দিনরাত কাজ করতে করতে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করেছিলাম।
আর এজন্যই আমরা অবিরত ঈশ্বরের কাছে ধন্যবাদ জানিয়ে থাকি, কেননা আমাদের মুখ থেকে ঈশ্বরের বাণী শুনে তোমরা মানুষের বাণী বলে নয়, ঈশ্বরেরই বাণী বলে তা গ্রহণ করেছিলে; তা ঈশ্বরেরই বাণী বটে, যে বাণী, বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের মধ্যে সক্রিয়।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
তোমাদের পিতা একজনমাত্র, তিনি স্বর্গে রয়েছেন;
তোমাদের পথদিশারী একজনমাত্র, তিনি খ্রিষ্ট।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২৩:১-১২)
একদিন যিশু ভিড়-করা লোকদের ও নিজের শিষ্যদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘মোশির আসনে শাস্ত্রীরা ও ফরিশীরা আসীন; সুতরাং তাঁরা তোমাদের যা কিছু বলেন, তা পালন কর ও মেনে চল, কিন্তু নিজেরা যা করেন তা করো না, যেহেতু তাঁরা কথা বলেন, কিন্তু কিছুই করেন না। তাঁরা ভারী ভারী বোঝা বেঁধে লোকদের কাঁধে চাপিয়ে দেন, কিন্তু নিজেরা একটা আঙুল দিয়েও তা সরাতে ইচ্ছুক নন।
তাঁরা যা কিছু করেন, দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই তা করেন: নিজেদের কবচগুলো ফাঁপিয়ে তোলেন, নিজেদের কাপড়ের ঝালর লম্বা করেন; ভোজে প্রধান স্থান, সমাজগৃহে প্রধান আসন, হাটে-বাজারে শ্রদ্ধাপূর্ণ অভিবাদন, ও লোকদের ওষ্ঠে “রাব্বি” সম্বোধন শুনতে ভালবাসেন।
কিন্তু তোমরা নিজেদের “রাব্বি” বলে ডাকতে দিয়ো না, কারণ তোমাদের গুরু একজনমাত্র, আর তোমরা সকলে ভাই; আর পৃথিবীতে কাউকে “পিতা” বলে সম্বোধন করো না, কারণ তোমাদের পিতা একজনমাত্র, আর তিনি স্বর্গে রয়েছেন; তোমরা নিজেদের “পথদিশারী” বলে ডাকতে দিয়ো না, কারণ তোমাদের পথদিশারী একজনমাত্র, তিনি খ্রিষ্ট।
কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে বড়, তাকে তোমাদের সেবক হতে হবে; আর যে কেউ নিজেকে উচ্চ করে, তাকে নত করা হবে; আর যে কেউ নিজেকে নত করে, তাকে উচ্চ করা হবে।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
মঠাধ্যক্ষ সাধু হর্সিয়েসিউসের পুস্তক
ভ্রাতৃগণ, ছোট থেকে মহান পর্যন্ত, ধনবান নির্ধন নির্বিশেষে আমাদের সমান হতে হবে; একাত্মতা ও বিনম্রতায়ও নিখুঁত হতে হবে, যাতে আমাদের বিষয়েও বলা যেতে পারে: বেশি যে সংগ্রহ করল, তার অতিরিক্ত কিছু হল না; এবং অল্প যে সংগ্রহ করল, তার অভাব হল না (২ করি ৮:১৫)। এমন কেউ যেন না থাকে, যে ভাইকে দরিদ্রতায় দেখেও নিজের অভিলাষ পূরণ করতে ব্যস্ত থাকে, যার ফলে তাকে নবীর এ ভর্ৎসনা-বাণী শুনতে হয়, একই ঈশ্বর কি আমাদের সৃষ্টি করেননি? (মালা ২:১০)। সকলের কি এক পিতা নন? তবে কেন প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাইকে পরিত্যাগ করেছে ও আমাদের পিতৃপুরুষদের নিয়ম অপবিত্র করেছে? যুদা অবিশ্বস্ত হয়েছে, এবং ইস্রায়েলে জঘন্য কাজ সাধিত হয়েছে (মালা ২:১১)। ফলে আমি এক নতুন আজ্ঞা তোমাদের দিচ্ছি: আমি তোমাদের যেভাবে ভালবেসেছি, তোমরা পরস্পরকে সেইভাবে ভালবাস: তোমরা যে আমার শিষ্য, এতেই সকলে জানতে পারবে (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫), প্রেরিতদূতদের কাছে ত্রাণকর্তা প্রভুর এই বাণী অনুসারে আমাদের পরস্পরকে ভালবাসতে হবে, এবং দেখাতে হবে যে, আমরা সত্যি প্রভু যিশুখ্রিষ্টের শিষ্য ও তাঁদেরই অনুগামী, যাঁরা ঐক্যবদ্ধ জীবন ধারণ করতেন।
