সাধু বেনেডিক্ট মঠের ওয়েব-সাইট - মহেশ্বরপাশা - খুলনা - বাংলাদেশ
[অনলাইন পঞ্জিকা]
সাধারণকাল
• সাধারণকালের প্রথম সপ্তাহ প্রভুর বাপ্তিস্ম থেকে শুরু হয়।
• পরমপবিত্র ত্রিত্ব পঞ্চাশত্তমীর পরবর্তী রবিবারে পালিত হয়।
• খ্রিষ্টের পরমপবিত্র দেহরক্ত পরমপবিত্র ত্রিত্বের পরবর্তী রবিবারে পালিত হয়।
• পরমারাধ্য যিশুহৃদয় পঞ্চাশত্তমীর পরবর্তী দ্বিতীয় রবিবারের পরবর্তী শুক্রবারে পালিত হয়।
• বিশ্বরাজ আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্ট সাধারণকালের শেষ রবিবারে পালিত হয়।

রবিবার: ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ | ৩২ | ৩৩
সাধারণকালের মহাপর্বচতুষ্টয়: ত্রিত্ব | খ্রিষ্টের দেহরক্ত | যিশুহৃদয় | খ্রিষ্টরাজা

১৮শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার সেবকদের কাছে কাছে থাক, তাদের মিনতিতে সাড়া দাও:
তারা তো গর্বের সঙ্গে তোমাকে আপন স্রষ্টা ও পথদিশারী বলে স্বীকার করে,
তাই যা সৃষ্টি করেছ তা নবায়িত কর, ও যা নবায়িত করেছ তা সযত্নে রক্ষা কর।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৫৫:১-৩)

প্রভু একথা বলছেন:
ওহে, তৃষিত লোকসকল, জলের কাছে এসো;
যার অর্থ নেই, তুমিও এসো।
এসো, খাদ্য কিনে নিয়ে খাও;
এসো, বিনা অর্থে খাদ্য, বিনা মূল্যে আঙুররস ও দুধ কিনে নাও।
তোমরা কেন অখাদ্যের জন্য অর্থব্যয় করবে?
কেন অতৃপ্তিকর খাদ্যের জন্য তোমাদের মজুরি নষ্ট করবে?
আমার কথা কান পেতে শোন, তবেই উৎকৃষ্ট খাদ্য খাবে,
রসাল শাঁসাল খাদ্য ভোগ করবে।
কান দাও, আমার কাছে এসো;
শোন, তবেই তোমাদের প্রাণ সঞ্জীবিত হবে।
আমি তোমাদের সঙ্গে চিরস্থায়ী এক সন্ধি স্থাপন করব;
দাউদের প্রতি আমার সেই মহাকৃপা স্থির রাখব।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৪৫
ধুয়ো:
তুমি যেই খোল হাত,
আমাদের পরিতৃপ্ত কর।

প্রভু দয়াবান, স্নেহশীল,
ক্রোধে ধীর, কৃপায় মহান।
প্রভু সকলের প্রতি মঙ্গলময়,
তাঁর স্নেহ তাঁর সকল কাজে বিরাজিত।   [ধুয়ো]

সকলের চোখ তোমার দিকে চেয়ে থাকে,
যথাসময়ই তুমি তাদের খাদ্য দান কর।
তুমি যেই খোল হাত,
যত জীবের বাসনা পূর্ণ কর।   [ধুয়ো]

প্রভু সকল পথে ধর্মময়,
সকল কাজে কৃপাময়।
যারা তাঁকে ডাকে, অন্তর দিয়েই তাঁকে ডাকে,
প্রভু তাদের সকলের কাছে কাছেই থাকেন।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৮:৩৫,৩৭-৩৯)

প্রিয়জনেরা, খ্রিষ্টের ভালবাসা থেকে কে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারবে? কোন ক্লেশ বা সঙ্কট, কিংবা নির্যাতন, ক্ষুধা বা বস্ত্রাভাব, কিংবা কোন বিপদ, কোন তলোয়ার কি তা করতে পারবে?
কিন্তু যিনি আমাদের ভালবেসেছেন, তাঁরই দ্বারা আমরা ওইসব কিছুতে বিজয়ীর চেয়েও অধিক বিজয়ী হই, কেননা আমি নিশ্চিত ভাবেই জানি যে, মৃত্যু বা জীবন, স্বর্গদূত, আধিপত্য বা শক্তিবৃন্দ, বর্তমান বা ভাবীকালের কোন-কিছু, ঊর্ধ্বের বা অতলের কোন প্রভাব, কিংবা কোন সৃষ্টবস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রিষ্টযিশুতে নিহিত ঈশ্বরের ভালবাসা থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হবে না।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচবে না,
ঈশ্বরের মুখ থেকে যে প্রতিটি উক্তি নির্গত হয়, তাতেই বাঁচবে।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৪:১৩-২১)

একদিন, [বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মৃত্যুর] কথা শুনে যিশু নৌকায় করে সেখান থেকে এক নির্জন স্থানে চলে গেলেন যেখানে একাকী হয়ে থাকতে পারেন।
কিন্তু লোকেরা তা শুনে নানা শহর থেকে এসে হাঁটা-পথে তাঁর পিছু পিছু সেখানে গেল। তাই তিনি যখন নৌকা থেকে নেমে এলেন, তখন বিপুল এক জনতাকে দেখলেন। তাদের প্রতি তিনি দয়ায় বিগলিত হলেন, ও তাদের পীড়িত লোকদের নিরাময় করলেন।
পরে, সন্ধ্যা হলে শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, ‘জায়গাটা নির্জন, বেলাও গেছে; লোকদের বিদায় দিন, যেন তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার মত কিছু কিনতে পারে।’ যিশু তাঁদের বললেন, ‘এদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই; তোমরাই এদের খেতে দাও।’ তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘আমাদের এখানে কেবল পাঁচখানা রুটি ও দু’টো মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।’ তিনি বললেন, ‘তা এখানে আমার কাছে নিয়ে এসো।’
তিনি লোকদের ঘাসের উপরে বসতে আদেশ করলে পর সেই পাঁচখানা রুটি ও দু’টো মাছ হাতে নিয়ে স্বর্গের দিকে চোখ তুলে ‘ধন্য’ স্তুতিবাদ উচ্চারণ করলেন, এবং সেই ক’খানা রুটি ছিঁড়ে তা শিষ্যদের হাতে দিলেন ও শিষ্যেরা তা লোকদের দিয়ে দিলেন।
সকলে তৃপ্তির সঙ্গেই খেল; এবং যতগুলো টুকরো পড়ে রইল, তাঁরা তা কুড়িয়ে নিলে বারোখানা ঝুড়ি ভরে গেল। যারা খেয়েছিল, তারা স্ত্রীলোক ও শিশু বাদে আনুমানিক পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
ক্যান্টারবেরির বিশপ বাল্ডুইন-লিখিত ‘বেদির সাক্রামেন্ত’

যারা আমাকে খাবে, তাদের সকলের আরও ক্ষুধা পাবে, যারা আমাকে পান করে, তাদের সকলের আরও তেষ্টা পাবে (সিরা ২৪:২১)। বর্তমানকালে আমরা ঈশ্বরের প্রজ্ঞা সেই খ্রিষ্টকে গ্রহণ করেও আমাদের ক্ষুধা মিটিয়ে পরিতৃপ্ত হতে পারি না; এমনকি তৃপ্তি পাবার বাসনা থেকেই যায়। আর আমরা তাঁর মাধুর্য যতখানি আস্বাদন করি, বাসনা ততখানি বেড়ে ওঠে। এজন্য যারা খায়, তাদের আবার ক্ষুধা পাবে যতক্ষণ না একদিন পরিতৃপ্ত হয়। সৎমানুষদের বাসনা যখন সিদ্ধিলাভ করবে, তখনই তাদের আর ক্ষুধা বা তেষ্টা পাবে না।
যারা আমাকে খাবে, তাদের সকলের আরও ক্ষুধা পাবে, যারা আমাকে পান করে, তাদের সকলের আরও তেষ্টা পাবে। এবাণী ভাবী জীবনের বেলায়ও প্রযোজ্য। কেননা সেই শাশ্বত পরিতৃপ্তিতে এমন আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, যা কোন অভাব থেকে নয়, সুখ থেকেই নির্গত: স্বর্গে খাদ্য গ্রহণের যাদের আর প্রয়োজন নেই, তারা নিত্যই খেতে বাসনা করে, এমনকি তেমন পরিতৃপ্তির ফলে তারা কোন অস্বস্তি বোধ করে না। কেননা এমন পরিতৃপ্তি রয়েছে যা অস্বস্তিবিহীন, আবার এমন বাসনাও রয়েছে যা পীড়াবিহীন। যাঁর দিকে স্বর্গদূতেরা দৃষ্টি নিত্যই নিবদ্ধ রাখতে বাসনা করেন (১ পি ১:১২), নিজ রাজমহিমায় অপরূপ হয়ে সেই খ্রিষ্ট আমাদেরও নিত্য বাসনার বস্তু। এজন্যই তাঁকে পেয়েও আমরা তাঁকে বাসনা করতে থাকি, ও তাঁর কাছে পৌঁছেও তাঁর নিত্য সন্ধানে রত থাকি, যেমনটি লেখা আছে: অনুক্ষণ তাঁর শ্রীমুখ অন্বেষণ কর (সাম ১০৫:৪)। যাঁকে ভালবাসি, তিনি যেন আমাদের অনন্তকাল ধরে দখল করেন, এজন্যই আমরা অবিরতই তাঁর অন্বেষণ করি।
আবার এজন্যই যারা তাঁর সন্ধান পায়, তারা তাঁর নিত্য অন্বেষণে রত থাকে, ও যারা তাঁকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে তাদের আরও ক্ষুধা পায়, ও যারা তাঁর জল পান করে তাদের আরও তেষ্টা পায়; তথাপি এ ক্ষুধা অন্য সমস্ত ক্ষুধা বাতিল করে দেয়, আর এ তৃষ্ণা অন্য সমস্ত তৃষ্ণা মিটিয়ে দেয়।
তেমন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা অভাব থেকে নয়, সিদ্ধ সুখ থেকেই নির্গত। কেননা অভাবজনিত ক্ষুধা বিষয়ে লেখা আছে: যে কেউ আমার কাছে আসে, তার আর কখনও ক্ষুধা পাবে না, আর যে কেউ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার আর কখনও তেষ্টা পাবে না (যোহন ৬:৩৫)। কিন্তু সুখজনিত ক্ষুধা বিষয়ে লেখা আছে: যারা আমাকে খাবে, তাদের সকলের আরও ক্ষুধা পাবে, যারা আমাকে পান করে, তাদের সকলের আরও তেষ্টা পাবে। যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখে, তাদের জন্য খ্রিষ্ট হলেন খাদ্য ও পানীয়, রুটি ও আঙুররস: বলীয়ান ও শক্তিশালী করে তোলেন বিধায় তিনি খাদ্য ও রুটি; আনন্দিত করে তোলেন বিধায় তিনি পানীয় ও আঙুররস। আমাদের মধ্যে বলীয়ান, শক্তিশালী ও অটল যা কিছু আছে, যে স্ফূর্তিপূর্ণ আনন্দে আমরা ঈশ্বরের আদেশগুলি পালন করি, পীড়ন সহ্য করি, বাধ্যতা দেখাই ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করি, তেমন বল, শক্তি ও সাহস সেই রুটি থেকেই নির্গত, তেমন আনন্দ সেই পানীয় থেকেই নির্গত। সুখী যারা শক্তি ও আনন্দের সঙ্গে জীবনাচরণ করে!
আর নিজের শক্তিবলে যেহেতু কেউই সেভাবে আচরণ করতে পারে না, সেজন্য তারাই সুখী, যারা ন্যায্য ও ধর্মময় সমস্ত কিছু ব্যগ্রতার সঙ্গে আকাঙ্ক্ষা করে ও তাঁরই হাত থেকে শক্তি ও আনন্দ পেতে বাসনা করে যিনি বলেন: ধর্মময়তার জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত যারা, তারাই সুখী (মথি ৫:৬)।
তাই যখন খ্রিষ্ট এমন খাদ্য ও পানীয়, যা বর্তমানকালের ধার্মিকদের বলীয়ান ও আনন্দিত করে তোলে, তখন ভাবী জীবনে তাদের অনন্ত সুখের উৎস আরও কতই না উৎকৃষ্ট হওয়ার কথা!