দিনের বেলায় যে চলে, সে হোঁচট খায় না, রাত্রিবেলায় যে চলে, আলো না পাওয়ায় সে হোঁচট খায়। প্রেরিতদূত বললেন, আমরা কিন্তু নিজেদের সর্বনাশের উদ্দেশ্যে পিছিয়ে যাওয়ার মানুষ নই, বরং প্রাণ-রক্ষার জন্য বিশ্বাসেরই মানুষ (হিব্রু ১০:৩৯)। এবং অন্যত্র লেখা আছে, তোমরা সকলে আলোর সন্তান ও ঈশ্বরের সন্তান (সাম ২৯:১); আমরা রাত্রিরও নই, অন্ধকারেরও নই (১ থে ৫:৫)। অতএব, আমরা যখন আলোরই সন্তান, তখন যা যা আলোর, আমাদের তা জানা উচিত ও সমস্ত শুভকর্ম সাধনে আলোর ফলও দেখানো উচিত, কেননা যা প্রকাশ্যে করা হয়, তা-ই আলো। আমরা যদি সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রভুর কাছে ফিরি ও তাঁর পুণ্যজনদের আদেশ ও আমাদের পিতার আজ্ঞা পালন করি, তবে সমস্ত শুভকর্মে উপচে পড়ব। অপর দিকে আমরা যদি দৈহিক অভিলাষ দ্বারা নিজেদের পরাজিত হতে দিই, তাহলে দিনের বেলায়ও ঠিক যেন রাত্রিবেলাতেই উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে চলব ও আমাদের চির-আবাসের নগরীতে পৌঁছবার পথ খুঁজে পেতে পারব না: তারা ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত ছিল, মূর্ছা যাচ্ছিল তাদের প্রাণ, কারণ তারা প্রভুর বিধান উপেক্ষা করেছিল ও নবীদের কণ্ঠস্বর শুনল না (সাম ১০৭:৫, ১১ দ্রঃ); ফলে তারা প্রতিশ্রুত শান্তিতে পৌঁছতে পারল না।
প্রভু এত মঙ্গলময় যে, তিনি আমাদের অবিরতই পরিত্রাণের দিকে আহ্বান করেন: এসো, তাঁর দিকে হৃদয় ফেরাই, এখন তো তোমাদের ঘুম থেকে জেগে ওঠারই লগ্ন। রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে, দিন কাছে এসে গেছে। তাই অন্ধকারের কাজকর্ম পরিত্যাগ ক’রে, এসো, আলোরই উপযোগী রণসজ্জা পরিধান করি (রো ১৩:১২-১৩)। এসো, দিনমানের মত উজ্জ্বলভাবে চলাফেরা করি। আমার সন্তানেরা, এসো, সর্বাপেক্ষা সমস্ত হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালবাসি, তারপর, ত্রাণেশ্বরের আজ্ঞা স্মরণ করে একে অন্যকে ভালবাসি: আমি তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি—জগৎ যেভাবে তা দান করে থাকে, আমি সেভাবে তা তোমাদের দান করি না (যোহন ১৪:২৭)। এই আজ্ঞা দু’টোর উপরেই সমস্ত বিধান ও নবী-পুস্তক ভর করে আছে (মথি ২২:৪০)।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৬
ধুয়ো: তুমি আমাকে জানিয়ে দিয়েছ জীবনের পথ,
তোমার সম্মুখেই আনন্দের পূর্ণতা, প্রভু।
প্রভুই আমার স্বত্বাংশ, আমার পানপাত্র,
তোমার হাতেই আমার নিয়তির ভার।
সীমানা আমার পক্ষে পড়েছে মনোহর স্থানে,
আমার উত্তরাধিকার আমার কাছে সত্যি অপরূপ। [ধুয়ো]
প্রভুকে ধন্য বলব, তিনি যে আমাকে মন্ত্রণা দেন,
রাত্রিতেও আমাকে উদ্বুদ্ধ করে আমার অন্তর।
আমার সামনে প্রভুকে অনুক্ষণ রাখি,
তিনি আমার ডান পাশে বলে আমি টলব না। [ধুয়ো]
তাই আমার অন্তর আনন্দ করে, মেতে ওঠে আমার প্রাণ,
আমার দেহও ভরসাভরে করে বিশ্রাম,
তুমি যে আমাকে বিসর্জন দেবে না পাতালের হাতে,
না, তোমার ভক্তজনকে তুমি সেই গহ্বর দেখতে দেবে না। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার পরাক্রম আমাদের অন্তরে অবিরতই ক্রিয়াশীল হোক,
যেন এই স্বর্গীয় সাক্রামেন্ত দ্বারা সঞ্জীবিত হয়ে
আমরা প্রতিশ্রুত মঙ্গলদান গ্রহণের জন্যও উপযোগী হয়ে উঠি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
৩২শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান দয়াবান পরমেশ্বর,
প্রসন্ন হয়ে যত অমঙ্গল থেকে আমাদের রক্ষা কর,
দেহমনের যেকোন বাধাবিপত্তি অতিক্রম ক’রে
আমরা যেন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে তোমার ইচ্ছা পূরণে নিবিষ্ট থাকতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
প্রজ্ঞা পুস্তক থেকে পাঠ (৬:১২-১৬)
প্রজ্ঞা উজ্জ্বল, কখনও ম্লান হয় না।
প্রজ্ঞাকে যে ভালবাসে, সে সহজেই পায় তার দর্শন,
তার সন্ধান যে করে, সে সহজেই পায় তার সন্ধান।
নিজেকে জ্ঞাত করতে প্রজ্ঞা নিজেই আপন আকাঙ্ক্ষীদের কাছে আসে।
তার জন্য যে কেউ সকালে সকালে ওঠে, তার কোন কষ্ট হবে না,
সে বরং দরজায় এসে দেখবে, প্রজ্ঞা সেখানে আসীন।
প্রজ্ঞা-ধ্যানে নিবিষ্ট থাকা, এ তো সিদ্ধ সদ্বিবেচনার প্রমাণ,
তার জন্য যে জাগ্রত থাকে, সে হঠাৎ নিরুদ্বিগ্ন হয়ে উঠবে।
যারা তাকে পাবার যোগ্য, তাদের সন্ধানে সে নিজেই বেরিয়ে পড়ে,
মঙ্গলভাব দেখিয়ে সে রাস্তা-ঘাটে তাদের কাছে দেখা দেয়,
সমস্ত মঙ্গলময়তা দেখিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এগিয়ে আসে।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ৬৩
ধুয়ো: ওগো প্রভু, ঈশ্বর আমার,
তোমারই জন্য আমার প্রাণ তৃষাতুর।
ওগো পরমেশ্বর, ওগো আমার ঈশ্বর, ভোর হতে তোমারই অন্বেষণ করি,
তোমারই জন্য আমার প্রাণ তৃষাতুর,
তোমারই জন্য আমার দেহ ব্যাকুল,
যেন শুষ্ক, শীর্ণ, জলহীন ভূমি। [ধুয়ো]
তাই পবিত্রধামে তোমার দিকেই দৃষ্টি রাখি
তোমার শক্তি ও গৌরব দেখবার জন্য।
তোমার কৃপা জীবনের চেয়ে শ্রেয়,
তাই আমার ওষ্ঠ তোমার মহিমাকীর্তন করবে। [ধুয়ো]
তাই যতদিন বাঁচব আমি তোমাকে বলব ধন্য,
তোমার নামে দু’হাত তুলব।
সুস্বাদু ভোজেই যেন তৃপ্ত হবে আমার প্রাণ,
আনন্দপ্লুত ওষ্ঠে আমার মুখ করবে তোমার প্রশংসাবাদ। [ধুয়ো]
শয়নে আমি তোমায় স্মরণ করি,
রাতের প্রহরে প্রহরে করি তোমার ধ্যান।
তুমি আমার সহায় হলে,
তাই তোমার পক্ষ-ছায়ায় আমি করি আনন্দগান। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
থেসালোনিকীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (৪:১৩-১৪)
ভাই, যারা শেষ নিদ্রায় নিদ্রিত হয়ে আছে, তাদের সম্বন্ধে তোমরা যে অজ্ঞ হবে, তা আমরা চাচ্ছি না; অন্যথা, সেই অন্যান্যদেরই মত তোমরা শোকার্ত হয়ে পড়বে, যারা আশাবিহীন মানুষ। আসলে আমরা বিশ্বাস করি যে, যিশু মরেছেন ও পুনরুত্থান করেছেন; তাই ঈশ্বর যিশুর মাধ্যমে নিদ্রাগত সকলকেও তাঁর সঙ্গে কাছে আনবেন।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
জেগে থাক ও প্রস্তুত থাক,
কেননা যে ক্ষণ তোমরা কল্পনা করবে না, সেই ক্ষণে মানবপুত্র আসবেন।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২৫:১-১৩)
একদিন যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে এই উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন, ‘স্বর্গরাজ্যের ভাবী অবস্থা এমন দশজন যুবতী কুমারীর সঙ্গে তুলনা করা যায়, যারা নিজ নিজ প্রদীপ নিয়ে বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে পড়ল। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল নির্বোধ ও পাঁচজন ছিল বুদ্ধিমতী। নির্বোধ যারা, তারা নিজ নিজ প্রদীপ নিল বটে, কিন্তু সঙ্গে করে তেল নিল না; অপরদিকে বুদ্ধিমতী যারা, তারা নিজ নিজ প্রদীপের সঙ্গে পাত্রে করে তেলও নিল। বর দেরি করায় সকলের ঝিমুনি ধরল ও তারা ঘুমিয়ে পড়ল।