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১১১
ধুয়ো:
প্রভু, স্বর্গ থেকে আমাদের অর্পণ করেছ এমন রুটি,
যে রুটি যত তৃপ্তি এনে দিতে পারে, মেটাতে পারে যত রুচি।

যারা তাঁকে ভয় করে, তিনি তাদের খাদ্য দান করেন,
আপন সন্ধির কথা তিনি স্মরণে রাখেন চিরকাল।
বিজাতীয়দের উত্তরাধিকার তাঁর আপন জনগণকে দিয়ে
তিনি তাদের কাছে ব্যক্ত করেছেন আপন কর্মকীর্তির প্রতাপ।   [ধুয়ো]

তাঁর হাতের কর্মকীর্তি বিশ্বস্ততা ও ন্যায়বিচার-মণ্ডিত,
তাঁর সকল আদেশ বিশ্বাসযোগ্য,
তা দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত চিরদিন চিরকাল ধরে,
বিশ্বস্ততা ও ন্যায়নীতিতেই সাধিত।   [ধুয়ো]

তাঁর আপন জাতির কাছে তিনি মুক্তি পাঠিয়ে দিলেন,
আপন সন্ধি জারি করলেন চিরকালের মত;
তাঁর নাম পবিত্র, ভয়ঙ্কর,
প্রভুভয়ই প্রজ্ঞার সূত্রপাত।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার স্বর্গীয় উপহার দ্বারা যাদের নবায়িত কর,
অবিরতই তাদের প্রতিপালন কর;
যাদের নিয়তই যত্ন কর, তাদের চিরকালীন মুক্তি পাবার যোগ্য করে তোল।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


১৯শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান সনাতন ঈশ্বর, পবিত্র আত্মা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েই
আমরা তোমাকে পিতা বলে ডাকবার সাহস করি।
মিনতি জানাই: আমাদের অন্তরে দত্তকপুত্রত্বের আত্মা পূর্ণ-বিকশিত কর,
আমরা যেন তোমার অঙ্গীকৃত উত্তরাধিকারে প্রবেশের যোগ্য হয়ে উঠি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
রাজাবলির প্রথম পুস্তক থেকে পাঠ (১৯:৯ক,১১-১৩ক)

সেসময়ে এলিয় [ঈশ্বরের পর্বত সেই হোরেবে গিয়ে পৌঁছে] একটা গুহার মধ্যে ঢুকে সেইখানে রাত কাটালেন। তাঁকে বলা হল: ‘বাইরে যাও, এবং পর্বতে প্রভুর সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াও!’ কেননা সেসময়ে প্রভু সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তখন প্রভুর আগে আগে গিয়ে একটা প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস পর্বতমালা ফাটিয়ে দিল ও বড় যত পাথর ভেঙে দিল; কিন্তু সেই ঝড়ো বাতাসের মধ্যে প্রভু ছিলেন না।
ঝড়ো বাতাসের পরে ভূমিকম্প হল, কিন্তু সেই ভূমিকম্পের মধ্যে প্রভু ছিলেন না।
ভূমিকম্পের পরে আগুন হল, কিন্তু সেই আগুনের মধ্যে প্রভু ছিলেন না।
আগুনের পরে মৃদু এক মর্মরধ্বনি হল। তা শোনামাত্র এলিয় আলোয়ান দিয়ে মুখ ঢেকে নিলেন, এবং বাইরে গিয়ে গুহার মুখে দাঁড়ালেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৮৫
ধুয়ো:
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা;
আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।

আমি শুনব প্রভু ঈশ্বর কী কথা বলবেন;
আপন জনগণের কাছে, আপন ভক্তদের কাছে তিনি বলেন শান্তি।
যারা তাঁকে ভয় করে, তাদের জন্য কাছেই রয়েছে তাঁর পরিত্রাণ,
আমাদের এ দেশে তাঁর গৌরব করবে বসবাস।   [ধুয়ো]

কৃপা ও সত্যের হবে সম্মিলন,
ধর্মময়তা ও শান্তি করবে পরস্পর চুম্বন;
মর্ত থেকে সত্য হবে অঙ্কুরিত,
স্বর্গ থেকে ধর্মময়তা বাড়াবে মুখ।   [ধুয়ো]

সত্যিই প্রভু দান করবেন মঙ্গল,
আর আমাদের ভূমি দান করবে তার আপন ফসল।
তাঁর আগে আগে ধর্মময়তা চলবে,
আর শান্তি সেই পথে পদার্পণ করবে।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (৯:১-৫)

প্রিয়জনেরা, আমি খ্রিষ্টে সত্যকথা বলছি, মিথ্যা বলছি না, আমার বিবেকও পবিত্র আত্মায় আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আমার হৃদয়ে ভারী দুঃখ ও নিরন্তর বেদনা রয়েছে; আহা, নিজেই এই ভিক্ষা রাখতাম, আমার ভাইদের খাতিরে—জন্মসূত্রে যারা আমার স্বজাতি, তাদের খাতিরে—আমি নিজেই যেন বিনাশ-মানতের বস্তু হয়ে খ্রিষ্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হই!
তারা ইস্রায়েলীয়; সেই দত্তকপুত্রত্ব, সেই গৌরব, সেই বিভিন্ন সন্ধি, সেই বিধান, সেই উপাসনা-রীতি এবং যত প্রতিশ্রুতি, সব তাদেরই, তারাই কুলপতিদের বংশধর, মানবস্বরূপের দিক দিয়ে তাদেরই মধ্য থেকে আগত সেই খ্রিষ্ট, যিনি সবার উপরে, ধন্য ঈশ্বর, যুগে যুগান্তরে, আমেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমি প্রভুতে আশা রাখি; আমার প্রাণ আশা রাখে;
আমি তাঁর বাণীর প্রত্যাশায় আছি।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৪:২২-৩৩)

[জনতা একবার খাওয়া-দাওয়া শেষ করলে] যিশু শিষ্যদের নির্দেশ দিলেন যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে আগে ওপারে যান; এর মধ্যে তিনি লোকদের বিদায় দেবেন। লোকদের বিদায় দেবার পর তিনি একাকী হয়ে প্রার্থনা করার জন্য পর্বতে গিয়ে উঠলেন।
সন্ধ্যা হলে তিনি সেখানে একাই ছিলেন, কিন্তু নৌকাটা ডাঙা থেকে বেশ দূরে গিয়ে পড়েছিল, ও বাতাস প্রতিকূল হওয়ায় প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে টলমল করছিল। রাত যখন চার প্রহর, তখন তিনি সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন। তাঁকে সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখে শিষ্যেরা আতঙ্কিত হলেন; তাঁরা বললেন, ‘এ যে ভূত!’ এবং ভয়ে চিৎকার করতে লাগলেন। কিন্তু যিশু তখনই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন, বললেন: ‘সাহস ধর, আমিই আছি, ভয় করো না।’
তখন পিতর উত্তরে তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, যদি আপনি হন, তবে আদেশ করুন, আমি যেন জলের উপর দিয়ে হেঁটে আপনার কাছে আসতে পারি।’ তিনি বললেন, ‘এসো।’ তাই পিতর নৌকা থেকে বের হয়ে জলের উপর দিয়ে যিশুর দিকে চলতে লাগলেন, কিন্তু বাতাস দেখে ভয় পেলেন, ও ডুবে যেতে যেতে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘প্রভু, আমাকে ত্রাণ করুন।’ যিশু তখনই হাত বাড়িয়ে তাঁকে আঁকড়ে ধরলেন, ও তাঁকে বললেন, ‘হে অল্পবিশ্বাসী, কেন সন্দেহ করলে?’
আর তাঁরা নৌকায় ওঠামাত্র বাতাস পড়ে গেল। যাঁরা নৌকায় ছিলেন, তাঁরা তাঁর সামনে প্রণিপাত করে বললেন, ‘সত্যি, আপনি ঈশ্বরের পুত্র।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিনের উপদেশ

আজকের সুসমাচার এ বর্ণনা দেয় যে, প্রভু যিশু সমুদ্রের জলের উপর দিয়ে হাঁটলেন, ও প্রেরিতদূত পিতর জলের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভয়ের কারণে সন্দেহ করলেন; এমনকি, সেই সন্দেহের ফলে ডুবে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আস্থা ফিরে পেলেই আবার ভেসে উঠলেন। এতে আমরা উপলব্ধি করি, সমুদ্র হল সংসার ও পিতর হলেন অদ্বিতীয় মণ্ডলীর প্রতীক। কেননা প্রেরিতদূতদের প্রধান ও খ্রিষ্টপ্রেমে অধিক উদারমনা সেই পিতর নিজেই সকলের নামে বারবার একা উত্তর দিলেন। যখন যিশু জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর বিষয়ে লোকে কী বলছিল, তখন শিষ্যেরা লোকদের অভিমত ব্যক্ত করতে করতে প্রভু আবার জিজ্ঞাসা করলে আমি কে, এবিষয়ে তোমরা কী বল? (মার্ক ৮:২৯)। পিতরই উত্তরে বললেন, আপনি সেই খ্রিষ্ট, জীবনময় ঈশ্বরের পুত্র (মথি ১৬:১৬)। অন্যদের হয়ে উত্তর দেওয়ায় তিনি ঐক্যই ব্যক্ত করলেন।
এসো, মণ্ডলীর এ সভ্যের কথা ভেবে দেখে আমরা তাঁর মধ্যে ঈশ্বরেরই যা, ও আমাদেরই যা, তা নির্ণয় করি। এভাবে আমরা সন্দেহমুক্ত হতে শিখব, এবং শৈলেই দৃঢ়স্থাপিত হয়ে বাতাস, বর্ষা ও নদনদীর বিরুদ্ধে অর্থাৎ এসংসারের প্রলোভনের বিরুদ্ধে অটল হয়ে দাঁড়াব। সুতরাং, যিনি সেসময়ে আমাদের সকলেরই প্রতীক ছিলেন, সেই পিতরের ব্যবহার লক্ষ কর: একসময়ে তিনি আশাবাদী, একসময়ে সন্দেহপূর্ণ, একসময়ে নিজেকে অমর মনে করেন, আবার একসময়ে মরতে ভয় করেন। যেহেতু মণ্ডলী শক্তিশালীদের ও দুর্বলদের নিয়ে গঠিত, সেজন্য একথা অনিবার্য যে, উভয় শ্রেণির লোক উপস্থিত থাকবে।
আপনি ঈশ্বরের সেই খ্রিষ্ট, পিতরের এ ঘোষণা শক্তিশালীদের ব্যবহার ব্যক্ত করে; তিনি যখন ভীত ও সন্দেহপূর্ণ, জীবনকে অস্বীকার ক’রে মৃত্যুর কথার সামনে বিচলিত, ও এমন ইচ্ছা প্রকাশ করেন খ্রিষ্ট যেন যন্ত্রণা ভোগ না করেন, তখন, মণ্ডলীভুক্তদের মধ্যে যারা দুর্বল, তাদেরই প্রতীক হয়ে দাঁড়ান।
প্রভু, যদি আপনি হন, তবে আদেশ করুন, আমি যেন জলের উপর দিয়ে হেঁটে আপনার কাছে আসতে পারি (মথি ১৪:২৮)—এ উক্তির অর্থ এরূপ: প্রভুর আদেশে পিতর সুন্দরভাবেই জলের উপর দিয়ে হাঁটলেন, কারণ সচেতন ছিলেন যে, স্বশক্তিতে তিনি তা করতে অক্ষম। মানব দুর্বলতার পক্ষে যা অসাধ্য, তিনি বিশ্বাস দ্বারাই তা সাধন করলেন। এরাই মণ্ডলীর শক্তিশালীরা: মানবেশ্বর আদেশ দিন আর মানুষ অসাধ্য যত কিছুই সাধন করতে পারবে। তিনি বললেন, ‘এসো!’ তাই পিতর নৌকা থেকে বের হয়ে জলের উপর দিয়ে যিশুর দিকে চলতে লাগলেন (মথি ১৪:২৯)। যিনি শৈল, তিনি আদেশ দেওয়ায়ই পিতর তা করতে পারলেন। দেখ, প্রভুতে পিতর কী হলেন। তবে নিজে থেকে তিনি কী ছিলেন? বাতাস দেখে তিনি ভয় পেলেন, ও ডুবে যেতে যেতে চিৎকার করে বলে উঠলেন, প্রভু, আমাকে ত্রাণ করুন (মথি ১৪:৩০)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যখন তিনি প্রভুতে আস্থা রাখলেন, তখন তাঁর কাছ থেকে শক্তি পেলেন; যখন মানুষ হিসাবে টলমল হলেন, তখন আবার প্রভুর দিকে ফিরলেন, ও প্রভু আপন ডান হাতের সহায়তা তাঁকে সঙ্গে সঙ্গেই দান করে ডোবা অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে তাঁকে ধরলেন ও তাঁর সন্দেহের জন্য তাঁকে ভর্ৎসনা করলেন: হে অল্পবিশ্বাসী (মথি ১৪:৩১)।
এসো ভাইবোনেরা, শেষ করি। একথা চিন্তা কর যে, সংসার সমুদ্রেরই মত: ভীষণ বাতাস, তীব্র ঝড়ঝঞ্ঝা। প্রত্যেকজনের পক্ষে তার নিজের বিশৃঙ্খল ভাবাবেগই ঝড়। তুমি ঈশ্বরকে ভালবাসলে, তবে সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে চল, সংসারের রোষ তোমার পদতলে থাকবে। তুমি সংসারকে ভালবাসলে, তবে সংসারই তোমার উপরে ঝাঁপিয়ে তোমাকে বয়ে নিয়ে যাবে, কারণ যারা সংসারকে ভালবাসে, সংসার তাদের সুস্থির করতে জানে না, তাদের কবলিতই করে। তাহলে যখন তোমার হৃদয় নানা ভাবাবেগে আলোড়িত হয়, তখন তা জয় করার জন্য খ্রিষ্টের ঈশ্বরত্বকেই ডাক; আর তোমার পা টলমল হলে, তোমার মনের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে, একটা কিছু অতিক্রম করতে না পারলে, ডুবে যেতে লাগলেই বলে ওঠ: প্রভু, আমাকে ত্রাণ করুন (মথি ১৪:৩০)। কেননা যিনি নিজের দেহে তোমার জন্য মৃত্যু বরণ করলেন, কেবল তিনিই দেহজনিত মৃত্যু থেকে তোমাকে মুক্ত করতে পারেন।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৪৭
ধুয়ো:
যেরুশালেম! প্রভুর মহিমাকীর্তন কর;
তিনি সেরা গমের ফসলে তোমাকে পরিতৃপ্ত করেন।

তিনি এ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন তাঁর বচন,
তাঁর বাণী দ্রুত বেগে ছুটে যায়।
তিনি তুষার বিছিয়ে দেন গালিচার মত,
ছাইয়ের মত ছড়িয়ে দেন জমাট শিশির।   [ধুয়ো]

তিনি হিমকণা ছুড়ে দেন টুকরো টুকরো নুড়ির মত,
তেমন শীতে কেবা দাঁড়াতে পারে?
তিনি তাঁর বাণী পাঠিয়ে সেই সব বিগলিত করেন,
তিনি বাতাস বহালে জল প্রবাহিত হয়।   [ধুয়ো]

তিনি তাঁর আপন বাণী ঘোষণা করেন যাকোবের কাছে,
তাঁর সমস্ত বিধি ও সুবিচার ইস্রায়েলের কাছে।
অন্যান্য দেশের জন্য তাই করলেন, এমন নয়,
অন্য কেউ জানতে পারেনি তাঁর সমস্ত সুবিচার।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার সাক্রামেন্ত গ্রহণের ফলে আমরা যেন পরিত্রাণ পেয়ে
তোমার সত্যের আলোতে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত থাকি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২০শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, যারা তোমাকে ভালবাসে,
তাদের জন্য তুমি এমন মঙ্গল ব্যবস্থা করেছ যা দৃষ্টিশক্তির অতীত।
আমাদের হৃদয়ে তোমার ভালবাসার প্রেরণা সঞ্চার কর,
আমরা যেন সবকিছুতে ও সবকিছুর ঊর্ধ্বে তোমাকে ভালবেসে
তোমার সেই প্রতিশ্রুত মঙ্গলদানগুলি লাভ করতে পারি
যা আমাদের সমস্ত বাসনার অতীত।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৫৬:১,৬-৭)