কিন্তু মাঝরাতে রব উঠল, দেখ, বর! তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে পড়! তখন সেই যুবতীরা সকলে জেগে উঠল, ও নিজ নিজ প্রদীপ ঠিক ঠাক করল। আর নির্বোধেরা বুদ্ধিমতীদের বলল, তোমাদের তেল থেকে আমাদের খানিকটা দাও, আমাদের প্রদীপ যে নিভে যাচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধিমতীরা উত্তরে বলল, হয় তো তোমাদের ও আমাদের জন্য কুলোবে না; তোমরা বরং দোকানদারদের কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য তেল কিনে নাও।
তারা কিনতে গিয়েছিল, এর মধ্যে বর এসে উপস্থিত হলেন। যারা প্রস্তুত ছিল, তারা তাঁর সঙ্গে বিবাহ-বাড়িতে প্রবেশ করল, আর দরজা বন্ধ করা হল। শেষে অন্য সকল যুবতীরাও এল। তারা বলতে লাগল, প্রভু, প্রভু, আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন। কিন্তু তিনি উত্তরে বললেন, তোমাদের সত্যি বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।
সুতরাং জেগে থাক, কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই ক্ষণ জান না।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
নাজিয়াঞ্জুসের বিশপ সাধু গ্রেগরির উপদেশ
বাপ্তিস্ম গ্রহণ করার পর তুমি মহাগির্জার সামনে থেমেছিলে: সেই থামাটা ভাবী জীবনের গৌরবের প্রতীক; তুমি যে সামসঙ্গীত গানে গানে গৃহীত হয়েছিলে, তা সেই সমবেত কণ্ঠের গানের পূর্বাভাস; যে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলে, তা সেই আলোর পূর্বদৃষ্টান্ত, যে আলোতে আমরা উজ্জ্বল কুমারীর মত বিশ্বাসের উজ্জ্বল প্রদীপ নিয়েই বর-খ্রিষ্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে পড়ব—পাছে এমনটি ঘটে যে, আমরা অলসতা ও শিথিলতা বশত নিদ্রাগত হলে ও আমাদের অজান্তে তিনিই অপ্রত্যাশিত ভাবে এসে পড়েন যাঁর আগমনের প্রতীক্ষায় আছি, যার ফলে শুভকর্মের তেলের অভাবী হয়ে আমরা বাসর থেকে বঞ্চিত হই। কেননা আমি সেই দুঃখজনক ও লজ্জাকর ঘটনা কল্পনা করতে পারি: তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের রব উঠলেই তিনি এসে পড়বেন; আর তখনই বুদ্ধিমতী সকল প্রাণ নিজ নিজ উজ্জ্বল প্রদীপ ও প্রচুর খাদ্য নিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে যাবে; কিন্তু যাদের তেল যথেষ্ট, অপর সকল প্রাণ তাদের কাছে তা অসময়ে চাইতে চাইতে অস্থির হয়ে উঠবে। তিনি কিন্তু শীঘ্রই প্রবেশ করবেন, ও তাঁর সঙ্গে বুদ্ধিমতীরাও প্রবেশ করবে; কিন্তু যে যে বুদ্ধিহীন প্রাণ প্রদীপ ঠিক করার জন্য প্রবেশের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল, তারা বঞ্চিত হয়ে ও নিজেদের অলসতা ও শিথিলতার ফলে কীবা হারিয়েছে তা অধিক দেরি করেই বুঝে হাহাকার করবে। তারা যতই যাচনা ও মিনতি করবে না কেন, বাসরে প্রবেশ করতে আর কখনও পারবে না, কারণ নিজেদের দোষেই প্রবেশাধিকার থেকে নিজেদের বঞ্চিত করল।
আরও, তোমরা যেন তাদেরও মত না হও, যারা, উত্তম বরের জন্য উত্তম পিতা যে বিবাহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন, তাতে যোগ দিতে অসম্মত হয়েছিল কারণ সম্প্রতিকালে নিজেরাই বিবাহ করেছিল বা একখণ্ড জমি বা এক জোড়া বলদ সবেমাত্রই কিনেছিল। সেসময়ে গর্বোদ্ধত ও দাম্ভিকের জন্য স্থান থাকবে না, অলস ও শিথিলের জন্যও নয়; আর তার জন্যও নয়, যার পোশাক বিবাহোৎসবের অযোগ্য ও উপযুক্ত নয়—যদিও সে এ জীবনকালে নিজেকে সেই মর্যাদার যোগ্য বলে গণ্য করেছিল ও অসার প্রত্যাশায় নিজেকে প্রবঞ্চিত ক’রে অন্য সকলের মধ্যে অযথাই প্রবেশ করেছিল।
তারপর কী হবে? আমরা তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করলে বর ভালই জানেন তিনি কী প্রকাশ করতে যাচ্ছেন ও কেমন করে সেই আত্মাদের সঙ্গে বাস করবেন যারা তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করেছে। আমি মনে করি, তিনি তাদের সঙ্গে বসে সর্বোচ্চ ও পবিত্রতম রহস্য প্রকাশ করবেন। আহা, এমনটি দেওয়া হোক, আমরা যারা তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি ও তোমরা যারা শুনছ, এই আমরা সকলে যেন আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টে তাদের সহভাগী হতে পারি! তাঁর গৌরব ও পরাক্রম হোক যুগে যুগান্তরে। আমেন।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ২৩
ধুয়ো: প্রভু আমার পালক;
অভাব নেই তো আমার।
আমায় তিনি শুইয়ে রাখেন নবীন ঘাসের চারণমাঠে,
আমায় নিয়ে যান শান্ত জলের কূলে।
তিনি সঞ্জীবিত করেন আমার প্রাণ,
তাঁর নামের খাতিরে আমায় চালনা করেন ধর্মপথে।
মৃত্যু-ছায়ার উপত্যকাও যদি পেরিয়ে যাই,
আমি কোন অনিষ্টের ভয় করি না, তুমি যে আমার সঙ্গে আছ। [ধুয়ো]
তোমার যষ্টি, তোমার পাচনি আমাকে সান্ত্বনা দেয়।
আমার সম্মুখে তুমি সাজাও ভোজনপাট আমার শত্রুদের সামনে;
আমার মাথা তুমি তৈলসিক্ত কর;
আমার পানপাত্র উচ্ছলিত। [ধুয়ো]
মঙ্গল ও কৃপাই হবে আমার সহচর
আমার জীবনের সমস্ত দিন ধরে,
আমি প্রভুর গৃহে ফিরব
চিরদিনের মত! [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার এই পবিত্র উপহার গ্রহণে পরিপুষ্ট হয়ে উঠে
আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি:
যাদের অন্তরে তোমার স্বর্গীয় শক্তি প্রবেশ করেছে, তোমার আত্মা সিঞ্চনের ফলে
তারা যেন সেই পবিত্রতার অনুগ্রহ সর্বদাই ভোগ করতে পারে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]
৩৩শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
- আমেন।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
- আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।
এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
- তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
- আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
- আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
- খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
- প্রভু, দয়া কর।
২। জয় পরমেশ্বর।
৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, আমাদের পরমেশ্বর, আশীর্বাদ কর,
আমরা যেন তোমার সেবায় রত থেকে নিত্য আনন্দিত থাকি।
কেননা মঙ্গলকর সমস্ত কিছুর উৎস যে তুমি,
সেই তোমার প্রতি আত্মনিয়োজিত থাকা-ই পূর্ণ অফুরানো আনন্দ-সুখ।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।
৪। প্রথম পাঠ
প্রবচনমালা থেকে পাঠ (৩১:১০-১৩,১৯-২০,৩০-৩১)
গুণবতী নারী—তাকে কে পেতে পারে?