প্রভু একথা বলছেন:
তোমরা সুবিচার পালন কর, ধর্মময়তা অনুশীলন কর,
কারণ আমার পরিত্রাণ প্রায় এসে গেছে,
আমার ধর্মময়তা-প্রকাশ সন্নিকট।
যে বিজাতি মানুষ প্রভুর সেবা করার জন্য,
প্রভুর নাম ভক্তি করার জন্য,
ও তাঁর আপন দাস হবার জন্য প্রভুতে আসক্ত হয়েছে,
অর্থাৎ যে কেউ সাব্বাৎ অপবিত্র না করে তা পালন করে,
এবং আমার সন্ধি আঁকড়ে ধরে থাকে,
আমি তাদের চালনা করব আমার পবিত্র পর্বতের উপর;
আমার প্রার্থনা-গৃহে তাদের আনন্দিত করব।
তাদের আহুতি ও যজ্ঞগুলো তখন আমার বেদির উপরে গ্রহণীয় হবে,
কেননা আমার গৃহকে বলা হবে সকল জাতির জন্যই প্রার্থনা-গৃহ।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৬৭
ধুয়ো:
জাতিসকল তোমার স্তুতি করুক, পরমেশ্বর,
সর্বজাতি করুক তোমার স্তুতি।

পরমেশ্বর আমাদের দয়া করুন, আমাদের আশীর্বাদ করুন,
আমাদের উপর আপন শ্রীমুখ উজ্জ্বল করে তুলুন,
যেন পৃথিবীতে জ্ঞাত হয় তোমার পথ,
সকল দেশের মাঝে তোমার পরিত্রাণ।   [ধুয়ো]

মহোল্লাসে আনন্দগান করুক সকল দেশ,
তুমি যে ন্যায়ের সঙ্গেই জাতিসকল বিচার কর,
পৃথিবীতে যত দেশ
চালিত কর।   [ধুয়ো]

জাতিসকল তোমার স্তুতি করুক, পরমেশ্বর,
সর্বজাতি করুক তোমার স্তুতি।
পরমেশ্বর আমাদের আশীর্বাদ করুন,
তাঁকে ভয় করুক পৃথিবীর সকল প্রান্ত।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১১:১৩-১৫,২৯-৩২)

হে বিজাতীয়রা, আমি তোমাদের একথা বলছি: বিজাতীয়দের কাছে প্রেরিতদূত বলে আমি আমার সেবাদায়িত্বের গৌরব প্রকাশ করি, এই আশায় যে, আমার স্বজাতিদের অন্তরে কোন প্রকার ঈর্ষার ভাব জাগিয়ে তুলে তাদের কারও কারও পরিত্রাণ সাধন করতে পারব। কারণ তাদের দূরে রাখাটা যখন হল জগতের পুনর্মিলন, তখন তাদের ফিরিয়ে নেওয়াটা মৃতদের মধ্য থেকে পুনর্জীবন লাভ ছাড়া আর কীবা হতে পারবে?
কারণ ঈশ্বরের অনুগ্রহদানগুলো ও তাঁর আহ্বান অপরিবর্তনশীল।
ফলে তোমরা যেমন আগে ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলে কিন্তু ওদের অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে এখন দয়া পেয়েছ, তেমনি এরাও এখন অবাধ্য হয়েছে যেন তোমাদের দয়া লাভের ফলে তারাও একসময় দয়া পেতে পারে।
বাস্তবিকই ঈশ্বর সকলকেই অবাধ্যতার মধ্যে আবদ্ধ করেছেন, যেন সকলকেই দয়া দেখাতে পারেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
যিশু রাজ্যের শুভসংবাদ প্রচার করতেন,
ও জনগণের মধ্যে সব ধরনের রোগ-ব্যাধি নিরাময় করতেন।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৫:২১-২৮)

সেসময়ে, গেন্নেসারেৎ অঞ্চল ছেড়ে যিশু তুরস ও সিদোন প্রদেশের দিকে চলে গেলেন। আর হঠাৎ ওই অঞ্চলের একজন কানানীয় স্ত্রীলোক এসে চিৎকার করতে লাগল, ‘প্রভু, দাউদসন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার মেয়েটি একটা অপদূত দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে উৎপীড়িতা।’ তিনি কিন্তু তাকে উত্তরে কিছুই বললেন না।
তখন তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করে বললেন, ‘একে বিদায় দিন, কেননা এ আমাদের পিছু পিছু চিৎকার করছে।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘আমি কেবল ইস্রায়েলকুলের হারানো মেষগুলির কাছেই প্রেরিত হয়েছি।’
কিন্তু স্ত্রীলোকটি এগিয়ে এসে তাঁর সামনে প্রণিপাত করে থাকল; বলল ‘প্রভু, আমাকে সাহায্য করুন।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘সন্তানদের খাদ্য নিয়ে কুকুরশাবকদের কাছে ফেলে দেওয়া মানায় না।’ তাতে সে প্রতিবাদ করে বলল, ‘হ্যাঁ, প্রভু, তবু কুকুরশাবকেরাও নিজেদের মনিবের টেবিল থেকে যে খাবারের টুকরো পড়ে তা খায়।’
তখন যিশু উত্তরে তাকে বললেন, ‘নারী, তোমার এ বিশ্বাস সত্যি গভীর: তোমার যা ইচ্ছা, তা-ই হোক।’ আর সেই মুহূর্ত থেকে তার মেয়েটি সুস্থ হল।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আথানাসিউস-লিখিত ‘পর্বীয় ধর্মপত্র’

ধর্মময়তার জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত যারা, তারাই সুখী, কারণ তারাই পরিতৃপ্ত হবে (মথি ৫:৬)। যারা পুণ্যজীবন যাপন করে ও খ্রিষ্টকে ভালবাসে, তাদের পক্ষে এ প্রয়োজন যে, তারা তেমন খাদ্যেরই বাসনা করবে ও প্রার্থনা করে একথা বলবে: হরিণী যেমন জলস্রোতের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল, তেমনি, হে পরমেশ্বর, তোমারই জন্য তৃষিত আমার প্রাণ (সাম ৪২:২)।
আমার ভাইবোনেরা, এ পৃথিবীতে আমাদেরও ইন্দ্রিয় দমন করা ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তির সঙ্গে জীবনময় রুটির আকাঙ্ক্ষা করা দরকার; কেননা আমরা জানি, বিশ্বাস ছাড়া এ রুটির অংশীদার হওয়া সম্ভব নয়। স্বয়ং ত্রাণকর্তা সকলকে নিজের কাছে আহ্বান করে বললেন: কেউ যদি তৃষ্ণার্ত হয়, সে আমার কাছে এসে পান করুক (যোহন ৭:৩৭), ও তখনই সেই বিশ্বাস বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন, যে বিশ্বাস ছাড়া কেউই তেমন খাদ্যের কাছে যেতে পারে না: যে আমার প্রতি বিশ্বাসী—শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে—জীবনময় জলের নদনদী তার অন্তর থেকে প্রবাহিত হবে (যোহন ৭:৩৮)। এজন্য তিনি বিশ্বাসী তাঁর সেই সকল শিষ্যকে নিজ বাণীর পুষ্টিতে পুষ্ট করতেন, ও নিজ ঈশ্বরত্বের উপস্থিতিতে তাঁদের জীবন দান করতেন।
কিন্তু যে কানানীয় নারী তখনও বিশ্বাসে আসেনি, তার কাছে তিনি উত্তর দিতেও সাহস করেননি—অথচ সেই নারীর পক্ষে তাঁর সাহায্য খুবই প্রয়োজন ছিল! ঘৃণার খাতিরেই প্রভু সেভাবে ব্যবহার করলেন এমন নয়, অন্যথা তিনি তুরস ও সিদোনের অঞ্চলে যেতেন না; তিনি বরং সেভাবে ব্যবহার করলেন কারণ সেই নারী তখনও বিশ্বাসী ছিল না ও বিদেশিনী হওয়ায় তার দাবি করার কোন অধিকার ছিল না।
ভাইবোনেরা, তিনি ন্যায়সঙ্গত ভাবেই ব্যবহার করলেন; কেননা বিশ্বাস গ্রহণ করার আগে প্রার্থনা করা বৃথা: প্রার্থনা বিশ্বাস দ্বারাই উদ্দীপিত হওয়া চাই। ঈশ্বরের কাছে যে যাচনা করে, তার পক্ষে বিশ্বাস করাই হল প্রথম শর্ত; তবেই প্রার্থনায় সে সাড়া পাবে। প্রেরিতদূত বলেন, বিনা বিশ্বাসে তাঁর প্রীতির পাত্র হওয়া সম্ভব নয় (হিব্রু ১১:৬)। সুতরাং সেই নারীর তখনও বিশ্বাস ছিল না ও বিদেশিনী ছিল বিধায় খ্রিষ্ট একটা প্রবাদবাক্যের মধ্য দিয়ে নিজ অভিমত প্রকাশ করলেন: সন্তানদের খাদ্য নিয়ে কুকুরশাবকদের কাছে ফেলে দেওয়া মানায় না (মথি ১৫:২৬)। কিন্তু তবুও তিনি যাকে এত তিক্ত কথা দ্বারা নমিত করেছিলেন, তাকে বিধর্মী অবস্থা থেকে মুক্ত করে বিশ্বাসে চালিত করলেন, ও তার সঙ্গে কুকুর আর নয়, মানুষ জ্ঞানেই ব্যবহার করে তিনি তাকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমার এ বিশ্বাস সত্যি গভীর (মথি ১৫:২৮)। নারী বিশ্বাস করলেই তিনি তার বিশ্বাসের পুরস্কার দিয়ে এ কথাও বললেন, তোমার যা ইচ্ছা, তা-ই হোক। আর সেই মুহূর্ত থেকে তার মেয়েটি সুস্থ হল (মথি ১৫:২৮)।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১৩০
ধুয়ো:
প্রভুর কাছে রয়েছে কৃপা,
তাঁর কাছের মুক্তি মহান।

প্রভু, তুমি যদি লক্ষ কর সমস্ত অপরাধ,
কেইবা পারবে দাঁড়াতে, ওগো প্রভু?
তোমার কাছে কিন্তু আছে ক্ষমা,
মানুষ যেন তোমাকে ভয় করতে পারে।   [ধুয়ো]

প্রভু, আমি আশা রাখি;
আমার প্রাণ আশা রাখে; আমি তাঁর বাণীর প্রত্যাশায় আছি।
প্রহরীরা যেমন উষার জন্য, প্রহরীরা যেমন উষার জন্য,
তাদের চেয়ে প্রভুর জন্য অধিক ব্যাকুল আমার প্রাণ।   [ধুয়ো]

ইস্রায়েল, প্রভুর প্রতীক্ষায় থাক,
কারণ প্রভুর কাছে রয়েছে কৃপা, তাঁর কাছের মুক্তি মহান।
তিনি নিজেই ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন
তার সমস্ত অপরাধ থেকে।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, বিনীত কণ্ঠে আমরা অনুনয় করি: এ সাক্রামেন্ত গ্রহণের ফলে
যখন খ্রিষ্টের সঙ্গে সহভাগিতা লাভ করেছি, তখন এই মর্তে
তাঁর সাদৃশ্যের অনুরূপ হয়ে যেন স্বর্গে তাঁর চির সঙ্গ লাভ করতে পারি।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২১শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, তুমি তো তোমার ভক্তদের একমন একপ্রাণ করে তোল। কৃপা কর:
ভক্তির সঙ্গে তোমার আদেশ গ্রহণ ক’রে ও তোমার অঙ্গীকৃত শুভদান বাসনা ক’রে
তোমার জনগণ যেন এজগতের অস্থায়ী বিষয়বস্তুর মধ্যে
সেইদিকে চোখ নিবদ্ধ রাখে যেখানে প্রকৃত আনন্দ বিরাজিত।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (২২:১৯-২৩)

সেনাবাহিনীর পরমেশ্বর প্রভু প্রাসাদ-অধ্যক্ষ শেব্নাকে একথা বলেন:
আমি তোমার পদ থেকে তোমাকে দূরে ঠেলে দেব,
তোমার আসন থেকে তোমাকে উল্টিয়ে ফেলব।
সেদিন এমনটি ঘটবে,
আমি আমার আপন দাসকে,
হিল্কিয়ার সন্তান সেই এলিয়াকিমকে ডাকব;
তোমার বসন তাকেই পরাব,
তোমার বন্ধনী তারই কোমরে বাঁধব,
তোমার কর্তৃত্ব তারই হাতে তুলে দেব।
সে যেরুশালেম-বাসীদের জন্য ও যুদাকুলের জন্য পিতা হবে।
আমি দাউদকুলের চাবিকাঠি তাঁর কাঁধে রেখে দেব:
সে যা খুলে দেবে, কেউই তা বন্ধ করতে পারবে না;
সে যা বন্ধ করবে, কেউই তা খুলে দিতে পারবে না।
আমি তাকে একটা গোঁজের মত শক্ত মাটিতে পুঁতে রাখব,
সে তার পিতৃকুলের পক্ষে গৌরবাসন হয়ে উঠবে।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৩৮
ধুয়ো:
প্রভু, তোমার কৃপা চিরস্থায়ী;
নিজ হাতের কর্মকীর্তি করো না গো পরিত্যাগ।

সমস্ত হৃদয় দিয়ে আমি তোমায় জানাই ধন্যবাদ,
তুমি যে শুনেছ আমার মুখের কথা।
ঐশজীবদের সামনে করি তোমার স্তবগান,
তোমার পবিত্র মন্দির পানে করি প্রণিপাত।   [ধুয়ো]

তোমার কৃপা, তোমার বিশ্বস্ততার জন্য করি তোমার নামের স্তুতি,
তুমি যে তোমার সমস্ত নাম দ্বারা তোমার বচন করেছ মহান।
যেদিন তোমাকে ডেকেছি তুমি আমায় দিয়েছ সাড়া,
শক্তি উদ্দীপিত করেছ আমার প্রাণে।   [ধুয়ো]

সর্বোচ্চ হয়েও প্রভু অবনমিতকে দেখেন,
কিন্তু দূর থেকে গর্বিতকে চিনতে পারেন।
প্রভু, তোমার কৃপা চিরস্থায়ী;
নিজ হাতের কর্মকীর্তি করো না গো পরিত্যাগ।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১১:৩৩-৩৬)

আহা! কতই না গভীর ঈশ্বরের ঐশ্বর্য, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান! কতই না দুর্জ্ঞেয় তাঁর বিচার সকল, সন্ধানের অতীত তাঁর কর্মপথ।
আসলে কেবা জেনেছে প্রভুর মন? কেবা হয়েছে তাঁর মন্ত্রণাদাতা? আর কেইবা প্রথমে তাঁকে কিছু দান করেছে সে যেন পেতে পারে প্রতিদান?
কেননা সমস্ত কিছু তাঁরই কাছ থেকে, তাঁরই দ্বারা, তাঁরই জন্য। তাঁর গৌরব হোক চিরকাল ধরে। আমেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
তুমি পিতর, আর এই শৈলের উপরে
আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব,
আর পাতালের দ্বার তার
উপরে জয়ী হবে না।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৬:১৩-২০)

সেসময়ে, ফিলিপ-কায়েসারিয়া অঞ্চলে এসে যিশু নিজের শিষ্যদের কাছে এই প্রশ্ন রাখলেন, ‘মানবপুত্র কে, এবিষয়ে লোকে কী বলে?’ তাঁরা বললেন, ‘কেউ কেউ বলে: বাপ্তিস্মদাতা যোহন; কেউ কেউ বলে: এলিয়; আবার কেউ কেউ বলে: যেরেমিয়া বা নবীদের কোন একজন।’
তিনি তাঁদের বললেন, ‘কিন্তু তোমরা, আমি কে, এবিষয়ে তোমরাই কী বল?’ শিমোন পিতর এ বলে উত্তর দিলেন, ‘আপনি সেই খ্রিষ্ট, জীবনময় ঈশ্বরের পুত্র।’
প্রত্যুত্তরে যিশু তাঁকে বললেন, ‘যোহনের ছেলে শিমোন, তুমি সুখী! কেননা রক্তমাংস নয়, আমার স্বর্গস্থ পিতাই তোমার কাছে একথা প্রকাশ করেছেন। তাই আমি তোমাকে বলছি: তুমি পিতর, আর এই শৈলের উপরে আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব, আর পাতালের দ্বার তার উপরে জয়ী হবে না। স্বর্গরাজ্যের চাবিকাঠি আমি তোমাকে দেব: পৃথিবীতে তুমি যা বেঁধে দেবে, স্বর্গে তা বাঁধা হবে; পৃথিবীতে তুমি যা মুক্ত করবে, স্বর্গে তা মুক্ত হবে।’
তখন তিনি শিষ্যদের আদেশ দিলেন, তিনি যে খ্রিষ্ট, একথা তাঁরা যেন কাউকেই না বলেন।
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
মথি-রচিত সুসমাচারে বিশপ সাধু জন খ্রিসোস্তমের উপদেশ

মণ্ডলীকে সারা বিশ্বে প্রসারিত করার জন্য
খ্রিষ্ট পিতরকে চাবি দিলেন আপনি সেই খ্রিষ্ট, জীবনময় ঈশ্বরের পুত্র। যোহনের ছেলে শিমোন, তুমি সুখী! কেননা রক্তমাংস নয়, আমার স্বর্গস্থ পিতাই তোমার কাছে একথা প্রকাশ করেছেন (মথি ১৬:১৭)। কেন পিতরকে সুখী বলে ঘোষণা করা হচ্ছে? কারণ তিনি খ্রিষ্টকে ঈশ্বরের প্রকৃত পুত্র বলে ঘোষণা করলেন। আমরা পিতার মধ্য দিয়ে ছাড়া পুত্রকে জানতে পারি না, পুত্রের মধ্য দিয়ে ছাড়া পিতাকেও জানতে পারি না: আর এভাবে উভয়ের সমগৌরব ও সমসত্তা প্রমাণিত। তারপর খ্রিষ্ট আর কী বলেন? তুমি তো যোহনের পুত্র শিমোন; তুমি কেফাস নামে অভিহিত হবে। কেফাস কথাটার অর্থ শৈল (যোহন ১:৪২ দ্রঃ)। তুমি আমার পিতাকে গৌরবান্বিত করেছ বিধায় আমিও তোমার জনকের নাম উল্লেখ করছি—তার মানে: তুমি যেমন যোহনের পুত্র, আমি তেমনি আমার পিতার পুত্র।
আসলে ‘তুমি তো যোহনের পুত্র’ কথাটি বলা দরকার ছিল না; কিন্তু যেহেতু পিতর বলেছিলেন ‘আপনি ঈশ্বরের পুত্র,’ সেজন্য যিশু সেই কথা বলেন যাতে প্রমাণ দিতে পারেন যে, পিতর যেমন যোহনের পুত্র, তিনি তেমনি ঈশ্বরের পুত্র, অর্থাৎ কিনা তিনি পিতার একই সত্তার অধিকারী।
তাই আমি তোমাকে বলছি: তুমি পিতর, আর এই শৈলের উপরে আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব (মথি ১৬:১৮), অর্থাৎ তোমার বিশ্বাস-স্বীকৃতির উপরেই আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব। এভাবে তিনি একথা ঘোষণা করেন যে, একদিন অনেকেই বিশ্বাস করবে; তাছাড়া প্রেরিতদূতের মনোভাব উচ্চতর পর্যায় উন্নীত করে তিনি তাঁকে আপন মণ্ডলীর পালক-পদে নিযুক্ত করেন। আর পাতালের দ্বার তার উপরে জয়ী হবে না (মথি ১৬:১৮)। পাতালের দ্বার যখন মণ্ডলীর উপর বিজয়ী হবে না, তখন মহত্তর কারণে আমার উপরেও বিজয়ী হবে না। তাই যখন তুমি দেখবে, আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ও ক্রুশে দেওয়া হচ্ছে, তখন ভয়ে অভিভূত হয়ো না! এরপর তিনি তাঁর উপর বড় একটা সম্মান আরোপ করেন: স্বর্গরাজ্যের চাবিকাঠি আমি তোমাকে দেব (মথি ১৬:১৯)। ‘তোমাকে দেব’ এর অর্থ কী? পিতা যেমন তোমাকে এমনটি দিয়েছেন, যেন তুমি আমাকে জানতে পার, তেমনি আমিও তোমাকে দেব। তিনি বলেননি, আমি পিতার কাছে প্রার্থনা করব—যদিও প্রার্থনা দ্বারাও তিনি নিজ অধিকারের মহাপ্রমাণ ও নিজ অমূল্য দান প্রকাশ করতে পারতেন!—তিনি কিন্তু বললেন, ‘আমি তোমাকে দেব।’ তিনি কী দেবেন? স্বর্গরাজ্যের চাবিকাঠি: পৃথিবীতে তুমি যা বেঁধে দেবে, স্বর্গে তা বাঁধা হবে; পৃথিবীতে তুমি যা মুক্ত করবে, স্বর্গে তা মুক্ত হবে (মথি ১৬:১৯)।
তুমি কি দেখতে পাচ্ছ, নিজেকে প্রকাশ করে ও প্রতিশ্রুতি দু’টো দ্বারা নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে নিজেকে প্রমাণিত করে খ্রিষ্ট কেমন করে পিতরকে উচ্চতর ধারণা পোষণ করতে উন্নীত করেন? কেননা যিশু পিতরকে এমন কিছু দেবেন বলে প্রতিশ্রুত হন, যা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরেরই অধিকার: পাপ ক্ষমা করা ও এত তরঙ্গ-চঞ্চল সংসারের মধ্যে মণ্ডলীকে সুদৃঢ় করে রাখা—তিনি সামান্য এক জেলেকে শৈলের চেয়ে এমন দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত করলেন যে, সারা জগৎ বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও তিনি টলবেন না।
পিতা নবী যেরেমিয়াকেও লৌহস্তম্ভ ও ব্রঞ্জপ্রাচীরের মত স্থাপন করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন; তবু পার্থক্য রয়েছে: যেরেমিয়াকে কেবল এক জাতির সামনে, পিতরকে কিন্তু সারা জগতেরই সামনে স্থাপন করা হল।
যারা পুত্রের মর্যাদা কমাতে চায়, আমার ইচ্ছে হয় তাদের জিজ্ঞাসা করব, পিতরের কাছে পিতার দেওয়া দান বড়, না পুত্রের দেওয়া দান বড়? পিতা পিতরের কাছে পুত্রের কথা প্রকাশ করেন; পুত্র কিন্তু তাঁকে এমন দায়িত্ব দেন, তিনি যেন সারা জগৎ জুড়ে পিতার ও পুত্রেরও কথা প্রচার করেন; তাছাড়া তিনি মরণশীল এক মানুষকে স্বর্গের উপরেই সমস্ত অধিকার দেন—বাস্তবিকই তিনি তাঁকেই চাবি দেন যিনি মণ্ডলীকে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রসারিত করেছেন ও তাকে আকাশের চেয়েও দৃঢ়তর করে তুলেছেন; কেননা স্বয়ং যিশু বলেছিলেন, আকাশ ও পৃথিবী লোপ পাবে, কিন্তু আমার কোন বাণী লোপ পাবে না (মথি ২৪:৩৫)।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১০৪
ধুয়ো:
প্রভু, তোমার কর্মের ফলভারে পৃথিবী পরিতৃপ্ত হয়:
ভূমি থেকে তুমি সেই রুটি ও আঙুররস বের করে আন, যা আনন্দিত করে মানুষের অন্তর।

গিরিখাতে তুমি জলের উৎসধারা উচ্ছলিত করলে,
গিরিমালার মাঝখান দিয়ে সেই ধারা করে চলাচল;
সকল বন্যজন্তু পান করে সেই উৎসের জল,
সেখানে তৃষ্ণা মেটায় বন্য গর্দভের দল।   [ধুয়ো]

হে প্রভু,
কী অগণন তোমার কর্মকীর্তি!
প্রজ্ঞার সঙ্গেই নির্মাণ করেছ এ সবকিছু,
তোমার কর্মরচনায় পৃথিবী পরিপূর্ণ।   [ধুয়ো]

তুমি শ্রীমুখ লুকিয়ে রাখ, তারা সন্ত্রাসিত হয়ে পড়ে,
তুমি তাদের প্রাণবায়ু ফিরিয়ে নাও, তারা মরে, ধুলায় ফিরে যায়।
তুমি নিজ প্রাণবায়ু পাঠিয়ে দাও, তারা সৃষ্ট হয়,
এভাবেই তুমি ধরণীর মুখ নবীন করে তোল।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার দয়ার প্রতিকার এই সাক্রামেন্ত
আমাদের অন্তরে পূর্ণ সার্থকতা লাভ করুক:
প্রসন্ন হয়ে আমাদের বলবান করে সুস্থির কর,
যেন সমস্ত কিছুতেই তোমার গ্রহণযোগ্য হতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২২শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, উত্তম যা কিছু আছে, তুমিই তার উৎস!
আমাদের অন্তরে তোমার নামের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোল,
ভক্তিও গভীরতর কর, যাতে আমাদের অন্তরে শুভ যা কিছু আছে
তা তুমি নিজে বিকশিত করতে পার,
ও যা বিকশিত করেছ তা সযত্নে রক্ষা করতে পার।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী যেরেমিয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (২০:৭-৯)

তুমি আমাকে ভুলিয়েছ, প্রভু; তাতে আমি ভুলেছি;
তুমি আমার উপর বল প্রয়োগ করেছ, তাতে বিজয়ী হয়েছ;
সারাদিন ধরে আমি হয়ে উঠেছি উপহাসের পাত্র;
সকলেই আমাকে ঠাট্টা করে।
যতবার আমাকে বাণী প্রচার করতে হয়,
ততবার আমি চিৎকার করতে বাধ্য,
আমাকে চিৎকার করে বলতে হয়, ‘উৎপীড়ন, অত্যাচার!’
তাই প্রভুর বাণী আমার পক্ষে হয়ে উঠেছে
দুর্নাম ও উপহাসের কারণ সারাদিন ধরে।
আমি মনে মনে ভাবছিলাম:
‘তাঁর কথা আর চিন্তা করব না,
তাঁর নামে আর কিছু বলব না!’
কিন্তু আমার হৃদয়ে যেন জ্বলন্ত একটা আগুন ছিল,
যা আমার হাড়ের মধ্যেই রুদ্ধ।
তা সংযত রাখার চেষ্টায় আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,
না, পারছি না।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৬৩
ধুয়ো:
ওগো প্রভু, ঈশ্বর আমার,
তোমারই জন্য আমার প্রাণ তৃষাতুর।

ওগো পরমেশ্বর, ওগো আমার ঈশ্বর, ভোর হতে তোমারই অন্বেষণ করি,
তোমারই জন্য আমার প্রাণ তৃষাতুর,
তোমারই জন্য আমার দেহ ব্যাকুল,
যেন শুষ্ক, শীর্ণ, জলহীন ভূমি।   [ধুয়ো]

তাই পবিত্রধামে তোমার দিকেই দৃষ্টি রাখি
তোমার শক্তি ও গৌরব দেখবার জন্য।
তোমার কৃপা জীবনের চেয়ে শ্রেয়,
তাই আমার ওষ্ঠ তোমার মহিমাকীর্তন করবে।   [ধুয়ো]

তাই যতদিন বাঁচব আমি তোমাকে বলব ধন্য,
তোমার নামে দু’হাত তুলব।
সুস্বাদু ভোজেই যেন তৃপ্ত হবে আমার প্রাণ,
আনন্দপ্লুত ওষ্ঠে আমার মুখ করবে তোমার প্রশংসাবাদ।   [ধুয়ো]