মণিমুক্তার চেয়েও তার মূল্য অনেক বেশি।
তার স্বামীর হৃদয় তার উপরে ভরসা রাখে,
সেই স্বামীর লাভের অভাব হবে না।
তার জীবনের সমস্ত দিন ধরে
সে স্বামীর মঙ্গল করে, তার অমঙ্গল নয়।
সে পশম ও ক্ষোম যোগাড় করে,
তার দু’হাত উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করে।
সুতাকাটার যন্ত্র হাতে নিয়ে
সে আঙুল দিয়ে টাকু চালায়।
দরিদ্রের প্রতি সে হাত বাড়ায়,
নিঃস্বের প্রতি বাহু প্রসারিত করে।
কমনীয়তা প্রবঞ্চক, সৌন্দর্য অসার,
কিন্তু যে নারী প্রভুকে ভয় করে, সে-ই প্রশংসনীয়া।
তার কর্মের ফল তাকে দেওয়া হোক,
নগরদ্বারে তার নিজের কর্মই তার প্রশংসাবাদ করুক।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৫। সামসঙ্গীত ১২৮
ধুয়ো: সুখী সেই সকলে,
যারা প্রভুকে করে ভয়।
সুখী সেই সকলে, যারা প্রভুকে করে ভয়,
যারা তাঁর সমস্ত পথে চলে।
তুমি খাবে তোমার দু’হাতের শ্রমফলে,
তোমার হবে সুখ, হবে মঙ্গল। [ধুয়ো]
তোমার বধূ উর্বরা আঙুরলতার মত
তোমার গৃহের অন্তঃপুরে;
তোমার পুত্রেরা জলপাই-চারার মত
তোমার ভোজনপাট ঘিরে। [ধুয়ো]
যে প্রভুকে করে ভয়, তেমন আশিসেই ধন্য হবে সেই মানুষ।
প্রভু সিয়োন থেকে তোমাকে আশীর্বাদ করুন;
তুমি যেন যেরুশালেমের মঙ্গল দেখতে পাও
তোমার জীবনের সমস্ত দিন। [ধুয়ো]
৬। দ্বিতীয় পাঠ
থেসালোনিকীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের প্রথম পত্র থেকে পাঠ (৫:১-৬)
ভাই, বিশেষ বিশেষ কাল ও লগ্ন সম্বন্ধে তোমাদের কিছু লিখব তেমন প্রয়োজন নেই, যেহেতু তোমরা নিজেরা ভালই জান যে, চোর যেমন রাত্রিবেলায় আসে, প্রভুর দিন ঠিক সেইভাবে আসবে। লোকে যখন বলবে, ‘এবার শান্তি ও নিরাপত্তা’ তখনই গর্ভবতী নারীর প্রসবযন্ত্রণার মত বিনাশ তাদের উপর হঠাৎ নেমে পড়বে; আর তারা কেউই তা এড়াতে পারবে না।
কিন্তু, ভাই, তোমরা অন্ধকারে নও যে, সেই দিন চোরের মত তোমাদের উপর এসে পড়বে। তোমরা তো সকলে আলোরই সন্তান, দিনেরই সন্তান; আমরা তো রাত্রিরও নই, অন্ধকারেরও নই।
তাই আমরা যেন অন্য সকলের মত ঘুমিয়ে না থাকি, বরং জেগেই থাকি ও মিতাচারী হই।
✦ ঈশ্বরের বাণী।
৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
❖ আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমি যেমন তোমাদের অন্তরে রয়েছি,
তেমনি তোমরা আমাতে থাক,
যে আমাতে থাকে,
সে-ই প্রচুর ফলে ফলশালী হয়—যিশুর উক্তি।
❖ আল্লেলুইয়া।
৮। সুসমাচার
✚ মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২৫:১৪-১৫,১৯-২১)
একদিন যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে এই উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন: ‘ব্যাপারটা এমনটি হবে, বিদেশ যাত্রা করতে যাচ্ছেন ঠিক যেন এমন লোকের মত, যিনি নিজের দাসদের ডেকে নিজ বিষয়-সম্পত্তি তাদের হাতে তুলে দিলেন। একজনকে তিনি পাঁচশ’ মোহর, অন্যজনকে দু’শো মোহর, ও আর একজনকে একশ’ মোহর—যার যে কার্যক্ষমতা, তাকে সেই অনুসারে দিলেন; পরে বিদেশ যাত্রা করলেন।