তুমি আমার সহায় হলে,
তাই তোমার পক্ষ-ছায়ায় আমি করি আনন্দগান।
তোমাকে আঁকড়ে থাকে আমার প্রাণ,
আমাকে ধরে রাখে তোমার ডান হাত।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১২:১-২)

ভাই, ঈশ্বরের শত করুণার খাতিরেই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা নিজেদের দেহ উৎসর্গ কর এক জীবন্ত, পবিত্র, ঈশ্বরের গ্রহণীয় যজ্ঞরূপে—এই তো তোমাদের চেতনাপূর্ণ উপাসনা।
তোমরা এই যুগধর্মের অনুরূপ হয়ো না, বরং মনের নবীকরণ দ্বারা নিজেদের রূপান্তরিত কর, যেন নির্ণয় করতে পার ঈশ্বরের ইচ্ছা কী—কীইবা শ্রেয়, গ্রহণীয় ও নিখুঁত।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের পিতা
আমাদের অন্তর্দৃষ্টি আলোকিত করে তুলুন
যেন উপলব্ধি করতে পারি
তাঁর আহ্বানের প্রত্যাশা কী।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৬:২১-২৭)

সেসময়ে যিশু নিজের শিষ্যদের স্পষ্টই বলতে লাগলেন যে, তাঁকে যেরুশালেমে যেতে হবে, এবং প্রবীণদের, প্রধান যাজকদের ও শাস্ত্রীদের হাতে বহু যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, তাঁকে নিহত হতে হবে, আর তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হতে হবে।
এতে পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করতে লাগলেন, বললেন, ‘দূরের কথা, প্রভু! অমনটি আপনার কখনও ঘটবে না।’ কিন্তু তিনি ফিরে দাঁড়িয়ে পিতরকে বললেন, ‘আমার পিছনে চলে যাও, শয়তান! তুমি আমার পথের বাধা; কেননা যা ভাবছ, তা ঈশ্বরের নয়, মানুষেরই ভাবনা।’
তখন যিশু নিজের শিষ্যদের বললেন, ‘কেউ যদি আমার পিছনে আসতে ইচ্ছা করে, সে নিজেকে অস্বীকার করুক, ও নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসরণ করুক। কেননা যে কেউ নিজের প্রাণ বাঁচাতে চায়, সে তা হারাবে, আর যে কেউ আমার জন্য নিজের প্রাণ হারায়, সে তা খুঁজে পাবে।
বস্তুত মানুষ যদি সমগ্র জগৎ জয় ক’রে নিজের প্রাণ হারায়, তাতে তার কী লাভ হবে? কিংবা, মানুষ নিজের প্রাণের বিনিময়ে কী দিতে পারবে?
কেননা মানবপুত্র নিজের দূতদের সঙ্গে নিজ পিতার গৌরবে আসবেন, আর তখন প্রত্যেককে তার নিজ নিজ কাজ অনুযায়ী প্রতিফল দেবেন।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ সাধু সিরিল-লিখিত ‘আত্মা ও সত্যের শরণে উপাসনা’

কেউ যদি আমার পিছনে আসতে ইচ্ছা করে, সে নিজেকে অস্বীকার করুক, ও নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসরণ করুক (মথি ১৬:২৪)। অর্থাৎ, কেউ যদি আমার শিষ্য হতে চায়, তাহলে এ প্রয়োজন যে, আমি দুঃখকষ্টপূর্ণ যে পথে চলেছি, সেও সেই একই পথে সাহসের সঙ্গে চলবে, এবং সেই পথে চলে সেই পথ ভালবাসবে: তবেই সে আমার সঙ্গে বিশ্রাম পাবে ও আমার সঙ্গে বাস করবে। কেননা আমাদেরই জন্য খ্রিষ্ট পিতা ঈশ্বরের কাছে এ প্রার্থনা নিবেদন করেছিলেন, আমি ইচ্ছা করি, যাদের তুমি আমাকে দিয়েছ, যেখানে আমি আছি তারাও যেন সেখানে আমার সঙ্গে থাকে (যোহন ১৭:২৪)।
আমরা তখনও খ্রিষ্টের সঙ্গে থাকি, যখন পৃথিবীতে বাস করেও মাংস অনুসারে নয়, আত্মা অনুসারে চলি এবং তিনি যাতে প্রীত, তাতেই আরাম পেতে সচেষ্ট থাকি। এবিষয়ে আমরা গণনাপুস্তকে একটা দৃষ্টান্ত পাই: প্রান্তরে সেই মঞ্জুষা নির্মিত হলেই একটি মেঘে তা পরিপূর্ণ হল, আর ঈশ্বর ইস্রায়েল সন্তানদের এ আদেশ দিলেন, তারা যেন যাত্রা শুরু করার নির্দিষ্ট কাল পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবেই পালন ক’রে সেই মেঘের সঙ্গে চলে, আবার সেই মেঘের সঙ্গে থামে। আর অলসতা-প্রবণ এমন কেউ থাকলে, তিনি তাদের বুঝিয়ে দিলেন, এ নিয়ম লঙ্ঘন করা কতই না বিপজ্জনক।
এবার এসো, বর্ণনাটির আধ্যাত্মিক অর্থ উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি। প্রকৃত মঞ্জুষা তথা মণ্ডলী পৃথিবীতে নির্মিত ও আবির্ভূত হলেই খ্রিষ্টের গৌরবে পরিপূর্ণ হল: আমার মতে, প্রাচীন মঞ্জুষা মেঘ দ্বারা যে আবৃত হয়েছিল ঠিক তাই বোঝায়।
খ্রিষ্ট আপন গৌরবে মণ্ডলীকে পরিপূর্ণ করলেন; আর যারা অজ্ঞতা ও ভুলভ্রান্তির তামসী রাত্রিতে নিমজ্জিত, তাদের জন্য তিনি আত্মিক আলো বিকিরণ ক’রে আগুনের মত জ্বলে ওঠেন। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে আলোকিত ও যাদের হৃদয়ে এ আলোর প্রভা উজ্জ্বল, তিনি তাদের ছায়া ও রক্ষা দান করেন ও আত্মিক শিশির দানে, অর্থাৎ আত্মার দেওয়া পরম সান্ত্বনা দানে তাদের পরিতৃপ্ত করেন; এজন্যই তিনি রাতে আগুনের মত ও দিনের বেলায় মেঘের মত প্রতীয়মান ছিলেন। কেননা যারা সাধনার প্রথম পর্যায়ে রয়েছে, তাদের পক্ষে অবিরত আলো-দান দরকার, যা দিয়ে তারা ঈশ্বরজ্ঞানে চালিত হতে পারে; কিন্তু যারা সাধনার পথে এগিয়ে আছে ও বিশ্বাস দ্বারা আলোকিত, তাদের পক্ষে রক্ষা ও সহায়তা দরকার, তারা যেন এজীবনের দুশ্চিন্তা ও দিনের ভার দৃঢ়তার সঙ্গে বহন করতে পারে, কেননা যারা খ্রিষ্টযিশুতে ধর্মসম্মত জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক, তাদের সকলকে নির্যাতন ভোগ করতেই হবে (২ তি ৩:২২)।
সেই মেঘ উঠতেই মঞ্জুষাও এগতে লাগত, আর সেইসঙ্গে ইস্রায়েল সন্তানেরাও এগতে লাগত। বস্তুতপক্ষে মণ্ডলী খ্রিষ্টকে সর্বত্রই অনুসরণ করে, আর সেই অসংখ্য পুণ্য বিশ্বাসী-সমাজ তাঁরই কাছ থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হয় না, যিনি পরিত্রাণে তাদের চালিত করেন।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩১
ধুয়ো:
কতই না মহান তোমার সেই মঙ্গলময়তা, প্রভু,
যা তাদের জন্য তুমি সঞ্চিত রাখ যারা ভয় করে তোমায়।

তোমার দাসের উপর শ্রীমুখ উজ্জ্বল করে তোল,
তোমার কৃপায় ত্রাণ কর আমায়।
তোমাকে ডেকেছি, প্রভু!
আমি লজ্জায় না পড়ি যেন;   [ধুয়ো]

মানুষের চক্রান্ত থেকে তুমি আপন শ্রীমুখের নিভৃতে তাদের লুকিয়ে রাখ,
জিভের আক্রমণ থেকে তুমি আপন কুটিরেই তাদের নিরাপদে রাখ।
ধন্য প্রভু! সুরক্ষিত নগরে আমার জন্য
তিনি সাধন করলেন তাঁর কৃপার আশ্চর্য কীর্তি।   [ধুয়ো]

বিহ্বল হয়ে আমি বলেছিলাম,
‘তোমার দৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন আমি,’
তবু যখন তোমার কাছে চিৎকার করলাম,
তুমি তখন শুনলে আমার মিনতির কণ্ঠ।   [ধুয়ো]

প্রভুকে ভালবাস, তাঁর ভক্তজন সবাই, প্রভু আপন বিশ্বস্তদের রক্ষা করেন,
কিন্তু অহঙ্কারীর উপর অপর্যাপ্ত প্রতিফল দেন।
শক্ত হও, অন্তর দৃঢ় করে তোল তোমরা,
তোমরা সকলে, যারা প্রভুর প্রত্যাশায় আছ।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, স্বর্গীয় ভোজের খাদ্য গ্রহণে পরিতৃপ্ত হয়ে উঠে তোমাকে অনুনয় করি:
এই সাক্রামেন্তের গুণে তোমার প্রতি ভক্তিতে আমাদের নিষ্ঠাবান কর,
ভ্রাতৃসেবার মধ্য দিয়ে তোমার সেবা করতে আমাদের অনুপ্রাণিত কর।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২৩শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, তোমা থেকেই আগত মুক্তি, তোমা থেকেই অর্পিত দত্তকপুত্রত্ব।
প্রসন্ন হয়ে তোমার এ প্রিয় সন্তানদের যাচনা গ্রহণ কর,
সকল খ্রিষ্টবিশ্বাসী যেন ভোগ করতে পারে প্রকৃত স্বাধীনতা, চিরন্তন উত্তরাধিকার।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী এজেকিয়েলের পুস্তক থেকে পাঠ (৩৩:১,৭-৯)

প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল: ‘হে আদমসন্তান, আমি তোমাকেই ইস্রায়েলকুলের পক্ষে প্রহরীরূপে নিযুক্ত করলাম; আমার মুখের একটা বাণী শুনলে তুমি আমার পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক কর।
যখন আমি দুর্জনকে বলি: হে দুর্জন, তুমি মরবেই মরবে, তখন তুমি তার পথের বিষয়ে সেই দুর্জনকে সতর্ক করার জন্য যদি কিছু না বল, তবে সেই দুর্জন নিজের অপরাধের কারণে মরবে বটে, কিন্তু তোমারই কাছে আমি তার রক্তের কৈফিয়ত চাইব!
কিন্তু তুমি সেই দুর্জনকে তার পথ থেকে ফেরাবার জন্য তার পথের বিষয়ে সাবধান বাণীর মত কিছু শোনালে যদি সে তার পথ থেকে না ফেরে, তবে সে তার নিজের অপরাধের কারণে মরবে, কিন্তু তুমি নিজের প্রাণ বাঁচাবে।’
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ৯৫
ধুয়ো:
তোমরা যদি আজ তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে!
‘হৃদয় কঠিন করো না।’

এসো, প্রভুর উদ্দেশে সানন্দে চিৎকার করি,
আমাদের ত্রাণশৈলের উদ্দেশে তুলি জয়ধ্বনি।
চল, ধন্যবাদগীতি গেয়ে তাঁর সম্মুখে যাই,
বাদ্যের ঝঙ্কারে তাঁর উদ্দেশে তুলি জয়ধ্বনি।   [ধুয়ো]

এসো, প্রণত হই; এসো, প্রণিপাত করি,
আমাদের নির্মাণকর্তা প্রভুর সম্মুখে করি জানুপাত,
তিনি যে আমাদের পরমেশ্বর,
আর আমরা তাঁর চারণভূমির জনগণ, তাঁর হাতের মেষপাল।   [ধুয়ো]

তোমরা যদি আজ তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে! ‘হৃদয় কঠিন করো না,
যেমনটি ঘটল মেরিবায় ও সেইদিন মাস্সায় সেই মরুদেশে;
সেখানে তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমায় যাচাই করল,
আমার কাজ দেখেও আমায় পরীক্ষা করল।’   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১৩:৮-১০)

প্রিয়জনেরা, পরস্পরের প্রতি ভালবাসার ঋণ ছাড়া, তোমরা কারও কাছে আর কোন ঋণ রেখো না; কারণ পরকে যে ভালবাসে, সে বিধান সম্পূর্ণই সার্থক করেছে। বাস্তবিকই তেমন আজ্ঞা যেমন, ব্যভিচার করো না, নরহত্যা করো না, চুরি করো না, লোভ করো না, আর যে কোন আজ্ঞা থাকুক না কেন, সেই সকল আজ্ঞা এই একটা বচনেই সঙ্কলিত হয়েছে: তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাস। ভালবাসা প্রতিবেশীর কোন অনিষ্ট ঘটায় না; অতএব ভালবাসাই বিধানের পূর্ণতা।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
ঈশ্বর খ্রিষ্টে নিজের সঙ্গে জগতের পুনর্মিলন সাধন করলেন;
সেই পুনর্মিলনের বাণী আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৮:১৫-২০)

একদিন যিশু তাঁর আপন শিষ্যদের বললেন, ‘তোমার ভাই যদি কোন অন্যায় করে, তবে গিয়ে, যেখানে কেবল তুমি ও সে-ই আছ, সেইখানে তাকে অন্যায়টা বুঝিয়ে দাও; সে যদি তোমার কথা শোনে, তুমি নিজের ভাইকে জয় করেছ। কিন্তু সে যদি না শোনে, তবে আর দু’ একজনকে সঙ্গে নিয়ে যাও, যেন দু’ তিনজন সাক্ষীর প্রমাণে ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হয়। আর সে যদি তাদের কথা না শোনে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও না শোনে, তবে সে তোমার কাছে কোন বিজাতীয় বা কর-আদায়কারীর মত হোক।
আমি তোমাদের সত্যি বলছি, পৃথিবীতে তোমরা যা কিছু বেঁধে দেবে, স্বর্গে তা বাঁধা হবে, এবং পৃথিবীতে তোমরা যা কিছু মুক্ত করবে, তা স্বর্গে মুক্ত হবে।
আবার আমি তোমাদের সত্যি বলছি, পৃথিবীতে তোমাদের দু’জন কোন কিছু যাচনা করার জন্য যদি একমন হয়, তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা তাদের তা মঞ্জুর করবেন; কেননা যেখানে দু’ তিনজন আমার নামে একত্র হয়, আমি সেখানে তাদের মধ্যে আছি।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু পিতর খ্রিসোলগের উপদেশ

যতবার প্রভুর বাণীর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, ততবার তোমাদের মন জেগে থাকুক ও অন্তর তা গ্রহণ করতে উৎসুক থাকুক, যাতে বুদ্ধি ঐশজ্ঞানের রহস্য উপলব্ধি করতে পারে। এসো, এবার শুনি কেনই বা প্রভু আজ একথা বলেই উপদেশ শুরু করলেন: তোমরা নিজেদের সম্বন্ধে সাবধান থাক। তোমার ভাই যদি কোন অন্যায় করে, তাকে তিরস্কার কর; কিন্তু সে যদি অনুতাপ করে, তাকে ক্ষমা কর (লুক ১৭:৩)। হে মানুষ, ঈশ্বরই তো আদেশ দেন, তাই তুমি সেইমত কর, ক্ষমা কর, পাপ ক্ষমাই কর: ভাইয়ের অপরাধের প্রতি দয়াবান হও, তোমার বিরুদ্ধে যা অন্যায় করা হয়েছে, তা মার্জনা কর, তবেই তোমার অন্তর্নিহিত ঐশ অধিকার হারাবে না: পরের বেলায় যা তুমি ক্ষমা করবে না, তা পাওয়া থেকে তুমি নিজেকেই বঞ্চিত করবে। বিচারকের মত তিরস্কার কর, কিন্তু ভাইয়ের মত ক্ষমা কর, কেননা ভালবাসা যখন স্বাধীনতার সঙ্গে সংযুক্ত, ও স্বাধীনতা ভালবাসার সঙ্গে মিশ্রিত, তখন ভালবাসা ভয় দূর করে দেয় ও ভাইকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। ভাই যখন অন্যায় করে, তখন অস্থির; যখন অপরাধ করে, তখন ক্রোধে আক্রান্ত, তখন সে অচেতন ও বিচারবুদ্ধি বিহীন; সহানুভূতির মধ্য দিয়ে যে তাকে সাহায্য করে না, ধৈর্যের সঙ্গে যে তার সেবাযত্ন করে না, ও ক্ষমা দানে তাকে সুস্থ করে না, সে নিজেই সুস্থ নয়, সে নিজেই রোগপীড়িত ও অসুস্থ, তার মায়া নেই, মানবতাও নেই। ভাই ক্রোধে জ্বলে উঠলে তুমি মনে কর সে অসুস্থ, ভাইয়ের মত তুমি তাকে সাহায্য কর; তার ব্যবহার রোগ মনে করলে তুমি তাকে দোষী বলে আর বিচার করতে পারবে না; তাতে সদ্বিবেচনার সঙ্গে তুমি রোগটাকে দোষী করবে কিন্তু ভাইকে মার্জনা করবে; ফলে তার সুস্থতালাভ তোমার গৌরবের কারণ হয়ে উঠবে, ও তার ক্ষমা তোমার পুরস্কার স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে।
তোমার ভাই যদি কোন অন্যায় করে, তাকে তিরস্কার কর; কিন্তু সে যদি অনুতাপ করে, তাকে ক্ষমা কর। পাপীকে ক্ষমা কর, অনুতপ্তকে ক্ষমা কর, যেন তুমিই পাপ করলে ক্ষমা এমনিই তোমাকে না দেওয়া হয়, কিন্তু পুরস্কার হিসাবেই দেওয়া হয়। ক্ষমা সবসময়ই আনন্দের বিষয় বটে, কিন্তু যখন আমাদের প্রাপ্য, তখন অতিশয় মধুর লাগে। প্রথম ক্ষমা দান করায় যে ব্যক্তি পাপ করার আগেও ক্ষমা লাভ করেছে, সে দণ্ড এড়িয়ে গেছে, বিচারকের রায়ের আগে মুক্তিলাভ করে গেছে ও বিচার থেকে রেহাই পেয়ে গেছে।
আর সে যদি দিনে সাতবার তোমার প্রতি অন্যায় করে আর সাতবার তোমার কাছে ফিরে এসে বলে, আমি অনুতপ্ত, তাকে ক্ষমা করবে (লুক ১৭:৪)। দয়ার মধ্য দিয়ে তিনি যে ক্ষমার দিকে মানুষকে ধাবিত করেন, যে ক্ষমা তিনি অনুগ্রহদানে মঞ্জুর করেন, কেন তিনি সেই ক্ষমা একটা বিধি দ্বারা আটক করেন, একটা সংখ্যায় সঙ্কুচিত করেন ও একটা সীমায় সীমাবদ্ধ করেন? আর সেই ভাই যদি সাতবার নয়, আটবার পাপ করে? তাহলে কি অনুগ্রহের চেয়ে সংখ্যাই প্রভাবশালী? হিসাব কি মঙ্গলময়তায় বাধা দিতে পারে? সাতবার যে ক্ষমা পেয়েছে, একটিমাত্র অপরাধ তাকে কি দণ্ডিত করতে পারবে? নিশ্চয়ই না। সাতবার যে ক্ষমা করেছে, সে যখন ধন্য, তখন সত্তরগুণ সাতবার যে ক্ষমা করে, তার চেয়ে সে-ই ধন্য। কিন্তু পিতর এ বিধি ভুলে গিয়ে প্রভুকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার ভাই আমার প্রতি অন্যায় করলে আমি কতবার তাকে ক্ষমা করব? কি সাতবার পর্যন্ত? যিশু উত্তরে বলেন, তোমাকে বলছি, সাতবার পর্যন্ত নয়, কিন্তু সত্তরগুণ সাতবার পর্যন্ত (মথি ১৮:২১-২২)। এ নিরূপিত সংখ্যা ক্ষমাকে সীমাবদ্ধ করে না, বিস্তারিতই করে; আর বিধির সীমারেখা দ্বারা যা সঙ্কুচিত মনে হচ্ছে, আসলে কোন সীমায় সীমাবদ্ধ না হয়ে তা স্বাধীন ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে; যার ফলে আদেশ অনুসারে তুমি যতখানি ক্ষমা করবে, ততখানি বাধ্যতা দেখাবে, ততখানি পুরস্কারও পাবে।
আর সেই সাত সংখ্যাটি দিন, মাস ও বছরের সংখ্যা ধরে সাতগুণ করলে যখন রাশি রাশি ক্ষমা সঞ্চয় হয়, তখন শ্রোতা তুমি নিজেই হিসাব ও গণনা কর সেই মোট সংখ্যা সত্তরগুণ করলে কী বিরাট সংখ্যাই না হবে! তবেই আর কোন ঋণও থাকবে না, কোন ধারও থাকবে না, তবেই সমস্ত দাসত্ব নিঃশেষ হবে, ও ঈশ্বরের ফসলের সনাতন মাঠে সীমাহীন স্বাধীনতা উপভোগ করা যাবে।
প্রকৃত ক্ষমা আসবে; হ্যাঁ, সেই প্রকৃত ক্ষমা তখনই আসবে, যখন পাপ করার বাধ্যবাধকতা নিঃশেষ হবে, যখন সমস্ত অশুচিতা মুছে গেলে জগৎ শুচি হয়ে উঠবে, যখন মৃত্যু জীবন দ্বারা ধ্বংসিত হবে, যখন খ্রিষ্ট রাজত্ব করবেন ও শয়তান বিনষ্ট হবে। ভাইবোনেরা, প্রার্থনা কর, প্রভু যেন আমাদের অন্তরে বিশ্বাস বৃদ্ধি করেন, আমরা যেন এ সমস্ত মঙ্গলদান বিশ্বাস করতে, দেখতে ও পেতে পারি।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৪২
ধুয়ো:
হরিণী যেমন জলস্রোতের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল,
তেমনি, পরমেশ্বর, তোমারই আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল আমার প্রাণ।

আমার মধ্যে আমার প্রাণ অবসন্ন, তাই তোমায় স্মরণ করি
যর্দন ও হার্মোনের দেশ থেকে, মিসার পর্বত থেকে।
তোমার জলপ্রতাপের গর্জনে এক অতলের কাছে অন্য অতলের ডাক,
তোমার ঊর্মিমালা ও তরঙ্গরাশি বয়ে গেল আমার উপর দিয়ে।   [ধুয়ো]

দিনমানে প্রভু জারি করেন কৃপা, রাতে আমার সঙ্গেই তাঁর গান—
একটি প্রার্থনা আমার জীবনেশ্বরের কাছে।
আমার শৈল ঈশ্বরকে বলব, ‘কেন আমায় ভুলে গেছ?
কেনই বা শোকার্ত হয়ে শত্রুর তাড়নায় আমায় চলতে হয়?’   [ধুয়ো]

আমার বিরোধীদের অপবাদে
চূর্ণবিচূর্ণ আমার হাড়;
তারা যে সারাদিন আমাকে বলে,
‘কোথায় তোমার পরমেশ্বর?’   [ধুয়ো]

প্রাণ আমার, কেনই অবসন্ন তুমি?
কেন আমার মধ্যে তুমি গর্জন কর?
পরমেশ্বরের প্রত্যাশায় থাক—আমি আবার করবই তাঁর স্তুতিবাদ,
তিনি আমার শ্রীমুখের পরিত্রাণ, আমার পরমেশ্বর।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার বাণী ও স্বর্গীয় সাক্রামেন্তের খাদ্য দানে যাদের পুষ্টি তুমি সাধন কর, তোমার সেই ভক্তজন তোমার প্রিয়তম পুত্রের অগণন মঙ্গলদান গ্রহণের ফলে
যেন তাঁর জীবনের চিরন্তন সহভাগিতা লাভ করতে পারে।
তিনি জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২৪শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, হে বিশ্বস্রষ্টা ও সর্বনিয়ন্তা, আমাদের প্রতি মুখ তুলে চাও।
আশীর্বাদ কর, আমরা যেন সমস্ত হৃদয় দিয়ে তোমার সেবা করি
যাতে তোমার করুণা-স্পর্শে ধন্য হতে পারি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
বেন-সিরা পুস্তক থেকে পাঠ (২৭:৩০–২৮:৭)

ক্ষোভ ও ক্রোধ: তাও জঘন্য বস্তু,
পাপী মানুষ দু’টোতেই নিপুণ।
যে প্রতিশোধ নেয়,
সে প্রভুর প্রতিশোধের অভিজ্ঞতা করবে,
যিনি পাপের সূক্ষ্ম হিসাব রাখেন।
তোমার প্রতিবেশীর অপরাধ ক্ষমা কর,
আর যখন তুমি প্রার্থনা করবে, তখন তোমার পাপের ক্ষমা হবে।
যে কেউ অন্তরে অপরের প্রতি ক্রোধ পোষণ করে,
সে কেমন করে প্রভুর কাছে সুস্থতা দাবি করবে?
সে যখন তার নিজের সদৃশ মানুষেরই প্রতি দয়াবান নয়,
তখন কোন্‌ সাহসেই বা নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে?
রক্তমাংসের মানুষমাত্র হয়ে সে যখন অন্তরে ক্ষোভ রাখে,
তখন কেইবা তার পাপ ক্ষমা করবে?
তোমার শেষ পরিণামের কথা মনে রাখ, আর ঘৃণা নয়!
ক্ষয় ও মৃত্যুর কথা মনে রেখে আজ্ঞাগুলির প্রতি বিশ্বস্ত থাক।
আজ্ঞাগুলির কথা মনে রাখ,
অন্তরে প্রতিবেশীর প্রতি ক্ষোভ রেখো না,
পরাৎপরের সন্ধির কথা মনে রাখ,
অপমানের হিসাব রেখো না।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১০৩
ধুয়ো:
প্রভু স্নেহশীল, দয়াবান,
ক্রোধে ধীর, কৃপায় ধনবান।

প্রাণ আমার, প্রভুকে বল ধন্য;
আমার অন্তরে যা কিছু আছে, ধন্য কর তাঁর পবিত্র নাম।
প্রাণ আমার, প্রভুকে বল ধন্য;
ভুলে যেয়ো না তাঁর সমস্ত উপকার:   [ধুয়ো]

তিনিই তো তোমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করেন,
তোমার সমস্ত রোগ-ব্যাধি নিরাময় করেন,
গহ্বর থেকে মুক্ত করেন তোমার জীবন,
তোমাকে কৃপা ও স্নেহে করেন মুকুট-ভূষিত।   [ধুয়ো]

তিনি অনুযোগ করে থাকেন না অনুক্ষণ,
অসন্তোষও রাখেন না চিরকাল ধরে।
আমাদের প্রতি তাঁর আচরণ আমাদের পাপরাশির অনুপাতে নয়,
আমাদের প্রতি তাঁর প্রতিদান আমাদের যত অপরাধের অনুপাতে নয়।   [ধুয়ো]

পৃথিবীর ঊর্ধ্বে যতখানি উঁচু আকাশমণ্ডল,
যারা তাঁকে ভয় করে, তাদের প্রতি ততখানি দৃঢ় তাঁর কৃপা।
পশ্চিম থেকে পুব যত দূরবর্তী,
তিনি আমাদের কাছ থেকে তত দূরে ফেলে দেন আমাদের যত অপরাধ।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
রোমীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১৪:৭-৯)