দীর্ঘদিন পর সেই দাসদের প্রভু এসে তাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত নিলেন। যে পাঁচশ’ মোহর পেয়েছিল, সে এগিয়ে এসে আরও পাঁচশ’ মোহর এনে বলল, প্রভু, আপনি আমার হাতে পাঁচশ’ মোহর তুলে দিয়েছিলেন; এই দেখুন, আরও পাঁচশ’ মোহর লাভ করেছি। তার প্রভু তাকে বললেন, বেশ! উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস; তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হয়েছ, আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করব; তোমার প্রভুর আনন্দে প্রবেশ কর।’
✦ প্রভুর বাণী।
৯। উপদেশ
মথি-রচিত সুসমাচারে পুরোহিত অরিগেনেসের ব্যাখ্যা
আমার মনে হয়, সুসমাচারের এ বচন থেকে একথা দাঁড়ায় যে, আত্মায় বীজ বোনে বিধায় ধার্মিক অনন্ত জীবন সংগ্রহ করবে। প্রকৃতপক্ষে যা কিছু ধার্মিক দ্বারা বোনা ও সংগ্রহ করা হয়, ঈশ্বরই তা সংগ্রহ করেন; কেননা ধার্মিক সেই ঈশ্বরেরই সম্পদ, যিনি সেখানে ফসল সংগ্রহ করেন যেখানে নিজেই বীজ বোনেননি, ধার্মিক বুনেছিল।
ফলে কথাটা এভাবেই ব্যক্ত করব: ধার্মিক ছড়িয়ে দিল, নিঃস্বকে মুক্তহস্তে দান করল; ও প্রভু নিজের জন্য সেই সমস্ত কিছু সংগ্রহ করবেন যা ধার্মিক সেইভাবে বুনেছিল।
কেননা তিনি যা বোনেননি, সেই ফসল নিজের জন্য কাটিয়ে, ও তিনি যা ছড়াননি তা সংগ্রহ করে ঈশ্বর সেই সমস্ত কিছু যা গরিবদের মধ্যে বোনা হল বা ছড়িয়ে দেওয়া হল তা নিজেরই কাছে নিবেদিত বলে বিবেচনা করবেন, ও যারা প্রতিবেশীর উপকার করল তাদের বলবেন: এসো, আমার পিতার আশীর্বাদের পাত্র যে তোমরা, জগৎপত্তনের সময় থেকে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তা উত্তরাধিকাররূপে গ্রহণ কর। কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আর তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে (মথি ২৫:৩৪-৩৫)।
আর যেহেতু তিনি সেখানেও শস্য কাটতে চান যেখানে বীজ বোনেননি, ও সেখানেও ফসল সংগ্রহ করতে চান যেখানে ছড়াননি, সেজন্য যখন কিছুই পাবেন না, তখন যারা এ লাভ থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছে তিনি তাদের বলবেন: আমার কাছ থেকে দূর হও, অভিশাপের পাত্র যে তোমরা! শয়তানের ও তার দূতদের জন্য যে অনন্ত আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে যাও। কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, আর তোমরা আমাকে খেতে দাওনি (মথি ২৫:৪১-৪২)।
মথির বচন অনুসারে, তিনি সত্যি শক্ত, ও লুকের বর্ণনা অনুসারে, তিনি কঠোর (লুক ১৯:২১ দ্রঃ); কিন্তু কেবল তাদেরই প্রতি, যারা নিজেদের অবহেলায় ঈশ্বরের দয়া দুর্ব্যবহার করে, অর্থাৎ মনপরিবর্তনের জন্য তা ব্যবহার করে না—প্রেরিতদূত যেভাবে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: তুমি ঈশ্বরের মঙ্গলময়তা ও তাঁর কঠোরতাও বিবেচনা করে চল (রো ১১:২২)। তাই যারা সৎকর্ম সাধনে অবহেলা করেছে, তিনি তাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করবেন; কিন্তু তুমি মঙ্গলময়তায় থাকলে, তবে তোমার প্রতি তিনি মঙ্গলময় হবেন।