প্রিয়জনেরা, আমরা কেউ নিজের জন্য জীবিত থাকি না, কেউ নিজের জন্য মরেও যাই না। যদি জীবিত থাকি, প্রভুর জন্যই জীবিত থাকি; আর যদি মরি, প্রভুর জন্যই মরি। সুতরাং জীবিত থাকি বা মরি, আমরা প্রভুরই। কারণ এ উদ্দেশ্যেই খ্রিষ্ট মরলেন ও পুনরুজ্জীবিত হলেন, যেন তিনি মৃত ও জীবিত উভয়েরই প্রভু হতে পারেন।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
আমি এক নতুন আজ্ঞা তোমাদের দিচ্ছি
—একথা বলছেন প্রভু;
আমি যেমন তোমাদের ভালবেসেছি,
তেমনি তোমরাও পরস্পরকে ভালবাস।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (১৮:২১-৩৫)

একদিন পিতর যিশুর কাছে এসে বললেন, ‘প্রভু, আমার ভাই আমার প্রতি অন্যায় করলে আমি কতবার তাকে ক্ষমা করব? কি সাতবার পর্যন্ত?’ যিশু তাঁকে বললেন, ‘তোমাকে বলছি, সাতবার পর্যন্ত নয়, কিন্তু সত্তরগুণ সাতবার পর্যন্ত।
এজন্য স্বর্গরাজ্য তেমন এক রাজার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যিনি নিজের কর্মচারীদের কাছ থেকে হিসাব নেবেন বলে মনস্থ করলেন। তিনি হিসাব করতে বসেছেন, তখন একজনকে তাঁর কাছে আনা হল যার লক্ষ লক্ষ টাকার ঋণ ছিল; কিন্তু তার সেই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা না থাকায় তার প্রভু আদেশ দিলেন, তাকে ও তার স্ত্রী-পুত্রকে ও তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে যেন ঋণটা শোধ করিয়ে নেওয়া হয়; তাতে সেই কর্মচারী তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ে বলল, প্রভু, আমার প্রতি ধৈর্য ধরুন, আমি সমস্তই শোধ করব। তখন সেই কর্মচারীর প্রভু দয়ায় বিগলিত হয়ে তাকে ছেড়ে দিলেন ও তার ঋণ ক্ষমা করে দিলেন।
কিন্তু সেই কর্মচারী বাইরে গিয়ে তার সহকর্মীদের একজনের দেখা পেল যে তার কাছে একশ’ টাকা ঋণী ছিল; সে তার গলা টিপে ধরে বলল, তোমার দেনাটা শোধ কর। তখন তার সহকর্মী তার পায়ে পড়ে মিনতি জানাতে জানাতে বলল, আমার প্রতি ধৈর্য ধর, আমি ঋণটা শোধ করে দেব; তবু সে রাজি হল না, বরং গিয়ে তাকে কারাগারে ফেলে রাখল যে পর্যন্ত ঋণটা শোধ না করে।
ব্যাপারটা দেখে তার সহকর্মীরা খুবই দুঃখ পেল, আর নিজেদের প্রভুর কাছে গিয়ে কথাটা সবই বলে দিল। তখন সেই প্রভু তাকে কাছে ডাকিয়ে এনে বললেন, ধূর্ত কর্মচারী! তুমি আমার কাছে মিনতি করলে আমি তোমার ওই সমস্ত ঋণ ক্ষমা করেছিলাম। আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া দেখিয়েছিলাম, তেমনি তোমার সহকর্মীর প্রতি দয়া দেখানো কি তোমারও উচিত ছিল না? আর সেই প্রভু ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে পীড়কদের হাতে তুলে দিলেন যে পর্যন্ত সে সমস্ত ঋণ শোধ না করে।
আমার স্বর্গস্থ পিতা তোমাদের প্রতি ঠিক এভাবেই ব্যবহার করবেন, তোমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ ভাইকে অন্তর থেকেই ক্ষমা না কর।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিনের উপদেশ

প্রভু আমাদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এ তুলনা উপস্থাপন করলেন; আমাদের উপদেশ দিলেন আমরা যেন পতিত না হই। তিনি বললেন, আমার স্বর্গস্থ পিতা তোমাদের প্রতি ঠিক এভাবেই ব্যবহার করবেন, তোমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ ভাইকে অন্তর থেকেই ক্ষমা না কর (মথি ১৮:৩৫)। এই যে, ভাইবোনেরা, ধারণা স্পষ্ট, উপদেশ উপযুক্ত; আমাদের কাছে এমন খাঁটি বাধ্যতা দাবি করা হয় যাতে যা আদেশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপেই পালন করা হয়। কেননা প্রতিটি মানুষ ঈশ্বরের প্রতি অপরাধী, আবার নিজের প্রতি নিজ ভাইও ঋণী। যার মধ্যে কোন পাপ নেই, সে ছাড়া কেবা ঈশ্বরের প্রতি অপরাধী নয়? আর যার বিরুদ্ধে কেউ কখনও অপরাধ করেনি, সে ছাড়া আর কার্‌ প্রতিই বা কোন ভাই অপরাধী নয়? তুমি কি মনে কর, এ জগতে এমন কাউকে পাওয়া যাবে যে ভাইয়ের বিরুদ্ধে কখনও কোন প্রকার অপরাধ করেনি? তাই প্রতিটি মানুষ অপরাধী, আবার তার প্রতি ঋণী কেউ আছেই। এজন্য সেই ন্যায়বান ঈশ্বর অপরাধী সংক্রান্ত এমন নিয়ম তোমাকে দিয়েছেন, যে নিয়ম তিনি তোমার প্রতি প্রয়োগ করবেন।
বস্তুত সেই দয়াকর্ম যা আমাদের মুক্তি দান করে ও যার কথা স্বয়ং ত্রাণকর্তা সুসমাচারে সংক্ষিপ্তভাবে ব্যক্ত করেছেন, সেই দয়াকর্ম দুই প্রকার, তথা ক্ষমা কর, তবে তোমাদের ক্ষমা করা হবে; দাও, তবে তোমাদের দেওয়া হবে (লুক ৬:৩৭-৩৮)। প্রথমটা ক্ষমা সংক্রান্ত, দ্বিতীয়টা মঙ্গলদান সংক্রান্ত, আবার ক্ষমাও সংক্রান্ত। তুমি পাপ করলে তবেই তোমার ক্ষমা দরকার, আর একই সময়ে এমন কেউ আছে যার কাছে তোমার ক্ষমাদান দরকার। ভিক্ষুকেরা তোমার কাছে মঙ্গলদান প্রত্যাশা করে, তুমিও কিন্তু ঈশ্বরের কাছে ভিক্ষুক; আর আসলে সকলেই আমরা ঈশ্বরের কাছে ভিক্ষুক: আমরা মহান গৃহকর্তার প্রবেশদ্বারের সামনে উপস্থিত, নত হই, মিনতি করি, চোখের জল ফেলি—কারণ এমন কিছু পাবার প্রত্যাশা করি যা স্বয়ং ঈশ্বর। ভিক্ষুক তোমার কাছে কী চায়? রুটি। আর তুমি ঈশ্বরের কাছে সেই খ্রিষ্টকেই ছাড়া কীবা চাও যিনি বলেন, আমিই সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে আসছে (যোহন ৬:৫১)। তোমরা কি ক্ষমা পেতে চাও? তবে ক্ষমা কর, কেননা ক্ষমা কর, তবে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে (লুক ৬:৩৭)। তোমরা কি পেতেই চাও? তবে দান কর, তবে তোমাদেরও দান করা হবে (লুক ৬:৩৮)। কেননা আমরা যদি নিজেদের পাপের কথা ভাবি, ও কাজে, কানে, চিন্তায় বা অন্যভাবে যে যে অপরাধ করেছি তা যদি গণনা করি, তাহলে আমি জানি না, শান্তিতে ঘুমোতে পারব কিনা। তাই আমরা প্রতিদিন যাচনা করি, প্রতিদিন প্রার্থনাকালে ঈশ্বরের দিকে ফিরি তিনি যেন আমাদের শোনেন, প্রতিদিন প্রণত হয়ে বলি, আমাদের ঋণ ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আমাদের কাছে ঋণী যারা তাদের ক্ষমা করেছি (মথি ৬:১২)। কোন্‌ কোন্‌ অপরাধ? সবগুলো, না কেবল একটা অংশমাত্র? তুমি উত্তর দেবে: সবগুলো। তবে তোমার প্রতি যারা অপরাধী, তুমিও তাদের প্রতি সেরূপ ব্যবহার কর। সুতরাং এ নিয়মটা স্থির কর, এ শর্ত ঘোষণাই কর; আর এজন্য প্রার্থনাকালে তোমার এ চুক্তির কথা স্মরণে রাখ, যেন বলতে পার: আমাদের ঋণ ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আমাদের কাছে ঋণী যারা তাদের ক্ষমা করেছি।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ৩৬
ধুয়ো:
ওগো পরমেশ্বর, তোমার কৃপা কত মূল্যবান!
তোমার পক্ষ-ছায়ায় আশ্রয় পায় আদমসন্তান।

ওগো প্রভু, আকাশছোঁয়াই তোমার কৃপা,
মেঘলোক-প্রসারী বিশ্বস্ততা তোমার,
উঁচু পাহাড়পর্বতের মত তোমার ধর্মময়তা, মহা অতলের মত তোমার ন্যায়—
মানুষ কি পশু সকলকেই তুমি ত্রাণ কর, প্রভু।   [ধুয়ো]

তোমাতেই যে জীবনের উৎস!
তোমার আলোতেই আমরা দেখি আলো।
যারা তোমায় জানে, তাদের দান করে থাক গো তোমার কৃপা,
সরলহৃদয়দের কাছে ধর্মময়তা তোমার।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, এই স্বর্গীয় উপহার আমাদের দেহমন দখল করুক:
এর ফলে আমাদের নিজেদের কামনা-বাসনা নয়,
পবিত্র আত্মাই বরং আমাদের চালিত করুন।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]    


২৫শ রবিবার
১। সূচনা [অনুষ্ঠাতা ও ভক্তগণ]
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।
    - আমেন।

আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের অনুগ্রহ,
পিতা ঈশ্বরের প্রেম,
এবং পবিত্র আত্মার প্রেরণা
তোমাদের মধ্যে বিরাজ করুক।
    - আপনার মধ্যেও বিরাজ করুক।

এসো, এ পবিত্র অনুষ্ঠানে যোগ্যরূপে অংশ নেবার জন্য আমাদের পাপ স্বীকার করি।
হে প্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর।
    - তোমার বিরুদ্ধে যে করেছি পাপ।
আমাদের দেখাও, প্রভু, তোমার কৃপা।
    - আমাদের দাও গো তোমার পরিত্রাণ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের প্রতি সদয় হোন, এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে অনন্ত জীবনে চালনা করুন।
    - আমেন।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।
খ্রিষ্ট, দয়া কর
    - খ্রিষ্ট, দয়া কর।
প্রভু, দয়া কর।
    - প্রভু, দয়া কর।

২। জয় পরমেশ্বর।

৩। সমাবেশ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে ঈশ্বর, আমরা তোমাকে ভালবাসব, আমাদের প্রতিবেশীকেও ভালবাসব,
এ আজ্ঞায়ই তুমি তোমার পবিত্র বিধানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করেছ।
আশীর্বাদ কর: তোমার আদেশমালা মেনে চ’লে
আমরা যেন অনন্ত জীবন পাবার যোগ্য হয়ে উঠি।
তোমার পুত্র আমাদের প্রভু সেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বারা, যিনি পবিত্র আত্মার ঐক্যে তোমার সঙ্গে
ঈশ্বররূপে জীবিত আছেন ও রাজত্ব করেন যুগে যুগান্তরে।
সকলে: আমেন।

৪। প্রথম পাঠ
নবী ইশাইয়ার পুস্তক থেকে পাঠ (৫৫:৬-৯)

প্রভুর অন্বেষণ কর, যেহেতু তিনি নিজের উদ্দেশ পেতে দেন;
তাঁকে ডাক, যেহেতু তিনি কাছে আছেন।
দুর্জন নিজের পথ, শঠতার মানুষ নিজের যত প্রকল্প ত্যাগ করুক;
সে প্রভুর কাছে ফিরে আসুক, তিনি তাকে স্নেহ করবেন;
সে আমাদের পরমেশ্বরের কাছে ফিরে আসুক,
কারণ তিনি ক্ষমাদানে মহান।
কারণ আমার সঙ্কল্পসকল ও তোমাদের সঙ্কল্পসকল এক নয়,
তোমাদের পথসকল ও আমার পথসকল এক নয়—প্রভুর উক্তি।
পৃথিবী থেকে আকাশমণ্ডল যত উঁচু,
তোমাদের পথ থেকে আমার পথ,
তোমাদের সঙ্কল্প থেকে আমার সঙ্কল্প তত উঁচু।
ঈশ্বরের বাণী।

৫। সামসঙ্গীত ১৪৫
ধুয়ো:
যারা তাঁকে ডাকে,
প্রভু তাদের সকলের কাছে কাছেই থাকেন।

প্রতিদিন আমি তোমাকে বলব ধন্য,
প্রশংসা করব তোমার নাম চিরদিন চিরকাল।
প্রভু মহান, মহাপ্রশংসনীয়,
তাঁর মহত্ত্ব পরিমাপের অতীত।   [ধুয়ো]

প্রভু দয়াবান, স্নেহশীল,
ক্রোধে ধীর, কৃপায় মহান।
প্রভু সকলের প্রতি মঙ্গলময়,
তাঁর স্নেহ তাঁর সকল কাজে বিরাজিত।   [ধুয়ো]

প্রভু সকল পথে ধর্মময়,
সকল কাজে কৃপাময়।
যারা তাঁকে ডাকে, অন্তর দিয়েই তাঁকে ডাকে,
প্রভু তাদের সকলের কাছে কাছেই থাকেন।   [ধুয়ো]

৬। দ্বিতীয় পাঠ
ফিলিপ্পীয়দের কাছে প্রেরিতদূত সাধু পলের পত্র থেকে পাঠ (১:২০-২৪,২৭ক)

প্রিয়জনেরা, খ্রিষ্ট আমার দেহে মহিমান্বিত হবেন—তা জীবনে হোক, বা মৃত্যুতে হোক। কেননা আমার পক্ষে জীবন খ্রিষ্ট, এবং মৃত্যু লাভ। কিন্তু দেহে জীবন বলতে যদি ফলপ্রসূ হয়ে কাজ করা বোঝায়, তবে কোনটা আমাকে বেছে নেওয়া উচিত, তা জানি না।
আসলে আমি সেই দুইয়ের মধ্যে সঙ্কুচিত হচ্ছি: একদিকে আমার এই বাসনা যে, বিদায় নিয়ে খ্রিষ্টের সঙ্গে থাকি, কারণ এই তো বহুগুণে শ্রেয়; অপরদিকে দেহে থাকা তোমাদের জন্য আরও বেশি প্রয়োজনীয়।
শুধু একটা কথা, খ্রিষ্টের সুসমাচারের যোগ্য নাগরিকদের মত আচরণ কর।
ঈশ্বরের বাণী।

৭। সুসমাচার বরণ-গীতি
আল্লেলুইয়া, আল্লেলুইয়া।
প্রভু, আমাদের হৃদয় খুলে দাও,
তবেই আমরা তোমার পুত্রের কথা সকল গ্রহণ করব।
আল্লেলুইয়া।

৮। সুসমাচার
মথি-রচিত পবিত্র সুসমাচার থেকে পাঠ (২০:১-১৬)

একদিন যিশু তাঁর আপন শিষ্যদের এ উপমা-কাহীনী শোনালেন, ‘স্বর্গরাজ্য তেমন এক গৃহস্বামীর মত, যিনি নিজের আঙুরখেতে মজুর লাগাবার জন্য খুব সকালে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি মজুরদের সঙ্গে দিনমজুরি হিসাবে একটা রুপোর টাকা স্থির করে তাদের নিজের আঙুরখেতে পাঠিয়ে দিলেন। পরে তিনি সকাল ন’টার দিকে বেরিয়ে গিয়ে দেখলেন, চত্বরে অন্য কয়েকজন লোক বেকার দাঁড়িয়ে আছে; তাদের বললেন, তোমরাও আমার আঙুরখেতে যাও, তোমাদের ন্যায্য মজুরি দেব। তাতে তারা গেল। তিনি আবার দুপুরবেলা ও বেলা তিনটের দিকে বেরিয়ে গিয়ে তেমনি করলেন; পরে বিকেল পাঁচটার দিকে বেরিয়ে গিয়ে দেখলেন, আর কয়েকজন সেখানে এমনি দাঁড়িয়ে আছে; তাদের বললেন, কেন সারাদিন এখানে বেকার দাঁড়িয়ে আছ? তারা তাঁকে বলল, কারণ কেউই আমাদের কাজে লাগায়নি। তাদের তিনি বললেন, তোমরাও আমার আঙুরখেতে যাও।
সন্ধ্যা হলে সেই আঙুরখেতের প্রভু তাঁর নায়েবকে বললেন, মজুরদের ডেকে শেষজন থেকে শুরু করে প্রথমজন পর্যন্ত সকলের মজুরি মিটিয়ে দাও। তাই যারা বিকেল পাঁচটার দিকে শুরু করেছিল, তারা এসে এক একজন একটা করে রুপোর টাকা পেল; পরে যারা প্রথমে শুরু করেছিল, তারা এসে বেশি পাবে বলে প্রত্যাশা করছিল, কিন্তু তারাও একটা করে রুপোর টাকা পেল। পেয়ে তারা সেই গৃহস্বামীর বিরুদ্ধে গজগজ করে বলতে লাগল: শেষে এসেছিল এই লোকেরা, এরা তো মাত্র এক ঘণ্টা খেটেছে, আর এদের আপনি আমাদেরই সমান করলেন যারা সারাদিন খেটেছি ও রোদে ভুগেছি। তিনি উত্তরে তাদের একজনকে বললেন, বন্ধু, আমি তোমার প্রতি কোন অন্যায় করছি না; আমার ও তোমার মধ্যে কি একটা রুপোর টাকার কথা হয়নি? তোমার যা পাওনা, তা নিয়ে তুমি যাও; কিন্তু আমি তোমাকে যা দিয়েছি, শেষে যে এসেছে, তাকেও সেই একই মজুরি দিতে ইচ্ছা করি। আমার নিজের যা, তা নিয়ে আমার যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার কি আমার নেই? নাকি, আমি দানশীল বলে তোমার চোখ হিংসুক? তেমনিভাবে যারা সবার আগে রয়েছে, তারা শেষে পড়বে; এবং যারা সবার শেষে রয়েছে, তারা সবার আগে দাঁড়াবে।’
প্রভুর বাণী।

৯। উপদেশ
বিশপ সাধু আগস্তিনের উপদেশ

সুসমাচারে তোমরা এইমাত্র আঙুরখেতে মজুরদের উপমা-কাহিনী শুনেছ: এ উপমা-কাহিনী বর্তমানকালের জন্য খুবই উপযুক্ত, কেননা এ হল পার্থিব আঙুরফল-সংগ্রহ কাল। কিন্তু তবুও আধ্যাত্মিক এমন ফলসংগ্রহ কালও রয়েছে, যে কালে ঈশ্বর নিজ আঙুরখেতের ফল ভোগ করেন: স্বর্গরাজ্য তেমন এক গৃহস্বামীর মত, যিনি নিজের আঙুরখেতে মজুর লাগাবার জন্য খুব সকালে বেরিয়ে পড়লেন (মথি ২০:১)। কিন্তু কেনই বা তিনি শেষ জন থেকেই মজুরি দিতে শুরু করলেন? তারা সকলেই কি মজুরি পাবার অপেক্ষায় ছিল না? সুসমাচারের অন্যত্রও আমরা পড়েছি যে, যারা তাঁর ডান পাশে রয়েছে, তাদের তিনি বলবেন, এসো, আমার পিতার আশীর্বাদের পাত্র যে তোমরা, জগৎপত্তনের সময় থেকে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তা উত্তরাধিকাররূপে গ্রহণ কর (মথি ২৫:৩৪)। তাই যখন তারা একসঙ্গেই মজুরি পেতে তৈরী, তখন কেন তারাই প্রথম মজুরি পেল যারা বিকেল পাঁচটায় কাজ শুরু করেছিল, ও যারা প্রথম প্রহর থেকে কাজ করেছিল তারা শেষেই মজুরি পেল? তোমাদের কাছে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারলে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাব। তোমরাও কিন্তু তাঁকে ধন্যবাদ জানাও, যিনি আমাদের মধ্য দিয়ে তোমাদের উপকার করেন, কারণ আমরা নিজস্ব বলতে কিছুই দান করি না। যে এক ঘণ্টা কাজ করার পর, ও যে সারাদিন কাজ করার পর মজুরি পেল, তুমি যদি তাদের আলাদা আলাদা করে প্রশ্ন রাখ, তাদের মধ্যে কে প্রথম মজুরি পেয়েছে, তাহলে দু’জনেই উত্তর দেবে যে, তারাই প্রথম মজুরি পেল।
তাই যদিও সকলে একইসময়ে মজুরি পেয়ে থাকল, তবু যেহেতু কেউ কেউ কেবল এক ঘণ্টা পরে, ও কেউ কেউ বারো ঘণ্টা পরেই মজুরি পেল, সেজন্য আমরা মনে করি যে, তারাই প্রথম মজুরি পেল যারা অল্প সময় কাজ করল। আবেল ও নোয়ার মত সেই প্রথম ধার্মিক ব্যক্তিরা, যাঁরা খুব সকালে আহূত হয়েছিলেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গেই পুনরুত্থানের আনন্দ পাবেন। তাঁদের পরে, আব্রাহাম, ইসহাক, যাকোব ও তাঁদের সমসাময়িকদের মত অন্যান্য ধার্মিক ব্যক্তি, যাঁরা সকাল ন’টার সময়ে আহূত হয়েছিলেন, তাঁরাও আমাদের সঙ্গে পুনরুত্থানের আনন্দ পাবেন। আরও ধার্মিক ব্যক্তি যেমন মোশি, আরোন ও তাঁদের সঙ্গে সেই সকলে, যাঁরা দুপুরবেলায় আহূত হয়েছিলেন, তাঁরাও আমাদের সঙ্গে পুনরুত্থানের আনন্দ পাবেন। এঁদের পরে যাঁরা বেলা তিনটের সময় আহূত হয়েছিলেন, সেই পুণ্যবান নবীরাও আমাদের সঙ্গে একই আনন্দ পাবেন। এবং যাঁরা বিকেল পাঁচটায় আহূত হয়েছিলেন, সেই সকল খ্রিষ্টবিশ্বাসীও জগৎ শেষে তাঁদের সঙ্গে পুনরুত্থানের সেই আনন্দ পাবেন। সকলে একসঙ্গেই তা পাবেন; কিন্তু লক্ষ কর কতই না দীর্ঘকাল পরে সেই প্রথমজনেরা তা পাচ্ছেন! বস্তুত যদিও আমরা অন্যান্য সকলের সঙ্গেই তা পাই, তবু যেহেতু আমাদের মজুরি ইতস্তত না করেই আমাদের দেওয়া হয়, সেজন্য মনে হচ্ছে ঠিক যেন আমরাই প্রথম তা পাচ্ছি।
মজুরি পাবার সময়ে আমরা সকলে সমান হব—প্রথমজন শেষজনের সমান, শেষজন প্রথমজনের সমান। কেননা সেই মোহরটা হল অনন্ত জীবন, আর অনন্ত জীবনে সকলে সমান। কর্মফলের ভিত্তিতে যদিও একজনের চেয়ে আর একজন কম বেশি দীপ্তিমান হবে, তবু অনন্ত জীবন সকলের জন্য সমান, কেননা যা সমানভাবে অনন্ত, তা একজনের পক্ষে বেশি দীর্ঘকালীন ও আর একজনের পক্ষে কম দীর্ঘকালীন হতে পারে না—যার অন্ত নেই, তা আমার পক্ষে যেমন, তোমার পক্ষেও তেমনি অনন্ত হবে। দম্পতিদের শুচিতা ও অক্ষুণ্ণ কৌমার্য, শুভকর্মের ফল ও যন্ত্রণাভোগের গৌরব ইত্যাদি বিবিধ শ্রেণি বিবিধ ভাবে প্রকাশ পাবে, কিন্তু অনন্ত জীবন ক্ষেত্রে এমন কেউ থাকবে না, যে আর একজনের চেয়ে দীর্ঘায়ু হবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ গৌরব-মাত্রা অনুসারে সকলেই অন্তহীন জীবন যাপন করবে, আর সেই মোহরটা হল অনন্ত জীবন।

১০। স্বর্গমর্তের স্রষ্টা…।

১১। অর্থদান

১২। প্রভুর প্রার্থনা
অনুষ্ঠাতা:
ঐশশিক্ষায় উদ্দীপিত হয়ে, এসো,
ত্রাণকর্তার নির্দেশবাণী-মতো সাহসভরে বলি: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ (ইত্যাদি)

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রেমময় পিতা, সকল অমঙ্গল হতে আমাদের রক্ষা কর,
পৃথিবীতে শান্তি প্রদান কর,
পাপ থেকে মুক্ত হয়ে
আমরা যেন তোমার শান্তির পথে চালিত হই।
এই ভরসায় আমরা মুক্তিদাতা খ্রিষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় আছি।
সকলে:
যুগ যুগ ধরে তুমিই প্রভু, তুমিই শক্তিমান, তুমিই মহান।

অনুষ্ঠাতা:
হে প্রভু যিশুখ্রিষ্ট,
তুমি তোমার শিষ্যদের বলেছ,
আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি,
আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি।
মিনতি করি, হে প্রভু,
আমাদের পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে
তোমার মণ্ডলীর বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।
তোমার মণ্ডলীেক শান্তি ও একতা দান কর।
হে খ্রিষ্ট, যুগ যুগ ধরে তুমিই বিরাজমান, তুমিই প্রভু।
সকলে:
আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
এসো, একে অন্যকে শান্তির চিহ্ন প্রদান করি।

হে বিশ্বপাপহর (ইত্যাদি)

১৩। প্রভুকে গ্রহণ
পুরোহিত না থাকায় ভক্তগণ পবিত্র রুটি-ছাড়া অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ভাবে প্রভুকে গ্রহণ করতে পারেন।
হে প্রভু, তোমাকে গ্রহণ করতে আমি অযোগ্য;
কিন্তু বিশ্বাস করি, তোমার বাক্যেই আমি মুক্তি পাব।

১৪। ধ্যান-গীতি: সাম ১১৯
ধুয়ো:
তুমি জারি করেছ তোমার আদেশমালা, মানুষ যেন তা সযত্নেই মেনে চলে।
আহা! তোমার বিধিকলাপ মেনে চলায় আমার পথসকল সুস্থির হোক।

সুখী তারা, নিখুঁত যাদের পথ,
প্রভুর বিধানে যারা চলে।
সুখী তারা, যারা তাঁর নির্দেশমালা পালন করে,
সমস্ত হৃদয় দিয়ে যারা তাঁর অন্বেষণ করে।   [ধুয়ো]

তারা কোন অন্যায় করে না,
তারা তাঁর সমস্ত পথে চলে।
তুমি জারি করেছ তোমার আদেশমালা,
তারা যেন তা সযত্নেই মেনে চলে।   [ধুয়ো]

আমি যখন শিখব তোমার ন্যায়বিচার সকল,
তখন সরল অন্তরে তোমাকে জানাব ধন্যবাদ।
তোমার বিধিকলাপ মেনে চলব,
আমায় কখনও পরিত্যাগ করো না।   [ধুয়ো]

১৫। শেষ প্রার্থনা: এসো, প্রার্থনা করি।
হে প্রভু, তোমার সাক্রামেন্ত দানে যাদের নবায়িত করেছ,
প্রসন্ন হয়ে তোমার অবিরত সহায়তা দানে তাদের সুস্থির করে রাখ,
আমরা যেন তোমার মুক্তিকর্মের ফল
রহস্যের আড়ালে ও যথার্থ জীবনধারণেও উপভোগ করতে পারি।
আমাদের প্রভু সেই খ্রিষ্টের দ্বারা।
সকলে: আমেন।

১৬। বিদায়
অনুষ্ঠাতা:
পিতা ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।
সকলে: আমেন।

অনুষ্ঠাতা:
শান্তিতে যাও; নিজেদের জীবনাচরণে প্রভুকে গৌরবান্বিত কর।
সকলে: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

[সূচী]