এক ব্যক্তি যদি এতে নিশ্চিত যে, ঈশ্বর মঙ্গলময়, ও যদি এ প্রত্যাশা রাখে, মনপরিবর্তন করলে সে ক্ষমা পাবে, তবে তেমন ব্যক্তির প্রতি ঈশ্বর মঙ্গলময়। কিন্তু যে ব্যক্তি ভাবে, তিনি মঙ্গলময় হওয়ায় মানুষের পাপের দিকে তাকাবেন না, তেমন ব্যক্তির প্রতি ঈশ্বর মঙ্গলময় হবেন না, কঠোর হবেন। কেননা যে সকল মানুষ তাঁকে অবজ্ঞা করে, তাদের পাপের জন্য তিনি ক্রোধে উত্তপ্ত।
সুতরাং আমরা যা বুনিনি, খ্রিষ্ট যখন সেই শস্য কাটবেন, ও আমরা যা ছড়াইনি, তিনি যখন সেই ফসল সংগ্রহ করবেন, তখন এসো, আত্মায় বীজ বুনি, গরিবদের কাছে আমাদের সম্পদ বিলিয়ে দিই, ও ঈশ্বরের সেই মোহরটা মাটির নিচে যেন লুকিয়ে না রাখি।
তেমন ভয় মঙ্গলকর নয়, সেই অন্ধকার থেকেও আমাদের রেহাই দেবে না, যে অন্ধকারে আমরা ধূর্ত ও অলস দাসরূপে দণ্ডিত হব। হ্যাঁ, আমরা ধূর্ত, কেননা প্রভুর বাণীর অমূল্য মোহরটা ব্যবহার না করে খ্রিষ্টবিশ্বাস ছড়াইনি, ঈশ্বরের মঙ্গলময়তার নিগূঢ়তত্ত্বেও প্রবেশ করিনি। আবার আমরা অলস, কারণ নিজেদের ও অপরের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের বাণী দ্বারা ব্যবসা করিনি। অথচ আমাদের উচিত ছিল, আমাদের প্রভুর ঐশ্বর্য তথা তাঁর বাণী সেই পোদ্দারদের হাতে দেব যারা সবকিছুই যাচাই ও নিরীক্ষণ করে, যাতে কেবল উত্তম ও সত্য ধর্মতত্ত্ব রাখে ও ভ্রান্ত ও মিথ্যা ধর্মতত্ত্ব পরিত্যাগ করে, যাতে করে প্রভু এলে, তখন সুদ ও ফসলের সঙ্গে সেই বাণীও সংগ্রহ করতে পারেন যা আমরা ভাইদের মধ্যে ছড়িয়েছি। কেননা সেই সমস্ত মোহর, তথা সেই সমস্ত বাণী যা ঈশ্বরের রাজকীয় মুদ্রাঙ্কনে ও তাঁর বাণীর প্রতিমূর্তিতে চিহ্নিত, তা-ই প্রকৃত মোহর।
১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।
১১। অর্থদান
১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।
অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।
হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)
১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।
১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৭৩
ধুয়ো: পরমেশ্বরের কাছে থাকাই আমার মঙ্গল;
আমি প্রভু পরমেশ্বরেই নিয়েছি আশ্রয়।
যখন অস্থির ছিল আমার মন,
যখন উদ্বিগ্ন ছিল আমার হৃদয়,
তখন আমি অবোধ অজ্ঞ ছিলাম,
তোমার সামনে ছিলাম পশুরই মত। [ধুয়ো]
আমি কিন্তু নিরন্তর তোমার সঙ্গে আছি,
তুমি আমার ডান হাত ধারণ করে রাখ।
তোমার সুমন্ত্রণা দ্বারা তুমি আমায় চালনা কর,
আর শেষে তোমার আপন গৌরবে আমায় গ্রহণ করবে। [ধুয়ো]
স্বর্গে আমার জন্য আর কেইবা থাকতে পারে?
তোমার সঙ্গে থেকে এ মর্তে আমার আর কোন বাসনা নেই।
আমার দেহ, আমার হৃদয় নিঃশেষিতও হতে পারে,
পরমেশ্বরই কিন্তু আমার হৃদয়ের শৈল, আমার স্বত্বাংশ চিরকাল। [ধুয়ো]
১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার এ পবিত্র উপহার গ্রহণ ক’রে
আমরা বিনীত কণ্ঠে মিনতি জানাই:
তোমার পুত্র নিজের স্মরণার্থে যা সম্পাদন করতে আমাদের আজ্ঞা করেছেন,
তা যেন উজ্জ্বলতর ভক্তিতে ও ভ্রাতৃপ্রেমে সার্থকতা লাভ করে।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।
১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।
অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।
[সূচী]